Thursday, September 27, 2012

প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের বাইরে ‘চোর চোর’ স্লোগান, বিক্ষোভ : দীপু মনিকে ১০ মিনিট আটকে রাখল নিরাপত্তা কর্মীরা

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ‘নাগরিক সংবর্ধনা’ দেয়া হয়েছে। নিউইয়র্কের ব্যস্ততম টাইম স্কয়ার-সংলগ্ন অভিজাত হোটেল মেরিয়ট মার্কুইসে স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত সংবর্ধনার সময় হোটেলের বাইরে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছেন বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
হোটেলের গ্রান্ড বলরুমে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতারা যখন প্রধানমন্ত্রীর সাফল্যগাথা বর্ণনা ও স্তূতিতে ব্যস্ত, তখন হোটেলের বাইরে টাইম স্কয়ারের বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের নাম উল্লেখ করে ‘চোর’ ‘চোর’ ধনি তোলেন। এদিকে অনুষ্ঠানে প্রবেশের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। ভ্যানিটি ব্যাগ চেক করতে না দেয়ায় হোটেল মেরিয়টের নিরাপত্তা কর্মীরা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রায় ১০ মিনিট আটকে রাখেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আবারও তার সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে বলেন, কোনো অবস্থাতেই অনির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা দেয়া হবে না। একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, দুর্নীতি না পেয়ে পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে। রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাপক লোডশেডিং চললেও জয় দাবি করেন ৪০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ এখন বিদ্যুতের লোডশেডিং মুক্ত। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কংগ্রেসওম্যান ক্যারোলিন ম্যালোনি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সজীব ওয়াজেদ জয়সহ আওয়ামী লীগ ও দলের অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন ছাড়া সরকার পরিবর্তনের বিকল্প কোনো পথ নেই। দেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনসহ সর্বস্তরের প্রশাসনিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশে জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভোটের মালিক দেশের জনগণ। জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে আগামীতে কে ক্ষমতায় আসবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ আর বাংলা ভাইদের মুক্ত করতে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ফের নির্বাচিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্ম দিন উপলক্ষে বাংলাদেশ যুবলীগ কর্তৃক প্রকাশিত ‘রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দর্শন’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে মূল মঞ্চে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি ও ইউনিসেফ কর্মকর্তা ইরিনা জর্জিবা। এ সময় কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনজুর আলম শাহীন, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগ সভাপতি মিসবাহ আহমেদসহ যুবলীগের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরে বলেন, আমরা সাগর জয় করেছি। রমজান মাসে বিদ্যুতের কোনো লোডশেডিং হয়নি, শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, গ্রাম পর্যায়ে তথ্য আর কম্পিউটার সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে বিদ্যুত্ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেবে। আমরা আরও যা যা করেছি সব বন্ধ করে দেশকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে সভায় এক বক্তা তার হাজার বছর দীর্ঘায়ু কামনা করেন। আরেক বক্তা কামনা করেন আরও ১০০ বছর আয়ু। সবশেষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়কারী নিজাম চৌধুরী কামনা করেন আরও ৬৫ বছর আয়ু। একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে সামনে রেখে এমন বক্তব্যে উপস্থিত সবাই হাসির খোরাক পান। কেউ কেউ মন্তব্য করেন হাজার বছর থেকে প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা হলো, শেষ হলো ৬৫ বছরে।
বিএনপির বিক্ষোভ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবর্ধনা স্থলের বাইরে বিক্ষোভ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও জামায়াত (মুসলিম উম্মা অব নর্থ আমেরিকা)। ২৬ সেপ্টেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা) নিউইয়র্কের টাইম স্কয়ার সংলগ্ন মেরিয়ট মার্কুইসে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীকে নাগরিক সংবর্ধনা দেয়ার সময় তারা এ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
