ইসলাম


 









হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু আজ : মিনায় ৩০ লক্ষাধিক হজযাত্রী

আজ থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ পালনের উদ্দেশ্য নিয়ে সমবেত হয়েছেন মিনায়। লাখ লাখ মানুষের ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা’ ধ্বনিতে এখন প্রকম্পিত পবিত্র মিনা। যারা মদিনা আল মনোয়ারায় অবস্থান করছিলেন তারাও মিনা এসে পৌঁছেছেন। হজের অংশ হিসেবে কাল সকাল পর্যন্ত তারা অবস্থান করবেন মিনায়। সেখানে তারা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় জিকির-আজকার ও ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে সময় কাটাবেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন জামাতের সঙ্গে। কাল খুব ভোরে আরাফাতের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। সেখানে হজের খুতবা শুনবেন এবং একই সঙ্গে জোহর ও আসরের (জুহরাইন) নামাজ আদায় করবেন। সন্ধ্যায় মুজদালেফার উদ্দেশে ত্যাগ করবেন আরাফাতের ময়দান। মুজদালেফায় পৌঁছে একই সঙ্গে আদায় করবেন মাগরিব ও এশার নামাজ। রাতে খোলা আকাশের নিচে সবাই একই উদ্দেশ্য হাসিলের অভিপ্রায়ে রাতযাপন করবেন মুজদালেফায়। সেখান থেকে তারা কংকর সংগ্রহ করবেন মিনায় জামারায় (শয়তানকে) নিক্ষেপের জন্য। সকালে ফজরের নামাজ শেষে আবার ফিরে আসবেন মিনায়। জোহরের নামাজের পর শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ ও কোরবানি আদায় করে ইহরাম ত্যাগের মাধ্যমে হজের মূল কার্যক্রম শেষ করবেন। এরপর পবিত্র কাবা শরিফে বিদায়ী তাওয়াফ করে হজের পূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এ বছর ৩০ লক্ষাধিক মুসলমান হজ পালন করছেন। এর মধ্যে সৌদি হাজীর সংখ্যা ১০ লক্ষাধিক।
এদিকে বাংলাদেশ থেকে এবার সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সর্বমোট ১ লাখ ১১ হাজার ২৭৯ জন হজ করতে গেছেন। সরকারি হজযাত্রীদের ৮টি এবং বেসরকারি হজযাত্রীদের ২৯২টি ফ্লাইটে সৌদি আরব পৌঁছানো হয়েছে। সোমবার ছিল সর্বশেষ ফ্লাইট। এদিকে স্বপ্নপুরী ট্রাভেলস, পিপলস ট্রাভেলস, আল নাঈম ও কেরানীগঞ্জ ট্রাভেলসের প্রতারণার কারণে ভিসা হওয়া সত্ত্বেও হজ করতে পারেনি প্রায় শতাধিক হজযাত্রী। তার মধ্যে স্বপ্নপুরী ট্রাভেলস ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর আত্মীয়ের এজেন্সি। হজ ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তের জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। অপরদিকে হজ শুরু হওয়ার আগেই ৫৯ জন হজযাত্রী ইন্তেকাল করেছেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ওমর ফারুক দেওয়ান এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, গতকাল হজ ফ্লাইট পরিচালনা ও হাজী পরিবহন সংক্রান্ত অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মিজানুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং বিমান বাংলাদেশের একজন করে প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। কমিটিকে ঈদের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সর্বশেষ হজ ফ্লাইট পরিদর্শন এবং হজযাত্রীদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের সময় বিমানমন্ত্রী ফারুক খান এ সংক্রান্ত কমিটি গঠনের কথা সাংবাদিকদের বলেন।
হজ ফ্লাইট পরিচালনা, হাজী পরিবহন এবং হজ এজেন্সিগুলোর কর্মকাণ্ডে কিছু অনিয়মের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘অনিয়মগুলো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে সৌদি আরব থেকে আইটি বিভাগ জানিয়েছে, সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনার সর্বমোট ১ লাখ ১১ হাজার ২৭৯ জন যাত্রী হজ করতে গেছেন। সরকারি হজযাত্রীদের ৮টি এবং বেসরকারি হজযাত্রীদের ২৯২টি ফ্লাইটে তাদের সৌদি আরব পৌঁছানো হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ৫৯ জন হজযাত্রী ইন্তেকাল করেছেন। তাদের মধ্যে মক্কায় ৪৪ জন, মদিনায় ১৩ জন ও জেদ্দায় ২ জন (পুরুষ ৫৪ জন, মহিলা ৫ জন), সরকারি ৩ জন, বেসরকারি ৫৬ জন। তবে মৃত্যুর এ সংখ্যা গতবারের চেয়ে অনেক বেশি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত হজ ফ্লাইট পরিচালিত হয়। ফিরতি ফ্লাইট ৩১ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে শেষ হবে ২৯ নভেম্বর। হজ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীনকে সৌদি আরব পাঠানো হয়েছে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সরকারের ৪০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এখন বাংলাদেশী হজযাত্রীদের সঙ্গে সৌদি আরব রয়েছেন।

কবুল হজ গুনাহ মাফের নিশ্চয়তা দেয়


মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন
পবিত্র হজ মহান আল্লাহর এক বড় হুকুম। এটি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। যারা হজে যাওয়ার মতো আর্থিক ও শারিরীকভাবে সামর্থবান তাদের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ।

পবিত্র কোরআন ও হাদীসে এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহুবার উল্লেখ হয়েছে। কাদের ওপর হজ ফরজ- এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,  “মানুষের পক্ষে আল্লাহর উদ্দেশে হজ করা ফরজ-যার পথের সামর্থ্য রয়েছে।” (সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ৯৭)

অর্থাৎ যে ব্যক্তি হজে যাওয়া-আসার খরচ বহনের সামর্থ্য রাখে এবং হজ চলাকালে তার পরিবার পরিজনের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করার মতো সামর্থ্য রাখে তার ওপর পবিত্র হজ পালন করা ফরজ।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরও বলেন, “তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে হজ ও ওমরা পূর্ণ কর”। (সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ১৯৬)

হাদীস গ্রন্থগুলোতে হজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিশদভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। যার ওপর হজ ফরজ তার উচিত তাড়াতাড়ি ফরজ দায়িত্ব পালন করা। তাই রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি হজের নিয়ত করলো, সে যেন (তা পালনে) তাড়াতাড়ি করে। আবু দাউদ, দারেমী।

অর্থাৎ হজ ফরজ হওয়ার পর সে যেন দেরি না করে। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি সে হজ পালনে গড়িমসি করে এবং হজ না করে তাহলে এর জন্য সে দায়ী হবে। যদি এ অবস্থায় সে মারা যায় তাহলে আল্লাহর দরবারে সে ফরজ হুকুম লঙ্ঘনকারী হিসেবে উঠবে।

ইসলামী শরীয়ত মতে প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তি হজ করবে। চাই সে নারী হোক বা পুরুষ। তাই প্রিয় নবীর (সা.) কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েচে, হজ না করে থাকা ইসলামে নেই। (আবু দাউদ) 

হজের ফজিলত ও তাৎপর্য সম্পর্কে প্রিয় নবী (সা.) আরও বলেছেন, হে মানব মণ্ডলী! তোমাদের প্রতি হজ ফরজ করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা হজ করবে। (মুসলিম)

হজের বিনিময়ে মহান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দার গুনাহগুলো মাফ করে দেন। রাসুল (সা.) পবিত্র হজ পালনকারীর ফজিলত এভাবেই বর্ননা করছেন- তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশে হজ করেছে এবং তাতে কোনো অশ্লীল কথা বলেনি বা কোনো অশ্লীল কাজ করেনি সে হজ হতে ফিরে সেদিনের মতো, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল। অর্থাৎ তার সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। (বুখারী, মুসলিম)

হজ করতে গিয়ে যদি কেউ মারা যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার হজ কবুল করে নেন। তাকে উত্তম বিনিময় দান করেন, পুরস্কৃত করেন।

এই ব্যক্তি হজ না করেও হজের সওয়াব লাভ করবে। কারণ, সে যখন ঘর থেকে বেরিয়েছিল তখন হজ করার নিয়তে বের হয়েছিল। কিন্তু হায়াত না থাকায় তার সে সৌভাগ্য হয়নি। তাই হজ না করলেও আল্লাহ পাক তাকে তার নিয়তের কারণে এই সওয়াব দান করবেন। অনুরূপভাবে ওমরার উদ্দেশে বের হয়ে ওমরা পালনের আগে কেউ মারা গেলেও সে ওমরাকারীর মর্যাদা পাবে। হাদিসে হজকারীকে আল্লাহর যাত্রীদল বলা হয়েছে।

প্রিয় রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর যাত্রী হলো তিন ব্যক্তি। গাজী, হাজী ও ওমরাকারী। (নাসায়ী, বায়হাকী)

হজকারীর ফজিলত ও তাৎপর্য বোঝাতে গিয়ে রাসুল (সা.) একবার সাহাবাদের বললেন, যখন তুমি কোনো হাজীর সাক্ষাৎ পাবে তাকে সালাম দেবে, মুসাফাহা করবে এবং তাকে অনুরোধ করবে তিনি যেন তোমার জন্য আল্লাহর কাছে মাফ চান- তার ঘরে প্রবেশের পূর্বে।  কারণ, হাজী হলো গুনাহ থেকে পবিত্র ব্যক্তি। (মুসনাদে আহমদ)

এই হাদিস দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম যে হজ সম্পন্নকারী ব্যক্তি আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয়। তার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি সে যার জন্য সুপারিশ করবে তাও কবুল করে নেওয়া হয়।

ইসলামের এই মহান হুকুম যেভাবে সামর্থ্যবান পুরুষের ওপর ফরজ তেমনি সামর্থ্যবান নারীদের ওপরও ফরজ। আমাদের সমাজে অনেক নারী এমন রয়েছেন যারা হজে যাওয়ার মতো সামর্থ্য রাখে। অথচ তারা এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় না। যা নিতান্তই দুঃখজনক।

মুসলমান হিসেবে আমাদের মনে রাখতে হবে, নামাজ রোজা যেমন সবার ওপর ফরজ, পবিত্র হজও সামর্থ্যবানদের ওপর ফরজ। চাই সে নারী হোক বা পুরুষ। তবে হজ করার জন্য নারীদের ওপর শর্ত হচ্ছে, তারা মাহরাম পুরুষের সঙ্গে যাবে। একা একা বা অন্য (যার সঙ্গে বিয়ে জায়েজ) পুরুষের সঙ্গে যাবে না। মাহরাম পুরুষ বলা হয় সেসব পুরুষকে যাদের সঙ্গে দেখা দেওয়া জায়েজ। যেমন, স্বামী, বাবা, আপন ভাই, আপন চাচা-মামা, ছেলে ইত্যাদি।

নারীদের সফরে মাহরাম পুরুষের আবশ্যকতা ঘোষণা করে রাসুল (সা.) বলেন, কোনো নারী যেন একদিন একরাত্রির পথ ভ্রমণ না করে কোনো মাহরামের সঙ্গে ব্যতিত। (বুখারী, মুসলিম)

নারীরা দূরে কোথাও সফরে গেলে নিরাপত্তার বিষয়টি যেহেতু সর্বাগ্রে বিবেচনায় নিতে হয় তাই তাদের সঙ্গে মাহরাম পুরুষের উপস্থিতি জরুরি বলে ঘোষিত হয়েছে। তাই হজের সফরেও মাহরাম পুরুষের সঙ্গে যেতে হবে।
 
বর্তমানে অনেক নারী মাহরাম ছাড়াই হজে যায়। যা মোটেও শরীয়ত সম্মত নয়। মেয়েদের হজ করা জেহাদ করার মর্যাদা রাখে।

কেউ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ না করলে তার জন্য রয়েছে কঠিন পরিণতি। নবী করীম (সা.) এ বিষয়ে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। এরশাদ হচ্ছে, যাকে পথের সামর্থ্য অথবা অত্যাচারী শাসক অথবা গুরুতর রোগ বাধা দেয়নি, তবু সে হজ না করে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছে- সে ইহুদী হয়ে মরুক বা নাসারা হয়ে মরুক (তাতে ইসলামের কিছু যায় আসে না)। (দারেমী)

প্রিয় নবীর (সা.) মুখে এ ধরনের শক্ত কথা-ই বলে দেয় হজ না করলে কি পরিমাণ গুনাহ হয়। মহান আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে পবিত্র হজ করার তৌফিক দান করেন। (আমীন)

লেখক- খতিব, মোল্লাপাড়া জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা

হজের তাত্পর্য ও গুরুত্ব

জাস্টিস আল্লামা মুফতি তাকী উসমানী














আর ৭ দিন পর ৯ জিলহজ আরাফা দিবস। একজন মুসলমানের জন্য দিনটি বড়ই তাত্পর্যবহ ও গুরুত্বপূর্ণ। আরাফা দিবসে লাখো মুসলমানের এমন একটি ইবাদত সুসম্পন্ন হয়, যা কেবল একটি শ্রেষ্ঠ ইবাদত-ই নয়; বরং বহু ইবাদতের সমষ্টি এবং অসংখ্য পবিত্র বৈশিষ্ট্যের এক সমন্বিত রূপ। এই দিন লাখো একত্ববাদের পূজারি একমাত্র আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য এমন এক মরুভূমির তীর্থ ময়দানে সমবেত হয়ে থাকেন, যার ওপর খোদায়ি রহমতের ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়ার অস্তিত্ব নেই। আরাফার বালুকাময় উঁচু-নিচু এই মরুভূমিতে অবস্থানরত সাদা-কালো, আরব-অনারব, আমির-গরিব, বাদশাহ-প্রজার ভেতর আজ নেই কোনো ভেদাভেদ। এখানে প্রভাব-প্রতাপশালী একজন বাদশাহকে দুর্বল অসহায় মজদুরের মতোই আল্লাহর সামনে হাজির হতে হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চল থেকে আগত লাখো মুসলমানকে এখানে একই পোশাক পরিহিত দৃষ্টিগোচর হয়। সবাই একই আল্লাহর তাসবিহ-তাহলিলে থাকেন রত। সবার মুখ থেকেই মহান আল্লাহর দরবারে হাজিরীর স্লোগান বের হয় একটিই। ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক।’
হজের মনোমুগ্ধকর এই ইবাদত যা হিজাজের পবিত্র উপত্যকায় আদায় করা হয়ে থাকে, তা অন্যসব ইবাদত-বন্দেগি থেকে একটি স্বতন্ত্র মর্যাদার অধিকারী। এই ইবাদত ইশক-মুহব্বতের একটি সঠিক দিকে মুসলিম উম্মাহকে ধাবিত করে থাকে। আর তা মূলত মানবীয় চাহিদা বৈশিষ্ট্যেরই অন্তর্ভুক্ত। ইশকের চূড়ান্ত উন্মাদনায় মুসলিম উম্মাহ বিবেকের সীমাবদ্ধতাকে সাধুবাদ জানাতেও বাধ্য হয় এই সময়টাতে। হজের ইবাদত আমাদের এই শিক্ষাই দেয় যে, ইশক মুহব্বতের একমাত্র সঠিক প্রাপক ওই সত্তা, যিনি আমাদের এবং এই বিশ্ব জগতের সবকিছুকে সৃষ্টি করেছেন। যদি পূজা-অর্চনা করতেই হয়, তবে তাঁরই করতে হবে। কোনো কিছু চাইতে হলে তাঁর কাছেই চাইতে হবে, ডাকতে হলে তাঁকেই ডাকতে হবে, প্রার্থনা করতে হলে তাঁর কাছেই প্রার্থনা করতে হবে, কারও কুঠরী চাক্কর কাটতে হলে তাঁর ঘরই তাওয়াফ করতে হবে আর কাউকে স্মরণ করতে হলে তাঁকেই স্মরণ করতে হবে।
কোরআন শরীফের বহু স্থানেই হজের তাত্পর্য-গুরুত্ব অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় উচ্চারিত হয়েছে। সুরা আলে ইমরানে ইরশাদ হয়েছে : ‘মানুষের মধ্যে যারা সেখানে পৌঁছার সামর্থ্য রাখে, তাদের ওপর আল্লাহর জন্য এ ঘরের হজ করা ফরজ।’ (সুরা আলে ইমরান : আয়াত-৯৭)
ইসলাম এই ইবাদতকে কতটাই যে গুরুত্বারোপ করেছে, তা রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই একটি ইরশাদ থেকেই অনুধাবন করা যায়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : ‘স্পষ্ট কোনো প্রয়োজন যাকে হজ থেকে বিরত করেনি কিংবা অত্যাচারী কোনো বাদশাহও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি কিংবা কোনো অসুস্থতাও এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। এ সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তি যদি হজ না করেই মারা যায়, তাহলে সে ইহুদি হয়েও মারা যেতে পারে কিংবা খ্রিস্টান হয়েও মারা যেতে পারে।’
বুখারি এবং মুসলিম শরীফে একটি হাদিস ইরশাদ হয়েছে :
‘যে হজ আল্লাহর দরবারে মাকবুল হিসেবে গৃহীত হবে, তার প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়।’ (রিয়াদুস সালেহীন : পৃষ্ঠা-৪১৪)
সহিহ মুসলিম শরীফে অন্য একটি হাদিসে হজরত আয়েশা (রা.) রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ রাখেন : ‘আরাফা দিবসে আল্লাহতায়ালা যত সংখ্যক মানুষকে (জাহান্নামের) আগুন থেকে মুক্তি করে থাকেন, অন্য কোনো দিন এত মানুষকে (জাহান্নামের) আগুন থেকে মুক্ত করেন না।’ (রিয়াদুস সালেহীন : পৃষ্ঠা-৪১৪)
এই মহান ইবাদতে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি দৃষ্টির সামনে চলে আসে তা হলো হজের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর অসংখ্য পূতপবিত্র বৈশিষ্ট্যের দ্বারা সুসমৃদ্ধ হওয়ার, নিজের সুপ্ত যোগ্যতাগুলোকে প্রকাশ করার এক অপূর্ব সুযোগের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যায়। সামান্য চিন্তা করুন : যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ শরীফের হজের উদ্দেশ্যে নিজ ঘর-বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে যাচ্ছেন, তাকে কোন জিনিস এই সফরে জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে? তার মাথায় কোন বোঝাটা ছিল যে, তাকে নিজ ঘর-বাড়ি ছাড়তে, ধন-সম্পদ, নিজের প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধবকে মোবারকবাদ জানাতে বাধ্য করেছে? নিজের আবাসভূমির আরাম-আয়েশকে কোরবানি দিয়ে, হাজার হাজার মাইলের কষ্টকর রাস্তা অতিক্রম করে, মরুভূমির উঁচু-নিচু পথ পাড়ি জমানোর কী প্রয়োজনটা ছিল তার? অথচ যেখানে সে এত কিছু ত্যাগ করে তীব্রবেগে ছুটে আসছে বাহ্যিকভাবে অন্তর আকর্ষণের তেমন কিছুই তো নেই সেখানে। চিন্তা করলে দেখা যাবে একজন হজ পালনকারীকে এই সফরে আগ্রহী করার ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহর প্রেম, আল্লাহর মহব্বত আর ভালোবাসার আকর্ষণ ছাড়া কোনো কিছুই এ পথের পথিক বানায়নি। বাস্তবতা হলো এই সফরে কোনো ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত উত্সাহিত হতেই পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তার অন্তরে আল্লাহর মহব্বত, আল্লাহর প্রেম-ভালোবাসা সৃষ্টি না হয়, তাঁর রাসুলের ভালোবাসা-ইশক, আখেরাতের ফিকির এবং নিজের ফরজকে ফরজ হিসেবে সাব্যস্ত করার দায়িত্ববোধ জাগরিত না হয়।
যখন এই ব্যক্তি এই সত্ ইচ্ছা নিয়ে নিজের ঘর থেকে কদম অগ্রসর করে, তখন তার অন্তররাজ্য একেবারেই বদলে যায়। এখন সে আল্লাহর পথের পথিক। তার প্রতিটি কদমেই এই চিন্তা থাকে, তার একটি কদমও যেন তার মালিকের ইচ্ছার বাইরে অগ্রসর না হয়। কেননা এখন তো সে তার মালিকের মেহমান। এই ধারণা তার অন্তরে নেককাজের আগ্রহী, উত্তম কাজের প্রত্যাশী এবং মন্দ-অশ্লীল কাজের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে। প্রতিটি মুহূর্ত তাকে তার মালিকের এই ইরশাদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় : ‘হজের সফরে কোনো অশ্লীল কথার সুযোগ নেই, কোনো গোনাহের (কাজের) সুযোগ নেই এবং কোনো ঝগড়া বিবাদের সুযোগ নেই।’
এই সফরে একটি এমন পর্যায় অতিবাহিত হয়, যেখান থেকে ইহরাম ছাড়া অতিক্রম করা জায়েজ নয়। এখানে পৌঁছে হজের এই মুসাফির নিজের বাহ্যিক শোভাবর্ধন, পোশাকের যাবতীয় সৌন্দর্য পরিহার করে, সুগন্ধি বর্জন করে, সেলাই করা কাপড় ছেড়ে দিয়ে নতুন এক জগতের মুসাফির বনে যায়। এখন আর তার জন্য মাথা ও মুখ ঢাকা জায়েজ নেই, কোনো প্রাণী শিকারের অনুমতি নেই, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক স্থাপনেরও কোনো সুযোগ নেই, এখন সে মাত্র দুটি সাদা কাপড়ে ঢাকা, যা এই কথার ঘোষণা করছে যে, এতক্ষণ পর্যন্ত সে যা কিছুই করেছে এখন সেসব থেকে একেবারে সম্পর্ক ছিন্ন করে একমাত্র আল্লাহতায়ালার দরবারের ভিখারী হয়ে গেছে। যার জবানে একটি মাত্রই কথা চালু রয়েছে :
এই আওয়াজ বাস্তবে সেই আহ্বানেরই জবাব, যা আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে হজরত ইবরাহীম (আ.) গোটা মানবজাতির উদ্দেশে দিয়েছিলেন। আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে ওই আহ্বানকারী (হজরত ইবরাহীম) সেই সময় ডাক দিয়ে বলেছিলেন : ওহে আল্লাহর বান্দারা! আল্লাহর ঘরে আস, বিশ্বের সব দেশ ও অঞ্চল থেকে আস। তার এই আহ্বানের জবাবেই নবীর দেশের মুসাফিররাই উচ্চস্বরে ‘লাব্বাইক’ বলে থাকে। অর্থাত্ ‘আমি উপস্থিত হয়েছি, আল্লাহর দরবারে হাজির হয়েছি, আপনার কোনো অংশীদার নেই, আমি একমাত্র আপনার তালাশেই আপনার অনুসন্ধানে হাজির হয়েছি, প্রশংসা যত সব আপনার, নেয়ামত রাজি সেও তো আপনারই, রাজত্ব একমাত্র আপনার, আপনার কোনো অংশীদার নেই।’
ইহরামের এই ফকিরী হালতে ওই মুসাফিরের অন্তরে নম্রতা, অক্ষমতা, দুর্বলতা, অসামর্থ্যতা, অসহায়ত্বতা আর বিনয়ের সৃষ্টি করে দেয়। গর্ব-অহঙ্কার, লৌকিকতা আর রিয়ার মর্মমূলে আঘাত হেনে তাকে চুরমার করে দেয়া হয়। এভাবে যখন আল্লাহর বান্দা তার সফরের দীর্ঘ পথপরিক্রমা অতিক্রম করে তাঁর পবিত্র ঘরে পৌঁছে যায়। তখন আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হওয়া ছাড়া তার অন্য কিছু হুঁশই থাকে না। এখানে নিজের ব্যক্তিত্ব, অস্তিত্ব ও গর্ব-অহঙ্কার সবকিছু ধূলোয় মিশিয়ে দিয়ে ওই ঘরের চার পাশে পাগলের মতো চক্কর মারতে থাকে। তার পাথরগুলোকে চুমো দিতে থাকে। তার চৌকাঠ ধরে অঝোরে কান্নাকাটি করতে থাকে।
যে পবিত্র ভূমির প্রতি অংশের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল নবীদের, প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের, সাহাবায়ে কেরামের; সেই ভূমির প্রতিটি অংশের সঙ্গে সম্পর্ক জুড়ে নেয়, এখন সে নিজেও। মুসাফিরের অন্তরেও নবী আর সাহাবীদের গুণাগুণ আর বৈশিষ্ট্য সৃষ্টির একটি স্পৃহা, একটি উদ্যম শুরু হয়। তাওয়াফ সেরে মুসাফির এগিয়ে যায় মাকামে ইবরাহীমের দিকে। এ সময় তার অন্তরে কাবাগৃহ নির্মাণকারী পূতপবিত্র কারিগরদের চিত্রটা ভেসে ওঠে, তাদের শ্রদ্ধা ও ভক্তিসহকারে সম্মান এবং শ্রদ্ধা জানায় অন্তরের অন্তস্তল থেকে। এরপর সে চলে যায় সাফা মারওয়ার মধ্যবর্তী স্থান সায়ী করার জন্য। এ সময় একদিকে তার অন্তরে হজরত হাজেরার (রা.) ওই পরীক্ষা স্মরণে চলে আসে, যা তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে বরদাশত করেছিলেন। অপর দিকে তার অন্তরে আল্লাহর দ্বীনের জন্য চেষ্টা-প্রচেষ্টা এবং কাজকর্ম করার স্পিরিট বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
এভাবে সে একদিন মসজিদে হারামকেও মোবারকবাদ জানিয়ে ওইসব পাহাড়ি উপত্যকায় চলে যায়, যেখানকার প্রতিটি অংশেই অসংখ্য ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি বহন করছে। আল্লাহর নির্দেশে কখনও সে মীনার তাঁবুর নিচে আশ্রয় নিয়ে থাকে, কখনও আরাফার ময়দানে স্থাপিত তাঁবুর নিচে, কখনও মুজদালিফার খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়ে থাকে। সব শেষে মীনার তিন জামারাতে বারবার পাথর নিক্ষেপ করে শয়তানি প্রবঞ্চনা এবং নফসের খাহেশাতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার বাস্তব প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে থাকে। এখানে পশু কোরবানি করে সে হজরত ইবরাহীমের (আ.) নিজ ছেলে ইসমাইলকে কোরবানি করে যে মহান ত্যাগের ইতিহাস স্থাপন করেছিলেন, সেই কথা স্মরণ করে। এসব ইবাদতের শেষে সে যেন একথাই স্বীকার করছে যে, সময়মত আল্লাহর দ্বীনের জন্য সে তার নিজের জীবনকে কোরবানি করে দিতেও কুণ্ঠিত হবে না।
হজের এসব আমল এবং ক্রিয়াকর্মের দ্বারা এ কথাই প্রমাণ হয় যে, এর প্রতিটি কাজেই উত্তম বৈশিষ্ট্য, উত্তম চরিত্র এবং আদর্শ মানুষ গঠনের অনুপম নিদর্শন রয়েছে। মানবজাতি এসব বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করে নিজেকে আল্লাহর প্রকৃত বান্দাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে নিতে পারে।
সারকথা হলো, রুহানি প্রশিক্ষণ-তরবিয়তের এই মহান ইবাদত থেকে ফারেগ হয়ে মানুষ ইচ্ছা করলে সে নিজেকে মানবতার এমন পূর্ণাঙ্গ নমুনা হিসেবে পেশ করতে পারে, যা তার সমাজের প্রতিটি মানুষের জন্য ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন :
‘হে ব্যক্তি এমনভাবে হজ সম্পাদন কর যে, সে কোনো অশ্লীলতায়, জড়ায়নি, কোনো নাফরমানি ও অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়নি, সে এমন পূতপবিত্র অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করে থাকে যে, সে যেন আজই তার মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছে।’ হ
[অনুবাদ : মুহম্মদ তৈয়্যেব হোসাইন]


