Monday, September 24, 2012

বিশ্বব্যাংককে ফেরানোর নেপথ্য কথা

গওহর রিজভীর সাক্ষাৎকার
'দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে'_ এই অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণদানের চুক্তি বাতিল করায় সারাদেশে যখন তোলপাড়, স্বপ্নের সেতুর বাস্তবায়ন যখন গভীর অনিশ্চয়তায়, তখন প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করতে যারা নেপথ্যে থেকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তাদের অন্যতম গওহর রিজভী_ প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও যিনি নেপথ্যচারী, যারা কাজ কম করে কথা বেশি বলেন_ তাদের থেকে যিনি সম্পূর্ণ আলাদা তিনি এই গওহর রিজভী। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত রোববার সমকালকে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে অকপটে স্বীকার করেছেন, গওহর রিজভীই বিশ্বব্যাংককে ফিরিয়ে আনার অন্যতম নেপথ্য নায়ক। গতকাল সোমবার রাতে গওহর রিজভীকে এ কথা বললে তিনি অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বললেন, অর্থমন্ত্রী অত্যন্ত সজ্জন এবং বিনয়ী বলে এ কথা বলেছেন। আমি নই, তিনিই এ ব্যাপারে আমাদের টিম লিডার। আমি নেপথ্যে থেকে তারই পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেছি।
গওহর রিজভী সমকালকে এক সাক্ষাৎকারে বললেন, আমি একা নই, একটি টিম কাজ করেছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বুঝতে পেরেছেন, নিজের অর্থে এই সেতু নির্মাণ করতে দীর্ঘ সময় লাগবে। দেশের গায়ে লেগে থাকবে দুর্নীতির তকমা। তাই অর্থমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিলেন বিশ্বব্যাংককে ফিরিয়ে আনতে হবে। তার নেতৃত্বে আমরা বিশ্বব্যাংককে ফেরানোর উদ্যোগ নিলাম।
গওহর রিজভী বলেন, নানা কারণে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। অনেকের মুখের কথা
শুনে বিশ্বব্যাংক মনে করেছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে। আমরা বিশ্বব্যাংককে বোঝালাম, কোনো কন্ট্রাক্ট হয়নি, টেন্ডার হয়নি, দুর্নীতি কোথা থেকে হবে। তারা কিছু তথ্য দিল। কিছু নাম দিল। এটা কোনো প্রমাণ নয়। আমরা পুরোপুরি তদন্ত করতে শুরু করলাম। দ্বিতীয় যে কাজটি আমরা (সরকার) করেছি, আমরা কিছু আন্তর্জাতিক বন্ধুকে সঙ্গে নিলাম। এই বন্ধুরা আমাদের শুধু সমর্থনই করল না, বিশ্বব্যাংকের ভুল ধারণা ভাঙতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করল। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, চীন_ এই দেশগুলো বিরাট সহযোগিতা করেছে। তারা বিশ্বব্যাংকের বড় শেয়ারহোল্ডার।
ভারতীয় অর্থমন্ত্রী, জাপানের অর্থমন্ত্রী ও উপ-অর্থমন্ত্রী, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী, যুক্তরাজ্যের ডিএফআইডি মন্ত্রী_ তারা সবাই আমাদের সমর্থন দিলেন। তাতে আমাদের হাত মজবুত হয়ে গেল। ওরা বিশ্বব্যাংককে চাপ দিল। আমাদেরও বোঝাল, একটা সমঝোতা করো। কিছু শর্ত আমরা মানলাম, কিছু মানিনি।
গওহর রিজভী বললেন, আমরা বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তাদের জানালাম, ঋণের জন্য আবেদন করব না। আগের চুক্তি বহাল করো। বিশ্বব্যাংক বলল, ব্যাংকের ইতিহাসে এমন ঘটনা নেই। আমরা বললাম, ইতিহাসে নেই বলে যে ভবিষ্যতে হবে না_ এমন তো নয়। ওরা রাজি হলো। আরেকটি কাজ করেছি। সেতুর কাজে চারটি সংস্থা, একটা দেশ যুক্ত_ বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, আইডিবি ও বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ৩০ শতাংশ সেতুর খরচ দিচ্ছে। সবাই মিলে একটা কমিটি করব। যৌথভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
বিশ্বব্যাংকের দাবি অনুযায়ী যারা পদত্যাগ করলেন তাদের কীভাবে রাজি করালেন জানতে চাইলাম। প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা বললেন, সবাই স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। মন্ত্রী, সচিব সবাই স্বেচ্ছায় চলে গেছেন। মসিউর রহমানের একটা সন্দেহ ছিল যে, তিনি সরে গেলেও বিশ্বব্যাংকের এ ঋণ আমরা পাব না। যখন তাকে বোঝানো হলো, তিনি নিজের থেকে সরে গেলেন।
পদ্মা সেতু প্রকল্পকে ভবিষ্যতে দুর্নীতির অভিযোগমুক্ত রাখবেন কীভাবে_ প্রশ্ন ছিল গওহর রিজভীর কাছে। তার জবাব, আমরা সতর্ক থাকব। সবাই মিলেমিশে টেন্ডার করবে, সব কাজ করবে। বাংলাদেশ সরকার একটি স্টিয়ারিং কমিটি করে দেবে। তারা সবই দেখবে। দুর্নীতির যে অভিযোগ তার তদন্ত করবে দুর্নীতি দমন কমিশন। বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষক বা উপদেষ্টার ভূমিকা থাকবে। তদন্ত হবে আমাদের দেশের আইনে।
কবে নাগাদ নির্মাণ কাজ শুরু করতে চায় সরকার_ জানতে চাইলে গওহর রিজভী বলেন, ভেবেচিন্তে ঠিক করতে হবে। সুইচ টিপলেই হবে না। সরকারের ইচ্ছা, এপ্রিল-মে মাসে শুরু করবে। গওহর রিজভী জানান, পহেলা অক্টোবর দাতাদের ১০ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দল আসবে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা ওয়াশিংটন, এডিবির প্রতিনিধিরা ম্যানিলা, জাইকার প্রতিনিধিরা টোকিও থেকে আসবেন। ১০ জনকে একত্র হতে হবে। আজকালই প্রতিনিধি দল আসবে বলে সংবাদপত্রে যে খবর বেরিয়েছে তা ঠিক নয়। এই প্রতিনিধি দল কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেবে।
গওহর রিজভী বললেন, বিশ্বব্যাংককে পদ্মায় ফেরাতে আমরা একটি টিম হিসেবে কাজ করেছি। এই টিমের নেতা অর্থমন্ত্রী। সেই টিমে আমিসহ ইআরডির সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদ ছিলেন। গওহর রিজভী বলেন, বিশ্বব্যাংকের ঋণ না পেলে নিজের অর্থে পদ্মা সেতু করলে দেশের শিক্ষা, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, স্বাস্থ্য সব খাতের অর্থ কাটা পড়ত। বিশ্বব্যাংকের ঋণ পরিশোধের শর্ত খুবই সহজ। ১০ বছরে কোনো সুদ দিতে হবে না। তারপর সুদ মাত্র শূন্য দশমিক সাত শতাংশ। ৪০ বছরে পরিশোধ করতে হবে এ ঋণ। এটাকে ঋণ বলা যায় না_ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তা (আইডিএ) বলা হয়। এর মতো সহজ শর্তে পৃথিবীতে কেউ অর্থ দিতে পারে না। পদ্মা সেতু হলে মংলা বন্দর, আঞ্চলিক কানেকটিভিটি, অপরাপর সেতু সবই বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হবে। তিনি সবার প্রতি আবেদন জানিয়ে বলেন, বহু কষ্টে এ ঋণ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কেউ যেন এমন কোনো কিছু না করেন, এমন কিছু না বলেন কিংবা এমন কোনো কিছু না লেখেন, যাতে আবার সমস্যা দেখা দেয়। পদ্মা সেতু কোনো সরকারের নয়, সমগ্র জাতির স্বপ্ন। সকলে মিলে এ স্বপ্ন সফল করতে হবে।



