Wednesday, October 3, 2012

বিদ্যুতে সরাসরি বিনিয়োগ করতে চায় জিই


 
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহত্তম কোম্পানি জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই) বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে সরাসরি বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

বুধবার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতিবিনিময় সভায় এ আগ্রহের কথা জানান ঢাকা সফরে আসা কোম্পানিটির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেফরি ইমেল্ট।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেও একই আগ্রহের কথা জানিয়েছেন জেফরি ইমেল্ট। ইমেল্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কর্মসংস্থান ও কার্যসক্ষমতা বিষয়ক পরামর্শক।

জিই সরাসরি বিনিয়োগ করবে কিনা- এক সম্পাদকের এ প্রশ্নের উত্তরে জেফরি ইমেল্ট বলেন, “বাংলাদেশ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ২০ হাজার মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা এই দেশে এই খাতে বড় বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।” 


জিই বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য গ্যাস টারবাইন সরবরাহ করে। কোম্পানিটি স্বাস্থ্য ও বিমান উপকরণের ব্যবসাও করে থাকে।

জিই চেয়ারম্যান বলেন, “গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি লক্ষ্য করার মতো। জিই এই দেশের মানুষের উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবন-যাপন কামনা করে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাতে সরকার ও আমাদের গ্রাহকদের (জিই গ্রাহক) প্রযুক্তিগত সহায়তার পাশাপাশি সরসরি বিনিয়োগও করতে চাই।”

বাংলাদেশে রাশিয়ার সহায়তা পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিষয়ে এক সম্পাদকের প্রশ্নের জবাবে মৃদু হেসে ইমেল্ট বলেন, “আমরাও রিঅ্যাক্টর তৈরি করি। বিষয়টি আমাদের খেয়ালে আছে।” 


গ্যাস টারবাইন সরবরাহের চুক্তি

রাজধানীর একটি হোটেলে মতবিনিময় সভার আগে জিই বাংলাদেশে ৮৯ মিলিয়ন ডলার মূল্যের দুটি গ্যাস টারবাইন সরবরাহের চুক্তি করেছে। এই টারবাইন দুটি নতুন বিদ্যুৎ প্রকল্পে ব্যবহৃত হবে, যা থেকে ৬৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।

বাংলাদেশে এই প্রথম জিইর উচ্চমান সম্পন্ন গ্যাস টারবাইন ব্যবহৃত হচ্ছে।

জিই পাওয়ার অ্যান্ড ওয়াটার একটি ৯ এফ-থ্রি সিরিজের গ্যাস টারবাইন ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে স্পেনের প্রতিষ্ঠান আইসোলাক্স ইনজেনারিয়া এসএকে। আইসোলাক্স সিদ্ধিরগঞ্জে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। 

দ্বিতীয় গ্যাস টারবাইনটি ব্যবহৃত হবে সামিট কর্পোরেশনের বিবিয়ানাতে নির্মীয়মান বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি ও বিদ্যুৎ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক ইলাহি চৌধুরী, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান, আইসোলাক্সের চেয়ারম্যান লুইস ডেলসো ও জিই ভারত -এর সিইও জন ফ্ল্যানেরি উপস্থিত ছিলেন।

তৌফিক ইলাহি চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকারের লক্ষ্য পূরণ করতে গুরুত্বপুর্ন দুটি পদক্ষেপ হচ্ছে সিদ্ধিরগঞ্জ ও বিবিয়ানা প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন। জিই-এর সঙ্গে এই সহযোগিতা চুক্তি পুরো দেশকেই অনেকদুর এগিয়ে দেবে বলে আমার ধারনা।”

সিদ্ধিরগঞ্জ ও বিবিয়ানা প্রকল্প যথাক্রমে ২০১৪ ও ২০১৫ সাল থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেফরি ইমেল্টের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি ঢাকায় আসে। বুধবার রাতে তারা ফিরে গেছেন। 

আলালসহ ২২ বিএনপি নেতাকর্মী রিমান্ডে

 
বিজয়নগর এলাকা থেকে বুধবার যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে ডিবি পুলিশ সমকাল
















রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি এবং মালিবাগে জামায়াত নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। পল্টন থানার দুই মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ ২৫ জনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। বিকেলে দুই মামলায় আলালসহ ২২ জনের দু'দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ঘটনার পর থেকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুলিশ অবরুদ্ধ করে রাখে।
মামলা এবং গ্রেফতারের প্রতিবাদে ৮ অক্টোবর সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বুধবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কক্সবাজারের রামু-উখিয়া-পটিয়াতে বৌদ্ধবিহার ও মঙ্গলবার দলীয় সমাবেশে হামলার ঘটনা একসূত্রে গাঁথা। গ্রেফতারের পর বরিশাল, ভোলা, খুলনা, ঝালকাঠি, জামালপুর ও ঢাকার ধামরাইয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে যুবদল। ফেনীতে বিক্ষোভকারীরা একটি
গাড়িতে অগি্নসংযোগ করে। ঘটনার পর থেকে আধাঘণ্টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে।
নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার মধ্যরাতে পল্টন থানায় দায়ের করা দুটি মামলার মধ্যে একটিতে গাড়ি ভাংচুর, পুলিশকে মারধর ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্য মামলাটি করা হয়েছে দ্রুত বিচার আইনে। এ দুই মামলায় ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও আড়াই হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মালিবাগে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে রমনা থানায়। এতে বেআইনি সমাবেশ ও ভাংচুরের অভিযোগ এনেছেন মামলার বাদী উপপরিদর্শক আজম উদ্দিন। এতে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়।
এদিকে ঘটনার পর থেকেই কার্যালয়ে দু'শতাধিক নেতাকর্মী আটকা পড়েন। কার্যালয় পুলিশ ঘিরে রাখে। বাইরে র‌্যাবসহ সাদা পোশাকধারী পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের একাধিক মাইক্রোবাস নিয়ে অবস্থান করতে দেখা গেছে। সংঘর্ষের পর মঙ্গলবার রাতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লা বুলু এবং বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক খাবার নিয়ে যান। রাতে থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের কয়েকজন কর্মী বের হলে তাদের আটক করা হয়। গতকাল সকালে কর্মীরা নির্বিঘ্নে কার্যালয় ত্যাগ করলেও নেতাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। কয়েকবার চেষ্টা করেও পুলিশের সতর্ক পাহারার কারণে তারা বের হতে পারেননি।
গ্রেফতার এড়াতে অবরুদ্ধ কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করছেন মামলার আসামি স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল, ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভঁূইয়া জুয়েল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সভাপতি মুহিদুল হাসান হীরুসহ কয়েকজন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ অভিযোগ করেন, তাদের নেতাকর্মীদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। কেউ বের হলেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। এভাবে মামলা-ঘেরাও করে আন্দোলন দমানো যাবে না। অবশ্য মতিঝিল জোনের এডিসি মেহেদী হাসান সাংবাদিকদের বলেন, তারা রুটিন ডিউটি পালন করছেন। নিরাপত্তার জন্য বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশ রয়েছে। কাউকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়নি।
এর আগে সকালে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, রেহানা আক্তার রানু, আশিফা আশরাফী পাপিয়া, রাশেদা বেগম হীরাসহ সিনিয়র নেতারা কার্যালয়ে যান। এর একটু পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকাও কার্যালয়ে আসেন। পরে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলাল কার্যালয় থেকে বের হয়ে এক আইনজীবীর গাড়িতে উঠলে পুলিশ তাকে আটক করতে চায়। এ সময় দলীয় এমপিরা তাতে বাধা দেন। কার্যালয় থেকে গাড়ি বিজয়নগর মোড়ে গেলে সেখানে ডিবি পুলিশ আলালকে গ্রেফতার করে। এ সময় আইনজীবীদের সঙ্গে পুলিশের বাকবিতণ্ডা হয়। অবশ্য, আগের রাতে মামলার আসামি যুবদল সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরবসহ কয়েকজন পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কার্যালয় থেকে বের হয়ে যান।
তিন মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন_ স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব, সিনিয়র সহসভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, যুগ্ম সম্পাদক ওবায়দুল হক নাসির, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব আহসান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদল সভাপতি হামিদুর রহমান হামিদ, রফিকুল আলম মজনু, ছাত্রদল দক্ষিণ সভাপতি ইসহাক সরকার, সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এনাম প্রমুখ।
নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ পণ্ড করতে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। কক্সবাজারের রামু, উখিয়া ও পটিয়াতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও মৎস্যজীবী লীগের লোকজন বৌদ্ধবিহারে হামলা করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করেছে। তারা আশঙ্কা করছে, সরকার দেশে অস্থিতিশীল ও সংঘাতময় পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য এ ধরনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
ছাত্রদলের কর্মসূচি স্থগিত : পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার বিকেল ৪টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদলের সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে। দলের সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জানান, পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় এ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।
আদালত প্রতিবেদক জানান, দ্রুত বিচার আইনের মামলায় যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের ২২ নেতাকর্মীর দু'দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। আলালসহ গ্রেফতার ২৫ আসামির মধ্যে তিনজন আইনজীবী হওয়ায় তাদের দুই মামলাতেই রিমান্ড বাতিল করে জামিন দেন বিচারক। জামিন পাওয়া ওই তিন আইনজীবী হলেন_ মোশাররফ, সোহাগ ও মানিক।