Friday, September 28, 2012

বিশ্বব্যাংকের সংস্কার চাইলেন শেখ হাসিনা : বিএনপি-জামায়াতের মদদে জঙ্গিবাদ বিস্তারের অভিযোগ

বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বহুজাতিক দাতা সংস্থাগুলোর সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি নিয়ে বর্তমান সরকারের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের টানাপড়েনের মধ্যেই জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান। পাশাপাশি জাতিসংঘের সংস্কারেরও দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার) নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বিশ্বনেতাদের এই সভায় ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদে মদত দেয়ার অভিযোগ তোলেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশে সংঘটিত কয়েকটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের কাছে নালিশ জানালেন যে, দেশ থেকে অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল এবং তাদের নেতাকর্মীদের নিশ্চিহ্ন করার জন্যই বিএনপি-জামায়াত জোট এসব বোমা হামলা ঘটিয়েছে। বহুল আলোচিত একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনাও জাতিসংঘে তুলেছেন তিনি।
ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জাতিসংঘের অধিকাংশ সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে জাতিসংঘ, ব্রেটন উডস্ ইনস্টিটিউশনস্ ও অন্যান্য বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংস্কারের বিষয়ে পুনরায় গুরুত্ব আরোপ করছি।’ সংস্কারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এসব প্রতিষ্ঠানের কাঠামো ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ৬০ বছরের পুরনো ক্ষমতার সমীকরণের প্রতিফলন। অধিকাংশ দেশের স্বার্থ উপেক্ষিত থাকে এবং কয়েকটি বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের স্বার্থ রক্ষা হয়।’
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে বিশ্ব অর্থনীতিকে পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে জাতিসংঘ আয়োজিত ‘ব্রেটন উডস্ কনফারেন্স’ নামের এক সম্মেলনে ১৯৪৪ সালে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৭তম অধিবেশনে ভাষণ দানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাবার হত্যাকাণ্ড, পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হত্যা এবং তাদের দু’বোনের বেঁচে যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেন। এসব বোমাবাজি ও হত্যাকাণ্ডের কারণেই তার সরকার সন্ত্রাস ও সব ধরনের চরমপন্থার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে বলেও বিশ্বনেতাদের জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরাইলের নগ্ন অবিচার, হত্যা, নির্যাতন ও অবমাননাকে মানব ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে বর্ণনা করে এসব ঘটনা সন্ত্রাসবাদকে উসকে দিচ্ছে বলে মতপ্রকাশ করেন। ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফিলিস্তিনি সমস্যা ও একই ধরনের জ্বলন্ত ইস্যুগুলোর আশু সমাধান জরুরি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সন্ধ্যা ৭টা ১২ মিনিট থেকে ৭টা ৩৫ পর্যন্ত বাংলায় ২৩ মিনিটের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের বিভিন্ন বিষয়ে সাফল্য দাবি করে বলেন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও মানবাধিকার কমিশন শক্তিশালী করেছি। জনগণের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে মানবাধিকার, জবাবদিহিতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং আঞ্চলিক মাল্টি-মোডাল সংযোগ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি। নির্বাচন কমিশন এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হওয়ায় এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৫ হাজার ১৮২টি নির্বাচন সম্পূর্ণ অবাধ ও বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশে মিডিয়া এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন। এ প্রসঙ্গে তিনি দেশে কতটি টিভি চ্যানেল, বার্তা সংস্থা, পত্রিকা, এফএম রেডিও এবং কমিউনিটি রেডিও স্টেশন রয়েছে তারও পরিসংখ্যান জাতিসংঘে পেশ করেন। রীতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ তাত্ক্ষণিক ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয় যা এয়ারফোনের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা শুনতে পান।
ভাষণের সময় বাংলাদেশ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে আসা শতাধিক প্রতিনিধি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতা দর্শক-শ্রোতার সারিতে বসে মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণকে অভিনন্দিত করেন। তবে জাতিসংঘের মতো ফোরামে প্রদত্ত ভাষণে জনসভার বক্তৃতার আদলে নজিরবিহীনভাবে নিজ দেশের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নাম ধরে বিষোদ্গার করা, সরকারের ‘সাফল্যে’র ফিরিস্তি দেয়ার সমালোচনা করতে শোনা গেছে অধিবেশনের সংবাদ সংগ্রহ করতে আসা বাংলাদেশী সাংবাদিকসহ অনেককে। এর আগে কখনোই এমন ঘটনা ঘটেনি বলে উল্লেখ করেন বহুবার জাতিসংঘ অধিবেশনের সংবাদ কভারকারী নিউইয়র্কে কর্মরত বাংলাদেশী একাধিক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক।
