নতুন হজ যাত্রীদের জন্য কিছু পরামর্শ
![]() |
হজ ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। প্রত্যেক সুস্থ এবং সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য একবার হজ করা ফরজ। এই হজের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের অনেক জায়গায় বলা হয়েছে।
অনেক সম্পদশালী ব্যক্তি আছেন যাদের ভাগ্যে হজ নসিব হয় না। আবার এমন অনেক লোক আছেন যারা অসুস্থ বা তেমন কোনো সামর্থ্য নেই, আল্লাহর রহমতে তবুও তাদের হজ করার সৌভাগ্য হয়ে যায়। আল্লাহর মেহমান হওয়া নিtসন্দেহে অনেক গর্বের বিষয় এবং হাজীরা আল্লাহর কাছে অনেক সম্মানিত।
হজ এজেন্সিগুলোর খামখেয়ালীপনা, তাদের ব্যবসায়ীক দৃষ্টিভঙ্গী, সর্বোপরি হজের ব্যাপারে অনেক তথ্য না জানার কারণে অনেক সময় বিদেশের মাটিতে বিপাকে পড়তে হয় হাজীদের এবং অনেক সময় হজ হয়ে উঠে ভুলে ভরা।
নতুন হাজীদের ক্ষেত্রে আমার এই পরামর্শগুলো সামান্য হলেও কাজে আসবে বলেই আশা করছি।
সৌদি আরবে অবস্থান করে যা অভিজ্ঞতা হয়েছে সেই আলোকে আপনাদের সামনে বিষয়গুলো তুলে ধরছি।
১. যারা বেসরকারিভাবে হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা অবশ্যই যে এজেন্সির মাধ্যমে যাবেন, সেই এজেন্সির খোঁজ খবর নেবেন। তারা ‘হাব’ এর সদস্য কিনা, তাদের অতীত রেকর্ড কেমন, মক্কা মদীনায় কোথায় রাখবে, বাইতুল্লাহ থেকে কতোদূর রাখবে, এজেন্সির পক্ষ থেকে কতো বেলা খাবার দেবে।
২. জেনে নিন, আপনি যে গ্রুপের সঙ্গে হজে যাচ্ছেন সেই গ্রুপের মোয়াল্লেম ভালো মানের আলেম কিনা, মোয়াল্লেমের আগে হজের অভিজ্ঞতা আছে কিনা। অনেক সময় লক্ষ করা যায় অনেক এজেন্সি তাদের হাজীদের নিয়ে ছেড়ে দেন। হাজীরা জানেনও না কোথায় কি করতে হবে। অনেক মোয়াল্লেম আলেম না হওয়ার কারণে নিজে ভুল করেন এবং হাজীদেরও ভুল করিয়ে দেন।
অনেক সময় হজ্জের নিয়ম কানুন পালনের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখা দিলে মোয়াল্লেমকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলে দিতে পারবেন। মোয়াল্লেম আলেম না হলে সমস্যা হতে পারে।
যেমন ধরা যাক, তাওয়াফ করার সময় যদি ফরজ নামাজ শুরু হয়ে যায় তখন হাজী কি করবেন? তিনি কি নামাজ পড়বেন, নাকি তাওয়াফ করবেন? যদি নামাজ পড়েন তাহলে কি প্রথম থেকে তাওয়াফ শুরু করবেন নাকি তাওয়াফ যেখানে শেষ করেছিলেন সেখান থেকেই শুরু করবেন? অথবা সায়ী করার সময় অজু না থাকলে তখন কি হবে? ইত্যাদি এমন ধরনের সমস্যা হতে পারে।
৩. মনে রাখবেন হজে যাওয়ার নিয়ত করা থেকেই আপনি আল্লাহর মেহমান। তাই হজে যাওয়ার আগে খুব ভালো মতো হজের নিয়ম কানুন শিখে নেবেন, প্রশিক্ষণ নেবেন এবং তখন থেকেই আপনি আল্লাহর রাস্তায় বের হচ্ছেন সে রকম মন মানসিকতা লালন করতে শুরু করবেন। মাসলা মাসায়েলগুলো ভালোমতো জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। হজের নিয়ম কানুনের ব্যাপারে বাজারে অনেক বই-পুস্তক পাওয়া যায় আপনি সেগুলো ভালোভাবে পড়তে পারেন।
৪. হজের গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে তা হলো এহরাম অবস্থায় কি কি কাজ করতে পারবেন না। কারণ এহরাম পরার পর থেকেই আপনার সামনে কোনো না কোনো পরীক্ষা আসবে। যেমন, এহরাম অবস্থায় কোনো পশু-পাখি এমনকি কোনো পোকা মাকড় মারতে পারবেন না বা কাউকে মারার জন্য দেখিয়ে দিতে পারবেন না। এমন সময় আপনার সামনে মশা চলে এলো, আপনি অভ্যাস বশত মশা মেরে ফেললেন। মনে রাখতে হবে, কীট পতঙ্গ পর্যন্ত মারা যাবেনা এসময়।
৫. এহরাম অবস্থায় অনেক স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া করেন বা একে অন্যের সঙ্গে ঝগড়া করেন। আবার অনেকে গীবত করেন। সাবধান! এহরাম অবস্থায় এসব নিষিদ্ধ। অবশ্য এটা সবসময় নিষিদ্ধ।
অন্য হাজীর যেন কোনো কষ্ট না হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা জরুরি। কারণ আপনার মতো তিনিও আল্লাহর মেহমান।
