Monday, September 17, 2012

বিশিষ্ট আইনজীবীদের অভিমত শপথবিহীন খায়রুল হকের রায়ে স্বাক্ষর করা সংবিধানের লঙ্ঘন


তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর সাবেক প্রধান বিচারপতি অবসরে যাওয়ার পর রায়ে স্বাক্ষর করার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের বিশিষ্ট আইনজীবীরা। তারা বলেছেন, বিচারপতিরা শপথ নিয়ে বিচার কাজ করেন। অবসরে যাওয়ার পর শপথ কার্যকর থাকে না। ২০১১ সালের ১৭ মে অবসরে গেছেন এবিএম খায়রুল হক। ফলে শপথহীন অবস্থায় তার রায়ে স্বাক্ষর করার আইনগত অধিকার নেই। রায়ে স্বাক্ষর করায় সংবিধানের লঙ্ঘন হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন বিশিষ্ট এই আইনজীবীরা।
এ প্রসঙ্গে দেশের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক বিচারপতি টিএইচ খান রায়ে বলেছেন, আগে থেকেই বলেছি, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক এ রায় দেয়ার অধিকার হারিয়েছেন। এ কথাটার তোয়াক্কা করেছেন বলে মনে হয় না। এটা সংবিধানের লঙ্ঘন। শপথ গ্রহণের পর অবসরে যাওয়া এটা সংবিধানের বিধান। মন্ত্রী বা বিচারপতিদের কার্যকর হয় শপথ নেয়ার দিন থেকে। এর গুরুত্বটা কি আরো বেশি করে বলতে হবে? এটা সংবিধানের বাধ্যবাধকতা।
কিন্তু বিচারপতি খায়রুল হক সাহেব ১০ মে ২০১১ সংক্ষিপ্ত কয়েকটি বাক্যে রায় দিয়েছিলেন। তারপরে ১৭ মে অবসর নিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অবসর নেয়ার পরে কলম ধরতে পারেন কি না। ১৮ মে থেকে উনি কলম ধরতে পারেন না। এটা সো সিম্পল। ১৬ মাস পর উনি পূর্ণাঙ্গ রায় দিয়েছেন তা নাকি বাংলায় লিখেছেন। ১৭ মে এর পরে তার রায় দেয়ার কোনো অধিকার নেই। লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে এটা করা হয়েছে। এটা কিভাবে হয়। খায়রুল হক ছাড়া বাকী ছয় বিচারপতি রায়টা দিলেও সমস্যা ছিল না।
সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে শতাধিক বিচারপতি রয়েছে। তারা এটা লক্ষ্য করেননি। ইতোমধ্যে একটা কানাঘুষা হয়েছে, তিনি একবার বলেছিলেন, ২৯ মার্চ ২০১২ রায় জমা দিয়েছেন। পরে অন্যান্য বিচারপতিরা তার সাথে কিছু কিছু দ্বিমত পোষণ করেছেন বলে জমা দেয়া রায় আবার ফেরত নিয়ে গেছেন এবং গত বৃহস্পতিবার রি রাইট করেছেন। এগুলো কি? তিনি কি তখন বিচারপতি ছিলেন? তিনি বিচারপতি ছিলেন ১৭ মে পর্যন্ত।
এর বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নিবেন কি না এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা চেষ্টা করব। অরণ্যের রোদন করব। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট হলে করা যেত। কারণ এত বড় একটা জঘন্য উদাহরণ। এত বড় একটা জখম বা ঘা। যা নিয়ে জনগণ বেঁচে থাকবে যে, চাকরি শেষ হওয়ার ১৬ মাস পরে রায় দেয়া যায়।
এখন কেউ যদি রসিকতা করে বলেন যে, কবরে গিয়েও রায় লিখে পাঠিয়ে দেয়া যাবে। গায়ের জোরে এ রায় এটা করা হয়েছে। এর জন্য লজ্জা পাওয়া উচিত। যা হবার তো তা হয়ে গেছে। এ রায়টি ছিল একটি শো পিস। ১৬ কোটি মানুষকে বোঝানোর জন্য এ রায় দেয়া হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায় আসার আগে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনীতে ৫১টি জায়গায় ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়ে স্বাক্ষর করার ‘আইনগত অধিকার' নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। তিনি বলেন, সাবেক এই প্রধান বিচারপতির রায়ে স্বাক্ষর করার আইনগত অধিকার নেই।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, রায় ঘোষণার ১৬ মাস পর সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক রায়ে স্বাক্ষর করেছেন। তিনি এখন আর ‘সিটিং জাজ' নন। তিনি এখন আর শপথের মধ্যে নেই। তাই এই রায়ে স্বাক্ষর করার আইনগত অধিকারও তার নেই।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, একজন বিচারপতি শপথ নেন সংবিধানের অধীন। সংবিধান অনুযায়ী বিচার কাজ পরিচালনায় রাগ-অনুরাগের ঊর্ধ্বে থেকে বিচার কাজ করবেন বলে এই শপথ নেয়া হয়। অবসরের ডান সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে। ফলে অবসরের পর বিচারপতির আর শপথ কার্যকর থাকে না। শপথবিহীন অবস্থায় তার রায় লেখা বা স্বাক্ষর করা আইনসঙ্গত হবে না। আইনগত এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন ওঠবে। কারণ শপথে না থাকায় তিনি রাগ-অনুরাগের বশবর্তী হয়ে রায়কে প্রভাবিত করতে পারেন। শপথে থাকলে এমনটি হত না। তাই শপথের পর রায় লেখা কতোটা আইনসঙ্গত হবে এটার বার দেশের জনগণের ওপর ছেড়ে দিলাম।
সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, একজন বিচারপতির শপথ কার্যকর থাকে যতদিন তিনি বিচারপতি থাকেন। অবসরে চলে গেলে শপথ আর কার্যকর থাকে না। বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ২০১১ সালের ১৭ মে অবসরে চলে গেছেন। অবসরে যাওয়ার ১৬ মাস পর তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়ে স্বাক্ষর করেছে। এটা নজীরবিহীন। শপথ কার্যকর না থাকায় তিনি আইনগতভাবে রায়ে স্বাক্ষর করতে পারেন না।




