বিশ্ব সংবাদ


রিয়াদে তেলবাহী ট্যাংকার বিস্ফোরণে নিহত ২২











সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের পূর্বাঞ্চলে বৃহস্পতিবার সকালে একটি জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকার বিস্ফোরণে কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছে বলে সৌদি নিরাপত্তা এবং বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা থেকে জানানো হয়েছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিকও রয়েছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

এছাড়া আহত হয়েছেন আরো শতাধিক। তবে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রিয়াদের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় খুরাইশ রোডে বাদশাহ ফাহাদ সেতুর ওপর তেলবাহী ট্যাংকারটির বিস্ফোরণে
হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।
নিহতদের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে এদের মধ্যে বাংলাদেশি, পাকিস্তানি ও ভারতীয়সহ অন্যান্য বিদেশি নাগরিক থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকারটি উড়াল সেতুতে ওঠার সময় একটি গ্যাস ট্যাংকারের সঙ্গে সংর্ঘষ ঘটে। এর কিছুক্ষণ পরই বিস্ফোরণ ঘটে বলে জানা গেছে।

বিস্ফোরণের পর পাশে অবস্থিত একটি উঁচু ভবন ধসে পড়লে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে ভবনটি প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় বলে সংবাদ মাধ্যম জানায়।

বিস্ফোরণে আশপাশের আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ভবন, উঁচু স্থাপনা এবং যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিভিন্ন চিত্র দেখায় আল আরাবিয়া এবং আল জাজিরা টেলিভিশন।

বিস্ফোরণের পর শতাধিক জরুরি উদ্ধারকর্মী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন বলে জানায় সংবাদ মাধ্যম। উদ্ধারকর্মীরা তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন

খালাফ হত্যার বিচার শুরু


সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা খালাফ আল আলী হত্যা মামলায় ৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ(চার্জ) গঠন করেছেন আদালত। অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে খালাফ হত্যার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো।

বুধবার ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মোতাহার হোসেন এ অভিযোগ গঠন করেন। বৃহস্পতিবার এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন আদালত।

মামলার ৫ আসামির মধ্যে গ্রেফতারকৃত চারজনকে জেলহাজত থেকে আদালতে আনা হয়। তাদের উপস্থিতিতেই অভিযোগ গঠিত হয়। ডাকাতি করতে গিয়ে খুন করার অপরাধে দণ্ডবিধি আইনের ৩৯৬ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

একই সঙ্গে আসামি সাইফুল ইসলাম ওরফে মামুন, মো. আল আমীন, আকবর আলী লালু ওরফে রনি ও রফিকুল ইসলাম খোকনকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন খারিজ করে দেন আদালত।

আসামিদের পক্ষে তাদের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম খন্দকার পলাশ এ আবেদন করেছিলেন।

অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- সাইফুল ইসলাম ওরফে মামুন, মো. আল আমীন, আকবর আলী লালু ওরফে রনি, রফিকুল ইসলাম খোকন ও সেলিম চৌধুরী ওরফে সেলিম আহম্মেদ। তাদের মধ্যে সেলিম পলাতক রয়েছেন।

আসামিদের অভিযোগ পড়ে শোনানোর পর তারা এ হত্যাকাণ্ড বিষয়ে দোষী না নির্দোষ জিজ্ঞাসা করা হলে তারা নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলার অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন বিশেষ পিপি এসএম রফিকুল ইসলাম। তাকে সহায়তা করেন সৌদি দূতাবাসের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার।

অভিযোগ গঠনের পক্ষে বিশেষ পিপি বলেন, ‘‘আসামিরা ডাকাতির উদ্দেশ্যে গাড়িতে করে ঘুরে বেড়ানোর সময় গুলশানের কূটনৈতিক এলাকার ১২০ নম্বর সড়কের ১৯/বি নম্বর বাসার সামনে মামলার ভিকটিম খালাফকে পেয়ে ডলার পাওয়ার আশায় পকেটে হাত দেন। পরে ধস্তাধ্বস্তির সময় আসামিরা খালাফকে গুলি করে হত্যা করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৯৬ ধারায় অভিযোগ গঠনের উপাদান বিদ্যমান। সকল আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করার আবেদন জানাচ্ছি।’’

আসামিদের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম খন্দকার পলাশ অভিযোগ গঠনের জন্য ``পর্যাপ্ত উপাদান নাই`` মর্মে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানান।