জঙ্গিবাদের জুজু নিয়ে অপপ্রচারে নেমেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ইসলামী জঙ্গিবাদের জুজু নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অপপ্রচারে নেমেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ‘বিগত বিএনপি সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় মদতে বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে। আল কায়দার সঙ্গে এসব জঙ্গিগোষ্ঠীর সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। জঙ্গিরা প্রকাশ্যে শত শত মানুষকে হত্যা করেছে।’—এমন সব তথ্যসংবলিত একটি গোপন নোট সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দফতর থেকে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে পাঠানো হয়েছে। এই নোটের বিষয়বস্তু বিভিন্ন দেশের সরকার, কূটনীতিক এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তাদের কাছে তুলে ধরার জন্য বলা হয়েছে। গত ২০ জুলাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির দফতরের পরিচালক আন্দালিব ইলিয়াস বিএনপি-জামায়াতের অপশাসন শিরোনামের এই গোপন নোটটি পাঠিয়েছেন। তিনি তার নোটে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে এই নোট পাঠাতে বলেছেন।
নোটের বিষয়বস্তু হোস্ট কান্ট্রির পদস্থ কর্মকর্তা, সেখানে অবস্থিত অন্যান্য দূতাবাসের কূটনীতিক এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তাদের কাছে তুলে ধরার জন্য অনুরোধ জানানো হলো।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দফতরের এই গোপন নোটে ইসলামী জঙ্গিবাদসহ মানবাধিকার ও দুর্নীতির মতো ইস্যুগুলো তুলে ধরা হয়েছে। নোটে অনেক ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি এমন সব স্পর্শকাতর মন্তব্য করা হয়েছে, যা দেশের জন্য আত্মঘাতী বলে মনে করছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দফতরের এই গোপন নোটে বলা হয়, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় মদতে ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান ঘটে। আল কায়দার সঙ্গে এসব জঙ্গিগোষ্ঠীর সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। হরকাতুল জিহাদ বা জেএমবির মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো আল কায়দা এবং পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। বিগত জোট সরকারের আমলে এসব জঙ্গিগোষ্ঠী সরকারের সমান্তরাল শক্তি হিসেবে দেশ শাসন করেছে। তারা প্রকাশ্যে মানুষের ওপর নির্যাতন চালাত। জঙ্গিরা শত শত মানুষকে হত্যা করেছে বলে এই গোপন নোটে দাবি করা হয়েছে। জঙ্গিদের হাতে নিহতদের বেশিরভাগই তত্কালীন বিরোধী দলের (আওয়ামী লীগ) নেতাকর্মী বলে উল্লেখ করা হয়েছে নোটে।
জঙ্গিবাদের উত্থান সম্পর্কে গোপন এই নোটে আরও বলা হয়েছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ধর্মীয় জঙ্গিবাদের উত্থান এক নজিরবিহীন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়। পুলিশের সহযোগিতায় বাংলা ভাই, শায়েখ আবদুর রহমান ও মুফতি হান্নানের মতো জঙ্গিরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল শাসন করতে থাকে।
এসব জঙ্গি এবং বিএনপি-সমর্থিত সন্ত্রাসীরা তত্কালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর বোমা হামলা চালায়। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ গোপালগঞ্জে গির্জায় হামলার জন্যও জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো দায়ী বলে নোটে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিএনপির তীব্র সমালোচনা করে নোটে বলা হয়—ভোট চুরি, নারী ধর্ষণ, সাংবাদিক নির্যাতন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা, হিন্দু এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ছিল বিএনপির শাসনামলের চিত্র।
বিএনপি আমলে সন্ত্রাসী এবং জঙ্গিদের হাতে আওয়ামী লীগের ২৪ হাজার নেতাকর্মী নিহত হয়েছে বলে এই গোপন নোটে দাবি করা হয়।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ইসলামী জঙ্গিবাদ কঠোরভাবে দমন করছে। এছাড়া জঙ্গিবাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে নোটে উল্লেখ করা হয়েছে।
জঙ্গিবাদ সম্পর্কে নোটে আরও বলা হয়, বিএনপি সরকারের মদতে জঙ্গিরা ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালায়। এছাড়া বিগত সরকারের আমলে ১০ ট্রাক অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। এই অবৈধ অস্ত্রের চালান আসার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা জড়িত ছিল।
জঙ্গিবাদের পাশাপাশি আরও কিছু প্রসঙ্গ তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দফতরের এই গোপন নোটে বলা হয়েছে, বিএনপি সরকারের আমলে দুর্নীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায় এবং বিশ্বের এক নম্বর দুর্নীতিগ্রস্থ দেশে পরিণত হয়। বাংলাদেশ প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্যুত্ সংযোগ দেয়ার নামে তারা কোটি কোটি ডলার লুট করে। গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনতা হরণ করে। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা ১৩ সাংবাদিককে হত্যা করে। নোটে বলা হয়, বিএনপি সরকার মানবাধিকারের প্রতি কোনো ধরনের শ্রদ্ধাশীল ছিল না। জুডিশিয়াল প্রসেস বা বিচারিক প্রক্রিয়াকে তারা নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাসী বাহিনী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এই গোপন নোটে।
এদিকে এই গোপন নোটে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশনকে পুনর্গঠন করা হয়েছে এবং অতীতের তুলনায় দুর্নীতি দমন কমিশন এখন অনেক স্বাধীনভাবে কাজ করছে। দুর্নীতি এখন অনেক কমে এসেছে। সরকার জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠন করেছে। গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকরা এখন অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করছে। এছাড়া বিচার বিভাগ এখন পুরোপুরি স্বাধীনভাবে কাজ করছে বলে গোপন নোট দাবি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমান সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম, হত্যা, বিচার বিভাগ দলীয়করণ, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা, বিশেষ করে সাগর-রুনি হত্যার মতো ইস্যু নিয়ে দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা চলছে।

গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সুসংহত করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে বদ্ধপরিকর সরকার



দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো সুসংহত করে একটি গ্রহণযোগ্য ও অবাধ জাতীয় নির্বাচন করতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টির সিনেটর পিটার গলব্রেইথের সঙ্গে সাক্ষাতকালে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য হবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ এ কথা জানিয়েছেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৭তম অধিবেশনে যোগ দিতে ৯ দিনের সরকারি সফরে গত রোববার নিউইয়র্ক পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, সীমিত সম্পদ নিয়েও সরকার বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে। গত সাড়ে তিন বছরে সরকার স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে ৫ হাজার ১৮২টি নির্বাচন সম্পন্ন করেছে, যেগুলো সব মহলে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুসংহত করতে আমরা আন্তরিকভাবে সচেষ্ট রয়েছি। সামনের দিনগুলোতেও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা বদ্ধপরিকর বলেন প্রধানমন্ত্রী।

পিটার গলব্রেইথ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্যে তার বাবা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত জন কেনেথ গলব্রেইথকে মরণোত্তর সম্মাননা দেয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আবদুল মোমেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সফরকালে নিউইয়র্কে সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেয়ার পাশাপাশি জাতিসংঘে আইনের শাসন বিষয়ক ঊচ্চপর্যায়ের এক আলোচনায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও যোগ দেয়ার কথা রয়েছে তার।