এদিকে জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ উপলক্ষে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে জাতিসংঘ সদর দফতরের কাছে বিক্ষোভ করেছে বিএনপি। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী এ বিক্ষোভকালে বিএনপি নেতাকর্মীরা ‘চোর চোর বিশ্বচোর, শেখ হাসিনার গোষ্ঠী চোর’, ‘হাসিনা চোর রেহানা চোর—শেখ হাসিনার গোষ্ঠী চোর’, ‘জয় চোর পুতুল চোর—শেখ হাসিনার গোষ্ঠী চোর’, ‘পদ্মা সেতুর টাকা চোর’, ‘সোনালী ব্যাংকের টাকা চোর’ ‘শেভরনের ঘুষখোর’ ইত্যাদি স্লোগানে গোটা এলাকা প্রকম্পিত করে তোলেন। অন্যদিকে অদূরেই কিছু সময়ের জন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে মিছিল-সমাবেশ করেন। উভয়পক্ষ যাতে মুখোমুখি না হয়, সেজন্য বিপুলসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ভাষণ শেষে ম্যানহাটনের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে প্রবেশের সময় আল্লামা সাঈদী মুক্তি পরিষদের নামে হোটেলের সামনে বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী ফিলিস্তিনে হত্যা-নির্যাতনের প্রতিবাদের সঙ্গে যুক্ত করে বিএনপি-জামায়াতের বিগত শাসনে জঙ্গিবাদ বিস্তারের অভিযোগ করতে গিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশও ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছিল। তখন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ, হিযবুত তাহ্রীর, লস্কর-ই-তৈয়বাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী প্রায় প্রতিদিনই বোমা ও গ্রেনেড হামলা চালাত। এসব হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিল দেশ থেকে অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল এবং তাদের নেতাকর্মীদের নিশ্চিহ্ন করা। এসব সন্ত্রাসী হামলার মধ্যে আছে, ২০০২ সালের ৫ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের পাঁচটি সিনেমা হলে বোমা হামলায় ১৯ জন নিহত, ২০০৪ সালের ২১ মে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট আধাঘণ্টায় দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬৩ জেলার পাঁচশ’ স্থানে বোমা বিস্ফোরণ। গ্রেনেড ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে আমাদের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ও এসকাপের প্রাক্তন নির্বাহী পরিচালক এসএএমএস কিবরিয়া এমপি, শ্রমিক নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপি, মমতাজ উদ্দিন এমপি ও কোর্ট চত্বরে দু’জন জনপ্রিয় বিচারক হত্যা।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমিও ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর এক ভয়াবহ গ্রেনেড আক্রমণের শিকার হই। তখন আমি ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দিচ্ছিলাম। এতে ২৪ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। প্রায় পাঁচশ’ জন আহত হয়েছেন। আমি অলৌকিকভাবে বেঁচে যাই।’
শেখ হাসিনা সব দেশে শ্রমিকের অবাধ চলাচল নিশ্চিতের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার কথা বলেন। শ্রমিক প্রেরণকারী ও গ্রহণকারী দেশগুলোর সুবিধা নিশ্চিতে ডব্লিউটিও’র চুক্তি জিএটিএস দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদও দেন তিনি। তিনি বলেন, নিরাপদ অভিবাসন এবং নারীসহ অভিবাসী কর্মজীবীদের অধিকার সংরক্ষণে অভিবাসী প্রেরণকারী ও গ্রহণকারী দেশগুলোর যৌথ দায়িত্ব ডব্লিউটিও নীতির অংশ করা উচিত।
শেখ হাসিনা মনে করেন, নতুন সহস্রাব্দে বেশকিছু রাষ্ট্র এবং বিশ্বায়ন একটি পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থা গড়ার সুযোগ এনে দিয়েছে। জাতিসংঘে উপস্থিত বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজ আমরা ন্যায়বিচার, সমতা, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, মানবাধিকার, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের কথা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারছি। এ সবই আমাদের অগ্রাধিকার। এজন্য অতীতের অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা ভুলে সবাইকে এক লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
জাতিসংঘের ৬৭তম অধিবেশনে ভাষণ দিতে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা শুরুতেই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৬তম অধিবেশনের সভাপতি হিসেবে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেয়ার জন্য নাসির আবদুল আজিজ আল-নাসেরকে এবং জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনকে ধন্যবাদ জানান। বিশ্ব গণজাগরণ, আন্তঃদেশীয় সংঘর্ষ, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ, বৈশ্বিক আর্থিক সঙ্কট, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তাহীনতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, সন্ত্রাসবাদের মতো সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে জাতিসংঘের সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা এবারের আলোচনার মূল প্রতিপাদ্য ‘শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্তর্জাতিক বিরোধ বা পরিস্থিতি নিষ্পত্তিকরণ’-এর প্রশংসা করেন।
শেখ হাসিনা তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, ‘আজ থেকে ৩৮ বছর আগে এ মঞ্চে দাঁড়িয়েই ‘সকলের প্রতি বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরিতা নয়’, ‘সকল বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান’, ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগের অবসান’ এবং ‘বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় অবদান’-এর ঘোষণা দিয়েছিলেন।’ বাবার এই নীতিই তাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি সম্পাদনে এবং ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বর্ডার গার্ড বিদ্রোহ সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রেরণা জুগিয়েছিল বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। সমুদ্রসীমা নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের ৪১ বছরের পুরনো বিরোধের শান্তিপূর্ণ মীমাংসার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের উন্নয়ন উদ্যোগগুলো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে দারিদ্র্য, সম্পদহানি ও মানব স্থানচ্যুতি হচ্ছে, যা সন্ত্রাসবাদকে উসকে দিচ্ছে। সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে স্থানচ্যুত অভিবাসীরা গণআন্দোলন সৃষ্টি করতে পারে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি একটি নতুন ‘আইনগত ব্যবস্থা’ গ্রহণের তাগিদ দেন যা জলবায়ু অভিবাসীদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক পুনর্বাসন নিশ্চিত করবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা ও অভিযোজন, প্রযুক্তি হস্তান্তর ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের জন্য ‘গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডে’র দ্রুত বাস্তবায়নেরও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বনেতাদের তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ব্যাপক অশান্তির সৃষ্টি করতে পারে, যা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এজন্য উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের বাজারে এলডিসি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার এবং ওডিএ প্রতিশ্রুতি পূরণ জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তির প্রতি আমাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের আরেকটি প্রমাণ হচ্ছে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমরা অন্যতম সর্বাধিক শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। তার ভাষায়, একমাত্র ন্যায়বিচারের মাধ্যমেই শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব, যা উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণতন্ত্রের পর্যায়ক্রমিক অনুপস্থিতিকে সামাজিক অবিচার, দারিদ্র্য, বৈষম্য, বঞ্চনা এবং অসহায়ত্বের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের জন্ম দেয়।’

নির্দলীয় সরকার পুনর্বহাল না হলে ১/১১-র চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা হতে পারে : ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া

নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন না হলে ওয়ান-ইলেভেনের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে বলে সরকারকে হুশিয়ার করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া।
‘দেশ আর এক-এগারোতে ফিরে যেতে চায় না’—নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল সকালে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের পরের সরকার তত্ত্বাবধায়ক ছিল না, তা ছিল সেনা সমর্থিত সরকার। তাই ওই সময়ের অবস্থা আর যাতে না হয়, সেজন্য অবিলম্বে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নিন। নইলে এক-এগারোর চেয়ে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। আমরা গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক শাসন বলবত্ রাখতে চাই। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষে লগি-বৈঠা দিয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস সৃষ্টি ও সব শেষে নির্বাচন বর্জনে দেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হলে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর সমর্থনে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয় ড. ফখরুদ্দীন নেতৃত্বাধীন সরকার। ওই সরকারের দুই বছরে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতা খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাসহ বহু রাজনীতিবিদকে কারাগারে যেতে হয়।
সে সময়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার নিউইয়র্কে এক নাগরিক সংবর্ধনায় বলেন, দেশের মানুষ আর ওয়ান-ইলেভেনের অবস্থায় ফিরে যেতে চায় না। ওই সময়ে ফখরুদ্দীন আহমদের সরকার ক্ষমতা আকড়ে রাখতে চেয়েছিল। এজন্য তারা অনেক ষড়যন্ত্র করেছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপে তারা নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে স্বদেশ জাগরণ পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন না হলে জনগণ তা মানবে না।
সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলে সুপ্রিমকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের সমালোচনা করে আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল বলেন, সংক্ষিপ্ত রায়ের সঙ্গে ১৬ মাস পরে দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ের কোনো মিল নেই। এ রকমভাবে রায় পাল্টানোর নজির বিশ্বে নেই। এতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতাও খর্ব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান সরকার সংবিধানে সংযোগ করেছে। এ বিধানে নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না।
‘প্রতিহিংসার রাজনীতি : অতীত ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে নাগরিক প্রত্যাশা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বদেশ জাগরণ পরিষদের সভাপতি কামরুজ্জামান সেলিম। এতে আরও আলোচনা করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আ ন হ এহছানুল হক মিলন, স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, সাবেক সংসদ সদস্য হেলেন জেরিন খান প্রমুখ।
নির্দলীয় সরকারের দাবি না মানলে আন্দোলনেই ফয়সালা : জাতীয় প্রেস ক্লাবের সম্মেলন কক্ষে যুব জাগপার উদ্যোগে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার, বিচারিক রায়, নির্বাচনের ভবিষ্যত্ : দেশ আজ কোনো পথে’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বলেন, নির্দলীয় সরকারের দাবি সরকার না মানলে আন্দোলনেই এর ফয়সালা হবে।
তিনি বলেন, এ সরকারকে জনগণ সমুচিত জবাব দেবে।
জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, ব্রিটিশ আদালতের রায়ে পাকিস্তান হয়নি; তেমনি পাকিস্তান আদালতের সম্মতিতেও বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়নি। রাজনীতির ফয়সালা ইনশাল্লাহ রাজনীতির ময়দানেই হবে। সরকারকে নির্দলীয় সরকারের দাবি মানতে বাধ্য করা হবে।
সংগঠনের সভাপতি ইনসান আলম আক্কাসের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তৃতা করেন জাগপা সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুত্ফর রহমান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মহাসচিব ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপা সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন বাবলু, আবু মোজাফফর মোহাম্মদ আনাস, আসাদুর রহমান খান, ইকবাল হোসেন প্রমুখ।