তিনি বলেন, ‘‘আসামিরা এ হত্যাকাণ্ডে সঙ্গে জড়িত নন। গত ৪ জুন তারা একটি মামলায় গ্রেফতার হলে ২৪ জুলাই তাদের এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তাদের এ মামলায় রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। তারা মূলত এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। সরকার একটি মহলকে খুশি করতেই এ মামলায় তাদের জড়িয়েছে। অভিযোগ গঠনের জন্য পর্যাপ্ত উপাদান না থাকায় আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করছি।’’

আসামি সাইফুল ইসলাম ওরফে মামুন, মো. আল আমীন, আকবর আলী লালু ওরফে রনি ও রফিকুল ইসলাম খোকনকে এ মামলায় গত ২৪ জুলাই গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। তারা অন্য একটি মামলায় আটক ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ৫ মার্চ রাত ১টার দিকে গুলশানের কূটনৈতিক এলাকার ১২০ নম্বর সডকের ১৯/বি নম্বর বাসার সামনে গুলিবিদ্ধ হন খালাফ আল আলী (৪৫)। ৬ মার্চ ভোরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তার মৃত্যু হয়।

এ ব্যাপারে গত ৭ মার্চ গুলশান থানার এসআই মোশারফ হোসেন মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ পরিদর্শক ওবায়দুল হক গত ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে ৫ আসামিকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে ৩১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা সকলে ছিনতাইকারী। মূলত নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে এক বিদেশিকে রাস্তায় দেখে ডলার পাবার আশায় তারা খালাফকে ঘিরে ধরেন। এ সময় ছিনতাইকারীদের সঙ্গে খালাফের ধস্তাধস্তি হয়। এরই এক পর্যায়ে আসামি সাইফুল ইসলাম মামুন পয়েন্ট ২২ বোরের রিভলবার দিয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করেন।

আসামি সাইফুল ইসলাম ওরফে মামুন, মো. আল আমীন, আকবর আলী লালু ওরফে রনি ও রফিকুল ইসলাম খোকনকে এ মামলায় গত ২৪ জুলাই গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। তারা অন্য একটি মামলায় আটক ছিল।

এর আগে গত ৪ জুন রাজধানীর দক্ষিণখান থানার গাওয়াইর এলাকা থেকে সাইফুল ইসলাম মামুন, আকবর আলী লালু ওরফে রনি ও আল আমীনকে গ্রেফতার ডিবি পুলিশের ডাকাতি, দস্যুতা ও ছিনতাই প্রতিরোধ টিম।

এ সময় তাদের কাছ থেকে কালো রংয়ের একটি বিদেশি পয়েন্ট ২২ বোরের রিভলবার উদ্ধার করা হয়। অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে গত ৪ জুন তাদের নামে একটি অস্ত্র মামলা দায়ের করা হয়।

এ মামলার রিমান্ডে থাকাকালীন হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন আসামিরা। তারা জানান, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর খিলক্ষেত থানার সেবা ক্লিনিকের মালিক আবুল হোসেনের বাসায় আসামি সাইফুল ইসলাম মামুন, লালু, আল আমীন ও রফিকুল ইসলাম খোকন ডাকাতি করতে গিয়ে অন্যান্য মালের সঙ্গে রিভলবারটিও ডাকাতি করে নিয়ে আসেন।

আসামি সাইফুল ইসলাম মামুন ও আল আমীন আদালতে আরো স্বীকার করেন, গত ৫ মার্চ দিবাগত রাতে ছিনতাই করতে গিয়ে বাধা দেওয়ায় তারা সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা খালাফ আল আলীকে ওই অস্ত্রটি দিয়েই গুলি করে হত্যা করেন।

হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত প্রাইভেট কারটি ভাষানটেক থানার মানিকদী বাজার সংলগ্ন রফিকুল ইসলাম খোকনের একটি গ্যারেজ থেকে উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশ। 


স্যান্ডি আতঙ্কে মার্কিনীরা: কয়েক হাজার ফ্লাইট বাতিল


হ্যারিকেন স্যান্ডি ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সোমবার যেকোনো সময় স্যান্ডি যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূল ও কানাডার একাংশে আঘাত হানতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া স্যান্ডির প্রভাবে নিউইর্য়কে ১১ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। সে কারণে মার্কিনীরা আতঙ্কে সময় কাটাচ্ছেন।

এর কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রচারণা স্থগিত রেখেছেন বারাক ওবামা এবং মিট রমনি। এছাড়া ৫ হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিল এবং কয়েক অঙ্গরাজ্যে স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানায়, স্যান্ডিই হবে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানা ভয়ঙ্কর বড় ঘূর্ণিঝড়। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র মিশেল ব্লুমবার্গ স্যান্ডি সম্পর্কে বলেছেন- এটি অত্যন্ত বিপদজনক এবং মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়।