জিলহজের দশদিন বছরের সর্বোত্তম সময়


সময়ের পরিক্রমায় আমরা এখন জিলহজ মাসের সূচনায়। সারা বছরের অন্য দিনগুলোর তুলনায় এ মাসের প্রথম দশদিন আল্লাহ পাকের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও মহিমান্বিত দিন হিসেবে বিবেচিত।

রাসুল (সা.) জিলহজ মাসের প্রথম দশদিন রোজা এবং অন্যান্য আমলের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন।

আল্লাহ পাক যাদের তওফিক দিয়ে সৌভাগ্যমণ্ডিত করেছেন, তারা এখন পবিত্র কাবার জিয়ারতে রয়েছেন। আর আমরা যারা যেতে পারিনি, তাদের জন্যও দয়া ও করুণার দুয়ার খুলে রেখেছেন পরম করুণাময়।

জিলহজ মাসে শুধু কুরবানী নয় বরং মাসের শুরু থেকে কুরবানীর দিন পর্যন্ত প্রতিটি প্রহর আল্লাহ পাক এ সুযোগ দিয়ে রেখেছেন। হাদীসের গ্রন্থসমুহে রাসুল (সা.) জিলহজের প্রথম দশদিনকে বছরের সর্বোত্তম দিন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

পবিত্র কুরআনে সূরা ফজরের প্রথমদিকের আয়াতে আল্লাহ পাক এ দশদিনের রাতের কসম করেছেন। এতেই এ দশদিন ও রাতগুলোর মর্যাদা প্রতীয়মান হয়।

বুখরী শরীফের বর্ণনায় সাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ পাকের কাছে এ দিনগুলোর আমলের মতো প্রিয় আর আমল নেই। কেউ আরয করলেন, জিহাদও নয় কি? তিনি বললেন, না, জিহাদও নয়। তবে ওই ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে তার জান ও মালের সব কিছু নিয়ে জিহাদে বের হয়েছে এবং সে কিছুই নিয়ে ফিরে আসতে পারেনি।

আবু দাউদ এবং সুনানে তিরমিযীসহ আরও কয়েকটি হাদীস গ্রন্থ থেকে জানা যায়, রাসুল (সা.) এ মাসের প্রথম নয়দিন, আশুরার দিন এবং প্রতি মাসে যে কোনো তিন দিন নিয়মিত রোজা রাখতেন।

কাজেই এ দিনগুলোতে একজন প্রকৃত মুসলমান তার প্রিয়নবীর (সা.) অনুসরণ করে সাধ্যমত আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন হতে পারেন। রোজা, নামাজ ও কুরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে এ সময়গুলো অতিবাহিত করলে তা পূণ্যের খাতায় অনেক বড় সঞ্চয় হিসেবে সুনিশ্চিত হয়ে থাকবে।

শুধু কুরবানীর দিনটি নয়, বরং অন্যান্য দিনগুলোও আল্লাহ পাকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, সে কথাও মনে রাখা উচিত। যারা নিশ্চিতভাবে কুরবানী করার ইচ্ছা পোষণ করেন, তাদের উচিত, কুরবানীর আগে এ দশদিন যেন নিজের চুল কিংবা নখ না কাটেন। মুসলিম শরীফের বর্ণনায় উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন তোমরা জিলহজের চাঁদ দেখবে এবং তোমরা কুরবানীর পশু জবেহ করার ব্যাপারে সুনিশ্চিত থাকবে, তখন তোমরা এ কয়দিন নিজেদের চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকবে। তবে এ নিষেধ হারামের পর্যায়ে নয়, বরং কেউ করলে তা মাকরুহ হবে বলে উলামায়ে কেরাম মত দিয়েছেন।

উৎসব প্রিয় বাংলাদেশে কুরবানীর অনেক আগে থেকেই উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। ঈদকে কেন্দ্র করে আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়ি কেনাকাটায়।

এসবের মধ্যে যেন সীমালঙ্ঘন না হয় এবং আনন্দে বিভোর হয়ে এ দিনগুলোর ফজিলত থেকে যেন বঞ্চিত না হয়ে যাই, সেদিকেও সচেতন থাকা প্রয়োজন আমাদের। ইসলাম এভাবেই প্রতিনিয়ত আমাদের বিশুদ্ধ করার প্রয়াসে বারবার আমাদের পরম স্রষ্টার দয়া ও অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। রাসুল (সা.) সেভাবেই আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।

তাই, আমাদের এ সময়গুলো যেন অবহেলায় কেটে না যায় সে ব্যাপারে আসুন আমরা যত্নবান হই।

২৭ অক্টোবর ঈদুল আজহা

ছবি: রয়টার্স
দেশে কোথাও মঙ্গলবার জিলহজের চাঁদ দেখা না যাওয়ায় আগামী ২৭ অক্টোবর ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে বলে জানিয়েছে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি।

ঈদুল আজহার তারিখ চূড়ান্ত করতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বৈঠকে বসে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। তবে কোনো স্থান থেকে জিলহজের চাঁদ দেখার খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র বিল্লাল বিন কাশেম।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার চাঁদ দেখা না যাওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে জিলহজ মাস শুরু হবে বলে চাঁদ দেখা কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সে অনুযায়ী ১০ জিলহজ অর্থাৎ ২৭ অক্টোবর দেশে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ পালন করবে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা। এই ঈদে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে নিজের ভেতরকার কলুষতাকে বর্জন এবং সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি লাভই ইসলামের শিক্ষা।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনে চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্ম সচিব কাজী হাবিবুল আওয়াল। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিবসহ কমিটির সদস্যরা বৈঠকে ছিলেন বলে জানিয়েছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা বিল্লাল।

এদিকে এবার সৌদি আরবে ঈদুল আজহা ২৬ অক্টোবর (শুক্রবার) হবে বলে দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের হাজিরা ওই দিন মক্কায় ঈদুল আজহা উদযাপনের মাধ্যমে হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবেন।

সৌদি প্রেস এজেন্সি জানায়, হাজিরা বৃহস্পতিবার আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করবেন।

হজে নিষিদ্ধ কাজ এবং এর ফিদিয়া


আল্লাহর মেহমানদের ইহরাম বাঁধার পর থেকে কিছু কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়। ইহরাম বাঁধা অবস্থায় এই কাজগুলি করা সম্পূর্ণ নিষিব্ধ। যদি কেউ অজ্ঞতা বা ভুলবশত এই কাজগুলো করে ফেলেন তাহলে অবশ্যই তাকে এর জন্য ফিদিয়া বা জরিমানা দিতে হবে।

হজ তিন প্রকার।
প্রথম প্রকার- হজে ইফরা: ওমরাহ্ ব্যতিত শুধু হজের জন্য ইহরাম বাঁধা এবং হজের সঙ্গে ওমরাহকে না মিলানো। (বদলী হজের জন্যও এই হজ)। নিয়ত: আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল হাজ্জা ফায়াসছির হুলিওয়াতা কাব্বালহুমিনি্ন। (বাংলা নিয়ত- আল্লাহ আমি ইফরাদ হজের উদ্দেশে আপনার সন্তুষ্টির জন্য ইহরাম বাঁধলাম। তা সহজ করে দিন ও কবুল করে নিন)।

দ্বিতীয় প্রকার- হজে কিরান: একত্রে একই স্থান থেকে হজ ও উমরার নিয়ত করে হজের সঙ্গে উমরাহকে মিলানো এবং একই ইহরামে উভয়টি আদায় করা। নিয়ত: আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল উ`মরাতা ফায়াচ্ছির লী-ওয়াতাক্বাব্বাল মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি আপনার উদ্দেশে হজে কিরানের জন্য ইহরাম বাঁধলাম, তা সহজ করে দিন ও কবুল করে নিন।

তৃতীয় প্রকার- হজে তামাত্ত: একই সফরে পৃথক পৃথকভাবে `ইহরাম` পরিধান করে `হজও উমরাহ` আদায় করা। প্রথম ইহরামে  উমরাহর নিয়ত করে তা পালন শেষে চুল কেটে `ইহরাম` খুলে হালাল হয়ে দ্বিতীয় বার নতুন করে হজের নিয়তে ৮ই জিলহজ `মক্কা শরীফ` থেকে হজের জন্য ইহরাম বাঁধা। তামাত্তু করার ইচ্ছা থাকলে প্রথমে ওমরার নিয়ত করে এহরাম বাঁধুন।

এ তিন প্রকার হজে যেসব কাজ নিষিদ্ধ- ১. মাথার চুল কাটা বা মাথা মুণ্ডন করা ২. নখ কাটা ৩. পুরুষদের জন্য সেলাই করা কাপড় পরিধান করা ৪. পুরুষের মাথা ঢাকা ৫. শরীরে ও কাপড়ে আতর বা সুগন্ধি লাগানো ৬. শিকার করা তথা বৈধ বন্য প্রাণী শিকার করা ৭. বিবাহের আকদ করা। এরুপ করা হারাম, তবে এর জন্য কোনো ফিদিয়া দিতে হবেনা ৮. উত্তেজনার সঙ্গে যৌনাঙ্গ ব্যতিত স্ত্রীকে আলিঙ্গন করা। (এর ফিদিয়া বা জরিমানা হচ্ছে একটি ছাগল জবেহ করা অথবা তিন দিন রোজা রাখা, অথবা ছয়জন মিসকিনকে খাবার দেওয়া) এবং ৯. সহবাস করা। প্রথম হালালের পূর্বে সহবাস করলে হজ বাতিল হয়ে যাবে। সেই বছর হজের অবশিষ্ট কাজ পূর্ণ করতে হবে। পরবর্তী বছর উক্ত হজ কাযা আদায় করতে হবে। সেই সঙ্গে ফিদিয়া স্বরুপ একটি উট জবেহ করে মক্কার ফকীরদের মাঝে বিতরণ করতে হবে। সহবাস ব্যতিত অন্য কোনো কারণে হজ বা উমরা বাতিল হবেনা।

নারীর বিধান পুরুষের মতোই, তবে নারী সেলাই করা কাপড় পরতে পারবে। নারী নেকাব বা হাত মোজা পরিধান করবে না।

ফিদিয়া বা জরিমানা: এই ফিদিয়া বা জরিমানা ২ প্রকার। ১. ইচ্ছাধীন: এটি হচ্ছে মাথামুণ্ডন বা আতর-সুগন্ধি ব্যবহার বা নখ কাটা বা মাথা ঢাকা বা পুরুষের সেলাই করা কাপড় পরিধান প্রভৃতিতে ফিদিয়া দেওয়ার ব্যাপারে স্বাধীনতা। তিনটি রোযা রাখবে অথবা ছয়জন মিসকিনকে খাদ্য প্রদান করবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক মিসকিনকে দের কেজি করে খাদ্য প্রদান করতে হবে। অথবা একটি ছাগল জবেহ করতে হবে। প্রাণী শিকার করলে অনুরূপ একটি চারপেয়ে জন্তু জবেহ করবে। কিন্তু অনুরূপ জন্তু না পাওয়া গেলে তার মূল্য ফিদিয়া দিতে হবে। ২. ধারাবাহিক: তাম্মাত্তুকারী ও কিরানকারীর জন্য আবশ্যক হচ্ছে একটি ছাগল কুরবানী দেওয়া। সহবাস করলে তার ফিদিয়া হচ্ছে একটি উট। এই ফিদিয়া দিতে না পারলে হজের মধ্যে তিনটি এবং গৃহে ফিরে গিয়ে সাতটি রোযা রাখবে। ফিদিয়ার ছাগল বা খাদ্য হারাম এলাকার (বাইতুল্লাহ) ফকির ছাড়া কাউকে দেওয়া যাবেনা। 

৮৪ হাজার ৬৩০ হজযাত্রী সৌদি পৌঁছেছেন, মৃতের সংখ্যা ৩০


আব্দুল হোসাইন, আব্দুল মতিন, আব্দুর রশিদ, আব্দুস সালাম, আয়নাল হক,
বজলুর রহমান, একরামুল হক, ইসমাইল হোসাইন, কাজী আল ফারুক ও খবির উদ্দিন
 এবছর পবিত্র হজব্রত পালনের জন্য গত শুক্রবার পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৮৪,৬৩০জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। এদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায়  ২,৯১৬ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮১,৭১৪ জন। এদের মধ্যে এ পর্যন্ত সৌদি আরবে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩০জন।
মৃত্যুর কারণ হিসাবে  সৌদি আরবস্থ বাংলাদেশ হজ মিশন জানিয়েছে, অধিংকাশই বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন।

এ পর্যন্ত  মক্কায় ২৩ জন, মদিনায় ৫ জন ও জেদ্দায় ২ জন (পুরুষ ২৭ জন, মহিলা ৩ জন) মারা গেছেন।

মারা যাওয়া ৩০ হজযাত্রীদের মধ্যে সর্বশেষ ১০ জন হলেন:
ঢাকা জেলার গেন্ডারিয়া থানার কাজী আল ফারুক (৫২), পাসপোর্ট নম্বর এডি ২৪২৩২৩১; মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার শেখ আব্দুর রশিদ, পাসপোর্ট নং এডি ৬৪৮৩৬৮২;
ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার শিবরামপুর ইউনিয়নের খবির উদ্দিন (৬২),  পাসপোর্ট নং এসি০৩৯৫১৫৯;
গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার ইসমাইল হোসাইন (৫২), পাসপোর্ট এবি ৭২৪২৭৪১;
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার আনিয়াল হক (৮৬), পাসপোর্ট এসি ২৫০৪৮৯৬;
দক্ষিণ রুপকানিয়া ওয়ার্ড সাতকানিয়া চট্টগ্রামের আমির হোসেন (৫০), পাসপোর্ট এসি ২২৯৯৯৬১;
কুমিল্লা সদর উপজেলার আব্দুল মতিন (৫৩), পাসপোর্ট এসি৬৪০৩৭৩৩;
যশোর জেলার বেনাপোল পোর্ট এলাকার বজলুর রাহমান (৭৬), পাসপোর্ট এসি ৬৫৬১৭০১;
মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার শেখ আব্দুর রশীদ(৫৭), পাসপোর্ট বি ৩৮৩৩৩৯;
মুন্সিপাড়া হালিশহর চট্টগ্রামের আব্দুস সালাম (৫৬) পাসপোর্ট নং ই ১৭৯৬৬৬১।