বিতর্কিত ছবির জন্য ইউটিউব বন্ধ

undefined

ইসলাম ও হজরত মোহাম্মদকে (স.) ‘হেয় করে নির্মিত’ চলচ্চিত্র ‘ইনোসেন্স অব মুসলিমস’ এর জন্য বাংলাদেশে ইউটিউব বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। 

সোমবার সন্ধ্যা থেকে ইন্টারনেটে বিভিন্ন স্থান থেকে ইউটিউবে ঢোকা যাচ্ছিল না। 

এই বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিস বিভাগের এক কর্মকর্তা  বলেন, ইউটিউব ব্লক করে দেয়া হয়েছে। 

তবে রাতেও বিভিন্ন এলাকায় ইউটিউবে ঢোকার তথ্য জেনে বিটিআরসিতে টেলিফোন করা হলে ওই কর্মকর্তা বলেন, তারা কাজ শুরু করেছেন। কারিগরি জটিলতার কারণে সব স্থানে ব্লক হতে সময় লাগছে। 

ইউটিউবে বিতর্কিত ওই চলচ্চিত্রের বিভিন্ন অংশ আপলোড করা ছিল, যে ছবি নিয়ে বিক্ষোভ-সহিংসতায় মধ্যপ্রাচ্যসহ কয়েকটি দেশে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। 

এদিকে বিতর্কিত ওই চলচ্চিত্রের ভিডিও ক্লিপ সরিয়ে নিতে ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন গুগলকেও সরকারের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। 

রোববার এই চিঠি দেয়া হয় বলে  জানিয়েছেন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন আহমেদ। 

তবে সোমবার বিকাল পর্যন্ত এ বিষয়ে গুগল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। 