প্রধানমন্ত্রী সংবর্ধনাস্থলে আসার আধা ঘণ্টা আগ থেকেই মার্কুইস হোটেল পাশে ব্রডওয়েতে বিএনপির দুই গ্রুপ ও আল্লামা সাঈদীর মুক্তি পরিষদের ব্যানারে পৃথক বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনকালে তারা ‘শেখ হাসিনা চোর’ ‘মহাজোট সরকার মহাচোর’ বলে স্লোগান দেন। সংবর্ধনাস্থলের পাশে ২ ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির ব্যানারে পৃথক দুই গ্রুপ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির একাংশের সাবেক সভাপতি আবদুল লতিফ সম্রাট, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা বাবুল, যুগ্ম সম্পাদক আকতার হোসেন বাদল, বাবর উদ্দিন ও শাহ ইমরানসহ শতাধিক নেতাকর্মী।
বিএনপির অপর অংশের বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বেলাল মাহমুদ, জসিম উদ্দিন, নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির সভাপতি মাওলানা অলিউল্লাহ আতিকুর রহমান, সহসভাপতি খালেক আকন্দ প্রমুখ। বিএনপি নেতা কাজী আজম, সাঈদুর রহমান সাঈদ, নিরা রাব্বানি ও দেওয়ান কাউসারসহ শতাধিক নেতাকর্মী এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বিক্ষোভের সময় ব্যস্ততম ম্যানহাটন এলাকার আমেরিকান ও বিদেশি পথচারীরা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। অনেক বিদেশি বিক্ষোভের কারণ জানতে চেয়েছে বিক্ষোভকারীদের কাছে। বিক্ষোভ কর্মসূচির সময় নিউইয়র্ক পুলিশও বেশ তত্পর ছিল।
বিক্ষোভে বিএনপি নেতারা বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশকে কারাগারে পরিণত করেছে। বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গুম-হত্যা, অত্যাচার নির্যাতন করছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দলীয় সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন দিয়ে অবৈধ পথে ক্ষমতায় আসার ষড়যন্ত্র করছে আওয়ামী লীগ। বিক্ষোভ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল করে দ্রুত নির্বাচন দেয়ার দাবি জানান বিএনপি নেতারা।
আল্লামা সাঈদী মুক্তি পরিষদের বিক্ষোভ : এদিকে আল্লামা সাঈদী মুক্তি পরিষদের ব্যানারে কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ৩ শতাধিক লোক নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়। বিক্ষোভের সময় আল্লামা সাঈদীসহ কারাবন্দি জামায়াত নেতাদের ছবিসহ প্লাকার্ড হাতে নিয়ে সরকার বিরোধী স্লোগান দেয় নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভে বিপুলসংখ্যক নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণী ও মহিলা উপস্থিত ছিলেন। বিক্ষোভে নেতারা বলেন, দেশের শীর্ষ স্থানীয় আলেমদের যুক্তরাষ্ট্রের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে বন্দি রেখেছে সরকার। বিক্ষোভ থেকে তারা অধ্যাপক গোলাম আযম, মাওলানা নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মাওলানা সাঈদী ও মীর কাসেম আলীসহ সব জামায়াত নেতার মুক্তির দাবি করেছেন।
দীপু মনিকে ১০ মিনিট আটকে রাখল হোটেল সিকিউরিটি : হ্যান্ড ব্যাগ চেক করতে দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে ১০ মিনিট আটকে রাখে হোটেল মেরিয়ট মার্কুইসের নিরাপত্তাকর্মীরা। গতকাল নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে হোটেল মেরিয়ট মার্কুইসে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। রাত ৮টায় সংবর্ধনাস্থল হোটেলের বলরুমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবেশ করেন। এ সময় তার পেছনে ছিলেন ডা. দীপু মনি।
দীপু মনির হাতে থাকা ভ্যানিটি ব্যাগটি সিকিউরিটি চেক করার অনুমতি চাইলে তিনি তাতে অস্বীকৃতি জানান। সিকিউরিটিও কোনোভাবে তার ব্যাগ চেক করা ছাড়া বলরুমে ঢুকতে দিতে অপারগতা জানায়। এ সময় দীপু মনি নিজেকে বাংলাদেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিচয় দেন, তারপরও সিকিউরিটি সদস্যরা তাদের অবস্থানে অটল থাকেন। এ সময় বলরুমে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ মিশন বা অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা আওয়ামী লীগ নেতারা ছিলেন না। প্রায় ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর ব্যাগের বাইরে থেকে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে চেক করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সংবর্ধনাস্থলে ঢুকতে দেয়।
আরেকটি ওয়ান-ইলেভেন চাই না:
হাসিনা


