Friday, October 12, 2012

নিরাপত্তা পেলে সামনে আসবেন গাড়িচালক আজম

পালিয়ে বেড়ানো জীবনের অবসান ঘটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চান গাড়িচালক আজম খান। তিনি সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ওমর ফারুক তালুকদারের গাড়িচালক ছিলেন। আজম চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নওগাঁও গ্রামের বাসিন্দা।
আজ রোববার দুপুরে ‘প্রথম আলো’র মতলব দক্ষিণ (চাঁদপুর) প্রতিনিধিকে মুঠোফোনে এসব কথা বলেন আজমের বোন সৌদি প্রবাসী সালমা বেগম।
সালমা বেগমের দাবি, তাঁর ভাই আজম গতকাল শনিবার দুপুরে তাঁকে ফোন করেছিলেন। আলাপচারিতায় আজম তাঁকে বলেছেন, রেলের অবৈধ টাকা ধরিয়ে দিয়ে তিনি সঠিক কাজটিই করেছেন। দেশের সবাইকে সত্যটা জানিয়েছেন। তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, অথচ দোষী ব্যক্তিরা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছেন।
সালমা বেগমের দাবি, আজম তাঁকে বলেছেন, আত্মগোপনে থাকতে থাকতে এখন তিনি (আজম) ক্লান্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। টিভিতে তাঁর সাক্ষাত্কার প্রচারিত হওয়ার পর তিনি জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত বলে বোনকে জানিয়েছেন। যেকোনো সময় তাঁকে গুম বা হত্যা করা হতে পারে—এমন আশঙ্কার কথাও বোনকে জানিয়েছেন তিনি। সরকার আজমের জীবনের নিরাপত্তা দিলে প্রয়োজনে যেকোনো তদন্ত বা মামলার মুখোমুখি হতে রাজি আছেন তিনি।
সালমা বেগম বলেন, আজম লুকিয়ে থাকায় একমাত্র মেয়েকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী স্বপ্না বেগম খুবই অর্থকষ্টে আছেন। অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গেছে আজমের মেয়ে রিয়ার লেখাপড়া। মতলব থানা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) না নেওয়ায় আজমের পরিবার হতাশ ও উদ্বিগ্ন বলেও সালমা জানান।
রেলের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনার পর থেকে পলাতক আছেন চালক আজম খান। সম্প্রতি তিনি অজ্ঞাত স্থান থেকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভিকে সাক্ষাত্কার দেন। তাঁর দেওয়া বক্তব্যের ব্যাপারে নিজের অবস্থান জানিয়ে সংবাদ ব্রিফিং করেন সাবেক রেলমন্ত্রী ও বর্তমানে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

১/১১ খেলোয়াড়রাই আবার খেলছে : শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এক এগারোর সরকারের মতো অনির্বাচিতদের ক্ষমতায় আনার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আবারও ওয়ান ইলেভেন সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, কিছু মানুষ আছে, যাদের ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ থাকলেও নির্বাচন করার সাহস নেই। জনগণের সামনে দাঁড়াতে পারেন না। জনগণের ওপর তাদের ভরসা নেই, ভরসা অসাংবিধানিক পথে। অসাংবিধানিক ধারায় ক্ষমতায় যেতে চান। তাদের খায়েশের কারণেই দেশ বারবার বিপদে পড়ে। তারা এখন আবার খেলা শুরু করেছেন।
গতকাল গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির বৈঠকে প্রারম্ভিক বক্তব্যে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতার খায়েশধারীদের কারণে বারবার দেশে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা বারবার অসাংবিধানিক ব্যবস্থাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্নম্ন আইনজীবী বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে এ প্লাস সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন। কীভাবে ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে আরও রাখা যায়, সে ফতোয়া দিয়েছিলেন। তারাই এখন স্বোচ্চার হয়েছেন। তাদের খায়েশ মেটাতে গিয়ে দেশটাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অবশ্য ফতোয়াবাজরা তো অসাংবিধানিক সরকার চাবেনই। কারণ তারা সাংবিধানিক সরকারের সময়ে মূল্য পান না। অসাংবিধানিক সরকার এলে তাদের মূল্য বাড়ে। সে কারণে তারা অসাংবিধানিক সরকার চান।
সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ষড়যন্ত্র চললেও তা নস্যাত্ করে সংবিধান অনুযায়ীই দেশ চলবে। কারণ এক-এগারোর কথা জনগণ ভুলে যায়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি নির্বাচনের সবই সুষ্ঠু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। মানুষ পছন্দমতো তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। শুধু আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। এরই মধ্যে তা প্রমাণিত হয়েছে।