চিঠির উত্তর না দিলে বা ভিডিও ক্লিপটি সরিয়ে না নিলে গুগল বা ইউটিউব ব্লক করে দেওয়া হবে কি না জিজ্ঞেস করা হলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তখন বলেছিলেন, “পরবর্তী সিদ্ধান্ত সরকার নেবে। আমরা গুগলের উত্তরের অপেক্ষায় আছি।” 

গত ২৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পাওয়া ‘ইনোসেন্স অব মুসলিমস’ নামের চলচ্চিত্রটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। লিবিয়া ও মিশরে ইসলামপন্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে হামলা চালায়। রকেট হামলায় নিহত হন লিবিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফার স্টিভেনসসহ চার জন। 

বাংলাদেশেও কয়েকটি ইসলামী সংগঠন বিক্ষোভ প্রদর্শনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পতাকায় অগ্নিসংযোগ করে। 

এই প্রেক্ষাপটে শনিবার বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও ‘ইনোসেন্স অব মুসলিমস’ মুক্তি দেয়ার প্রতিবাদ জানানো হয়। 

বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভের মুখে ইতোমধ্যে ভারত, মিশর ও লিবিয়ায় ইউ টিউবে ধারণকারী ওই চলচ্চিত্রের অংশবিশেষ সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে গুগল জানিয়েছে। 

এছাড়া আফগানিস্তানে ইউটিউব ওয়েবসাইটই ব্লক করে দিয়েছে সরকার। ইন্দোনেশিয়াও ভিডিওচিত্রটি সরিয়ে নেয়ার জন্য গুগলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। 


পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদের আলোচনা সভায় গয়েশ্বর : পদ্মা সেতুর নামে খরচ হওয়া ১৫শ’ কোটি টাকা কীভাবে লুটপাট হয়েছে খুঁজে বের করতে হবে

পদ্মা সেতু প্রকল্পে এরই মধ্যে খরচ হওয়া ১৫০০ কোটি টাকা কিভাবে লুটপাট হয়েছে তা খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি জানান। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, পদ্মা সেতু দুর্নীতিতে শুধু সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন নয়, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর পরিবার জড়িত। প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ও মেয়ের জামাই দুর্নীতির কারণে গ্রেফতারের ভয়ে কানাডা থেকে পালিয়ে এসেছে। তার ছেলের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সেটাও আমেরিকা তদন্ত করছে।
পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ডা. গাজী আবদুল হকের সভাপতিত্বে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ডা. এমএ মাজেদ, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক ডা. এম এম মান্নান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাব্বির মোস্তফা খান, দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক আবদুল আওয়াল ঠাকুর, মেজর (অব.) ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য জোটের অতিরিক্ত মহাসচিব জাকির হোসেন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করে বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক কৃষিবিদ শামিমুর রহমান।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সেতুর নামে খোঁজ নেই ১৫শ’ কোটি টাকা লুটপাট হয়ে গেছে। এই টাকা কারা কিভাবে লুটপাট করেছে খুঁজে বের করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিচার থেকে রেহাই পেতে উড়াল দিয়ে পালানোর চেষ্টা করতে পারেন উল্লেখ করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, তিনি উড়াল দিলেও কোনো জায়গায় ল্যান্ড করতে পারবেন না। এরই মধ্যে তার মেয়ে ও মেয়ের জামাই কানাডা থেকে পালিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, আগে দুর্নীতি সঙ্গে প্রশাসনের লোকজন জড়িত বলে শোনা যেতো। এখন শুধু প্রশাসন নয়, নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে যারা প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করেন তারা নিজেরাই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, আবুল হোসেনকে কোরবানি দিয়েও প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর জন্য বিশ্বব্যাংকের ঋণ ধরে রাখতে পারেননি। আগামীতে দেশপ্রেমিক সরকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া পদ্মা সেতু নির্মাণের কোনো সম্ভাবনা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দলেও দুর্নীতির অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে তাদেরকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন এবং সরকার গঠনে মন্ত্রিত্ব থেকে দূরে রাখতে হবে। নতুবা আমাদেরও একই পরিণতি হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, অতীতে অতি ক্ষমতাধর প্রধানমন্ত্রী সব রাজনৈতিক দল বাতিল করে এবং সব পত্রিকা ও গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েও ক্ষমতায় ঠিকে থাকতে পারেনি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও ক্ষমতা আকড়ে থাকার জন্য নানা ফন্দিফিকির করছেন। এসব কোনো কাজে আসবে না, অতীত আমাদের সেটাই শিক্ষা দিয়েছে। সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতু পরিকল্পনায়ই ডুবে গেছে। ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক সরকার ছাড়া পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, চারদলীয় জোট ও বিএনপি সরকারের আমলে অতীতে যমুনা সেতু, ভৈরব সেতু, কর্ণফুলী সেতু থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। একটি প্রকল্প নিয়েও কেউ কোনো দিন দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন করতে পারেনি। আর এই সরকারের আমলে একটি মাত্র প্রকল্প পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরুর আগেই দুর্নীতিতে ডুবে গেছে। তিনি বিশ্বব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগামীতে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা হলে পদ্মা সেতুর ঋণের টাকা আবার ছাড় করার ব্যবস্থা রাখুন। তিনি বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীনরা নিজেদের আখের গোছানোর জন্য পদ্মা সেতু ডুবিয়ে দিয়েছে। এই দুর্নীতির বিচার একদিন দেশের মানুষ করবেই।