এদিকে, রোববার যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্র জানায়, সোমবার রাতে স্যান্ডি যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডের কাছাকাছি চলে আসবে।

স্যান্ডির প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ইতোমধ্যে ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম খবর দিয়েছে।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূল থেকে মধ্য আটলান্টিক পর্যন্ত ব্যাপক বন্যার আশঙ্কা করছে আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্র।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই ঝড়টি দেশটির অনেক বড় শহর বোস্টন, নিউইর্য়ক, ওয়াশিংটন, বাল্টিমুরসহ বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় আঘাত হানতে পারে।

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইতোমধ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন এবং সার্বক্ষনণক খোঁজখবর নিচ্ছেন।

গত রোববার ‘ক্যাটাগরি ১’ ভুক্ত ঝড় স্যান্ডির বাতাসের তীব্রতা ছিল ঘণ্টায় ১শ ২০ কিলোমিটার।এ সময় ঝড়টি নিউইর্য়ক শহর থেকে ৭শ ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল এবং ঘণ্টায় ২৪ মাইল বেগে অগ্রসর হচ্ছিল বলে আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্র জানায়।

অপরদিকে, রোববার সন্ধ্যায় নিউইর্য়কের বিভিন্ন রাস্তাঘাট, বাস ও ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৫ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।  সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারও বন্ধ রাখা হয়েছে।

সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ডিসি ফেডারেল অফিসও বন্ধ রাখা হবে বলে সংবাদ মাধ্যম জানায়।পাশাপাশি নিউইর্য়কে প্রবেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

নিউইর্য়ক মেয়র মিশেল ব্লুমবার্গ এক সংবাদ ‍বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার সব স্কুল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। স্যান্ডির আঘাতে কনি আইল্যান্ড, ম্যানহাটনের নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে ব্লুমবার্গ জানান। তবে এ অঞ্চলের মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে ক্যারিবীয় দেশগুলোতে আঘাত হানার পর এবার যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে যাচ্ছে হ্যারিকেন স্যান্ডি। এর আঘাতে ক্যারিবীয় দেশগুলোতে অন্তত ৭০ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনারে মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টিফেন র্যাপের মন্তব্য ; যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে নিরপেক্ষ বিচার আশা করা যায় না ফাঁসির রায় পূর্বনির্ধারিত: সৌদি গেজেটের প্রতিবেদন













মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধবিষয়ক অ্যাম্বাসেডর-এট-লার্জ স্টিফেন জে র্যাপ বলেছেন, বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী বিচারকে স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে আমি যে সুপারিশ করেছি তা বাংলাদেশ সরকার বাস্তবায়ন করেনি। তিনি বলেন, আমার সুপারিশে রোম সংবিধি অনুসরণ করতে বলেছি, কিন্তু তারা সে সুপারিশ বাস্তবায়ন করেনি। নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে স্টিফেন র্যাপ এ কথা বলেন। সেমিনারে অন্য আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
(আইসিটি) মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে আটক ব্যক্তিদের বিচার করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখছে না। তারা বিচার প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সংশ্লিষ্টতা দাবি করেছেন। এজন্য তারা আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানান। তারা বলেন, ট্রাইব্যুনাল যেভাবে বিচার পরিচালনা করছে তা কোনোভাবেই আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হচ্ছে না এবং এভাবে চলতে থাকলে ট্রাইব্যুনালের কাছে নিরপেক্ষ বিচার আশা করা যায় না।
তারা বলেন, আইসিসি’র স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে এ ধরনের বিচারের ক্ষেত্রে আইসিসি’র বিধিবিধান অনুসরণের যে বাধ্যবাধকতা বাংলাদেশের রয়েছে, তার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করছে না সরকার। উপরন্তু সরকারের মন্ত্রীরা বিচারের রায় কি হবে এবং কবে রায়ে সাজাপ্রাপ্তদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে সেই দিনক্ষণও নির্ধারণ করে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। ফলে বিচার প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। কলাম্বিয়া ল’ স্কুলের হিউম্যান রাইটস ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে নির্ধারিত বক্তা হিসেবে ছিলেন যুদ্ধাপরাধবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাম্বাসেডর-এট-লার্জ স্টিফেন জে র্যাপ, ব্রিটিশ আইনজীবী ব্যারিস্টার টবি ক্যাডম্যান, নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস প্রোগ্রামের পরিচালক প্যাম সিং। সেমিনার উপস্থাপনা করেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রফেসর ল্যারি ডি জনসন। সেমিনারের মূল প্রতিপাদ্য ছিল “প্রটেকটিং দি রাইটস অফ দি একিউজড ইন ডমেস্টিক ট্রায়ালস ফর এট্টোসিটি ক্রাইমস”।
অ্যাম্বাসেডর-স্টিফেন-র্যাপ তার বক্তব্যে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে তিন দফা বাংলাদেশ সফর এবং সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সাক্ষাতের পর বিচারকে সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে সরকারের কী করণীয় সে সম্পর্কে তার সুপারিশের উল্লেখ করে বলেন, তার অনেক সুপারিশ বাস্তবায়ন না করায় বিচারের আন্তর্জাতিক মান ও নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তিনি বলেন, কোনো দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হলে, যারা ক্ষতির শিকার তাদের পরিবারের সদস্যদের আকাঙ্ক্ষা থাকে যে তারা ন্যায়বিচার লাভ করবেন। কিন্তু এ ধরনের বিচার করতে হলে সব পক্ষের অধিকারের প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে, যাতে ন্যায়বিচার থেকে কেউ বঞ্চিত না হয়। পাশাপাশি বিচারের পরিণতি সম্পর্কেও সংশ্লিষ্ট সবাইকে খেয়াল রাখা জরুরি। কারণ সুবিচার নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে অনেক সময় হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
স্টিফেন র্যাপ বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের দুই বছর পর ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন পাস করা হয়। এর ফলে এ আইন দিয়ে আইন প্রণীত হওয়ার পূর্ববর্তী অপরাধের বিচার করার ক্ষেত্রে জটিলতা ছিল। বাংলাদেশ আইসিসি’র সদস্য এবং রোম সংবিধির স্বাক্ষরকারী দেশ। আমি আমার সুপারিশে রোম সংবিধি অনুসরণ করতে বলেছি, কিন্তু তারা সে সুপারিশ বাস্তবায়ন করেনি। কিন্তু বিচারকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে হলে তাদের এগুলো করতে হবে। এছাড়া অন্যান্য দেশ যেভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করেছে, যেমন সাবেক যুগোস্লাভিয়া, লাইবেরিয়া, সিয়েরালিওন, কেনিয়া, কম্বোডিয়ার বিচার প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারে বাংলাদেশ। ১৯৭৩ সালের আইনে অভিযুক্তদের বিনাবিচারে অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক রাখা ও জামিন না দেয়ার যে বিধান রয়েছে তা সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ এর দ্বারা অভিযুক্তদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপত্তা দেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। কিন্তু অভিযুক্তদেরও নিরাপত্তা লাভের অধিকার আছে, যা নিশ্চিত করা জরুরি। এক প্রশ্নের উত্তরে র্যাপ বলেন, সব সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগে অভিযুক্ত সবাইকে নির্দোষ বিবেচনা করাই আইনের দাবি।