সুশীল সমাজের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এক শ্রেণীর মানুষ সরকারের কাছ থেকে সুবিধা ভোগ করতে না পেরে মধ্যরাতের টকশো থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভাবে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমরা মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া গ্রামের মানুষ পাচ্ছেন। পাচ্ছেন না শুধু কিছু লোক। তারা (টেলিভিশনের টকশো) মধ্যরাতে জেগে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। এই রাত জেগে জেগে নাই নাই, এটা হলো না, ওটা হলো না। কিন্তু কোন অবস্থায় ছিল বাংলাদেশ? বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা থেকে কোথায় নিয়ে এসেছি। সেটা তো চোখে দেখেন না তারা। এই যে ঈদ গেল প্রত্যেকটি মানুষকে ১০ কেজি খাবার সাহায্য দিয়েছি। তারা কি একটুও চিন্তা করেন? অবশ্য তারা দেখবেন কীভাবে? চোখে তো তারা ঠুলি পরা।
আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা ঠেকাতে বিভিন্নমুখী ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রতিবছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে তাদের প্রতিবেদন দিলেও ২০০১ সালে হঠাত্ বলা নেই কওয়া নেই তারা দুর্নীতির রিপোর্ট প্রকাশ করল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়ার ঠিক আগে তড়িঘড়ি করে এই রিপোর্ট দেয়া হলো, যা ছিল সম্পূর্ণ বানোয়াট। এতেই বোঝা গেছে যে তাদের উদ্দেশ্য আছে। আর না হলে এভাবে নির্বাচনের আগে রিপোর্ট দেবে কেন।
তিনি বলেন, ওই সময় তেল-গ্যাস বিক্রি করতে রাজি হইনি বলেই আওয়ামী লীগ তখন ক্ষমতায় বসতে পারেনি। আমাদের দেশের সম্পদ বেচবে এক দেশ আর কিনবে আরেক দেশ। আমি রাজি হইনি। যার কারণে আমরা ভোট পেয়েও ক্ষমতায় যেতে পারলাম না।
প্রতিটি সাংগঠনিক জেলা থেকে একজন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এবং দলীয় প্রধান মনোনীত ২১ জনকে নিয়ে জাতীয় কমিটি গঠিত হয়। দলীয় প্রধানের মনোনীত কোটায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ ও আবদুল জলিলকে সম্প্রতি জাতীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলনের পর গতকালই জাতীয় কমিটির প্রথম বৈঠক হলো। তবে এখন থেকে এ কমিটির বৈঠক নিয়মিত হবে বলে জানান দলটির সভানেত্রী।
আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির বর্ধিত মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুমোদন দিয়েছে দলের জাতীয় কমিটি। এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে কমিটির মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়। গত ২৩ জুলাই আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির তিন বছর মেয়াদ শেষ হয়।
এখন থেকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি ছয় মাস অন্তর জাতীয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে জানান। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, বৈঠকে জাতীয় কমিটির তৃণমূল পর্যায়ের সদস্যরা তৃণমূল সংগঠনের সমন্বয়হীনতা ও সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা তুলে ধরেন। তারা স্থানীয় সংসদ সদস্যদের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, এমপিরা স্থানীয় নেতাকর্মীদের গুরুত্ব না দিয়ে নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করছেন। এমপির ‘লোকজন’ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির মাধ্যমে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছেন বলেও কেউ কেউ অভিযোগ করেন। তারা বলেন, এমপি ও স্থানীয় সংগঠনের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, তা এখনই না মেটানো হলে আগামী নির্বাচনে মূল্য দিতে হবে। বেশ কয়েকজন সদস্য তাদের নিজ নিজ এলাকার বর্তমান সংসদ সদস্যকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হলে নিশ্চিত পরাজয় বলেও মন্তব্য করেন।
বৈঠকে বেশ কয়েকজন সদস্য গণমাধ্যমের সমালোচনা করে বলেন, টিভি দেখলে আর পত্রিকা পড়লে শুধু সরকারের বিরুদ্ধেই খবর দেখি। বর্তমান সরকারের কাছ থেকে পাওয়া টিভি চ্যানেলগুলোও সরকারের সমালোচনা করছে। সরকারের কোনো ভালো কাজের খবর আমরা গণমাধ্যমে দেখি না।
বৈঠকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের এক সদস্য রামু প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন। তিনি এ ঘটনাকে সুপরিকল্পিত উল্লেখ করে বলেন, একটি মহল আওয়ামী লীগকে জড়ানোর চেষ্টা করছে। তিনি বৌদ্ধদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কক্সবাজারের রামু ও হিমছড়িতে দুটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের প্রস্তাব করেন। অন্যান্য সাংগঠনিক জেলা থেকে আসা সদস্যরা তাদের নিজ নিজ জেলার রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবি করেছেন।
সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমের ওপর জোর দেয়া হয়। যেসব জেলা ও উপজেলায় এখনো সম্মেলন হয়নি সেখানে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্মেলন সম্পন্ন করার তাগিদ দেয়া হয়।
প্রায় পাঁচ বছর পর গতকাল আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গঠনতন্ত্রের ১৭(ঝ) অনুযায়ী প্রতি ছয় মাস অন্তর জাতীয় কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

বিএনপির তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ : জঙ্গি প্রমাণ করতেই রামুর ঘটনা

কক্সবাজারের রামু, উখিয়া, টেকনাফ এবং চট্টগ্রামের পটিয়ায় বৌদ্ধবিহার ও বসতিতে হামলার ঘটনা সরকারের মদতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপির তদন্ত দল। সহিংসতার সুষ্ঠু তদন্ত করতে একজন সাবেক সিনিয়র প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবিও করেছে দলটি। সরেজমিন তদন্তে প্রাপ্ত সব তথ্য পর্যালোচনায় সরকারের ইন্ধনেই সাম্প্রদায়িক এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় বিএনপির তদন্ত দল। গতকাল সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ৬৭ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কাছে এ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।
বিএনপির অভিযোগ, আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সরকারের মদতে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মওদুদ আহমদ বলেন, ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ৯টা থেকে সাড়ে নয়টার মধ্যে শ’খানেক লোক মিছিল করে। এরপর ভোররাত ৫টা পর্যন্ত অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর লুটপাট হয়। পরদিন পটিয়ায়ও একই ধরনের ঘটনা ঘটে। প্রায় ২৪ ঘণ্টা সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল না। সরকারের উপস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, রামুর কেন্দ্রীয় সীমাবিহার থেকে থানার দূরত্ব ছিল মাত্র আধা কিলোমিটার। জেলা পুলিশ সদরের দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার আর সেনা ক্যাম্পের দূরত্ব ছিল ৪ কিলোমিটার। তারা কেউই পরিস্থিতি শান্ত বা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ভূমিকা নেয়নি। নিলে এই বর্বর নারকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। তাদের এই ব্যর্থতার কারণেই এ ঘটনা আজ জাতীয় ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আশ্চর্যের বিষয় হলো, যে উত্তম কুমার বড়ুয়ার জন্য ঘটনার সূত্রপাত, তার বাড়ির সামনে দিয়ে মিছিল হয়, আশপাশের বৌদ্ধবিহারে হামলা হয়, কিন্তু উত্তমের বাড়িতে একটি ইটও পড়েনি। তদন্ত দলের মনে এটি গভীর সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। তদন্ত দলটি ৫ ও ৬ অক্টোবর রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও পটিয়ায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। সেখানে তারা শ’ শ’ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে অন্তত ৬০ জনের বক্তব্য রেকর্ড করেন, বক্তব্যের ভিডিও দৃশ্য ধারণ করেন। তিনি বলেন, দলীয়ভাবে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হয়েছে। কারণ বিএনপি একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার, নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিস্ট অ্যান্ড পালি বিভাগের অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া এবং বিএনপি নেতা কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, আবদুল লতিফ জনি, আবদুস সালাম আজাদ, রফিক শিকদার প্রমুখ।
সহিংসতা পূর্বপরিকল্পিত : ক্ষতিগ্রস্ত ও আক্রান্ত লোকজনের সাক্ষ্য এবং হামলার ঘটনায় গান পাউডারের ব্যবহার ও সিমেন্টের তৈরি চৌকোণা ব্লক দেখে ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল বলে তদন্ত দল নিশ্চিত হয়েছে। এছাড়া তদন্ত দলটি অভিযোগ করে, রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার ওরফে কাজল ওই দিন বিএনপির সংসদ সদস্যদের সঙ্গে মিলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তার ভাই স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাইমুন সরওয়ার ওরফে কমল এ ঘটনায় মদত দিয়েছেন। ‘রামুর ঘটনায় স্থানীয় এমপি কাজল জড়িত’ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সমালোচনা করে মওদুদ বলেন, তার মতো দায়িত্বশীল পদে থেকে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই এ ধরনের কথা বলা ঠিক হয়নি। তাহলে তদন্ত করার দরকার কি? দোষী কে সেটা তো তিনি বলেই দিয়েছেন! এমপিই যদি এত ক্ষমতাবান হন, তাহলে সরকারের থাকার দরকার কি?