ইসলামের আলোয় আলোকিত জীবন-পর্ব ২


ইসলামের আলোয় আলোকিত জীবন সিরিজের ২য় পর্বে আজ আমরা আলচোনা করবো ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে নিষেধ সম্পর্কে।

সমাজে বসবাস করতে হলে আমাদের নানা নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়। আর এসব আচার ব্যবহারের রয়েছে সুনির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ড। আর মুসলিম হিসেবে আমাদের সেসব মানদণ্ড কুরান-সুন্নাহ ভিত্তিক হবে সেটা বলাই বাহুল্য। এছাড়া ইসলামের চর্চা শুধু নিজে করলেই হবে না, নিজে জেনে, অন্যকেও জানানো আমাদের সবার কর্তব্য।

এজন্য মানুষকে ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে নিষেধ করতে হবে, মানুষকে ইসলামের দিকে, আল্লহর দিকে ডাকতে হবে। আর এই নির্দেশনা সয়ং আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা পবিত্র কুরানে দিয়েছেন এবং মহানবী (সা.) বিভিন্ন সময় এই বিষয়ে তাগিদ দিয়েছেন।

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরানের সুরা কাসাসের ৮৭ নম্বর আয়াতে বলেন, “তুমি তোমার রবের দিকে (মানুষকে) আহ্বান জানাও”

আর এই আহ্বান হতে হবে সুন্দর ভাষায় এবং সদুপোদেশের সঙ্গে। আল্লাহ বলেন, “তুমি তোমার রবের (নির্দেশিত) পথের দিকে আহ্বান জানাও কুশলতা ও সদুপদেশ সহকারে।” (সুরা নাহল: ১২৫)

মানুষ একে অপরকে ভালো পথে ডেকে একে অপরকে সাহায্য করবে। আমরা বিভিন্ন সময় অপরকে বিভিন্ন কাজে সাহয্য করে থাকি, কিন্তু প্রকৃত সাহায্য হচ্ছে সেই সাহায্য যা তার ইহকালের পাশাপাশি আখিরাতেও কাজে আসবে। আর আখিরাতের সাফল্য তো আল্লাহর নির্দেশিত সৎ কাজের মাধ্যমে আসবে। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে এভাবেই একে অপরকে সাহায্য করতে বলেছেন পবিত্র কুরানের সুরা মায়েদার ২ নম্বর আয়াতে, “তোমরা সৎ কাজ ও খোদাভীতির ব্যাপারে পরস্পরকে সাহায্য কর।”

পবিত্র কুরানের পাশাপাশি হাদিস গ্রন্থগুলোতেও সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করার ব্যাপারে বিভিন্ন বর্ণনা এসেছে।

আমরা কোনো কাজই এমনি এমনি করি না, সব কাজের পেছনেই কোনো কারণ অথবা বিনিময়ের আশা থাকে। আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তো উত্তম বিনিময় প্রদানকারী। আমরা কাউকে ভালো কাজ করতে বললে পরকালে আল্লাহ আমাদের তার যথোপযুক্ত বিনিময় প্রদান করবেন, এই ব্যাপারে সহিহ মুসলিম শরীফের একটি হাদিস এখানে উল্লেখ করা হলো।

হযরত আবু মাসঊদ উকবা ইবনে ‘আমর আনসারী বদরী (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের পথ নির্দেশ করে সে ঠিক ততোটাই বিনিময় পাবে যতোটা বিনিময় ওই কাজ সম্পাদনকারী নিজে পেয়ে থাকে।

আর এক্ষেত্রে কাজ সম্পাদনকারী ব্যক্তির বিনিময় কিছু কম হবে না। এতো গেল ভালো কাজের দিকে আহ্বানকারীর কথা। কিন্তু যে ব্যক্তি অসৎ পথে মানুষকে ডাকে তার কি হবে?

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল(সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সঠিক পথের (হেদায়েত) দিকে (মানুষকে) আহ্বান জানায়, তার জন্য এই পথের পথিকদের পারিশ্রমিকের (প্রতিদান) সমপরিমাণ পারিশ্রমিক রয়েছে। এতে প্রথমক্তদের বিনিময় কিছুমাত্র কম হবে না। আর যে ব্যক্তি ভ্রান্ত পথের (গোমরাহীর) দিকে আহ্বান জানায়, তারও উক্ত পথের পথিকদের গুনাহর সমান গুনাহ হবে। এতে তাদের গুনাহর কিছু কম হবে না।(মুসলিম)

অর্থাৎ ভালো কাজের দিকে মানুষকে ডাকা যেমন আমাদের দায়িত্ব, এই দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আমরা পরকালে মহান আল্লাহর কাছে পুরস্কৃত হবো। পক্ষান্তরে মন্দ কাজের জন্য এবং মন্দ কাজের দিকে মানুষকে উৎসাহিত করার জন্য পরকালে পেতে হবে কঠোর শাস্তি। আর ভালো কাজ যেমন পরকালে কাজে লাগবে, তেমনি সুন্দর সমাজ গঠনের জন্যও কাজে লাগে। একইভাবে খারাপ কাজ ইহকাল ও পরকাল দু’টোই ধংস করে দেয়।

তাই, আসুন আমরা ধ্বংস আর হানাহনির পথ ছেড়ে সবাই সহিহ ইসলামিক জ্ঞান অর্জন করি, নিজেরা চর্চা করি, অপরকেও ভালো কাজ করতে উৎসাহিত করি এবং মন্দ কাজ করা থেকে নিজেকে ও অন্যকে বিরত রাখি।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: হাদিসগুলো রিয়াদুস সালেহিন (বাংলা অনুবাদ) বই থেকে নেওয়া হয়েছে।
লেখক: শিক্ষার্থী

হজ শুধুই ইহরাম-তাওয়াফের নাম নয়


হজ বিশ্ব মুসলিমের মিলন ও সৌহার্দ্যের এক অবিস্মরণীয় উৎসব। মহান আল্লাহর কাছে এ এক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তিনি হজকে মানুষের ওপর নিজের অধিকার ও দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেছেন।

আমাদের দেশ থেকে প্রতিবছর অজস্র মানুষ কাবার যিয়ারতে হজের উদ্দেশে রওনা হন এবং নির্দিষ্ট দিন শেষে তারা ফিরে আসেন। এ যাওয়া এবং আসা গতানুগতিক হলেও এর মধ্যে কিছু বিষয় রয়ে যাচ্ছে, যা গুরুত্ব ও অনুধাবনের দিক থেকে অসীম এবং অত্যন্ত তাৎপর্যবহুল।

হজ মানেই কি সাদা পোশাকে কাবা তওয়াফ আর মিনা-আরাফাত-মুযদালিফায় করা আমলগুলোর সমষ্টি? মোটেই তা নয়। হজের রয়েছে কিছু দাবি এবং বাস্তব প্রতিফলন, যা ছুটে গেলে কিংবা অপ্রকাশ্য থাকলে তা হজ হিসেবে আল্লাহর খাতায় গণ্য নয়।

সম্মানিত হাজীদের প্রতি বিনীত আরয, এ পুরো হজের সফরে আপনাকে আচার ব্যবহারে দারুণ সতর্ক এবং বিনয়ী হতেই হবে। নানা যন্ত্রণা ও অবহেলা কিংবা বিপর্যয় এলেও সদাহাস্য মুখে তা মেনে নিয়ে উৎসর্গিত হতে হবে পরম দয়াময়ের করুণাতলে।

রাসূল (সা.) তাগিদ দিয়ে বলে গেছেন, যে হজ করলো এবং কোনো রকম অশ্রাব্য আচরণ কিংবা অনাচার থেকে বিরত থাকলো, সে হজ থেকে তার সদ্যপ্রসূত নিষ্পাপ শিশুর মতো হয়ে ফিরে এলো। (বুখারী)

তাই নিছক কিছু আমল কিংবা হুকুম পালনের জন্য নয়, হজ আপনার আত্মিক ও বাহ্যিক সংশোধনের এক মূল্যবান প্রক্রিয়া। তবে এসবের পূর্ণ প্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল অনুভবের জন্য আপনারও রয়েছে বেশ কিছু করণীয়।

খুব ভালোভাবে যাচাই বাছাই করে নিন, হজের পবিত্র সফরে রওনা হওয়ার আগে কারো কোনো দেনা আপনার কাঁধে নেই তো? কারো কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া কোনো সম্পত্তি কিংবা অন্যের অগোচরে অর্জিত কোনো বস্তু আপনার আওতায় নেই তো?

কোনো মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে আপনার অযথা মনোমালিন্য কিংবা সামান্য স্বার্থের কারণে অযাচিত দ্বন্দ্ব রয়ে গেলে তা সংশোধন করে নিন।

আল্লাহপাকের ডাকে সাড়া দিতে আপনি রওনা হচ্ছেন, কাজেই আপনার গায়ে যেন কোনো কলঙ্ক লেগে না থাকে, সে ব্যাপারে পূর্ণ সতর্ক ও সচেতন হোন।

লোক দেখানো লৌকিকতা কিংবা হাজী বা আলহাজ ডাক শোনার সামান্যতম বাসনা ও সামাজিক সম্মান ও প্রতিপত্তির সব লোভ ও কামনা মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন।

হজের প্রথম শিক্ষা হলো মানুষে মানুষে সাম্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি এবং সবার সঙ্গে সদাচারণের সুন্দর ব্যবহার প্রশিক্ষণ। ধৈর্য এবং নিয়মশৃঙ্খলার সঙ্গে জীবনযাপন এবং অন্তরে একনিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ হজের অন্যতম প্রশিক্ষণ। হজের সূচনা দিনগুলো থেকে নিজের বাকি জীবন এসব রঙে রঙিন হয়ে থাকার জন্য পূর্ণ মানসিক শপথ ও প্রস্তুতির সাহস সঞ্চয় করুন এখন থেকে।

জীবনে আর কোনোদিন এ পবিত্র নগরী এবং কালো গিলাফাবৃত কাবা আপনার দু’নয়নে দেখা পাবে কিনা, জানা নেই। তাই হজের দিনগুলোতে এদিক ওদিক সময় নষ্ট না করে আল্লাহর ঘরের আশেপাশে থাকুন।

প্রাণভরে জীবনের সব চাওয়া পাওয়া আল্লাহকে খুলে বলুন। পরকালের সব সাফল্য ও পাপের মার্জনা কামনার এমন একান্ত সময় হেলায় যেন নষ্ট না হয়।

এভাবেই জীবন্ত হয়ে উঠবে আপনার হজ। নিছক ইহরাম বেঁধে তাওয়াফ ও গুটিকয়েক আমল শেষে কুরবানীর পশু জবাই করার নাম তো হজ নয়।

নিজের পরিপূর্ণ সংশোধন এবং আত্মার নতুন জাগরণ অর্জিত না হলে সেটি হয়ে যায় মক্কা ভ্রমণ।

হজের সবগুলো আমল সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন ভালো আলেমের কাছ থেকে। বিভিন্ন স্থানে দোয়া করার ফযিলতসমূহ জেনে সে জায়গাগুলোতে নিজেকে সঁপে দিন পরম করুণাময়ের কাছে।

এভাবে নিজের বাহ্যিক আচার আচরণ এবং আত্মিক বিশ্বাস ও প্রতিফলনে একনিষ্ঠ হয়ে হালালভাবে অর্জিত অর্থে সবার সঙ্গে সদাচারণ করে আল্লাহর ঘরের দিকে আপনার যাত্রার সূচনা করতে পারলে অনুভূত হবে এক ধরণের নতুন স্বাদ ও অনুভব। হজের জন্য পাগলপারা হৃদয়ের তপ্ত তাড়নায় বিলীন হয়ে কতো আশেকীন আল্লাহর ঘরের দিকে ছুটে চলেছেন, আহা! সেসব পূর্বসুরীদের হজের বিবরণ পড়লে চোখের পানি আর হৃদয়ের উত্তাল ঢেউ আটকে রাখা কঠিন হয়ে যায়।
যে পরম মাওলার ডাকে সাড়া দিয়ে তার ঘরের মেহমান হচ্ছেন আপনি, তার বিশেষ রহমত ও ভালোবাসার উপস্থিতি তখন থেকেই আপনার হৃদয়ে সজীব জীবন্ত হয়ে উঠবে। তুচ্ছ মনে হবে সব ভোগবিলাস কিংবা ভ্রমণের যাবতীয় দুঃখ-যন্ত্রণা।
আপনার পবিত্র হজ বরকতময় ও কবুল হোক। (আমিন)

সৌদি শরিয়াহ পুলিশের ক্ষমতা কমছে

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় উপস্থিত শরিয়াহ পুলিশ সদস্যদের একাংশ। ছবিটি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় উপস্থিত শরিয়াহ পুলিশ সদস্যদের একাংশ। ছবিটি সম্প্রতি তোলা।

সৌদি আরবে শরিয়াহ পুলিশের ক্ষমতা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। আজ বুধবার শরিয়াহ পুলিশের প্রধান শেখ আবদুল লতিফ আবদেল আজিজ আল-শেখ সৌদি দৈনিক ‘আল-হায়াত’কে এ কথা জানান।
আল-শেখ বলেন, শরিয়াহ পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কাজে বেশ কিছু সংস্কার আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে ইসলামি নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগে কোনো ব্যক্তিকে সরাসরি গ্রেপ্তার বা জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন না শরিয়াহ পুলিশের সদস্যরা। ‘ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও অন্যায় প্রতিরোধ কমিটি’ নামে শরিয়াহ পুলিশ শাখার সদস্যরা গভর্নরের পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো তল্লাশি চালাতে পারবেন না বলেও জানান তিনি।
সৌদি দৈনিক ‘ওকাজ’ জানায়, নতুন কাঠামো অনুযায়ী শপিং মলের সামনে দাঁড়ানো কিংবা কাউকে মলে ঢুকতে বাধা দিতে পারবেন না শরিয়াহ পুলিশের সদস্যরা। এর ফলে ইসলামি পোশাক বিধি না মানা কোনো নারী কিংবা অবিবাহিতদের শপিং মলে ঢুকতে বাধা দিতে পারবেন না তাঁরা।
সৌদি আরবে ইসলামি আইন সংরক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত শরিয়াহ পুলিশ। তবে বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরের জুনে নেইলপলিশ পরার কারণে একজন নারীকে একটি শপিং মল থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন শরিয়াহ পুলিশের কয়েকজন সদস্য। ওই নারী পুলিশের আদেশ না মেনে তর্কে জড়িয়ে যান। এমনকি পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার ভিডিওটি ইউটিউবে ছেড়ে দেন। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচিত হয় সৌদি পুলিশ।
তবে শরিয়াহ পুলিশের এমন আচরণ নিয়ন্ত্রণে বাহিনীর প্রধান যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই শরিয়াহ পুলিশে সংস্কারের চেষ্টা করেছেন বাহিনীর প্রধান আল-শেখ। চাকরির দুই সপ্তাহের মাথায় তিনি শরিয়াহ পুলিশে স্বেচ্ছাসেবক রাখার বিধান বাতিল করে দেন। চলতি বছরের এপ্রিলে তিনি নির্দেশ দেন, শরিয়াহ পুলিশ লোকজনকে হয়রানি এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিতে পারবে না। এ ছাড়া জুনে নেইলপলিশ পরা নারীকে শপিং মল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টাকারী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেন তিনি।