সেমিনারে টবি ক্যাডম্যান বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে অসংখ্য লোক নিহত ও নির্যাতিত হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হচ্ছে, এসবের কোনোটাই তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তারা কোনো অপরাধ করে থাকলে দেশের প্রচলিত ফৌজদারি আইনে তার বিচার হতে পারে। স্বাধীনতার বিরোধিতা করা অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশে এখন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে, আইসিটিতে যাদের বিচার চলছে তাদের পক্ষাবলম্বনকারীদের স্বাধীনতা বিরোধী বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এটি কোনো শুভ লক্ষণ নয়।
টবি ক্যাডম্যান বলেন, সরকার একটি রাজনৈতিক দলকে টার্গেট করে বলছে, তারা অপরাধ মার্জনা করার সংস্কৃতি থেকে দেশকে মুক্ত করতে এ বিচার করছে। তাই যদি হয় তাহলে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি ও ভারতীয় সৈন্যরা এবং মুক্তিযোদ্ধারাও একই ধরনের অপরাধে জড়িত ছিল, যাদের ১৯৭৪ সালে প্রেসিডেন্টের আদেশ বলে তাদের কৃত অপরাধ থেকে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছিল, তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, বিচারকে কেন্দ্র করে একটি বিপজ্জনক আবেগের সৃষ্টি করা হয়েছে। স্টিফেন র্যাপ বিচারকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে যে সুপারিশ করেছিলেন সেগুলো আংশিক গ্রহণ করা হলেও বাস্তবে সেসবের কোনো প্রয়োগ নেই। মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে বলছেন, এ বছরের মধ্যে ৩ জনের বিচার শেষ করে ১৬ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে এবং অবশিষ্টদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে ২০১৩ সালের মার্চে। কারণ এ দু’টি মাসের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক আবেগ জড়িত। রায় পূর্ব নির্ধারিত হলে অভিযুক্তদের পক্ষে কি করে ন্যায়বিচার পাওয়া সম্ভব? সরকার অতি দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক আইন বিশেষজ্ঞ ক্যাডম্যান আরও বলেন, এ ধরনের একটি বিচারের মাধ্যমে বাংলাদেশ এক বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছে, যা আশপাশের দেশগুলো তাদের দেশে প্রয়োগের জন্য অনুসরণ করতে পারে। এ ব্যাপারে আইসিটির করণীয় কিছুই নেই। কারণ মূল সমস্যা নিষ্পত্তির জন্য আইসিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। সম্প্র্রতি উগান্ডার একটি প্রতিনিধিদল ট্রাইব্যুনাল ও বিচার প্রক্রিয়া পরিদর্শন করে তাদের দেশেও অনুরূপ বিচার চালু করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে। কেউ ভাবতে চাইছে না এ প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য একটি পক্ষকে বেছে নিয়ে বিচারের মুখোমুখি করার পরিণতি দীর্ঘস্থায়ী অশান্তির বীজ বপন করবে। সেজন্য এ বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জাতিসংঘের জড়িত হওয়া এবং এ ব্যাপারে যেহেতু আইসিসি’র দায়িত্ব রয়েছে সেজন্য তাদেরও জড়িত হওয়া জরুরি বলে মনে করছি আমরা। তাছাড়া বিচারকার্য পর্যবেক্ষণ ও মনিটর করার জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে বিচার কাজ প্রত্যক্ষ করার সুযোগ দেয়া উচিত।
ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের অনুসরণে বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা হচ্ছে মর্মে বাংলাদেশ সরকারের দাবি সম্পর্কে টবি ক্যাডম্যান বলেন, ন্যুরেমবার্গ ট্রায়াল কোনো অবস্থাতেই নিরপেক্ষ ট্রায়াল ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই সে বিচার অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং যুদ্ধের প্রভাব ও অনুভূতি বিচারকে প্রভাবিত করেছিল। বাংলাদেশের দৃশ্যপট সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং দৃষ্টিতে সমস্যাপূর্ণ। ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনটি করা হয়েছিল পাকিস্তানি সৈন্যদের বিচার করতে এবং কোনো বেসামরিক আদালত প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে নয়। কিন্তু সেটি বহু পরে সংশোধন করা হয় একটি বেসামরিক ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যেটি বেসামরিক ব্যক্তি, মিলিটারি ও সহায়তাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিচার করবে। কিন্তু আইনের মধ্যেই সমস্যা রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক আইনের একটি নীতি হচ্ছে, অপরাধ সংঘটনের সময় কার্যকর ছিল না এমন কোনো আইন দিয়ে কোনো ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা, বিচার করা বা শাস্তি দেয়া যাবে না। অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে ১৯৭৩ সালে নয়। সেই আইনকে চল্লিশ বছর পর সংশোধন করে ভিন্ন অপরাধে দেশের লোকদের বিচারের জন্য প্রয়োগ করতে গেলে কি পদক্ষেপ নিতে হবে তা স্টিফেন র্যাপ ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং আমরা যারা অভিযুক্তদের আইনজীবীদের পরামর্শ দিচ্ছি তাদের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে। কিন্তু সরকার কোনো ভ্রূক্ষেপ না করে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্যাম সিং বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি, বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার রাজনৈতিক প্রভাবদুষ্ট এবং এ কারণেই আমরা সন্দেহ পোষণ করছি, এমন বিচার ঝুঁকিপূর্ণ এবং আইনের শাসনের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা বারবার আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। ট্রাইব্যুনালের প্রধান ১৯৯৪ সালে যখন একজন আইনজীবী ছিলেন তখন একজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত বিচার নাটকে (গণআদালত) জড়িত ছিলেন। অতএব তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় বিষয়টি ট্রাইব্যুনালে চ্যালেঞ্জ করা হলেও বাতিল করা হয়। তিনি বলেন, অভিযুক্তদের আইনজীবীদের পুলিশ হয়রানি করছে, হুমকি দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বিচার প্রক্রিয়া কীভাবে সুষ্ঠু হবে এবং বিচার কীভাবে নিরপেক্ষ হবে সে ব্যাপারে আমরা সন্দিহান।
ফাঁসির রায় পূর্বনির্ধারিত-সৌদি গেজেটের প্রতিবেদন : সৌদি আরবের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক সৌদি গেজেটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ মামলায় অভিযুক্তদের ফাঁসির রায় পূর্ব নির্ধারিত।
সৌদি গেজেটের ২২ অক্টোবর সংখ্যায় প্রথম পৃষ্ঠায় ‘এক্সিকিউশন প্রিঅরডেইন্ড ইন বাংলাদেশ ওয়ার ক্রাইমস ট্রায়াল’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে খ্যাতনামা ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বলেন, যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের অনেককে প্রতীকী তারিখ ১৬ ডিসেম্বরের (বিজয় দিবসে) আগেই সাজা দেয়া হবে এবং আগামী বছরের ২৫ মার্চের মধ্যেই (স্বাধীনতা দিবসের আগে) তাদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে।
সম্প্রতি জেদ্দা সফরের সময় সৌদি গেজেটকে দেয়া সাক্ষাত্কারে ক্যাডম্যান বলেন, ত্রুটিপূর্ণ যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রকম হাই-প্রোফাইল মামলায় অভিযুক্তদের পক্ষের সাক্ষীর সংখ্যা কমিয়ে ১২ জন নির্ধারণ করায় বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে।
ক্যাডম্যান বলেন, সৌদি সরকার যেন বাংলাদেশের ওপর তার প্রভাবকে কাজে লাগায় সেজন্য তিনি সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছেন। বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য অন্যান্য দেশকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। যুদ্ধাপরাধ, প্রত্যাবাসন ও মানবাধিকার আইনে বিশেষজ্ঞ ক্যাডম্যান বলেন, আপনারা যদি সরকারি কৌঁসুলিদের কথা শোনেন তাহলে স্পষ্ট বুঝতে পারবেন যে সরকার এ বছরের ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তত তিনজনকে ফাঁসি দিতে চায়। এরা হলেন অধ্যাপক গোলাম আযম, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী।
ক্যাডম্যান বলেন, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল ন্যায়বিচারের পরিবর্তে সময়কেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার আশঙ্কা করছে, আগামী নির্বাচনে তারা হেরে গেলে নতুন সরকার তাদের মুক্তি দেবে। তিনি বলেন, ত্রুটিপূর্ণ এই বিচারের রায় পূর্বনির্ধারিত। বাংলাদেশ যদি এভাবে এগিয়ে যায় তবে এর পরিণাম হবে ভয়াবহ এবং কূটনৈতিকভাবে দেশটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলও এই বিচারকে স্বৈরাচারি বলে মন্তব্য করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘ ছাড়াও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশন ওই ট্রাইব্যুনালের কড়া সমালোচনা করেছে। ক্যাডম্যান বলেন, যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যদি এতই শক্তিশালী হয়, তাহলে বাংলাদেশ সরকার বিদেশিদের অংশগ্রহণের সুযোগ দিচ্ছে না কেন। উল্লেখ্য, বিশ্ববরেণ্য এই ব্রিটিশ আইনজীবীকেও গত বছর বাংলাদেশের ভিসা দেয়নি আওয়ামী লীগ সরকার।