কখনও বলিনি আমি সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: বিমানবন্দরে সাহারা


undefined


 নিজেকে সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কখনও দাবি করেননি বলে জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। সোমবার ভোর ৬টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।

যুক্তরাষ্ট্রে দুই দিনের ব্যক্তিগত সফর শেষে তিনি সোমবার ভোরে ঢাকায় ফেরেন।

তিনি বলেন, “আমি কখনও বলিনি যে আমি একজন সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমি কি দায়িত্ব পালন করেছি, এটা দেখার দায়িত্ব দেশবাসীর।”

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনাদের উচিত সেই সঠিক তথ্য দেশবাসীকে জানানো।”
অন্যদিকে নিউইয়র্কে তিনি বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমি সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। রোববার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের পালকি সেন্টারে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের এক সভায় তিনি এ কথা বলেন।  
১৫ সেপ্টেম্বর সাহারা খাতুনকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে কেন রদবদল, এমন প্রশ্নের জবাবে সাহারা খাতুন বলেন, “আমাদের যে কাউকে যে কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিতে পারে। আর আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেই দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত।”

তিনি বলেন, “ব্যর্থতার কারণে আমাকে সরানো হয়নি। কারণ আমি আইন-শৃংখলার উন্নয়নে কি কাজ করেছি তা দেশবাসী জানে।”

সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার বিচার হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “অবশ্যই সাগর-রুনির হত্যাকারীকে খুঁজে বের করা হবে।”

তবে বিমানবন্দরে সাহারাকে স্বাগত জানাতে গিয়ে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দিন খান আলমগীর সাহারা খাতুনের প্রশংসা করে বলেন, “৭৫ সালের পর থেকে সাহারা খাতুনই সবচেয়ে সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। দেশে যে সকল বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে সব বিচার সুষ্ঠুভাবে করা হবে।”

তিনি আরো বলেন, “সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশে যখন তখন মন্ত্রীর রদবদল হতে পারে, কারণ সব মন্ত্রীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ পরিচালিত হয়। কে কোন দায়িত্ব পেল সেটা বড় কথা নয়।”

বিমানবন্দরে এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার ও ডিএমপি কমিশনার বেনজির আহম্মেদ প্রম‍ুখ।