আল্লাহর পথে আহ্বানের ধরন

মাওলানা মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম

ইন্দোনেশিয়ার মিদানে অবস্থিত একটি মসজিদ
ঈসায়ী ৬১০ সালে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা: নবুওয়াত লাভ করেন। নবুওয়াতের প্রথম তিনটি বছর তিনি নীরবে দ্বীনের দাওয়াত দিতে থাকেন। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:-কে সরবে দাওয়াত দেয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘হে মুদ্দাচ্ছির (চাদরাবৃত)! ওঠো। (লোকদেরকে) সাবধান করো। আর তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করো, প্রতিষ্ঠা করো।’ (সূরা আল মুদ্দাচ্ছির : ১-৩)। আরো বলা হয় : ‘তুমি তোমার নিকটাত্মীয়স্বজন-প্রতিবেশীকে দ্বীনের ব্যাপারে সতর্ক করো।’ (সূরা আশ শুয়ারা : ২১৪)।
তাই আল্লাহর রাসূল সা: ছাফা পাহাড়ে উঠে ‘ইয়া সাবাহাহ, ইয়া সাবাহাহ’ বলে আওয়াজ দেন। তাৎণিকভাবে লোকদের একত্রিত করে কোনো বিপদের সংবাদ দেয়ার জন্য কোনো উঁচু স্থানে উঠে এই আওয়াজ দেয়া ছিল তখনকার আরবদের একটি নিয়ম। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:-এর কণ্ঠে ওই আওয়াজ উচ্চারিত হলে লোকেরা ছুটে এসে ছাফা পাহাড়ের পাদদেশে সমবেত হয়।
রাসূল সা: সমবেত জনতাকে জিজ্ঞেস করলেন : ‘আমি যদি বলি তোমাদের ওপর হামলা চালানোর জন্য একদল অশ্বারোহী সৈন্য আবু কুবাইস পাহাড়ের ওদিকে অপেমাণ, তোমরা কি আমাকে বিশ্বাস করবে?’ লোকেরা বলল : ‘অবশ্যই করব। কারণ, তুমি তো কখনো মিথ্যা কথা বলো না।’ তখন রাসূল সা: আখেরাতের মহাবিপদ এবং তা থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে একটি নাতিদীর্ঘ ভাষণ দেন।
এ ভাষণ শুনে আবু লাহাব ভীষণ েেপ যায়। সে একখণ্ড পাথর নিজের হাতে তুলে নিয়ে তার ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এবং বলে ওঠে : ‘তোমার সর্বনাশ হোক। এজন্যই কি তুমি আমাদেরকে ডেকে এনেছ?’ অতঃপর সে লোকদেরকে হাঁকিয়ে নিয়ে চলে যায়।
তখন থেকে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা: সরবে দ্বীনের দাওয়াত দিতে থাকেন। কাফের মুশরিকরা হাসি-তামাশা, গাল-মন্দ, হুমকি-ধমকি ও বানোয়াট কথা প্রচার করে তাঁর বিরোধিতা করতে থাকে। মুশরিকদের বিরোধিতা সত্ত্বেও সত্যসন্ধানী যুবক-যুবতীরা একে একে মুমিনদের কাফেলায় শামিল হতে থাকেন। এতে মারমুখো হয়ে ওঠে কাফের-মুশরিক শক্তি।
নবুওয়াতের পঞ্চম সাল থেকে দৈহিক নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে অবস্থা এতই নাজুক হয়ে ওঠে যে বহুসংখ্যক মুমিন ঘরদোর, ব্যবসা-বাণিজ্য, ভেড়া-দুম্বা-ঘোড়া-উট ইত্যাদি পেছনে ফেলে হাবশায় হিজরত করেন। আর যারা মাক্কায় থেকে গিয়েছিলেন তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
নবুওয়াতের ষষ্ঠ সালে কুরাইশদের ১০টি গোত্রের ৯টি গোত্র বনু হাশিমের বিরুদ্ধে একটি বয়কট চুক্তি স্বার করে। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:-কে হত্যা করার জন্য তাদের হাতে না দেয়া পর্যন্ত এ বয়কট চুক্তি বলবৎ থাকবে বলে স্থিরীকৃত হয়। প্রত্য সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য আবু তালিবের নেতৃত্বে বনু হাশিম এবং মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:সহ মুমিনগণ তাঁবু খাটিয়ে ‘শিয়াবে আবু তালিব’ নামক স্থানে অবস্থান করতে থাকেন।
তিন বছর পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে থাকে। অবশেষে আল্লাহর অনুগ্রহে কয়েকজন বিবেকবান কুরাইশ যুবকের উদ্যোগে এ অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:, মুমিনগণ এবং বনু হাশিম গোত্র মুক্তি লাভ করেন। তবে বিরোধিতার মাত্রা সমভাবেই চলতে থাকে। মুমিনদের জন্য মাক্কায় জীবন যাপন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে।
এমন কঠিন মুহূর্তেও মানুষকে আল্লাহর পথে দাওয়াত প্রদানের নির্দেশ অব্যাহত রেখে দাওয়াত দানের বিজ্ঞানভিত্তিক ও বাস্তবসম্মত পদ্ধতি তুলে ধরে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে মানুষকে ডাকো এবং সর্বোত্তম পন্থায় তাদের সাথে বাক্য বিনিময় করো। নিশ্চয়ই একমাত্র তোমার রবই জানেন কে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং তিনি হিদায়াতপ্রাপ্তদেরকেও খুব ভালো করেই জানেন।’ (সূরা আন নাহল : ১২৫)।
বিখ্যাত তাফসিরকারক ইমাম আল কুরতুবি রহ: তার তাফসির গ্রন্থ তাফসির আল কুরতুবিতে উল্লেখ করেছেন : ‘এ আয়াতটি কুরাইশদের সন্ধিচুক্তির সময় মক্কায় নাজিল করে রাসূল সা:-কে রুতা ও উগ্রতা পরিহার করে কোমল ও মিষ্টিস্বরে মানুষকে আল্লাহর বিধিবিধান ও দ্বীনের পথে ডাকার নির্দেশ দেয়া হয়।’
উপর্যুক্ত আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তুমি তোমার রবের পথে আহ্বান করো’। কাকে বা কাদেরকে আহ্বান করতে হবে সে ব্যাপারে সরাসরি বলা না হলেও আয়াতের পরের অংশ ও আগের আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায়, মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকার কথা বলা হয়েছে। এ মানুষ কাফের, মুশরিক, মুনাফেক, ইহুদি, নাসারা, মুমিন-মুসলিম যারাই আল্লাহর পথ থেকে, আল্লাহর দ্বীন থেকে, আল্লাহর বিধিবিধান থেকে কিঞ্চিত দূরে সরে পড়েছে তাদেরকেই আল্লাহর পথে ডাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ‘উদয়ু’ শব্দটি আমরের সিগা বা আদেশসূচক শব্দ। আল্লাহ তায়ালা এ শব্দটি ব্যবহার করে দাওয়াতি কাজ করার প্রতি জোর নির্দেশ দিয়েছেন।
আয়াতে ‘সাবিলি রব্বিকা’ তথা তোমার রবের পথ বলতে শরিয়ত তথা ইসলামকে বোঝানো হয়েছে। ইমাম আত তাবারি রহ: স্বীয় তাফসির গ্রন্থে এর ব্যাখ্যায় বলেন : ‘তুমি মানুষকে তোমার রবের পথে ডাকো অর্থাৎ সৃষ্টিকুলের জন্য তোমার রব যে শরিয়ত তথা ইসলাম মনোনীত করেছেন সেদিকে মানুষকে ডাকো।’ তাফসিরে হাক্কানীতে বলা হয়েছে : ‘তুমি শয়তানের পথ থেকে তোমার রবের পথ তথা ইসলামের পথে মানুষকে ডাকো।’
পথহারা মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকার ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আল কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে তাগিদ দিয়েছেন। যেমন :
- সূরা আল মুদ্দাচ্ছিরের ২ ও ৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন : ‘ওঠো।  লোকদেরকে সতর্ক করো। তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করো।’
- সূরা আশ শূরার ১৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন : ‘এমতাবস্থায় তুমি দাওয়াত দিতে থাকো। আর দৃঢ় থাকো যেভাবে তোমাকে আদেশ করা হয়েছে।’
- সূরা ইউসুফের ১০৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন : ‘ওদেরকে বলো। এটাই তো আমার পথ, যে আমি লোকদেরকে আল্লাহর দিকে আহ্বান জানাই।’
- সূরা আল মায়িদার ৬৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন : ‘হে রাসূল! তোমার রবেব নিকট থেকে তোমার প্রতি যা কিছু নাজিল করা হয়েছে তা লোকদের নিকট পৌঁছাও। তুমি যদি তা না করো, তাহলে তো রিসালাতের দায়িত্বই পালন করলে না।’
আল্লাহর পথে, আল্লাহর দ্বীনের পথে মানুষকে ডাকা শুধু মুহাম্মদ সা: ও তার উম্মতকেই নির্দেশ দেয়া হয়নি। এ কাজ যুগে যুগে সব নবী-রাসূল করেছেন। যেমন :
- কুর্দিস্তানে প্রেরিত হয়েছিলেন নূহ আ:। তিনি তার কাওমকে সম্বোধন করে বলেন : ‘আমি তোমাদের প্রতি সুস্পষ্ট সাবধানকারী হিসেবে এসেছি। তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করবে না। অন্যথায় আমি আশঙ্কা করছি তোমাদের ওপর একটি যন্ত্রণাদায়ক আজাব এসে পড়বে।’
- প্রাচীন ইরাকের উর সাম্রাজ্যে প্রেরিত হয়েছিলেন ইব্রাহিম আ:। তিনি তাঁর কাওমকে সম্বোধন করে বলেন : ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাকে ভয় করে চলো। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা তা বোঝো।’ (সূরা আল আনকাবুত : ১৬)।
- প্রাচীন আরবের প্রতাপশালী ‘আদ’ জাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন হুদ আ:। তিনি তাঁর কাওমকে সম্বোধন করে বলেন : ‘হে আমার কাওম! তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ নেই।’ (সূরা হুদ : ৫০)।
- প্রাচীন আরবের আরেক প্রতাপশালী জাতি ছিল ‘সামুদ’ জাতি। এরা পাথরের পাহাড় খোদাই করে প্রাসাদ বানিয়ে তাতে বসবাস করত। সামুদ জাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন ছালেহ আ:। তিনি তাঁর কাওমকে সম্বোধন করে বলেন : ‘হে আমার কাওম! তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ নেই।’ (সূরা হুদ : ৬১)।
- প্রাচীন আরবের তাবুক এবং এর নিকটবর্তী বিস্তৃত এলাকায় বসবাস করত ‘মাদইয়ান’ জাতি। এদের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন শোয়াইব আ:। তিনি তাঁর কাওমকে সম্বোধন করে বলেন : ‘হে আমার কাওম! তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ নেই।’ (সূরা হুদ : ৮৪)।
- কানান বা ফিলিস্তিনে বসবাসকারী ইয়াকুব আ:-এর এক নেক সন্তান ছিলেন ইউসুফ আ:। ঈর্ষাপরায়ণ ভাইদের চক্রান্তের শিকার হয়ে তিনি ‘বিজন’ মরুভূমির এক কুয়ায় নিপ্তি হন। একটি বাণিজ্য কাফেলার লোক তাকে কুয়া থেকে বের করে মিসরে নিয়ে সেখানকার প্রতাপশালী এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে। সেই প্রতাপশালী ব্যক্তির স্ত্রীর আহ্বানে সাড়া না দেয়ায় কারাগারে নিপ্তি হন। ইতোমধ্যে ইউসুফ আ: নবুওয়াত লাভ করেন। কারাগারের বন্দীদের মাঝেই তিনি দাওয়াতি কাজ শুরু করেন। বন্দীদের উদ্দেশে প্রদত্ত এক ভাষণে তিনি বলেন : ‘সার্বভৌমত্ব আল্লাহ ছাড়া আর কারো নয়। তাঁর নির্দেশ : তাঁকে ছাড়া তোমরা আর কারো ইবাদত করবে না। এটাই মজবুত জীবনব্যবস্থা। অথচ অধিকাংশ লোকই তা জানে না।’ (সূরা ইউসুফ : ৪০)।
- প্রাচীন মিসরের ফেরাউন মারনেপতাহর কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন মুসা ইবনু ইমরান আ:। তিনি মিসরবাসীর কাছে এবং ফেরাউনের কাছে দ্বীনের দাওয়াত দিতে থাকেন। ফেরাউনের সামনে প্রদত্ত এক ভাষণে তিনি বলেন : ‘আল্লাহর বান্দাদেরকে আমার হাতে সঁপে দাও। আমি তোমাদের প্রতি বিশ্বস্ত রাসূল হিসেবে প্রেরিত। আল্লাহর ওপর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করতে যেয়ো না। আমি তোমাদের সামনে সুস্পষ্ট সনদ পেশ করছি।’ (সূরা আদ দুখান : ১৮-১৯)।
- ফিলিস্তিনে আবির্ভূত হয়েছিলেন ঈসা ইবনু মারিয়াম আ: । তিনি তাঁর কাওমকে সম্বোধন করে বলেন : ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার রব, তোমাদেরও রব। অতএব একমাত্র তাঁরই ইবাদত করো। এটাই সরল সঠিক পথ।’ (সূরা মারিয়াম : ৩৬)।
আল্লাহর পথে এ দাওয়াত ব্যক্তিকেন্দ্রিকের পাশাপাশি গ্র“প ভিত্তিকও হতে পারে। এ প্রসঙ্গে দলিল হলো :
আল্লাহ তায়ালা সূরা আল ইমরানের ১০৪ নম্বর আয়াতে বলেন : ‘তোমাদের মধ্যে একটি দল থাকা চাই, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে, সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখবে। এ কাজটি যারা করবে তারাই সফলকাম।’
তিনি সূরা আল ইমরানের ১১০ নম্বর আয়াতে বলেন : ‘তোমরাই হলে শ্রেষ্ঠ জাতি। মানবজাতির কল্যাণে তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে।’
যে কথাগুলো ব্যবহার করে লোকদের আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়া হবে সে কথাগুলোকে আল্লাহ সর্বোত্তম কথা বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন :
সূরা হা মিম আস সাজদাহর ৩৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘সে ব্যক্তির কথার চেয়ে কার কথা উত্তম যে আল্লাহর দিকে লোকদেরকে ডাকে, সৎ কাজ করে এবং বলেÑ নিশ্চয়ই আমি মুসলিমদের একজন।’
আল কুরআনের মতো আল হাদিসেও আল্লাহর পথে দাওয়াত দেয়ার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যেমনÑ রাসূল সা: বলেন : ‘আমার প থেকে লোকদের কাছে পৌঁছে দাও, যদিও তা একটি আয়াত হয়।’ (সহি আল বুখারি)।
আল হাদিসে দাওয়াতি কাজের প্রতিদান সম্পর্কে বলা হয়েছে : ‘যে ব্যক্তি কোনো ভালো পথ দেখায়, সে ব্যক্তি এতটাই বিনিময় পায় যতটা ওই কাজ সম্পাদনকারী পেয়ে থাকে।’ (সহি মুসলিম ও সুনান আত তিরমিজি)
রাসূল সা: আরো বলেন : ‘যে ব্যক্তি কাউকে হিদায়াতের পথের দিকে ডাকে। তার জন্য ওই পথের অনুসারী ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত পুরস্কারের অনুরূপ পুরস্কার রয়েছে।’ (সহি মুসলিম ও সুনান আবু দাউদ)।
রাসূল সা: আলী ইবনু আবি তালিব রা:কে বলেন : ‘আল্লাহর শপথ, তোমার দ্বারা আল্লাহ যদি একজন ব্যক্তিকে হিদায়াতের পথে আনেন, তা তোমার জন্য লাল উট লাভ করার চেয়েও উত্তম।’ (সহি বুখারি ও সহি মুসলিম)।
অতএব আসুন আমরা মুসলিম হিসেবে দায়ি ইলাল্লাহর দায়িত্ব পালন করি। পথচ্যুত, পথাহারা মুমিন, কাফের, মুশরিক সব শ্রেণীর মানুষকে বুদ্ধিমত্তা ও বিচণতাসহ নসিহতপূর্ণ সুন্দর বক্তব্য উপস্থাপন করে এবং সর্বোত্তম যুক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে আল্লাহর পথে আহ্বান জানাই।

হজে গিয়ে ফরাজিকান্দি পীরের ইন্তেকাল


চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজিকান্দি দরবার শরীফের পীর আল্লামা শায়খ সায়্যিদ মনজুর আহমেদ ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নাল্লিল্লাহি ... রাজিউন)।

হজ পালন করতে গিয়ে ১ অক্টোবর তিনি মদিনায় ইন্তেকাল করেন।

তিনি আমীরে আলা নেদায়ে ইসলাম ইমামুত ত্বরিক্বত আল্লামা শায়খ সায়্যিদ মুহম্মাদ বোরহানুদ্দীন উয়েসী (রা.) এর জ্যৈষ্ঠ পুত্র।

ওসিয়ত অনুযায়ী মসজিদে নববীতে জানাজা শেষে জান্নাতুল বাকিতে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।

আগামী শুক্রবার বাদ জুমা ফরাজিকান্দি দরবার শরীফে মরহুমের জন্য মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। দোয়া মাহফিলে তার গ্রণগ্রাহী ও ভক্তদের উপস্থিত থাকার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।

সহজ ছোট ভাল কাজ


আমাদের জীবনটা তো খুব ছোট। তার মধ্যে এক চতুর্থাংশ চলে যায় বড় হতে, শিখতে, বুঝতে। বড় হওয়ার পরেও তিন ভাগের একভাগ কাটে ঘুমিয়ে আর নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ সারতেই। বাকি এত অল্প সময়টার মধ্যে পড়াশুনা, চাকরি, ব্যবসা - এসব করবো কী, সংসার চালাবো কী.. আর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজই বা করবো কী?

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করাও তো চাট্টিখানি কথা নয়, আগে জানতে ও বুঝতে হবে, নিয়্যতটাকে পরিষ্কার করতে হবে, তবেই না!


এসব সেরে, সংসারের দায়িত্ব সেরে হিসেব মেলাতে গেলে দেখা যায়, ওমা! কবে জীবনের দুই তৃতীয়াংশ শেষ করে ফেলেছি, টেরই পাইনি! এখন এই শেষ সময়ে তড়িঘড়ি করে দানের টাকা দিয়ে ফেলা, একটু বেশি করে তজবি জপা.. সারাদিন জায়নামাজে বসে থাকা - এসব করতে হয়।

কিন্তু ওসবেও তো সমস্যা। আল্লাহ তো চান ভারসাম্যপূর্ণ জীবন। যখন যেখানে সুবিধা সেখানে হেলে পড়লে তো আর ভারসাম্য হলো না। আল্লাহ চান আপনি যখন অফিসের কাজে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তখনও আল্লাহকে খুশি করুন, ছেলে মেয়ের পরীক্ষা পরদিন সকালে - সিলেবাস শেষ করাতে করাতে আল্লাহকে মনে করুন.. এমন। তাহলে কীভাবে তা সম্ভব?


এজন্যই, আমরা দিনের একেবারে খুঁটিনাটি ঘটনায় আল্লাহকে এনে ফেললে আর দিন শেষে তজবির ওপর ভরসা করে থাকতে হবে না।

এখানে অত্যন্ত সরল সোজা কিছু করণীয় দেওয়া হলো:

প্রতিদিন একটু হাঁটা হয়না? হাঁটার সময়টা কী করেন আপনি? পা দিয়ে তো হাঁটাই হয়, মনটা দিয়ে কী করা হয়? কিছুই না, তাইনা? এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখা, আগের বা পরের কিছু ভাবা- এসবই তো! এখন থেকে হাঁটার ছন্দের সঙ্গে ছোট দু`আ (যেমন সুব-হা-নাল্লাহ, ওয়ালহাম-দু-লিল্লাহ, ওয়ালা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু-আক্ব-বার, অথবা সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী সুবহানাল্লাহিল আযীম) মিলিয়ে পড়তে পড়তে হাঁটবেন। প্রথম প্রথম মনেই থাকবে না পড়ার কথা। তারপর একটা সময়ে পুরোপুরি প্রোগ্রাম সেট হয়ে যাবে মাথার ভেতর। দিনে কতো কদম হাঁটা হয়? দু’হাজার? প্রতি ষোল কদমে যদি একবার করে দু`আটা শেষ করা হয়, দিন শেষে কতোগুলি নেকি জমা পড়লো কোনো কষ্ট ছাড়াই
?

এই তো গেল হাঁটা। গোণাগুণির কাজ করতে হয়না? আটটা ডিম, ছ`টা কলম, তিন তলা, কুড়িটা সিঁড়ি? এক দুই তিন করে না গুণে `সুবহানাল্লাহ` `ওয়ালহামদুলিল্লাহ` `ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু` `ওয়াল্লাহু আক্ববার` - এভাবে চার চার করে গুণে ফেলুন। একদম কোনো ঝামেলা ছাড়া আরও আট দশবার দুআ পড়া হয়ে যাবে। গায়েই লাগবেনা।

তারপর নতুন সূরা শেখা হয়না কতো বছর হলো? শিখতে চান? পছন্দের তিলাওয়াতকারীর তিলাওয়াতের এমপিথ্রি চালিয়ে দিয়ে রাখুন মোবাইলে, গাড়িতে, ঘর গুছানোর সময় - গানের মতো পুরোটা মাথায় কপি হয়ে যাবে দু`সপ্তাহ পর। এভাবে শুনে শেখার আরও সুবিধা হচ্ছে উচ্চারণও শুদ্ধ হবে, কোথায় কতোটুকু বিরতি দিতে হবে, সব জানা হয়ে যাবে।


ক্লাসে যাবেন, বাজারে যাবেন, অফিসে যাবেন, জ্যামে বসে আছেন, মেজাজটা তিরিক্ষি - সময়টা কাজে লাগান একটা অডিও লেকচার শুনে। সেটা হতে পারে কুরআনের তাফসির, নবীদের জীবনী, পারিবারিক সম্পর্কের ওপর ইসলামিক আলোচনা.. শুধু যে মেজাজ রক্ষা পাবে তাই না, অলস সময়টাতে অনেক ভাল ভাল চিন্তা মাথায় চলে আসবে। হঠাৎই হয়তো মনে হবে, `আরে! এই কাজটা তো করা যায়!` ব্যাস, কোনো রিকশাওলা কোনো দিক দিয়ে ঢুকে গেল - এসব দেখে আর মেজাজ খারাপ হবে না। আপনি তো আর আপনার সময় নষ্ট করছেন না! ওরা যা ইচ্ছে করুক না!

এগুলো ছিল একদম কোনো আয়াস ছাড়াই সওয়াব কুড়ানোর পদ্ধতি। এবার আসি একটু শ্রম দিতে হয় এমন কাজে।

বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে ভাল লাগে? তক্কে তক্কে থাকুন, কখন অসুস্থ হয় (তাই বলে আবার দোয়া করতে যাবেন না যেন অসুখে পড়ে); হলেই মিস নেই, দেখতে যান, ফোন করে খোঁজ নিন, অন্য সময়ের চেয়ে দুইবার বেশি ফোন দিন। শুধু বন্ধুর অসুখই না, বন্ধুর পরিবারের যে কারোর বেলায়ও। আল্লাহ ভীষণ খুশি হন এসব কাজে। আর তার ওপর যদি আল্লাহকে খুশি করার নিয়তে করেন, তাহলে তো ডাবল লাভ!!

দাওয়াতে মুরুব্বী কারও সঙ্গে দেখা হয়? নানু দাদু শ্রেণীর, যারা কোনো অনুষ্ঠানে গেলে চুপচাপ এক কোণে বসে থাকেন, সবাই দেখা হলে সালাম দিয়ে চলে যায়, কিন্তু কথা বলে না। এমন বয়সীদের পাশে গিয়ে বসে কথা বলতে শুরু করুন। এমনভাবে আধা ঘণ্টা গল্প করুন, যাতে তাঁর মনে হয় এই সমাবেশে তার সঙ্গে সময় কাটিয়েই আপনি সবচেয়ে বেশি মজা পাচ্ছেন। চলে আসার সময় দেখবেন প্রাণঢালা দোয়ার ওজনে হাঁটতে পারছেন না।

পরিচিত মানুষজনের সঙ্গে এমনভাবে নরম করে কথা বলা শুরু করুন, যাতে কেউ সমস্যায় পড়লে আপনার কাছে বলতে ভরসা পায়।

তারপর সমাধান করতে পারেন না পারেন, একটু সুন্দর করে বলুন, `হ্যা... সত্যিই তো... আসলেই তো সমস্যা... ধৈর্য ধরে থাকেন ভাই! আপনার তো অনেক ধৈর্য মাশাআল্লাহ!` হয়ে গেল! সে ভাই খুশি, আল্লাহ খুশি, আপনি খুশি। খুশিই খুশি।


যদি দেখেন কেউ একটা ভাল উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু কাজটা সুন্দর করে হয়নি দেখে অনেক সমালোচনা করছে সবাই... খুব উৎসাহ দেখান। বলুন, জিনিসটা খুবই ভাল হয়েছে। সে যখন উৎসাহে টগবগ করতে থাকবে - তখন না হয় সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে খুঁতগুলো ঠিক করার পরামর্শ দেবেন। ভাল কাজে এই যে উৎসাহ দিলেন, চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন - এতে আল্লাহ সে ভাল কাজের সওয়াবে আপনারও একটা অংশ লিখে রাখবেন ইনশাআল্লাহ।

আবারো ফিরে আসি হাঁটার কথায়। চাইলে এক জোড়া গ্লাভস/পলিথিন সঙ্গে করে বের হতে পারেন। রাস্তায় ঠোঙা, পেপসির ক্যান, পলিথিন, কাঁটা পড়ে থাকতে দেখলে তুলে ডাস্টবিনে ফেলে দেবেন। রাস্তার জিনিস পলিথিন মোড়া হাত দিয়ে ধরলে কিন্তু হাত খসে পড়ে যায় না (আমরা টাকা ধরার সময় আরও অনেক জীবাণু ধরি)। কিন্তু এসব কাজে বিনা খরচে সদকা আদায় হয়।