 



প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জরুরি অবস্থা সৃষ্টির মতো পরিস্থিতি আওয়ামী লীগ চায় না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি নিয়ে সরকারি দল ও বিরোধী দলের মুখোমুখি অবস্থানের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন মহলের আশঙ্কার মধ্যে বুধবার নিউ ইয়র্কে প্রবাসীদের দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের ফলে এখন নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। তবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না দাবি করে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে আসছে বিরোধী দল।

২০০৭ সালের মতো জরুরি অবস্থা জারির মধ্য দিয়ে অনির্বাচিতদের ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করতেই সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “যে কারণে ওয়ান-ইলেভেন এসেছিল, তেমন কোনো পরিস্থিতির মুখে বাংলাদেশকে আমরা ঠেলে দিতে চাই না। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং তা অক্ষুন্ন রেখেই রাজনৈতিক অঙ্গনে অবস্থান করতে চাই।”

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে রাজনীতিকদের নির্যাতনের অভিজ্ঞতা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা চাই না, কেয়ারটেকার সরকারের নামে দানবের আগমন ঘটুক এবং দেশের অসহায় ব্যবসায়ী-পেশাজীবী এবং রাজনীতিকদের নির্যাতন করুক।”

বুধবার রাতে (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকাল) টাইমস স্কোয়ার সংলগ্ন মারিয়ট মার্কেস হোটেলের বলরুমে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে ২৩ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে এসেছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকালে তিনি সাধারণ পরিষদে বক্তব্য রাখবেন।

প্রধানমন্ত্রীকে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের দেয়া এই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমান, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ও বক্তব্য রাখেন।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক একটি নৌকার ওপর বিশাল মঞ্চে বক্তব্য রাখেন শেখ হাসিনা। বক্তব্যে তিনি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সরকারের অর্জন তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের ভূমিকার কথাও বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “ওয়ান-ইলেভেনে গঠিত কেয়ারটেকার সরকারের চালিকাশক্তি জেনারেল মইন প্রেসিডেন্ট হয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিলেন।

“জেনারেল মইনের খায়েশ হয়েছিল রাষ্ট্রপতি হওয়ার এবং অনির্দিষ্টকাল ক্ষমতায় থাকার। তার সে অভিলাষ পূরণে সহায়ক একটি ফতোয়া দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন আইনজীবী। সেই আইনজীবী বলেছিলেন যে, কেয়ারটেকার সরকার কতদিন ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে, সেটি নেই সংবিধানে।”

“কিন্তু প্রবাসে সৃষ্ট তুমুল আন্দোলন এবং দেশের ভেতরের গণরোষ তার সে আকাক্সক্ষা সফল হতে দেয়নি,” বলেন তিনি।

নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করায় দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি রয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গত সাড়ে ৩ বছরে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন এবং জাতীয় সংসদের কয়েকটি উপ-নির্বাচনের দিকে গভীরভাবে মনোযোগ দিলেই অনুধাবন করা সম্ভব হবে যে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রভাব ছিল না।”

“আগামী সাধারণ নির্বাচনেও ভোটারের মনোভাবেরই প্রতিফলন ঘটবে, এতে কারো সন্দেহ থাকা উচিত নয়। ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনের রেজাল্ট পাল্টিয়েছে, এমন নজির অনেক রয়েছে। কিন্তু মহাজোট সরকারের আমলে তেমন ঘটনা ঘটেনি,” বলেন তিনি।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, জঙ্গিবাদ নির্মূলে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এমন একটি পরিবেশে করতে চাই, যেখানে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থাকবে না, লোডশেডিং থাকবে না, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে পরমতসহিষ্ণুতা বাড়বে।”

বিএনপি সরকারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “গত পৌনে চার বছরে আমরা ৫৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করেছি। আরো ২৩টি নির্মাণের কাজ সমাপ্তির পথে। তাহলে বিএনপি কি এগুলো গুঁড়িয়ে দেবে?

“প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে ইনফরমেশন সেন্টার স্থাপন এবং ১৩ হাজার কমিউনিটি হেল্থ সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। এগুলোও কি নিষিদ্ধ হয়ে যাবে? তাহলে কি আবার হাওয়া ভবন এবং খোয়াব ভবন খোলা হবে?”

মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমার বিরোধের মামলায় জয়ের তথ্য তুলে ধরে আগামীতে ভারতের সঙ্গে বিরোধেও একই ফল আশা করেন শেখ হাসিনা।

প্রবাসীদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনাদের পাঠানো রেমিট্যান্স হচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম চালিকা শক্তি। রেমিট্যান্স এবং দক্ষ প্রশাসনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব মন্দা মোকাবেলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।”

সজীব ওয়াজেদ তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, প্রত্যেক ইউনিয়নে একটি করে তথ্যকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে কম্পিউটারের অভাব পূরণ হয়েছে গোটা দেশে। দুর্গম অঞ্চলের লোকজনকেও এখন আর শহরে যেতে হয় না।

“এভাবেই বাংলাদেশ সারাবিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংক ফিরতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, আমরা দুর্নীতি করিনি,” বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্য ক্যারলিন মেলনী, ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা জি বোকোভাও উপস্থিত ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরী, আকতার হোসেন, আব্দুস সামাদ আজাদ, নজমুল ইসলাম, এন আমিন, নূরনবী কমান্ডার, জাকারিয়া চৌধুরী, ইমদাদুর রহমান চৌধুরী, শাহীন আজমল প্রমুখ।

বিএনপির বিক্ষোভ

শেখ হাসিনার নাগরিক সংবর্ধনাস্থলের বাইরে বেশ কিছু প্রবাসী বিএনপি-জামায়াত জোটের ব্যানারে বিক্ষোভ করেছেন।

‘যেখানে হাসিনা সেখানেই প্রতিরোধ’ এই স্লোগানে সিটি প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই তারা বিক্ষোভ করেন।

বিক্ষোভকারীদের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সভাপতি আব্দুল লতিফ সম্রাট, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, তারেক পরিষদ আন্তর্জাতিক কমিটির চেয়ারম্যান আকতার হোসেন বাদল প্রমুখ।

বক্তব্যে তারা শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের কার্যক্রমের কঠোর সমালোচনা করেন।