বিতর্কিত ক্লিপ সরানোর মার্কিন অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে গুগল



undefined
 ইউটিউব থেকে ইসলাম বিরোধী বিতর্কিত চলচ্চিত্রটির ভিডিও ক্লিপ সরিয়ে ফেলার হোয়াইট হাউসের অনুরোধকে প্রত্যাখ্যান করেছে গুগল।

যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত ‘ইনোসেন্স অব মুসলিমস’ নামের বিতর্কিত চলচ্চিত্রটি ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়ার পরপরই সারা বিশ্বে বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোতে চরম মার্কিন বিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এর ধারাবাহিকতায় লিবিয়ার বেনগাজীতে মার্কিন কনস্যুলেটে বিক্ষুদ্ধ জনতার হামলায় নিহত হন লিবিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ক্রিস স্টিভেন্স।

সার্বিক দিক বিবেচনা করে দেশে দেশে মার্কিন বিরোধী ক্ষোভ প্রশমিত করতে ইউটিউব থেকে ভিডিওটি সরিয়ে ফেলতে গুগুলের প্রতি আহবান জানায় হোয়াইট হাউস।

তবে গুগল জানিয়েছে তারা ইতিমধ্যেই ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মিশর ও লিবিয়ায় এর সম্প্রচারের ওপর সেন্সর আরোপ করেছে। তবে অন্যান্য দেশে এর সম্প্রচার বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই তাদের।