সৌদিতে ১৩ বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু



 পবিত্র হজব্রত পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গমনকারী বাংলাদেশিদের মধ্যে গত সেপ্টেম্বরের ২০ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত সময়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)।
সৌদি কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট ট্রাভেল এজেন্ট সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে আকরাম উল্লাহ নামে ৯ বছর বয়সী এক শিশুও রয়েছে।
সৌদিতে মৃত্যুবরণকারী ১৩ জন হলেন,
idu১। ইদু মিয়া (৭৮), হজযাত্রী আইডি নং ৫১১০০৬, পাসপোর্ট নং এসি ৫৫৫০৯৬৬, ঠিকানা: ৩৪২/বি খিলগাঁও তালতলা, রামপুরা ঢাকা। তিনি গত ৩০ সেপ্টেম্বর মারা যান। তিনি গত ১৮ সেপ্টেম্বর সৌদি যান।


alim২। আলিম উদ্দিন মাস্টার (৬১), হজযাত্রী আইডি নং ২৩৫২০৫, পাসপোর্ট নং এসি ১১৪৪৩০৭, ঠিকানা: ৯০ ভাগলপুর, সাভার, ঢাকা। তিনি গত ৩০ সেপ্টেম্বর মারা যান। তিনি গত ২৮ সেপ্টেম্বর সৌদি যান।


akram৩। আকরাম উল্লাহ (৯), হজযাত্রী আইডি নং ২৭৮৩০৬, পাসপোর্ট নং এডি ৫০৩০২২৩, ঠিকানা: ৪৭/বি পুরানা মোগলটুলি, বংশাল, ঢাকা। তিনি গত ৩০ সেপ্টেম্বর মারা যান। তিনি গত ২৭ সেপ্টেম্বর সৌদি যান।


latif৪। এ লতিফ সরকার (৫৮), হজযাত্রী আইডি নং ১৬০১৯৩, পাসপোর্ট নং এসি ৬৭৫৯৫৫৭, ঠিকানা: বড়ুয়া, লালমনিরহাট। তিনি গত ২৯ সেপ্টেম্বর মারা যান। তিনি গত ২৬ সেপ্টেম্বর সৌদি যান।      


ayub৫। আইয়ুব খান(৪৫), হজযাত্রী আইডি নং ৫২০৩০২, পাসপোর্ট নং এসি ০৯৬২৪৯০, ঠিকানা: ঘোসাইপুর, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ। তিনি গত ২৮ সেপ্টেম্বর মারা যান। তিনি গত ২৭ সেপ্টেম্বর সৌদি যান।


shafiqul৬। শফিউল আলম চৌধুরী (৬৪), হজযাত্রী আইডি নং ০১৯১১৬, পাসপোর্ট নং এএ ৮৫০৩৪০, ঠিকানা: রাউজান, চট্টগ্রাম। তিনি গত ২৭ সেপ্টেম্বর মারা যান।       


anwara৭। আনোয়ারা বেগম (৫৫), হজযাত্রী আইডি নং ৩৮৮২৭০, পাসপোর্ট নং এসি ৫৪৬৪৪৭৬, ঠিকানা: ২৪৭নং পশ্চিম ধীরাশ্রম, গাজীপুর। তিনি গত ২৫ সেপ্টেম্বর মারা যান। তিনি গত ২৩ সেপ্টেম্বর সৌদি যান।


rowshon৮। রওশন আরা বেগম (৫১), হজযাত্রী আইডি নং ৯৯১৮৭১, পাসপোর্ট নং এসি ০১৯৮৭৯২, ঠিকানা: সুজলপুর, বীরগঞ্জ, দিনাজপুর। তিনি গত ২৪ সেপ্টেম্বর মারা যান। তিনি গত ১৯ সেপ্টেম্বর সৌদি যান।


alamin৯। আব্দুল সাঈদ আলিম (৬৭), হজযাত্রী আইডি নং ৯৯০৭৫১, পাসপোর্ট নং এএ ৮৩৩৯০০৯, ঠিকানা: ১৪৫/এ উত্তর বাসাবো, ঢাকা মেট্রো। তিনি গত ২৪ সেপ্টেম্বর মারা যান। তিনি গত ১৮ সেপ্টেম্বর সৌদি যান।


rizia১০। রিজিয়া (৬৬), হজযাত্রী আইডি নং ৫১৪১৬৮, পাসপোর্ট নং এবি ৪৫৪৭৯১৭, ঠিকানা: নীলেরপাড়া, জয়দেবপুর, গাজীপুর। তিনি গত ২৩ সেপ্টেম্বর সৌদি যান এবং একইতিন মারা যান।
     

mumtaz১১। মমতাজ উদ্দিন মণ্ডল (৬২), হজযাত্রী আইডি নং ২৬৮০৪২, পাসপোর্ট নং এসি ৭৮৬০৪০৯, ঠিকানা: নিউ কলেজ রোড, থানা ও জেলা জামালপুর। তিনি গত ২০ সেপ্টেম্বর মারা যান। তিনি গত ১৭ সেপ্টেম্বর সৌদি যান।


eusuf১২। ইউসুফ আলী তালুকদার (৬৭), হজযাত্রী আইডি নং ০৩৭২৩৬, পাসপোর্ট নং এসি ৪৩১৭২১৬, ঠিকানা: সাতপোয়া উদয় মোড়, সরিষাবাড়ি, জামালপুর। তিনি গত ২০ সেপ্টেম্বর মারা যান। তিনি গত ১৭ সেপ্টেম্বর সৌদি যান।      


azizul১৩। আজিজুল হক (৯০), হজযাত্রী আইডি নং ৯৯১৩৩৩, পাসপোর্ট নং এসি ২৮২৯০০৯, ঠিকানা: গোরপাড়া, ‍মাদারগঞ্জ, জামালপুর। তিনি গত ২০ সেপ্টেম্বর মারা যান। তিনি গত ১৮ সেপ্টেম্বর সৌদি যান।

সালাতের গুরুত্ব


মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে নিজেকে তার প্রভুর কাছে সমর্পণ করা। আর সালাত হচ্ছে নিজেকে আল্লাহর কাছে শারীরিক ও মানসিকভাবে সপে দেওয়ার সবচেয়ে সুন্দর মাধ্যম।

আল্লাহ তায়ালা মানবজাতি সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদাত করার জন্য। তাই সালাতের মাধ্যমে যেমন আল্লাহকে খুশি করা যায়, ঠিক তেমনি নিজেও মানসিক প্রশান্তি লাভ করতে পারে।

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের দ্বিতীয়টি হচ্ছে সালাত, পবিত্র কোরান ও হাদিস গ্রন্থে বহু জায়গায় সালাত কায়েম করার তাগিদ ও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, ‌‌‌নিশ্চয়ই সালাত নির্ধারিত সময়ে আদায় করা মু’মিনদের উপর ফরয। (সুরাহ আন-নিসা, ১০৩)


আল্লাহ সালাতকে ফরয করে দিয়েছেন বিধায় কোনো অবস্থাতেই বিনা ওযরে (ইচ্ছা করে) সালাত ছাড়া যাবে না।(ইসলামিক পরিভাষায় ‘ফরয’ মানে হচ্ছে অবশ্য করণীয়)। আল্লাহ(সুব.) আরো বলেন, “তোমরা আল্লাহ অভিমুখী হও এবং তাকে ভয় কর আর সালাত প্রতিষ্ঠা কর, এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।”(সুরাহ আর-রুম, ৩১)

সালাতের মাধ্যমে বান্দা তার প্রভুর সঙ্গে সরাসরি কথা বলে, তাই সালাত আল্লাহর আনুগত্য লাভের জন্য একটি সুন্দর ইবাদাত। একাগ্র মনে সালাত আদায়কারী নিজের ও সমাজের কল্যান ব্যতিত কোনো খারাপ কাজ করতে পারে না। এছাড়া সালাত অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।

পবিত্র কোরানে সুরাহ আনকাবুত এ আল্লাহ (সুব.) বলেন, “নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।”

সালাতের গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসালাম (সা.) অনেক কথা বলেছেন । আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, তিনি আল্লাহর রাসুলকে বলতে শুনেছেন, “বলতো যদি তোমাদের বাড়ির সামনে একটি নদী থাকে, আর সে তাতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তাহলে কি তার দেহে কোনো ময়লা থাকবে?” তারা উত্তর দিলেন, তার দেহে কোনো ময়লা থাকবে না। আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, “এ হল পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উদাহরণ। এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বান্দার গুনাহ সমুহ মিটিয়ে দেন।”(অধ্যায় ৯/৬, হাদিস নং ৫২৮, সাহিহ বুখারি)

আসুন দশ বছর বয়সী শিশুসহ আমরা সবাই নির্ধারিত সময়ে দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করি।(সাধারণত সাত বছর বয়স হলে শিশুকে সালাত শিক্ষা দিতে হবে। আর দশ বছর বয়সী শিশুদের সালাত আদায় করতে কঠোরভাবে তাগিদ দিতে হবে।)

ফের নাসের ফ্লাইট বিপর্যয়: দুর্ভোগে ১১০০ হজযাত্রী


নাস এয়ারওয়েজের ৬টি ফ্লাইটের শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু করে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১১০০ হজযাত্রী আটকা পড়েছেন।

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে এসব হজযাত্রীদের অনেকেই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফ্লাইটের উদ্দেশ্যে বিমানবন্দরে অপেক্ষায় করছেন। বাকিরা এসেছেন শুক্রবার। যাত্রীরা জানান, বার বার সময় পরিবর্তন করেও ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে পারছে না নাস এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ। ফলে তারা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। 

বিমানবন্দরের বহির্গমন লাউঞ্জের বি-রো’র মেঝেতে শুক্রবার বিকেলে এসব যাত্রীদের চাদর আর মাদুর বিছিয়ে ফ্লাইটের অপেক্ষায় ইবাদত বন্দেগিতে সময় কাটাতে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মহিলা যাত্রীও রয়েছেন।


বিপুল সংখ্যক আটকেপড়া হজযাত্রীদের কারণে বিমানবন্দর কর্তপক্ষকেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে জানিয়ে বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, দু’দিনে নাস এয়ারওয়েজের মোট ৬টি ফ্লাইটে ১ হাজার ১০০ জন নন ব্যালটি হজযাত্রীকে নিয়ে শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু নাস এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ তাদের উড়োজাহাজ স্বল্পতায় ফ্লাইটগুলোর শিডিউল বার বার পুনর্বিন্যাস করেও ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে পারেনি।

বিমানবন্দরে অবস্থিত নাস এয়ারওয়েজের কার্যালয়ে কর্মরতার এ ব্যাপারে তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। তবে বাংলাদেশে নাস এয়ারওয়েজের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মোবাইলে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।


উল্লেখ্য, গত মঙ্গল ও বুধবারও নাস এয়ারওয়েজের শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে ৫টি ফ্লাইটের ৭শ’ ৮০ জন নন ব্যালটি হজযাত্রী বিমানবন্দরে আটকা পড়েন। পরে তাদের পুনর্নির্ধারিত শিডিউল অনুসারে সৌদি আরবে পাঠানো হয়।  






মহানবীর (সা.) অবমাননাকারীদের শাস্তি দাবি : রাজধানীতে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের বিক্ষোভ সমাবেশ

মহানবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.) অবমাননাকারী আমেরিকান চলচ্চিত্রকার ও ফ্রান্সের কার্টুনিস্টের শাস্তির পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক লুবনা ইয়াসমিন ও ঝিনাইদহের কলেজশিক্ষক শিশির ফিরোজকে গ্রেফতার এবং শাস্তির দাবিতে গতকাল রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন। বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় বিক্ষোভ করে ইসলামী আন্দোলন এবং ইসলামী ঐক্য আন্দোলন। কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় বিক্ষোভ করে মহানবীর (সা.) অবমাননাকারী প্রতিরোধ কমিটি। এছাড়া মিরপুরের পীরেরবাগ, মগবাজার নয়াটোলাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পৃথক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এসব সমাবেশ উপলক্ষে বায়তুল মোকারম ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল।
ইসলামী আন্দোলন : বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় বাদ জুমা ইসলামী আন্দোলন আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, আমেরিকায় রাসুলকে (সা.) নিয়ে সিনেমা তৈরি করে বিশ্ব মুসলিমের কলিজায় যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা শুকাতে না শুকাতেই ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে ঝিনাইদহে শিশির ফিরোজ এবং ঢাবির শিক্ষিকা লুবনা ইয়াসমিন নামের কুলাঙ্গারা যে ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে তা বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, শিশির ও লুবনা ইয়াসমিনকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে অন্যথায় মুসলমানদের অন্তরে যে প্রতিবাদের আগুন জ্বলে উঠেছে, তা কেউ রুখতে পারবে না। দেশময় মুসলমানরা জেগে উঠলে সরকার পালাতে বাধ্য হবে বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
সংগঠনের ঢাকা মহানগর সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, মাওলানা আতাউর রহমান আরেফী, মহানগর সেক্রেটারি মুহাম্মাদ আবু সাঈদ সিদ্দিকী, প্রচার সম্পাদক মাওলানা এইচএম সাইফুল ইসলাম, নুরুজ্জামান সরকার, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মাওলানা গোলাম কিবরিয়া প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দিন বলেন, এর আগে আমেরিকা, ফ্রান্স ও মানিকগঞ্জ, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ এবং ঢাকার ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলের শিক্ষক কর্তৃক রাসুলের (সা.) অবমাননার বিচার না হওয়ায় নাস্তিক-মুরতাদরা বেপরোয়া হয়ে আমাদের প্রাণের স্পন্দন মহানবীকে (সা.) নিয়ে অব্যাহতভাবে অবমাননা করে যাচ্ছে। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে এই অবমাননা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না।
ঐক্য আন্দোলন : মহানবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে আমেরিকায় অবমাননাকর চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতিবাদে বাদ জুমা ইসলামী ঐক্য আন্দোলন ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে এক বিক্ষোভ মিছিল বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে শুরু হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। আন্দোলনের ঢাকা মহানগরীর আমির মোস্তফা বশীরুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মিছিল ও সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন আন্দোলনের আমির ড. মাওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী। বক্তব্য রাখেন জয়েন্ট সেক্রেটারি অধ্যাপক মোস্তফা তারেকুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মাহফুজুর রহমান, ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক ডা. এসএম সাখাওয়াত হুসাইন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ।
প্রধান অতিথির ভাষণে ড. মাওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী বলেন, যে ইহুদি কুলাঙ্গার মহানবীকে (সা.) অবমাননা করে সিনেমা তৈরি করে বিশ্বের প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে, তার পক্ষে বাক-স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা উল্টো মুসলমানদের সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে দেশে দেশে নতুন করে আগ্রাসন চালানোর পাঁয়তারা করছেন। কাজেই আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ইহুদি-খ্রিস্টান চক্রের ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে এই আগ্রাসন প্রতিরোধ করার জন্য মুসলিম বিশ্বকে জাগ্রত হতে হবে।
কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা : কুড়িল বিশ্বরোডে অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করে হজরত মুহাম্মদের (সা.) মর্যাদার অবমাননা প্রতিরোধ কমিটি। বাদ জুমা তারা ট্রাকের ওপর ভ্রাম্যমাণ মঞ্চ তৈরি করে সমাবেশ করেন। এতে ওই রাস্তায় বেশ কিছুক্ষণ যান চলাচল বন্ধ ছিল। সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে তারা স্মারকলিপি দিতে মার্কিন দূতাবাসের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে পুলিশের পরামর্শে চার-পাঁচজনের একটি প্রতিনিধি দল স্মারকলিপি দিতে যায়।
বাংলাদেশের সংবিধানে হজরত মুহাম্মদের (সা.) মর্যাদা সংরক্ষণ ও তাঁর অবমাননাকারীদের মৃত্যুদণ্ডের জন্য জাতীয় সংসদে আইন পাসের দাবিতে তারা এ সমাবেশ করেন। এছাড়া সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্রে হজরত মুহাম্মদকে (সা.) অবমাননা করে চলচ্চিত্র ও ফ্রান্সে কার্টুন প্রকাশের প্রতিবাদ জানানো হয়। সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী। এছাড়া কমিটির আহ্বায়ক আল্লামা মুফতি মিজানুর রহমান সাইদ, মহাসচিব আনিসুল হক, আবদুল আলী নিজামী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সমাবেশ ঘিরে জলকামান রায়টকারসহ ব্যাপকসংখ্যক পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন ছিল।
এদিকে রাসুলের অবমাননার প্রতিবাদে বাদ জুমা মিরপুর পীরেরবাগের সর্বস্তরের তৌহিদী মুসলমানের উদ্যোগে ওই এলাকার পীর মুফতি বরকত উল্লাহ কাছেমীর নেতৃত্বে কাফনের কাপড় পরে এক গণমিছিল বের করা হয়। মিছিল-পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মুফতি নিজাম উদ্দিন, হাফেজ মাওলানা মনিরুল ইসলাম, মাওলানা ফয়েজ আহমেদ, হাফেজ ইব্রাহিম প্রমুখ।
নাইজেরিয়ার ৯০৮ নারী হজযাত্রীকে আটক



 
 হজ করতে আসা নাইজেরিয়ান ৯০৮ নারীকে আটক করেছে সৌদি সরকার। স্বামী ও বাবার মতো ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন সঙ্গে না থাকায় এসব নারীকে আটক করা হয়েছে বলে সৌদি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে।

নারীদের হজের বিষয়ে সৌদি আরবে সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে এবং এ আইনের আওতায় ৪৫ বছরের নিচের কোনো নারী মাহরাম ব্যক্তি বা বিয়ে জায়েজ নেই -এমন ব্যক্তির সঙ্গে ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে হজে আসতে পারবে না।

সৌদি হজ কমিশন গতকাল জানিয়েছে, জেদ্দার কিং আব্দুল আজিজ বিমানবন্দরে ৯০৮ নারী হজযাত্রীকে আটক করা হয়েছে। কমিশন আরো জানিয়েছে, এসব নারীর অনেকের স্বাস্থ্যগত অবস্থা করুণ এবং অনেকেরই জরুরি চিকিতসা প্রয়োজন।

সৌদি আরবের হজ আইন অনুযায়ী, হজে যাওয়ার আবেদন করতে হলে নারীদেরকে অবশ্যই মাহরাম ব্যক্তির নাম উল্লেখ করতে হয় এবং তার সঙ্গে সম্পর্কের প্রমাণপত্র জমা দিতে হয়।

এ আইনের আওতায় ৪৫ বছরের বেশি বয়সের নারীরা তাদের স্বামী, সন্তান কিংবা ভাইয়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সংগঠিত গ্রুপের সঙ্গে হজে যেতে পারেন এবং এ ক্ষেত্রে মাহরাম ব্যক্তির কাছ থেকে অনাপত্তিপত্র নিয়ে তা জমা দিতে হয়।

এদিকে, সৌদি আরবে নিযুক্ত নাইজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত আবু বকর শেহু বুনু রিয়াদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন এবং এসব নারীকে শিগগিরি মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

নাইজেরিয়ার জাতীয় হজ কমিশন জানিয়েছে- আবুজা এবং রিয়াদের মধ্যে একটি চুক্তি রয়েছে যার আওতায় নাইজেরিয়ার নারীরা মাহরাম ব্যক্তি ছাড়াও স্থানীয় হজ-গ্রুপের সঙ্গে হজে যেতে পারেন

হজ: কখন কোথায় কিভাবে কি করবেন


অনেকে আছেন যাদের হজের সময় কখন, কোথায়, কিভাবে, কি করতে হবে সে ব্যাপারে যথেষ্ট জ্ঞান নেই। ফলে তাদের হজ সঠিকভাবে পালিত না হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাদের উদ্দেশে এই লেখা।

তাওয়াফ করা ফরজ: মসজিদুল হারামে প্রবেশের সুন্নাতের প্রতি লক্ষ রেখে তাওয়াফের স্থানে প্রবেশ করবেন। এরপর তাওয়াফের স্থানে পৌঁছেই তালবিয়াহ বন্ধ করে দিবেন। হাজরে আসওয়াদের (কালো পাথর) দাগের বাঁয়ে দাঁড়িয়ে প্রথমে উমরার তাওয়াফের নিয়ত করবেন। তারপর দাগের উপর এসে হাজরে আসওয়াদকে সামনে করে তাকবীরে তাহরীমার মত হাত তুলতে হবে এবং তাকবীর বলতে হবে। অতঃপর হাত ছেড়ে দিতে হবে। এরপর ইশারার মাধ্যমে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করবেন। অতঃপর পূর্ণ তাওয়াফে ইযতিবা ও প্রথম ৩ চক্করে রমল সহকারে উমরার ৭ চক্কর সম্পন্ন করবেন। প্রত্যেক চক্কর শেষে শুরুর দাগে এসে হাজরে আসওয়াদকে ইশারার মাধ্যমে চুম্বন করবেন। তাওয়াফ শেষে সম্ভব হলে কাউকে কষ্ট না দিয়ে মুলতাযামে হাযিরী দিয়ে দু’আ করবেন, তারপর মাতাফের কিনারায় গিয়ে মাকামে ইবরাহীমকে সামনে রেখে বা যেখানে সহজ হয় ওয়াজিবুত তাওয়াফ দু’রাকাত নামাজ আদায় করবেন। এরপর জমজম কূপের পানি পান করবেন।