সুপারিশ : তদন্ত প্রতিবেদনে কয়েকটি সুপারিশও করা হয়েছে। স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় যাদের নাম এসেছে, তাদের গ্রেফতার করে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যারা যথাসময়ে দায়িত্ব পালন করেনি, তাদের যথাযথ শাস্তি দিতে হবে। এই ঘটনাকে পুঁজি করে সরকার বিরোধী দলের উপরে যে মিথ্যা অভিযোগ ও হয়রানি করেছে তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং সরকারের তদন্তের আগেই বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য লুত্ফর রহমান কাজলকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা প্রত্যাহার করতে হবে। ওইসব জনপদে বসবাসকারী সব জনগোষ্ঠীর দ্রুত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। ধ্বংস হওয়া বিহার, প্যাগোডা, মন্দির ও বসত বাড়ি নির্মাণে যত কোটি টাকা লাগুক পুনর্নির্মাণ করে দিতে হবে। স্বর্ণের মূর্তি যেগুলো চুরি হয়েছে সেগুলো উদ্ধার করে তাদের ফেরত দিতে হবে। পুড়ে যাওয়া ত্রিপিটক সংগ্রহ করে দিতে হবে। ১৫টি বিহার, মন্দির ও প্যাগোডা বানিয়ে দিতে হবে। আশপাশের পুড়ে যাওয়া ১৮টি বাড়িসহ ক্ষতিগ্রস্ত সব বাড়ি পুনর্নির্মাণের সহায়তা দিতে হবে।
মওদুদ বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার যে অংশ এই ঘটনায় মদত দিয়েছে, তাদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। কারণ প্রকৃত ঘটনা তারও জানত।
বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি : ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য একজন অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে অতিদ্রুত একটি তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করে প্রকৃত দায়ীদের শাস্তির বিধান করতে হবে। আগামীতে যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ১৪ জন সাবেক প্রধান বিচারপতি বেঁঁচে আছেন। তাদের মধ্য থেকে সিনিয়র একজনকে এ দায়িত্ব দিতে হবে। যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জনগণ গ্রহণ করবে না। ওই কমিটির তদন্ত রিপোর্ট হবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে নির্দোষ ঘোষণার মতো।
নানা প্রশ্ন : সংবাদ সম্মেলনে মওদুদ আহমদ বলেন, এ ঘটনায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিদেশে থাকলেও ৫ মিনিটের মধ্যে এ খবর জেনে যাওয়ার কথা। তিনি যদি না জানেন তাহলে মনে করতে হবে ওই সময় দেশে কোনো সরকার ছিল না। আর জানলে তিনি তাত্ক্ষণিকভাবে কেন ব্যবস্থা নেননি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত থাকাকালে পাশের থানায় কীভাবে হামলা হলো? তখন পুলিশ কি করেছে? তাহলে কি পুলিশের মধ্যকার চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে? শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া এ ঘটনা সঙ্গে সঙ্গে জানলেও তিনি কেন কোনো ব্যবস্থা নেননি? সব স্থানে একই ধরনের হামলা হয়েছে। এটা কীভাবে সম্ভব? যে গান পাউডার দিয়ে আগুন জ্বালানো হয়েছে তা কোথা থেকে, কারা এনেছে? ঘটনার মূলসূত্র উত্তম বড়ুয়ার বাড়ির সামনে দিয়ে মিছিল গেলেও তার বাড়িতে হামলা হলো না কেন?