এমএলএম আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড



undefined
সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা ও পাঁচ বছর কারাদণ্ডের বিধান রেখে ডাইরেক্ট সেল আইন ২০১২-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এটি মূলত বহুস্তর বিপণন (এমএলএম) নিয়ন্ত্রণ-সম্পর্কিত আইন। প্রতারণা ও জালিয়াতির দায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি এটা।
আজ সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এ বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য জানান।
এই আইনের খসড়া তৈরি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত ৩০ আগস্ট তারা তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠায়। ১৪টি অধ্যায়, ৪৮টি ধারা ও দুটি তফসিল মিলিয়ে এই খসড়া আইন।
আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, যারা এর মধ্যে এ ব্যবসা করছে, নতুন করে তাদের লাইসেন্স করতে হবে।
খসড়া আইনের ১২ থেকে ২৯, অর্থাত্ মোট ১৮টি ধারায় শাস্তি সম্পর্কে কথা বলা হয়েছে। খসড়া অনুযায়ী, আইন লঙ্ঘনকারীদের জেল খাটতে হবে তিন থেকে পাঁচ বছর। লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসার জন্য সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা ও তিন থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। লাইসেন্স নবায়ন ছাড়া ব্যবসা করলে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা ও ছয় থেকে ১২ মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট পণ্য ছাড়া অন্য পণ্যের ব্যবসা করলে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা ও তিন থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। মোড়কবিহীন পণ্যের ব্যবসা করলে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা ও এক-দুই বছরের কারাদণ্ড। পরিবেশকদের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও এক থেকে তিন বছরের কারাদণ্ডের শাস্তির প্রস্তাব করা হয়েছে আইনে।
খসড়ার সারসংক্ষেপে বলা হয়, ‘এমএলএম কোম্পানির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে দেশে কোনো আইন নেই। কোম্পানি আইনে নিবন্ধন নিয়ে বা সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে এ ব্যবসা করা হচ্ছে। এরা কখনো উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করছে জনগণকে। আবার কখনো অলীক পণ্য বিপণনে অস্বাভাবিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে আসছে।’ এ কাজ আর করা যাবে না বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়।
আইনের চতুর্থ অধ্যায়ের প্রস্তাব অনুযায়ী, কিছু ক্ষেত্রে এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসা নিষিদ্ধ করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন পিরামিডসদৃশ বিক্রয় কার্যক্রম করা যাবে না। অবস্তুগত বা অলীক পণ্য এবং সময়ের ধারাবাহিকতা বা পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিপণনযোগ্য হবে—এমন পণ্য বা সেবা নিয়েও ব্যবসা করা যাবে না।
আইন লঙ্ঘন হলে লাইসেন্স বাতিল: যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের পরিদপ্তর (রেজসকো) থেকে বিদ্যমান ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের আওতায় লাইসেন্স ও নিবন্ধন নেওয়ার কথা আইনে বলা হয়েছে। তবে আইন যথাযথভাবে পরিপালিত না হলে যেকোনো সময় লাইসেন্স বাতিল করা যাবে।
লাইসেন্স পাওয়ার জন্য নামের ছাড়পত্র, সংঘবিধি ও সংঘস্মারক, পণ্যতালিকা, ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি এবং কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের সমপরিমাণ অর্থের ব্যাংক গ্যারান্টি নিয়ে আবেদন করতে হবে। কাগজপত্র যাচাই করে ২৫ দিনের মধ্যে প্রয়োজনে শুনানি গ্রহণ করে লাইসেন্স দেওয়া হবে।
কী কী পণ্যের ব্যবসা করা যাবে: 
এমএলএম পদ্ধতিতে যেসব পণ্যের ব্যবসা করা যাবে, এর একটি তালিকা আইনের দ্বিতীয় তফসিলে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে: গৃহস্থালি, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক, হোম এপ্লায়েন্স, প্রসাধন ও টয়লেট্রিজ, হারবাল, টেলিমার্কেটিং, কৃষিজ ও কৃষিজাত, টেলিকমিউনিকেশন সেবা বা ব্যবহারযোগ্য পণ্য এবং প্রশিক্ষণসংক্রান্ত সেবা ও পণ্য। তবে চতুর্থ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, এই তালিকা কমানো-বাড়ানোর এখতিয়ার সরকারের হাতে থাকবে।
এখন এই খসড়া আইন যাচাই-বাছাইয়ের (ভোটিং) জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আবারও মন্ত্রিসভায় তোলা হবে। পরে তা উপস্থাপন করা হবে জাতীয় সংসদে।