সায়ী করা ওয়াজিব: এরপর সাফা-মারওয়া এর সায়ী করার উদ্দেশে হাজরে আসওয়াদকে ইশারার মাধ্যমে চুম্বন করে বাবুস সাফা দিয়ে বের হয়ে সাফা পাহাড়ে কিছুটা উপরে চড়বেন এবং বাইতুল্লাহ মুখী হয়ে দু’আ করে মারওয়া পাহাড়ের দিকে চলবেন। মারওয়াতে পৌঁছালে একবার সওত হয়ে গেল। এভাবে সাত সওত অর্থাত, ৭ বার সায়ী সম্পন্ন করবেন।

মারওয়ায় কিছুটা উপরে চড়ে বাইতুল্লাহ মুখী হয়ে দু’আ করে সাফার দিকে চলবেন। প্রত্যেক বার সাফা মারওয়াতে বাইতুল্লাহ মুখী হয়ে দু’আ করবেন এবং প্রতিবার পুরুষরা বাতিদ্বয়ের মাঝে দ্রুত চলবেন। সায়ীর পর ২ রাকাআত নফল নামাজ পড়বেন। এবার সায়ী সম্পূর্ণ হল।

হালাল হওয়া ওয়াজিব: এরপর মাথা মুণ্ডন করে বা চুল ছোট করে হালাল হতে হবে। এখন আপনার উমরার কাজ সম্পূর্ণ হলো।

হজে ইফরাদ পালনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা

ইহরাম বাঁধা ফরজ: হজে ইফরাদ পালনকারী হজের মাস সমূহে মীকাতে পৌঁছে বা তার আগেই) বাংলাদেশি হাজীদের জন্য বাড়ি বা ঢাকা থেকে (হাজামাত (ক্ষৌরকার্য ইত্যাদি সমাপ্ত করে গোসল করে বা কমপক্ষে ওজু করে ইহরামের কাপড় পড়িধান করে টুপি পরে দুরাকাআত ইহরামের নামায আদায় করতে হবে। নামায শেষে টুপি খুলে হজের নিয়ত করতে হবে। নিয়ত শেষে অন্তত তিন বার আওয়াজ করে তালবিয়াহ পাঠ করবেন। ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজসমূহ থেকে বেঁচে থাকবেন।

৮ই জিলহজে করণীয়:
৮ই জিলহজ সূর্যোদয়ের পর মিনা অভিমূখে রওনা হওয়া সুন্নত। ওই দিন মিনায় গিয়ে জোহর, আসর, মাগরিব, ইশা এবং রাত্রি যাপন করে পর দিন ফজরের নামাজ সেখানে আদায় করা সুন্নাত। মুআল্লিমগণ সাধারণত ৭ই জিলহজ রাতেই হাজীদের মিনার তাবুতে পৌঁছে দেয়। নতুন লোকদের জন্য আগে যাওয়াতে কোনো অসুবিধা নেই। ৮ তারিখ জোহরের পূর্বেই মিনায় পৌঁছাতে হবে এবং অতি সংক্ষিপ্ত জরুরি জিনিসপত্র এবং পরিধেয় কাপড় নিতে হবে। এছাড়া কয়েক দিনের খাবারের জন্য মুয়াল্লিমের কাছে টাকা জমা দেওয়াটাই সহজ উপায়। আর মিনাতেও কিনে খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

৯ই জিলহজে করণীয়:
উকূফে আরাফা ফরজ: ওইদিন ফজরের নামাজ যথা সময়ে আদায় করে পুরুষরা আওয়াজ করে এবংনারীরা  নীরবে ১ বার) তাকবীরে তাশরীফ পড়ে নেবেন। নাস্তা ইত্যাদি শেষে সূর্য ওঠার পর তালবিয়া পড়তে পড়তে আরাফা অভিমুখে রওনা হতে হবে। আরাফায় পৌঁছে মুয়াল্লিমের তাবুতে উকুফ করতে হবে, তাবুতে না থাকলে আরাফায় নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে অবস্থান করবেন।

সংক্ষেপে উকুফের পদ্ধতি: এই ময়দানে পৌঁছে সেখানে আউয়াল ওয়াক্তে (প্রথম সময়) জোহরের নামায পড়ে দাঁড়িয়ে, আর কষ্ট হলে বসে দু’আ-কালাম-তাসবীহ-তাহলীল পড়তে থাকবেন। তারপর হানাফী মাযহাব মতে আসরের সময় হলে আসর নামায পড়ে সূর্য সম্পূর্ণ অস্ত যাওয়া পযন্ত পূর্বের নিয়মে দু’আ ও যিকিরে মশগুল থাকবেন। অন্য আযান শুনে কোনো অবস্থায় আসরের ওয়াক্তের পূর্বে আসর পড়বেন না। আরাফার ময়দানে এই অবস্থানকে ‘উকুফে আরাফা’ বলা হয়। সূর্য সম্পূর্ণ অস্ত যাওয়ার পর এখানে বা রাস্তায় মাগরিব না পড়ে তালবিয়াহ পড়তে পড়তে মুআল্লিমের গাড়িতে করে মুযদালিফায় রওনা হবে যাবেন।

মুযদালিফায় রাতে অবস্থান করা ওয়াজিব:
মুযদালিফা ময়দানে পৌঁছে এশার ওয়াক্ত হওয়ার পর এক আযান ও এক ইকামতে প্রথমে মাগরিব ও পরে এশার ফরজ নামাজ আদায় করতে হবে। তারপর সুন্নত, নফল ও বিতর পড়বেন। অতঃপর মুযদালিফার খোলা ময়দানে রাতে অবস্থান করতে হবে। আউয়াল ওয়াক্তে(প্রথম সময়) ফজরের নামাজ পড়ে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত মুযদালিফায় অবস্থান করে তাসবিহ-তাহলীল যিকির ও দুআয় মশগুল থাকবেন। এ সময় অবস্থান করাকে “উকুফে মুযদালিফা” বলে। এখান থেকে ৪ টি পাথর কণা সঙ্গে নিবেন। মুয়াল্লিমদের বলে রাখলে তারাই পাথর সংগ্রহ করে দেবেন। সূর্য ওঠার কিছুক্ষণ পূর্বেই তালবিয়া পড়তে পড়তে মিনার উদ্দেশে পায়ে হেঁটে রওনা হয়ে যাবেন।

১০ই জিলহজ করণীয়:
রমী করা জামরায়ে উকবা তথা বড় শয়তানকে কংকর মারা ওয়াজিব: মিনায় পৌঁছে জরুরি কাজ  সেরে এই দিন শুধুমাত্র জামরায়ে উকবায় তথা বড় শয়তানের স্থানে রমী করার জন্য ভীড় আজকাল সাধারণত আসরের নামাজের পূর্বে ভীড় কমে না। এজন্য আউয়াল ওয়াক্তে আসর পড়ে বা প্রয়োজনে আরো পরে বড় শয়তানের বেষ্টনির মধ্যে ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবেন। এইটাকেই রমী করা বলা হয়। উল্লেখ্য, ১০ই জিলহজ বড় শয়তানের কাছে পৌঁছে প্রথম কংকর নিক্ষেপের পূর্বক্ষণেই তালবিয়া পড়া বন্ধ করে দিবেন।

কোরবানী করা মুস্তহাব:
রমী শেষে সময় থাকলে এদিন অন্যথায় পরের দিন পশু বাজারে গিয়ে বা আমানতদার কাউকে পাঠিয়ে কোরবানী করবেন। এখানে আল রাজীসহ অনেক ব্যাংক রয়েছে যারা কোরবানীর টাকা সংগ্রহ করে এবং তারা ওই হাজীর পক্ষে কোরবানী সম্পূর্ণ করে। হজে ইফরাদ পালনকারীর জন্য কোরবানী করা ওয়াজিব নয় বরং মুস্তাহাব। সুতরাং সামর্থ্য থাকলে কোরবানী করতে চেষ্টা করবেন।

হালাল হওয়া ওয়াজিব: বড় শয়তানকে কংকর মারার পর এবং কোরবানী করলে কোরবানী শেষে মাথা মুণ্ডাতে বা চুল ছাঁটতে হবে এবং এর মাধ্যমেই মুহরিম হজের ইহরাম থেকে হালাল হয়ে গেল।

হালাল হওয়ার সময় চেহারার নূর দাঁড়ী কোনোভাবেই মুণ্ডাবেন না।
যাদের এখনো দাঁড়ি রাখার সৌভাগ্য হয়নি তারা আগেই এ ব্যাপারে পাক্কা নিয়ত করে নেবেন। যাতে দাঁড়ি নিয়ে রওজা শরীফ যিয়ারত করতে পারেন। তাওয়াফে যিয়ারত ফরজ ও সায়ী করা ওয়াজিব। হালাল হওয়া তথা ইহরাম মুক্ত হওয়ার পর স্বাভাবিক পোশাকে বাইতুল্লাহ গিয়ে তাওয়াফে যিয়ারত করা ও সাফা-মারওয়াতে সায়ী করতে হবে।

১০ থেকে ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার পূর্বে তাওয়াফে যিয়ারত সম্পূর্ণ করতে হবে। তাওয়াফে কুদূমের পরে হজের সায়ী না করে থাকলে এই তাওয়াফের পরে সাফা-মারওয়াতে সায়ী করতে হবে। সায়ী করার তরীকা উমরা এর বর্ণনায় দেখে নিন। সায়ীর পরে দুরাকাআত নামাজ পড়বেন। এরপর মিনা ফিরে আসবেন।

১১, ১২ ও ১৩ই জিলহজে করণীয়:

তিন জামরায় কংকর মারা ওয়াজিব:

১১ ও ১২ জিলহজ ভীড় থেকে বাঁচার জন্য বাদ আসর প্রথমে ছোট, পরে মাঝারী সবশেষে বড় জামরার বেষ্টনির মধ্যে ৭টি করে কংকর মারবেন। এ কয়েকদিন মিনায় রাত যাপন করা সুন্নত।

উল্লেখ্য, ১২ই জিলহজ ৩ জামরায় কংকর মেরে কেউ মক্কা চলে গেলে কোনো অসুবিধা নেই। তবে বিশেষ দরকার না থাকলে ১৩ই জিলহজ বিকেল ৩টার দিকে পর্যায়ক্রমে তিন মাজরায় কংকর মেরে মক্কায় যাওয়া উত্তম।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১৩ জিলহজ কংকর মেরে মক্কা গিয়েছিলেন। ১৩ জিলহজ আসর পযন্ত তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে।

তাওয়াফে বিদা ওয়াজিব:
যখন মক্কা শরীফ থেকে চলে আসার সময় হয় তখন শান্তভাবে কয়েক ঘণ্টা পূর্বে স্বাভাবিক পোশাকে বাইতুল্লাহ শরীফে এসে ৭ চক্কর তাওয়াফ সম্পন্ন করবেন। তারপর ওয়াজিবুত তাওয়াফ দু’রাকাত নামাজ পড়ে জমজমের পানি পান করে আবারও বাইতুল্লাহ যিয়ারতের তাওফীক লাভের জন্য মনে প্রাণে দু’আ করা অবস্থায় চলে আসবেন। একে “তাওয়াফে বিদয়া” বলা হয়। এ তাওয়াফের মধ্যে ইযতিবা ও রমল নেই এবং পরে কোনো সায়ী নেই,

উল্লেখ্য, প্রতিবার মসজিদে হারামে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় সুন্নাতের প্রতি খেয়াল রাখবেন।

নারীদের হজের পার্থক্য: নারীরা স্বাভাবিক পোশাকেই ইহরাম বাঁধবেন এবং মাথা ঢেকে নেবেন।

চেহারা খোলা রাখবেননা বরং চেহারার পর্দা করবেন এবং এমনভাবে নেকাব লাগাবেন যেন চেহারার সঙ্গে কাপড় লেগে না থাকে। তালবিয়াহ নিম্ন আওয়াজে পড়বেন। তাওয়াফের মধ্যে ইযতিবা ও রমল করবেননা। সায়ীতে সবুজ বাতিদ্বয়ের মাঝে স্বাভাবিক চলবেন। চুলের আগা থেকে এক ইঞ্চি পরিমাণ কেটে হালাল হবেন। পুরুষদের থেকে পৃথক হয়ে মাতাফের কিনারা দিয়ে বা ছাদে গিয়ে তাওয়াফ করবেন। হায়েয অবস্থায় তাওয়াফ করবেন না, মক্কা শরীফে শুধু তাওয়াফের জন্য এবং মদীনা শরীফে নিদিষ্ট সময়ে শুধু রওজা যিয়ারতের জন্য মসজিদে যাবেন।
৩০হাজার হজযাত্রী যাত্রা অনিশ্চিত

৩০ হাজার হজযাত্রীর নির্ধারিত সময়ে সৌদি আরব পৌঁছানো অনিশ্চিত বলে দাবি করেছে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। তারা বলেছে, বিমানের ফ্লাইট বিপর্যয়ের কারণে এই সমস্যা হবে। এতে হজ ব্যবস্থাপনায় চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সংগঠনটি।

undefined
জামালউদ্দিন বলেন, ‘১৭ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬০ হাজার হজযাত্রীর সৌদি আরব যাওয়ার কথা। আমরা তাঁদের জন্য বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য কার্যক্রম শেষ করেছি। কিন্তু অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, সরকার ৩০ হাজারের বেশি হজযাত্রী পাঠাতে পারবে না।’
হাবের সভাপতি আরও বলেন, ‘সৌদিয়া এয়ারলাইনস, নাস এয়ারলাইনস ও বিমান বাংলাদেশ এ বছর হজযাত্রী বহন করছে। এগুলোর বাইরে অন্য এয়ারলাইনস রাখার জন্য আমরা বারবার বিমানমন্ত্রী ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রীকে বলেছিলাম। কারণ, তিনটি এয়ারলাইনসের পক্ষে সব যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব নয়। আর বিমান বাংলাদেশের সেই সক্ষমতাও নেই। কিন্তু সরকার আমাদের কথা শোনেনি। বিমান ও সৌদিয়া এয়ারলাইনস আমাদের ফ্লাইট শিডিউল দিতে ব্যর্থ হয়েছে।’
এ সমস্যার সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে জামালউদ্দিন বলেন, ‘৩০ হাজার যাত্রীর জন্য বাড়ি ভাড়া করা হয়েছে। এতে আমাদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হবে। কেননা, সরকার বলছে, এই ৩০ হাজার হজযাত্রীকে পরে পাঠানো হবে। দ্বিতীয়বার তাঁদের জন্য বাড়ি ভাড়া পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।’ সংগঠনটি ৩০ হাজার হজযাত্রীকে সময়মতো পৌঁছে দিতে দ্রুত বিকল্প কোনো এয়ারলাইনসের সঙ্গে কথা বলতে সরকারকে অনুরোধ জানায়।
হজের ফ্লাইটসূচির কারণে বাড়ি নিয়ে আশঙ্কায় হাব

নির্ধারিত হজ ফ্লাইট অনুসরণ করা হলে সৌদি আরবে হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়া নিয়ে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।

এজেন্সিগুলো বলছে, তৃতীয় কোনো বিমান পরিবহন সংস্থাকে হজযাত্রী পরিবহনের দায়িত্ব না দিলে এ সঙ্কট এড়ানো যাবে না।

মঙ্গলবার হাব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে হাব সভাপতি জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সৌদি সরকারের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে হজযাত্রীদের জন্য বাসাভাড়া করতে হয় বলে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় হজফ্লাইট চূড়ান্ত করার আগেই বাড়ি ভাড়া করতে বাধ্য হয়েছেন হজ এজেন্টরা।

“কিন্তু চূড়ান্ত ফ্লাইট শিডিউল পাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ এজেন্সি যে সময় সীমার জন্য বাসা ভাড়া করেছেন তাতে হজ ফ্লাইট শুরুর প্রথম দশ দিনের মধ্যে ৬০ হাজারের বেশি হজযাত্রীকে সৌদি আরবে পৌঁছাতে হবে।”

অথচ বিমান, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স ও নাস এয়ারসহ তিন বিমান পরিবহন সংস্থা যে ফ্লাইটসূচি দিয়েছে, তাতে ওই সময়ের মধ্যে ৩০ হাজার হজযাত্রীকে সৌদি আরবে পৌঁছানো সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন জামাল উদ্দিন।

তিনি বলেন, সরকার এখনো যদি তৃতীয় কোনো বিমান পরিবহন সংস্থাকে (থার্ড ক্যারিয়ার) হজযাত্রী পরিবহনের দায়িত্ব দেয়, ‘তাহলেও হয়তো’ হজযাত্রীদের সময়মতো নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

সৌদি আরব সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত হজযাত্রী পরিবহন সংক্রান্ত চুক্তি অনুসারে এ বছর কোনো তৃতীয় বিমান সংস্থা বা থার্ড ক্যারিয়ারকে হজযাত্রী পরিবহনের দায়িত্ব দেয়া হয়নি।

থার্ড ক্যারিয়ার না থাকায় হজযাত্রী পরিবহনে বিশৃঙ্খলা হতে পারে, আগে থেকেই এমন দাবি করে আসছে হজ এজেন্সিগুলো।

নিয়মিত ফ্লাইটসূচিতে বিপর্যয়ের মধ্যেই সোমবার বাংলাদেশ বিমানের হজ ফ্লাইট শুরু হয়েছে। ভোর ৫টায় ৪১৯ জন হজযাত্রী নিয়ে একটি বোয়িং-৭৭৭ ঢাকা ছাড়ার পর সারাদিনে ছেড়ে গেছে মোট পাঁচটি ফ্লাইট।

মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত ফ্লাইটসূচি অনুসারে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত হজযাত্রী পরিবহনের কথা রয়েছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থার। বিমান ফিরতি ফ্লাইট শুরু করবে ১ নভেম্বর থেকে, শেষ হবে আগামী ২৯ নভেম্বর।

নাস এয়ারের ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ৩০ অক্টোবর, শেষ হবে ২৮ নভেম্বর। সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স হজ পরবর্তী ফিরতি ফ্লাইট শুরু করবে ৩০ অক্টোবর এবং শেষ হবে ৩০ নভেম্বর।

এ বছর মোট ১ লাখ ১২ হাজার ৫৬৮ জন হজ করতে যাওয়ার অনুমোদন পেয়েছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাচ্ছেন ২ হাজার ৯৬৫ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাচ্ছেন ১ লাখ ৯ হাজার ৬০৩ জন। এর মধ্যে বিমান পরিবহন করছে ৫৬ হাজার ২৮৪ জন। 


ইনোসেন্স অব মুসলিমস- ভায়োলেন্স এবং মিথ্যাচার ছড়ানোর এক হীন প্রচেষ্টা

‘ইনোসেন্স অব মুসলিমস’ নামের ওটা কোন চলচিত্র হতে পারেনা, ওটা একটা অপ-ডকুমেন্টারী বলা যেতে পারে। যা স্পষ্টতই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই ধারনা। আমাদের ইসলাম ধর্মের পয়গম্বর হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কে হেয় করে বিদ্বেষ এবং সন্ত্রাস ছড়ানোই যে ঐ অপ-ডকুমেন্টারিটির উদ্দেশ্য সেটা স্পষ্ট হলো ওটার ১৪ মিনিটের ইউটিউব টেলর দেখার মত দুর্ভাগ্য হবার পর।
ওটার পরিচালক একজন গোঁড়া ক্রিশ্চিয়ান হয়ে অন্য ধর্মের প্রতি যে কটাক্ষ দেখিয়েছেন তা ন্যাক্কারজনক। একটা ধর্মীয় গোষ্ঠীর অনুভূতিকে এভাবে হীন মিথ্যাচার এবং কদর্যতার উত্তেজিত করে তোলা নিঃসন্দেহে ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদ। সে কারনেই এটাকে খুবই স্পষ্টত উদ্দেশ্য প্রবণ মনে হয়। উইকিপিডিয়ার তথ্যগুলো পড়লে দেখা যায় এটার প্রচার তেমন ভাবে পাবলিক সম্মুখে করা হয়নি সুচতুরতার কারনে। সামন্য ক’জনার সামেন একটা শো করে পরে বিভিন্ন ভাষায় ডাবিং করে অনলাইনে ছড়ানো হয়েছে। যার পেছেন সহিংসতা ছড়ানোর একটা অপ কৌশলের গন্ধ পাওয়া যায়।
পৃথিবীর কোনো ইতিহাসেই মহানবী (সাঃ)কে ঐ সকল দোষে মিথ্যাভাবে দোষারোপ করেছে বলে মনে হয়না যা ঐ অপ-ডকুমেন্টারীতে করা হয়েছে। যে কোন নাম মাত্র মুসলমানও মহানবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি এ সব মিথ্যাচার দেখে ক্রোধান্বিত, লজ্জিত এবং কষ্টে ক্লীষ্ট না হওয়ার কোন কারনই নেই। মোহাম্মদ (সাঃ) পৃথিবীর ইতিহাসে এক মহান মানব যা শুধু মুসলমানরা নই অন্য ধর্মের পণ্ডিত ব্যক্তিরাও স্বীকার করেছেন বারংবার।
তাহলে তো স্পষ্টই বোঝা যায় পৃথিবীর চলমান সন্ত্রাস আর উত্তেজনায় আরেকটু চরম উষ্কানী যোগানোর উদ্দেশ্যেই এমনতর কর্মটি সম্ভবত নকুলা নামের ব্যক্তিটি করে থাকবে। নকুলা নামের ব্যক্তিটির এ হেন হীন কর্মের জন্য তার প্রতি তীব্র ধিক্কার জানাই।
সাথে সাথে আমার শান্তির ধর্ম ইসলামের অনুসারী এবং পালকদের প্রতিও আশা থেকে যায় অসহিংসতার মাধ্যমে এই হীন অপকর্মের যাতে সঠিক প্রতিবাদ ও প্রতিকার হয়। কোন নিরীহ মানুষ যেন প্রতিবাদের কারনে শাস্তি না পায়।
মুক্ত ইন্টারনেটের যুগে এই অপ -ডকুমেন্টারীর প্রচার ঠেকানো আসলেই কঠিন। ইউটিউব এ ফায়ার অল বসিয়েই কি আর ঢোকা বন্ধ করা যায়! তবুও আসলে সকলের এটা না দেখাই ভালো কারন আমার মনে হয়েছে ওটা সত্যিই ভায়োলেন্স এবং মিথ্যাচার ছড়ানোর এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ।


আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন

সামনে অনেক বিপদ। উত্তোরণের উপায় জানা নেই। অস্থির মনে ছুটোছুটি। ভাবনার সমুদ্রে উত্তাল তরঙ্গ। এমন সময়ে কী উপায়? পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ তা’য়ালা বাতলে দিয়েছেন বিপদের সহজ সমাধান। মুমিনদের জন্য স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন’।

চলার পথে জানা অজানা এমন বিপদের সংখ্যা নেহায়তই কম নয়। বিপদ কখনো কখনো ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে দেওয়ার মতো করে আসে। তখন মনে হয় ‘আর কতো ধৈর্য ধরবো’। ঠিক সেই সময়েও মনে করতে হবে, যতক্ষণ না আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিপদমুক্ত করছেন, ততোক্ষণই ধৈর্য ধারণ করে থাকতে হবে। এই বিপদের মুক্তি আল্লাহ তা’য়ালা ধৈর্যের মধ্যেই নিহিত রেখেছেন।

ইতিহাস খুললে দেখা যাবে, যুগে যুগে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের ধৈর্য তিনি বারবার পরীক্ষা করেছেন। সীমাহীন বিপদে আচ্ছন্ন রেখে তাদের ধৈর্যকে আরও মজবুত করেছেন। আল্লাহর এমন পরীক্ষাতে মুমিনরা মোটেও বিচলিত হননি। বরং এই কঠিন পরীক্ষায় বারবার স্মরণ করেছেন সেই আল্লাহকেই, যিনি বিপদে ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন।

মুমিনদের পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর জীবনী থেকে জানা যায়, ধৈর্যের কঠিন পরীক্ষায় তিনি আল্লাহর ওপর আস্থা রেখে দারুণভাবে সফল হয়েছেন। বিনিময়ে তিনি পেয়েছেন, সুসজ্জিত ফুলের বাগান, আরামদায়ক এক স্থান। ইসলাম প্রচারের অপরাধে তৎকালীন বিধর্মী শাসক নমরুদ হযরত ইব্রাহিমকে (আ.) শূলে চড়িয়েছেন। যেই শূলের নিচে স্থাপন করা হয়েছিল আগুনের উত্তপ্ত গর্ত। শূল থেকে তাঁকে জলন্ত অগ্নিময় এই গর্তেই ফেলা হবে। শূলে চড়ানোর আগ পর্যন্তও তাঁর ধৈর্যে এতটুকু ফাটল ধরানো যায়নি। আল্লাহ বিরোধী কোনো কথাই বের করানো যায়নি ধৈর্যশীল মানব ইব্রাহিম (আ.) এর মুখ থেকে। খোদার নির্দেশ মতো ধৈর্য ধারণের ফলে আগুনের সেই গর্তকে তাঁর জন্য বানিয়ে দেওয়া হয়েছে নিরাপদ এক স্থান।

হযরত ইয়াকুব (আ.) তাঁর প্রিয় সন্তান ইউসুফকে (আ.) হারিয়ে যখন শোকে বিহ্বল, তখনও তিনি আল্লাহর নির্দেশ মতোই ধৈর্যের সরণাপন্ন হলেন। দিনের পর দিন যায়, মাসের পর মাস যায়, ইউসুফ (আ.) ফিরে আসে না। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যও তিনি ধৈর্যচ্যুত হননি। ধৈর্য পরীক্ষায় যখন তিনি উতরে গেলেন, তখনই আল্লাহ তাকে ফিরিয়ে দিলেন প্রিয় সেই সন্তান। এমন দৃষ্টান্ত অগণিত।

ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়েছে ইউসুফকেও (আ.)। বিনা অপরাধে দীর্ঘদিন তাঁকে জেলে পুরে রাখা হয়। চারপাশের মুক্ত পৃথিবী থেকে সরিয়ে রাখা হয় নির্দোষ এই নবীকে। তাই বলে কি তিনি চরম বিচলিত, ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছিলেন? মোটেও না, বরং অটল ধৈর্য নিয়েই প্রভুর কাছে প্রার্থনায় নিমগ্ন ছিলেন তিনি। আস্থা ছিল, সৃষ্টিকর্তাই তাঁকে এই মিথ্যা জেল খাটুনি থেকে রেহাই দেবেন। রেহাই তো তিনি পেলেন, সেই সঙ্গে পেলেন মিশরের অধিপতির দায়িত্ব। এমনই ছিল ধৈর্য পরীক্ষার ফলাফল।

হযরত ঈসা (আ.) এর মা মরিয়ামকে (আ.) কম ধৈর্য ধরতে হয়নি। আল্লাহর ইচ্ছায় মরিয়মের গর্ভে ঈসা যখন বাবা ছাড়াই এলেন, তখন লোকে আঙ্গুল তুলে দেখাতে লাগলেন মরিয়মের দিকে। কী বিচ্ছিরি ব্যাপার ছিল সবার কাছে। কিন্তু মরিয়ম (আ.) মুখ খুললেন না অজ্ঞ সমাজের কাছে। কেবল নিজের মতো করেই ধৈর্য ধরে গেলেন। আর বললেন, আল্লাহ! আমার ধৈর্য আরও বাড়িয়ে দাও। আল্লাহও তাই করলেন। বিদ্রুপকারীরা একদিন ঠিকই বুঝতে পারল, ঈসা (আ.) কোনো সাধারণ মানুষ নন, তিনি আল্লাহর প্রেরিত নবী।

শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও জীবনের পরতে পরতে ধৈর্য ধরে গেছেন ইস্পাত কঠিনের মতো। শত বিপদের ঘোর আঁধারে মুহূর্তের জন্যও ধৈর্য থেকে সরে যাননি তিনি। তায়েফে কাফেরদের কাছ থেকে নির্যাতিত হওয়ার পরে আল্লাহ যখন তাঁর এই প্রিয় বন্ধুর কাছে বার্তা পাঠালেন, তায়েফকে ধ্বংস করে দেওয়ার কথা বলে। তখনও তিনি অতিশয় ধৈর্য ধরেই বললেন, “ওরা তো বোঝে না, তাই অমন করেছে”।

পদে পদে বিপদের গর্ত মাড়িয়ে পার করতে হয়েছে দুনিয়ার হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবন, তবু সবখানেই ছিল ধৈর্যের সরব উপস্থিতি। প্রিয় জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে মদিনায় চলে আসা, কাফেরদের সঙ্গে ক্ষুদ্র প্রস্তুতি নিয়ে ২৩টি যুদ্ধ পরিচালনা করা, সুবিশাল কাফের গোষ্ঠির মধ্যে ইসলামের আলো জ্বেলে দেওয়া, কাবা ঘরকে বেদ্বীনদের হাত থেকে মুক্ত করে আনা, ধৈর্যের পরীক্ষা কোথায় ছিল না? এমন ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন বলেই তো তাঁর ওপরই দেওয়া হয়েছিল মুসলিম উম্মাহর শেষ নবী ও রাসুলের দায়িত্ব, তাঁকেই করা হয়েছিল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব।

সুতরাং মুমিন হতে হলে ধৈর্যকেই সঙ্গী করতে হবে সবকিছুর আগে। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখার পাশাপাশি তাঁর নির্দেশনা মানতে হবে ধৈর্যের সঙ্গেই। সুফল হয়তো স্বচক্ষে দেখা যাবে না, কিন্তু ঠিকই লেখা থাকবে আল্লাহর কাছে। জীবনের সবখানে সব আয়োজনে আল্লাহর নির্দেশিত এই ধৈর্যই হোক আমাদের উত্তোরণের উপায়।

যাকাতের মাসায়িল

undefined
ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হল যাকাত। যাকাত হচ্ছে ধনীর সম্পদে গরিবের হক। ধনী দরিদ্রের বৈষম্য দূর করতে যাকাতের ভূমিকা অপরিসীম। পবিত্র কোরআনের বহু স্থানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যাকাতের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেছেন, “তোমরা নামাজ কায়েম কর ও যাকাত দাও। আর তোমরা নিজের জন্য যে ভালো কাজ আগেভাগে করবে তার সওয়াব  ও পুরস্কার আল্লাহর কাছে পাবে।” (সূরা বাকারা, আয়াত ১১০)

তিনি আরও এরশাদ করেছেন, “আপনি গ্রহণ করুন তাদের মাল হতে যাকাত যা দ্বারা আপনি তাদের পাক পবিত্র করবেন”| (সূরা তওবা, আয়াত ১০৩)

যাকাত না দেয়ার শাস্তি:

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, “যারা স্বর্ণ-রূপা জমা করে রাখে এবং এগুলোকে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না (অর্থাৎ যাকাত আদায় করে না) আপনি তাদের ভীষণ কষ্টকর শাস্তির সুসংবাদ (তিরস্কার স্বরূপ ব্যবহৃত) শুনিয়ে দিন। সেদিন তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশ দগ্ধ করা হবে এবং বলা হবে এগুলো তা-ই যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। অতএব যা জমা করে রেখেছিলে তার স্বাদ এখন আস্বাদন কর”। (সূরা তওবা, আয়াত ৩৪-৩৫)

প্রিয় নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সা.) বলেন, যে সম্প্রদায় যাকাত প্রদান করে না তাদের মহান আল্লাহ অবশ্যই দুর্ভিক্ষের আযাবে গ্রেফতার করেন। (জামউল ফাওয়ায়িদ, ১ম খ-, ১৪৩ পৃষ্ঠা)

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যাকে আল্লাহ তায়ালা মাল দান করেছেন, আর সে তার যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার মালকে তার জন্য একটি মাথায় টাকপড়া অজগর সাপ স্বরূপ করা হবে। যার দু’টি চোখের উপর কালো দাগ থাকবে (অর্থাৎ অতিরিক্ত বিষাক্ত হবে)। এই সাপকে যাকাত প্রদানে অবহেলাকারীর গলার বেড়িস্বরূপ লটকে দেওয়া হবে। এই সাপ ওই ব্যক্তির মুখের উভয় পার্শ্বে দংশন করতে থাকবে এবং বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার সংরক্ষিত অর্থ। (বুখারী শরীফ, ১ম খণ্ড, ১৮৮ পৃষ্ঠা)

যার জন্য যাকাত ফরজ:

যদি কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে এবং তা একবছর অতিবাহিত হয় তাহলে তার উপর শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত দেওয়া ফরজ।

নেসাব পরিমাণ সম্পদ যদি থাকে এবং এক বছর অতিবাহিত হয় তাহলে সে ব্যক্তির নিয়মিত আয় না থাকলেও যাকাত দিতে হবে। খেয়াল রাখবে, যাকাত আদায় করতে হবে আরবি বছর হিসেবে। ইংরেজি বছর হিসেবে নয়।

নেসাব পরিমাণ সম্পদ কাকে বলে?

ইসলামী শরীয়ত নির্ধারিত বিশেষ পরিমাণকে নেসাব বলে। একেক সম্পদের নেসাব একেক রকম। স্বর্ণের নেসাব হচ্ছে সাড়ে সাত ভরি। রূপার নেসাব হচ্ছে সাড়ে বায়ান্ন ভরি। শুধু টাকা থাকলে বা স্বর্ণ রূপা মিশ্রিত থাকলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার দাম ধরে হিসাব করতে হবে। অর্থাৎ এই পরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি সম্পদ থাকলে শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত দিতে হবে।

উল্লেখ্য, স্বর্ণ বা রূপার বিক্রয়মূল্য ধর্তব্য। কেউ যখন যাকাত দেবে তখন বাজার মূল্য যাচাই করে নেবে। কারণ, সময়ের পরিবর্তনে স্বর্ণ ও রূপার দাম ওঠানামা করে। তাই যাকাতের হিসাবও পরিবর্তন হয়।যেসব সম্পদ থাকলে যাকাত দিতে হবে (যদি তা নেসাব পরিমাণ হয়):

১.    স্বর্ণ, রূপা, ব্যবহৃত-অব্যবহৃত অলঙ্কার, লকারে রাখা অলঙ্কার।
২.    নগদ টাকা, চেক, ডেবিট কার্ডে জমা টাকা, প্রাইজবন্ড, বোনাসের জমা টাকা, হজ বা অন্যান্য উদ্দেশে জমা টাকা।
৩.    কারেন্ট হিসাব, সেভিংস হিসাব, ফিক্সড ডিপোজিটে নিজের জমা দেওয়া অংশ।
৪.    পাওনা টাকা, বাকিতে বিক্রি করা মালের পাওনা দাম (ফেরত পাওয়ার আশা থাকলে)।
৫.    দেওয়া জামানত / সিকিউরিটি ডিপোজিট।
৬.    বৈদেশিক মুদ্রা (টাকায় পরিবর্তিত পরিমাণ)।
৭.    বিক্রয়যোগ্য পণ্য।
৮.   কারখানা, দোকান, গোডাউন ও বাড়িতে রাখা মাল।
৯.    ব্যবসায়িক কাঁচামাল।
১০.   যৌথ ব্যবসায় নিজের অংশ যদি যাকাতের নেসাব পরিমাণ হয়।
                     
যেসব সম্পদের যাকাত দিতে হবে না:

১.    নিজের থাকার বাড়ি।
২.    জমি, পুকুর, বাগান।
৩.    ব্যবহৃত পোশাক, ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
৪.    ঘর, দোকান, ফ্যাক্টরির ফার্নিচার (ব্যবহৃত-সোকেস, আলমারি, চেয়ার, টেবিল, এসি, জেনারেটর, ফ্যান ইতাদি)।
৫.    ফ্যাক্টরির মেশিনপত্র।
৬.    ভাড়া দেওয়া যানবাহন, নৌযান। অবশ্য এগুলোর আয় যদি           নেসাব পরিমাণ পৌঁছে তাহলে যাকাত আসবে।
৭.    ব্যবহারের গাড়ি, কম্পিউটার, মোবাইল, ফ্রিজ ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, প্লট, ফ্ল্যাট, বাড়ি, জমি, বাগান ইত্যাদি যদি ব্যবসার উদ্দেশে হয় তাহলে ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে যাকাত আসবে। আর যদি ভাড়া দেওয়ার উদ্দেশে হয় তাহলে এগুলো থেকে উপার্জিত আয়ের ওপরে যাকাত আসবে। নিজের থাকার বাড়িতে যাকাত নেই।

যাকাতের টাকা থেকে বাদ যাবে:

১. নিজের দেনা/ ব্যক্তিগত জরুরি প্রয়োজনে নেওয়া ঋণের টাকা (যারা সরকারের ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকেন তাদের জন্য এই মাসআলা প্রযোজ্য নয়)।
২. বাড়ি বানানোর জন্য নেওয়া হাউজ বিল্ডিং লোন।
৩. বাকিতে/কিস্তিতে কেনা পণ্যের মূল্য।
৪. পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোনের বকেয়া বিল।
৫. কর্মচারীদের বকেয়া বেতন।

অতএব, মোট সম্পদ - মোট দেনা = মোট যাকাতযোগ্য সম্পদ।পাওনা টাকা, জামানত, সিকিউরিটি ডিপোজিট ইত্যাদি হাতে আসার পর যাকাত আসবে। তখন সব বছরের যাকাত হিসাব করে একসঙ্গে দিতে হবে। তবে প্রতি বছর হিসাব করে দিয়ে দেওয়া উত্তম। ইনকামট্যাক্স দিলেও যাকাত দিতে হবে। গবাদি পশু ও ফসলের যাকাত বিশ্লেষণ সাপেক্ষ।

যাকাত দেওয়ার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি খাত:

১. গরীব ব্যক্তিকে।
২. গরীব আত্মীয়-স্বজন, ভাইবোন থাকলে তাদের আগে দিতে হবে। এতে দিগুণ সওয়াব (যাকাতের সওয়াব  এবং আত্মীয়তা রক্ষার সওয়াব)। তবে দেওয়ার সময় যাকাত বলে দেওয়া ঠিক হবে না।
৩. বাবা-মা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, সন্তান-নাতিদের যাকাত দেওয়া জায়েজ নেই।
৪. মাদ্রাসার গরীব ছাত্রদের দেওয়া যাবে।
৫. মুসাফিরকে দেওয়া যাবে, যদি তার অর্থের দরকার হয়।
৬. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে।
৭. আল্লাহর রাস্তায় অর্থাৎ দ্বীন প্রতিষ্ঠায় চেষ্টারত ব্যক্তিকে।

৮. যাকাতের টাকা মসজিদ মাদ্রাসার ভবন নির্মাণের জন্য দেওয়া যাবে না।
যাকাতের মাসআলা-মাসায়েল আমরা জানতে পারলাম। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ যাকাত হিসাব করে আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমীন

চলচ্চিত্রে নবীকে অবমাননা: বাংলাদেশের প্রতিবাদ


undefined
ইসলাম ও হযরত মোহাম্মদকে (স.) অবমাননা করে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’ মুক্তি দেয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ।

শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, “ভিডিওটি (চলচ্চিত্রটি) শুধু আক্রমণাত্মকই নয়, মিথ্যা বটে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্ন তুলে কেউ কেউ এ ধরনের আক্রমণাত্মক বিষয়বস্তুর পক্ষ নেয়ার চেষ্টা করছে বলে ঢাকা উদ্বিগ্ন।

“মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে ঘৃণা উসকে দেয়া কখনোই সঠিক হতে পারে না। মুসলমানদের ধর্মীয় বোধ বা এ বিষয়ে কোনো বিশ্বাসের প্রতি এ ধরনের অসম্মান সভ্য আচরণের প্রকাশ ঘটায় না। তা কোনোভাবেই ক্ষমার যোগ্য নয়।”

২০১২ সালের ২৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পাওয়া ‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’ ছবিটির পরিচালক কথিত স্যাম বাসিল বা অ্যালান রবার্টস।

চলচ্চিত্রটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। লিবিয়া ও মিশরে ইসলামপন্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে হামলা চালায়। রকেট হামলায় নিহত হন লিবিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফার স্টিভেনসসহ চার জন।

বাংলাদেশেও কয়েকটি ইসলামী সংগঠন বিক্ষোভ প্রদর্শনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পতাকায় অগ্নিসংযোগ করে। 



নতুন হজ যাত্রীদের জন্য কিছু পরামর্শ



হজ ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। প্রত্যেক সুস্থ এবং সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য একবার হজ করা ফরজ। এই হজের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের অনেক জায়গায় বলা হয়েছে।

অনেক সম্পদশালী ব্যক্তি আছেন যাদের ভাগ্যে হজ নসিব হয় না। আবার এমন অনেক লোক আছেন যারা অসুস্থ বা তেমন কোনো সামর্থ্য নেই, আল্লাহর রহমতে তবুও তাদের হজ করার সৌভাগ্য হয়ে যায়। আল্লাহর মেহমান হওয়া নিtসন্দেহে অনেক গর্বের বিষয় এবং হাজীরা আল্লাহর কাছে অনেক সম্মানিত।

হজ এজেন্সিগুলোর খামখেয়ালীপনা, তাদের ব্যবসায়ীক দৃষ্টিভঙ্গী, সর্বোপরি হজের ব্যাপারে অনেক তথ্য না জানার কারণে অনেক সময় বিদেশের মাটিতে বিপাকে পড়তে হয় হাজীদের এবং অনেক সময় হজ হয়ে উঠে ভুলে ভরা।

নতুন হাজীদের ক্ষেত্রে আমার এই পরামর্শগুলো সামান্য হলেও কাজে আসবে বলেই আশা করছি।

সৌদি আরবে অবস্থান করে যা অভিজ্ঞতা হয়েছে সেই আলোকে আপনাদের সামনে বিষয়গুলো তুলে ধরছি।

১. যারা বেসরকারিভাবে হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা অবশ্যই যে এজেন্সির মাধ্যমে যাবেন, সেই এজেন্সির খোঁজ খবর নেবেন। তারা ‘হাব’ এর সদস্য কিনা, তাদের অতীত রেকর্ড কেমন, মক্কা মদীনায় কোথায় রাখবে, বাইতুল্লাহ থেকে কতোদূর রাখবে, এজেন্সির পক্ষ থেকে কতো বেলা খাবার দেবে।