কোনো রাজনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে ভিডিও ক্লিপটি সম্প্রচারের ওপর সেন্সর আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছে গুগল। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইনী বাধ্যবাধ্যকতার কারণেই ভিডিও ক্লিপটির সম্প্রচার বন্ধ রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় এ সময়। তবে সারা বিশ্বে এর সম্প্রচার বন্ধের সম্ভাবনাকে নাকচ করেছে তারা।
ইসরাইল পড়তে পারে তার আপন গর্তেই
খবরে বলা হয়, ডেমোক্রাটিক পার্টির কনভেনশন যখন চলছিল সে সময়েই পর্দার আড়ালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দলের নির্বাচনী মেনিফেস্টোয় জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করার জন্য দলের লোকদের ওপর ব্যক্তিগত চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। একই অবস্থান ওবামা নিয়েছিলেন ২০০৮ সালের নির্বাচনী প্রচারণাতেও।
এমন খবরও রয়েছে যে, কথিত ইরানী বোমার প্রশ্নে মাথা খারাপ না করার জন্যও ওবামা ইসরাইলকে নাকি বুঝিয়েছেন। কিন্তু ভাষ্যকাররা বলছেন, ইসরাইলের অভ্যন্তরে বোমার চেয়েও বিপজ্জনক যে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে উঠতে শুরু করেছে সেটির রাশ শক্ত হাতে টেনে ধরার লক্ষ্যে ইসরাইলের পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মিত্ররা ইসরাইলকে বোঝাতে উদ্যোগী হলে তা আরো বেশি ভালো কাজ হতো। ইসরাইলী সমাজ ভেতরে ভেতরে গুরুতর অনৈক্যে ও অস্থিরতায় ভুগছে। দেশের প্রশাসনে শক্ত কব্জা কায়েম রয়েছে গোঁড়া ধার্মি দক্ষিণপন্থী ইহুদীদের। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি প্রণয়নে ওরাই হচ্ছে সর্বেসর্বা।
‘‘লা মন্ডে ডিপ্লোম্যাটিকের ডেপুটি চেয়ারম্যান এলেন গ্রেস লিখেন, মধ্যপ্রাচ্যে দেখা দেয়া অস্থিরতা প্রায়ই যুদ্ধের রূপ নিতে দেখা গেছে। ১৯৭৩-এর বিপরীতে এবারের যুদ্ধে ইসরাইল প্রথম আঘাত হানবে ঠিকই, কিন্তু ইসরাইলকে এবার আগের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী দুশমনের মোকাবিলা করতে হবে। গ্রেস লিখেছেন, এছাড়াও বিশ্বজনমত ইসরাইলের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে-। কারণ, ইসরাইলের আগ্রাসী চরিত্র সম্বন্ধে দুনিয়ার মানুষ বর্তমানে পুরোপুরি ওয়াকেফহাল।
গ্রেস নিরাপত্তা-তত্ত্বের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে যুদ্ধের ইদানিং ছক সাজাতে শুরু করেছে ইসরাইলী সেনাবাহিনী। ইসরাইলী তত্ত্বে বলা হচ্ছে, এলাকা জুড়ে ইসরাইলী শাসন যারা মানে না তারা সন্ত্রাসী, অতএব তাদের নিশ্চিহ্ন হতে হবে। কিন্তু ইসরাইল প্রশ্নে বিশ্বজনমত বর্তমানে আগের তুলনায় বেশি কঠোর।
২৬ জন ইউরোপীয় প্রবীণ রাষ্ট্রনীতি বিশারদ শান্তি প্রক্রিয়া প্রশ্নে তার নেতিবাচক অবস্থান পুনর্বিবেচনা না করলে ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আহবান জানিয়েছেন। একটি মানবাধিকার গোষ্ঠীর রিপোর্টে ইসরাইলে ফিলিস্তিনীরা লাগাতার বৈষম্য যন্ত্রণায় ভুগছেন জানিয়ে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি রাশির ইসরাইলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাৎসরিক বরাদ্দ প্রত্যাহার করার যুক্তরাষ্ট্রকে আহবান জানিয়েছে।
সমালোচক আরন ডেভিড মিলার ইসরাইলী সমাজে অভ্যন্তরীণ বিভাজনের চিত্র অাঁকতে গিয়ে গত মাসে লিখেন, ইসরাইলের অবস্থা রীতিমতো উদ্বেগজনক। ধনী ও গরীবের মধ্যকার ব্যবধান ক্রমে সেখানে বেড়ে যাচ্ছে। সেনাবাহিনীতে ভর্তির প্রশ্নে গোড়া ধার্মিক ইহুদীদের বিরুদ্ধে জনগণের অসন্তোষ তীব্র হয়ে উঠেছে। গোড়া ইহুদীর সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু উদার দৃষ্টির লোকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। মধ্যবিত্তরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে উগ্র ধনী ও চরম দরিদ্রদের ভিড়ের চাপে।
১৭ লাখ ফিরিস্তিনীর বসবাস রয়েছে গাজায়। পুরো মধ্যপ্রাচ্য ভূ-ভাগ জুড়ে মোট ফিলিস্তিনীর এরা হচ্ছেন এক চতুর্থাংশের কিছু বেশি। প্রায় অবরুদ্ধ জীবন কাটছে এঁদের। তা সত্ত্বেও ইসরাইল ভুগছে নিরাপত্তাহীনতার দুশ্চিন্তায়।
২০০৫ সালের এক জরিপ অনুযায়ী জর্দান নদী থেকে ভূ-মধ্যসাগর এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত ভূ-ভাগে মোট ইসরাইলীর সংখ্যা হচ্ছে ৫২ লাখ, কিন্তু সংখ্যায় ৫৬ লাখ হচ্ছেন ফিলিস্তিনী দ্রুতগতির জন্মহারের কল্যাণে পেছনের কয়েক দশকে ফিলিস্তিনীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
১৯৮৭তে প্রথম ইন্তিফাদা সীমাবদ্ধ ছিল পশ্চিম তীর ও গাজায়। যদিও ইসরাইলের বাসিন্দা আরবদের মধ্যেও এর অাঁচ লাগতে দেখা যায়। কিন্তু দ্বিতীয় ইন্তিফাদায় ২০০০ সালে ইসরাইলবাসী ফিলিস্তিনীদের ইসরাইল অধিকৃত ভূ-ভাগের ফিলিস্তিনীদের প্রতি একাত্মতায় রীতিমতো মুখর ও আন্দোলিত হয়ে উঠতে দেখা যায়।
কঠোর হাতে ফিলিস্তিনী আন্দোলন দমন করে ইসরাইল। আগের মতোই দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদায় বসবাস করতে ফিলিস্তিনীদের বাধ্য করে ইসরাইল দমন-পীড়নের জোরে।
ইসরাইলী সরকার ঘটনার পরবর্তীতে একটি তদন্ত কমিশন কায়েম করে। ২০০৩ সালে কমিশনের রিপোর্টে বাইরের ফিলিস্তিনীদের আন্দোলনের প্রতি ইসরাইলী ফিলিস্তিনীদের একাত্মতায় অসন্তোষ জানানো হলেও ইসরাইলের আচরণে অনেককে বিস্মিত করে দিয়ে নিন্দা জানানো হয়। বলা হয়, ইসরাইলে ফিলিস্তিনীদের প্রতি আগাগোড়া বৈষম্য দেখানো হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদে সমান অধিকার ফিলিস্তিনীদের দেয়া হচ্ছে না।
ফিলিস্তিনী জমি দখলকে অঞ্চলে অশান্তির জন্মদাতা একটি বড় উপাদান বলা হয় রিপোর্টে।
এরপর থেকে ইসরাইলী-ফিলিস্তিনী সমস্যার ক্ষেত্রে দশক ধরে দুটো ঘটনা খুব বড় হয়ে সামনে উঠে এসেছে।
পূর্ণাঙ্গ জাতি বৈষম্যবাদী একটি ব্যবস্থা ইসরাইলকে গড়ে তুলতে দেখা গেছে। অধিকৃত ভূ-ভাগে ৫০টি চেক পয়েন্ট বসিয়েছে ইসরাইল। ৭শ' কিমি. লম্বা দেয়াল খাড়া করে পশ্চিম তীরকে বাকি ৪৬ শতাংশ ভূ-ভাগ থেকে আলাদা করে দিয়েছে। পাশাপাশি গোঁড়া দক্ষিণপন্থী ইহুদীবাদীদের সংখ্যা ইতোমধ্যে জোরেশরে বেড়েছে ইসরাইলে। সরকার পরিচালনা নিয়ন্ত্রণ করছে তারাই। সেনাবাহিনীতেও তাদের প্রভাব পর্যাপ্ত। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, দীর্ঘদিনের অন্যায় চর্চার মধ্য দিয়ে নিজের তৈরি বারুদের স্তূপের ওপর আসন পেতে বসেছে সমসাময়িক ইসরাইল।               

No comments:

Post a Comment