২. জেনে নিন, আপনি যে গ্রুপের সঙ্গে হজে যাচ্ছেন সেই গ্রুপের মোয়াল্লেম ভালো মানের আলেম কিনা, মোয়াল্লেমের আগে হজের অভিজ্ঞতা আছে কিনা। অনেক সময় লক্ষ করা যায় অনেক এজেন্সি তাদের হাজীদের নিয়ে ছেড়ে দেন। হাজীরা জানেনও না কোথায় কি করতে হবে। অনেক মোয়াল্লেম আলেম না হওয়ার কারণে নিজে ভুল করেন এবং হাজীদেরও ভুল করিয়ে দেন।

অনেক সময় হজ্জের নিয়ম কানুন পালনের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখা দিলে মোয়াল্লেমকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলে দিতে পারবেন। মোয়াল্লেম আলেম না হলে সমস্যা হতে পারে।

যেমন ধরা যাক, তাওয়াফ করার সময় যদি ফরজ নামাজ শুরু হয়ে যায় তখন হাজী কি করবেন? তিনি কি নামাজ পড়বেন, নাকি তাওয়াফ করবেন? যদি নামাজ পড়েন তাহলে কি প্রথম থেকে তাওয়াফ শুরু করবেন নাকি তাওয়াফ যেখানে শেষ করেছিলেন সেখান থেকেই শুরু করবেন? অথবা সায়ী করার সময় অজু না থাকলে তখন কি হবে? ইত্যাদি এমন ধরনের সমস্যা হতে পারে।

৩. মনে রাখবেন হজে যাওয়ার নিয়ত করা থেকেই আপনি আল্লাহর মেহমান। তাই হজে যাওয়ার আগে খুব ভালো মতো হজের নিয়ম কানুন শিখে নেবেন, প্রশিক্ষণ নেবেন এবং তখন থেকেই আপনি আল্লাহর রাস্তায় বের হচ্ছেন সে রকম মন মানসিকতা লালন করতে শুরু করবেন। মাসলা মাসায়েলগুলো ভালোমতো জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। হজের নিয়ম কানুনের ব্যাপারে বাজারে অনেক বই-পুস্তক পাওয়া যায় আপনি সেগুলো ভালোভাবে পড়তে পারেন।

৪. হজের গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে তা হলো এহরাম অবস্থায় কি কি কাজ করতে পারবেন না। কারণ এহরাম পরার পর থেকেই আপনার সামনে কোনো না কোনো পরীক্ষা আসবে। যেমন, এহরাম অবস্থায় কোনো পশু-পাখি এমনকি কোনো পোকা মাকড় মারতে পারবেন না বা কাউকে মারার জন্য দেখিয়ে দিতে পারবেন না। এমন সময় আপনার সামনে মশা চলে এলো, আপনি অভ্যাস বশত মশা মেরে ফেললেন। মনে রাখতে হবে, কীট পতঙ্গ পর্যন্ত মারা যাবেনা এসময়।
৫. এহরাম অবস্থায় অনেক স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া করেন বা একে অন্যের সঙ্গে ঝগড়া করেন। আবার অনেকে গীবত করেন। সাবধান! এহরাম অবস্থায় এসব নিষিদ্ধ। অবশ্য এটা সবসময় নিষিদ্ধ।

অন্য হাজীর যেন কোনো কষ্ট না হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা জরুরি। কারণ আপনার মতো তিনিও আল্লাহর মেহমান।

৬. আপনি ভালোভাবে জেনে নিন কোন কোন স্থানে দোয়া কবুল হয়। যেমন, কাবা ঘরের ভেতর, যমযমের কাছে, সাফা-মারওয়ায়, সাফা-মারওয়ার সবুজ বাতির মাঝখানে, মাকামে ইব্রাহীমের কাছে, আরাফাতের ময়দানে, মুযদালিফায়, মিনায়, তিন জামাআরাহ এর পাশে, হাজরে আসওয়াত বা কাবা শরিফের কালো পাথরে চুমু খেয়ে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়।

৭.  মক্কা-মদিনার দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে জেনে নেবেন। ফলে আপনার এজেন্সি যখন আপনাকে সেখানে ঘুরাতে নিয়ে যাবে তখন মনের মাঝে ফিলিংসটা কাজ করবে। মনে রাখবেন, দর্শনের সময় কোনো অবস্থায় দাঁড়িয়ে বা বসে হাত তুলে দোয়া করবেন না । এটা বেদাত। এগুলো করতে গেলে অনেক সময় বেকায়দায় পড়তে হয়।

৮. হজে যাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য ইবাদত তাই, নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে গিয়ে বসে না থাকলে মসজিদের ভেতর জায়গা পাবেন না। বিশেষ করে জুম্মার নামাজ শুরু হওয়ার ২ ঘণ্টা আগে গেলে মসজিদের ভেতর ভালো জায়গা পাবেন।

৯. অনেক নারী জামাতে নামাজ পড়তে পারেন না। যাওয়ার আগে শিখে নেবেন। ছেলেদের দায়িত্ব তাদের নারী আত্মীয়দের জামাতে নামাজ পড়তে শিখিয়ে দেওয়া। কারণ আমাদের দেশের নারীরা মসজিদে নামাজ পড়তে অভ্যস্ত নন।

১০. বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকে সার্বক্ষণিক আপনার পরিচয়পত্র, মোয়াল্লেম কার্ড, হোটেলের কার্ড, কব্জি বেল্ট সঙ্গে রাখবেন। মনে রাখবেন, আপনি হারিয়ে গেলে এগুলোর মাধ্যমে আপনাকে আপনার এজেন্সির কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

১১. প্রতি ওয়াক্তে জানাজার নামাজ হয়। অনেক নারীই জানাজার নামাজ পারেন না। শিখে নেবেন । পড়লে ভালো।

১২. হজের সময় আপনি সারা দুনিয়ার মানুষকে একসঙ্গে দেখতে পাবেন। যেটা আর কোথাও পাবেন না। দেখতে পারবেন নানান মানুষের নানান রকম মত আর নিয়ম কানুন। যদি কেউ কোনো ভুল করে তাহলে তাকে সাবধানে ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে বুঝাতে চেষ্টা করুন। কাউকে সরাসরি শোধরানোর চেষ্টা করবেন না। অপর ব্যক্তি না বুঝলে চুপ থাকুন।

১৩. দোয়া কবুল হওয়ার স্থানে মন ভরে দোয়া করুন এবং আগে থেকে ঠিক করে রাখুন কি দোয়া করবেন। অনেক সময় আবেগের কারণে কি দোয়া করবেন তা মনে থাকেনা।  মন ভরে কাবা ঘর দেখে নেবেন। কারণ আপনার নসিবে দ্বিতীয়বার কাবা ঘর দেখা সম্ভব নাও হতে পারে।

১৪. বিমানে ওঠার আগে থেকেই আপনার হ্যান্ড ব্যাগে পাতলা জায়নামাজ এবং স্প্রে করা যায় এমন পানির বোতল সবসময় সঙ্গে রাখবেন। যাতে অজু করার জায়গা না থাকলে স্প্রে করে হাতের তালুতে পানি নিয়ে অযুর ফরজগুলো আদায় করে অজু করে নিতে পারেন।

১৫. আপনাকে অনেকক্ষণ মসজিদে থাকতে হবে। তাই সঙ্গে খেজুর, বাদাম বা শুকনো খাবার রাখবেন। মনে রাখতে হবে, কোনোভাবেই আপনাকে অসুস্থ হওয়া চলবে না। এমন কোনো কাজ করবেন না যাতে আপনি অসুস্থ হয়ে যান। যেমন বেশি উমরা করতে গিয়ে অনেকে এমন অসুস্থ হয়ে যান যে ফরজ কাজ করতে পারেন না।

১৬. আপনি হজের আগে সামান্য রিলাক্স মুডে থাকতে পারেন, এতে হজের সময় কষ্ট কম হবে। অতিরিক্ত জিয়ারাহ বা তাওয়াফ হজের পরে করাই ভালো। প্রচুর পরিমাণে পানি ও জুস খেতে হবে। হজের সময় কমদামী এবং হাল্কা স্যান্ডেল ব্যবহার করবেন।

১৭. আপনি যখন মিনা, মুজদালিফা ও আরাফায় অবস্থান করবেন, তখন চেষ্টা করবেন আপনার ব্যাগের ওজন যেন কম হয়। কারণ অনেক হাঁটতে হবে এবং সেখানে খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করতে হবে।

১৮. জামাআরাহতে (পাথর নিক্ষেপের জায়গা) বড় ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেবে না। ব্যাগ নিয়ে ফেলে দেয় অনেক সময়। সেই ক্ষেত্রে সাবধান। নিক্ষেপ করার পাথর পারলে মোয়াল্লেমের মাধ্যমে আগেই সংগ্রহে রাখবেন।

১৯. এহরাম অবস্থায় আপনি কোনো সুগন্ধি বা সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহার করতে পারবেন না। অনেকেই বিভিন্ন লোশন ও সাবান ব্যবহার করেন যা সুগন্ধি যুক্ত। এ ক্ষেত্রে সুগন্ধিমুক্ত লোশন ও ভেসলিন ব্যবহার করতে পারেন।

২০. এহরাম অবস্থায় অনেকেই বাথরুম ব্যবহার করার পর সাবান দিয়ে হাত ধোয় না। যা স্বাস্থ্য সম্মত না। মিনা, মুজদালিফা ও আরফায় বাথরুমে যাওয়ার সময় আগে থেকেই ছোট করে টুকরো করা সুগন্ধি ছাড়া সাবান ও প্লাস্টিক বা পলিথিন নেবেন। বাথরুমে যে পানির পাইপ থাকে তা প্রায় সময় মাটিতে পড়ে থাকে। পলিথিন দিয়ে পাইপ ধরতে পারেন বা হ্যান্ড গ্লাভস দিয়ে। তবে হ্যান্ড গ্লাভস পরা ও খোলা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই পলিথিনই ভালো। বাথরুমের বাইরে অনেক লোক অপেক্ষা করে থাকে। তাই চেষ্টা করবেন দ্রুত কাজ শেষ করে আসতে।

২১. আরাফার ময়দানে অনেক নিম গাছ দেখতে পাবেন। এহরাম অবস্থায় আপনি কোনো গাছের ডাল ভাঙতে পারবেন না। কিন্তু অনেকেই গাছের ডাল ভেঙে মেসওয়াক করে। এ ব্যাপারে সাবধান। প্রয়োজনীয় ঔষধ সঙ্গে রাখবেন। বিশেষ করে মুভ, প্যারাসিটামল, অ্যাসিডিটির ওষুধ, স্যালাইন ইত্যাদি। তাছাড়া নিয়মিত কেউ যদি কোনো ওষুধ খায় সেগুলো কতো দিনের প্যাকেজের জন্য যাচ্ছেন সেই হিসেবে সঙ্গে রাখবেন।

২২. মদিনায় যখন মসজিদে কুবায় যাবেন, তখন হোটেল থেকে অজু করে যাবেন। কারণ বাসা থেকে অজু করে মসজিদে কুবায় দু’রাকাত নফল নামাজ পড়লে একটা উমরা হজের সওয়াব পাওয়া যায়।

২৩. জামাআরাহতে যখন পাথর মারা হয় তখন অনেকেরই একটা জোশ চলে আসে। অনেকেই জুতা, স্যান্ডেল, বোতল ছুড়ে মারেন। এটা করা যাবে না। পাথর মারার সময় দোয়া পড়ে পাথর মারতে হবে এবং মনের ভেতর এমন একটা ফিলিংস আনতে হবে যে, ‘ আমি খুব তাচ্ছিল্যের সঙ্গে পাথরটা ছুড়ে মারছি। কারণ এখানেই ইব্রাহীম (আ.) শয়তানকে পাথর ছুড়ে মেরেছিলেন তাচ্ছিল্যের সঙ্গে। কারণ তিনি আল্লাহকেই বড় মনে করেছিলেন শয়তানের থেকে। তাই আমিও আল্লাহকেই সবার চেয়ে বড় মনে করি’।

২৪. মদীনায় হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর রওজা শরীফে মেয়েদের সব সময় ঢুকতে দেওয়া হয় না। ফযর, যোহর ও এশার নামাজের পর একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঢুকতে দেয়। মেয়েদের জন্য ২৫ নং গেট দিয়ে ঢুকলে সব চেয়ে ভালো। বাংলাদেশসহ সব দেশের মেয়েদের আলাদা আলাদা করে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দৌঁড়া-দৌঁড়ি এবং ধাক্কা-ধাক্কি করবেন না। তবে ছেলেদের এমন নিয়ম নেই। সেখানে রিয়াজুল জান্নাহ দোয়া কবুলের জায়গা। শুধু মাত্র সবুজ কার্পেট বিছানো অংশটুকু রিয়াজুল জান্নাহ।

২৫. আপনার লাগেজের গাঁয়ে বাংলাদেশের পতাকার ছাপ লাগাতে হবে এবং লাগেজের গায়ে বাংলা, ইংরেজি ও আরবিতে বাংলাদেশ লিখতে হবে। তাছাড়া নিজের নাম, পাসপোর্ট নম্বর, মোয়াল্লেম নম্বর লিখতে হবে। দড়ি, টেপ, মার্কার পেন, কাঁচি, সুঁই-সুতা সঙ্গে রাখবেন।

২৭. আপনি মক্কা বা মদিনা যেখনেই থাকুন না কেন, সেখানে একটি জায়গা নির্দিষ্ট করে রাখবেন। কোনো কারণে আপনার সঙ্গী বা আপনি হারিয়ে গেলে সেই জায়গায় চলে আসবেন। সঙ্গীদের ফোন নম্বর সঙ্গে রাখবেন। আপনি নিজে হারিয়ে গেলে সেখানে অবস্থিত বাংলাদেশ হজ ক্যাম্পে জানান। তারাই আপনাকে আপনার হোটেলে পৌঁছে দেবে।

২৮. ফরজ তাওয়াফের সময় প্রচণ্ড ভিড় হয়। সাফা মারওয়ায় ফরজ তাওয়াফ দোতালায় করলে ভিড় একটু কম পাওয়া যায়। কারণ সবাই চায় নিচে তাওয়াফ করতে। ফরয তাওয়াফের পর সায়ী করার সময় অনেক ভিড় হবে। তবে চার তলায় একটা সায়ী করার জায়গা আছে। সেখানে ভিড় কম হয়। জায়গাটা আগে থেকে দেখে রাখবেন। কারণ জায়গাটার সিঁড়ি পেতে কষ্ট হয়।

২৯. যেখানেই যাবেন চেষ্টা করবেন ২/৩ জন একসঙ্গে থাকতে, তাতে অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব। আর হ্যাঁ টাকা পয়সা অবশ্যই সাবধানে রাখবেন। হজের প্রতিটি কাজ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করবেন যাতে সামান্য ভুল টুকুও না হয়। কোথাও কোনো ভুল হলে অবশ্যই দম (রক্ত বা কোরবানীর মাধ্যমে কাফফারা) দিতে হবে। চেষ্টা করবেন মানুষের সৃষ্ট জটলা এড়িয়ে চলতে। মনে রাখবেন এখানে আসার পেছনে উদ্দেশ্য শুধু একটাই আর সেটা হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে গুনাহ মাফ করানো।

লেখক: সৌদি আরব করেসপন্ডেন্ট


ইসলামের আলোয় আলোকিত জীবন- পর্ব ১

ইসলাম যেমন সুন্দর, তেমনি জীবনের প্রতিটি কাজে ইসলামের প্রয়োগ ইসলামের এই সৌন্দর্য আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। ব্যক্তি জীবনের ক্ষুদ্র বিষয় থেকে শুরু করে সব বিষয়েই ইসলামের সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান রয়েছে।

আমরা ধারাবাহিকভাবে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিনিয়ত করে থাকি এমন কিছু বিষয়ে ইসলামের বিধিবিধান সহিহ হাদিসের আলোকে আলোচনা করব।

আজ আমরা খাবার গ্রহণের ব্যাপারে মহানবী (সা.) এর কিছু সুন্নাহ তুলে ধরবো।

খাবার গ্রহণের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের রিজিক দাতা, তাই খাবার গ্রহণের পূর্বে আল্লহকে স্মরণ করে শুরু করতে হবে। এতে যেমন আল্লহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয় সঙ্গে সঙ্গে খাবারের বরকত বেড়ে যায়।

মহানবী (সা.) বিভিন্ন সময়ে সাহাবীদের সঙ্গে এই বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তেমনি কয়েকটি হাদিস এখানে উল্লেখ করা হলো:

বিসমিল্লাহ বলে ডান হাত দিয়ে খাওয়া শুরু করা

হযরত উমর ইবনে সালামাহ(রা) বর্ণনা করেন, রাসুল(সা.) তাকে বলেছেন, বিসমিল্লাহ বলে ডান হাত দিয়ে খাবার খাও এবং নিজের সামনে থেকে খাও।(বুখারী, মুসলিম, রিয়াদ উস সালেহিন ৭২৮)

হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ খাবার খাবে সে যেন (প্রথমে) বিসমিল্লাহ বলে। যদি সে প্রথমে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায়, তবে যেন সে ‘বিসমিল্লাহি আওয়াল্লাহু ওয়া আখেরাহু (আল্লাহর নামেই সূচনা ও সমাপ্তি)’ বলে।(আবু দাউদ ও তিরমিযি,রিয়াদ উস সালেহিন ৭২৯)

খাবারের দোষ অন্বেশন না করা
মহানবী(স) কখন খাবারের দোষ ত্রুটি প্রকাশ করতেন না। তাই আমাদের ও উচিত খাবারের দোষ ত্রুটি অন্বেশন না করা। আমাদের পারিবারিক জীবনের নানা কলহের মাঝে অপসন্দনীয় খাবার একটি উল্লেখযোগ্য কারন। খাবারের লবন, মরিচ, তেলের তারতম্যের কারনে অনেক পরিবারেই দিনের পর দিন মনমালিন্য হয়ে থাকে। কিন্তু রাসুল(স) এর সুন্নাহর অনুসরন করলে এমন অনাকাংখিত অশান্তির উদয় হওয়ার কথা নয়।

বুখারী ও মুসলিমে এসেছে, হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল(সা.) কখনো খাবারের দোষ অন্বেশন করেননি। যদি তার পছন্দ হতো তাহলে খেয়ে নিতেন, আর যদি পছন্দ না হতো তাহলে রেখে দিতেন।

এই হাদিস থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি যে কখনো যদি খাবার পছন্দ নাও হয় তাহলে তার দোষগুলো প্রকাশ করে কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবে না।

খাবারের পাত্র পরিস্কার করে খাওয়া
আমাদের অনেকেই আধুনিকতার দোহাই দিয়ে প্লেটে কিছু খাবার রেখেই উঠে যায়, কিন্তু এটা করা একেবারেই উচিত নয়, বরং পুরো প্লেটের খাবার যথাযথভাবে খেয়ে নিতে মহানবী (সা.) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন।

হযরত জাবির (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) হাতের আঙ্গুল ও খাবার পাত্র চেটে খেতে নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি বলেছেন, তোমরা জান না তোমাদের খাবারের কোন অংশে বরকত রয়েছে।(মুসলিম)

প্লেটের কিনারা থেকে শুরু করা খাবারের প্লেটের মাঝখান থেকে খাওয়া শুরু করা উচিত নয়।

এই সংক্রান্ত একটি হাদিস হচ্ছে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) রাসুল (সা.) এর থেকে বর্ণনা করেন, বরকত খাবারের (প্লেটের) মাঝখানে অবতীর্ণ হয়। সুতরাং কিনারা থেকে খাবার গ্রহণ কর, মাঝখান থেকে খেয়ো না।(আবু দাউদ ও তিরমিযি, রিয়াদ উস সালেহিন ৭৪৪)

অন্যের সঙ্গে খাবার ভাগ করে খাওয়া
মানুষের সঙ্গে খাবার ভাগ করে খাওয়ার মাধ্যমে যেমন খাবারের অপচয় রোধ হয় তেমনি পরস্পরের মাঝে ভ্রাত্রিত্ববোধ আরও বাড়ে, রাসুল (সা.) এই বিষয়েও আমাদের দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।

হযরত জাবির (রা) বর্ণনা করেন, আমি রাসুলকে (সা.) বলতে শুনেছি, এক ব্যক্তির খাবার দুই ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট এবং দুই ব্যক্তির খাবার চার ব্যক্তির জন্য আর চার ব্যক্তির খাবার আট ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট।(মুসলিম)

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক কিছুই খাবার খাওয়ার সঙ্গে জড়িত। আমাদের সামাজিকতা ও উৎসব প্রধানত খাবার কেন্দ্রিক, তাই খাবার গ্রহণের সময় এই ছোট ছোট বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল করে অনুশীলন করলে এটাও আমাদের পরকালের পাথেয় হয়ে থাকবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: হাদিসগুলো রিয়াদুস সালেহিন (বাংলা অনুবাদ) বই থেকে নেওয়া হয়েছে।

লেখক- শিক্ষার্থী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

No comments:

Post a Comment