৬. আপনি ভালোভাবে জেনে নিন কোন কোন স্থানে দোয়া কবুল হয়। যেমন, কাবা ঘরের ভেতর, যমযমের কাছে, সাফা-মারওয়ায়, সাফা-মারওয়ার সবুজ বাতির মাঝখানে, মাকামে ইব্রাহীমের কাছে, আরাফাতের ময়দানে, মুযদালিফায়, মিনায়, তিন জামাআরাহ এর পাশে, হাজরে আসওয়াত বা কাবা শরিফের কালো পাথরে চুমু খেয়ে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়।
৭. মক্কা-মদিনার দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে জেনে নেবেন। ফলে আপনার এজেন্সি যখন আপনাকে সেখানে ঘুরাতে নিয়ে যাবে তখন মনের মাঝে ফিলিংসটা কাজ করবে। মনে রাখবেন, দর্শনের সময় কোনো অবস্থায় দাঁড়িয়ে বা বসে হাত তুলে দোয়া করবেন না । এটা বেদাত। এগুলো করতে গেলে অনেক সময় বেকায়দায় পড়তে হয়।
৮. হজে যাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য ইবাদত তাই, নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে গিয়ে বসে না থাকলে মসজিদের ভেতর জায়গা পাবেন না। বিশেষ করে জুম্মার নামাজ শুরু হওয়ার ২ ঘণ্টা আগে গেলে মসজিদের ভেতর ভালো জায়গা পাবেন।
৯. অনেক নারী জামাতে নামাজ পড়তে পারেন না। যাওয়ার আগে শিখে নেবেন। ছেলেদের দায়িত্ব তাদের নারী আত্মীয়দের জামাতে নামাজ পড়তে শিখিয়ে দেওয়া। কারণ আমাদের দেশের নারীরা মসজিদে নামাজ পড়তে অভ্যস্ত নন।
১০. বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকে সার্বক্ষণিক আপনার পরিচয়পত্র, মোয়াল্লেম কার্ড, হোটেলের কার্ড, কব্জি বেল্ট সঙ্গে রাখবেন। মনে রাখবেন, আপনি হারিয়ে গেলে এগুলোর মাধ্যমে আপনাকে আপনার এজেন্সির কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
১১. প্রতি ওয়াক্তে জানাজার নামাজ হয়। অনেক নারীই জানাজার নামাজ পারেন না। শিখে নেবেন । পড়লে ভালো।
১২. হজের সময় আপনি সারা দুনিয়ার মানুষকে একসঙ্গে দেখতে পাবেন। যেটা আর কোথাও পাবেন না। দেখতে পারবেন নানান মানুষের নানান রকম মত আর নিয়ম কানুন। যদি কেউ কোনো ভুল করে তাহলে তাকে সাবধানে ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে বুঝাতে চেষ্টা করুন। কাউকে সরাসরি শোধরানোর চেষ্টা করবেন না। অপর ব্যক্তি না বুঝলে চুপ থাকুন।
১৩. দোয়া কবুল হওয়ার স্থানে মন ভরে দোয়া করুন এবং আগে থেকে ঠিক করে রাখুন কি দোয়া করবেন। অনেক সময় আবেগের কারণে কি দোয়া করবেন তা মনে থাকেনা। মন ভরে কাবা ঘর দেখে নেবেন। কারণ আপনার নসিবে দ্বিতীয়বার কাবা ঘর দেখা সম্ভব নাও হতে পারে।
১৪. বিমানে ওঠার আগে থেকেই আপনার হ্যান্ড ব্যাগে পাতলা জায়নামাজ এবং স্প্রে করা যায় এমন পানির বোতল সবসময় সঙ্গে রাখবেন। যাতে অজু করার জায়গা না থাকলে স্প্রে করে হাতের তালুতে পানি নিয়ে অযুর ফরজগুলো আদায় করে অজু করে নিতে পারেন।
১৫. আপনাকে অনেকক্ষণ মসজিদে থাকতে হবে। তাই সঙ্গে খেজুর, বাদাম বা শুকনো খাবার রাখবেন। মনে রাখতে হবে, কোনোভাবেই আপনাকে অসুস্থ হওয়া চলবে না। এমন কোনো কাজ করবেন না যাতে আপনি অসুস্থ হয়ে যান। যেমন বেশি উমরা করতে গিয়ে অনেকে এমন অসুস্থ হয়ে যান যে ফরজ কাজ করতে পারেন না।
১৬. আপনি হজের আগে সামান্য রিলাক্স মুডে থাকতে পারেন, এতে হজের সময় কষ্ট কম হবে। অতিরিক্ত জিয়ারাহ বা তাওয়াফ হজের পরে করাই ভালো। প্রচুর পরিমাণে পানি ও জুস খেতে হবে। হজের সময় কমদামী এবং হাল্কা স্যান্ডেল ব্যবহার করবেন।
১৭. আপনি যখন মিনা, মুজদালিফা ও আরাফায় অবস্থান করবেন, তখন চেষ্টা করবেন আপনার ব্যাগের ওজন যেন কম হয়। কারণ অনেক হাঁটতে হবে এবং সেখানে খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করতে হবে।
১৮. জামাআরাহতে (পাথর নিক্ষেপের জায়গা) বড় ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেবে না। ব্যাগ নিয়ে ফেলে দেয় অনেক সময়। সেই ক্ষেত্রে সাবধান। নিক্ষেপ করার পাথর পারলে মোয়াল্লেমের মাধ্যমে আগেই সংগ্রহে রাখবেন।
১৯. এহরাম অবস্থায় আপনি কোনো সুগন্ধি বা সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহার করতে পারবেন না। অনেকেই বিভিন্ন লোশন ও সাবান ব্যবহার করেন যা সুগন্ধি যুক্ত। এ ক্ষেত্রে সুগন্ধিমুক্ত লোশন ও ভেসলিন ব্যবহার করতে পারেন।
২০. এহরাম অবস্থায় অনেকেই বাথরুম ব্যবহার করার পর সাবান দিয়ে হাত ধোয় না। যা স্বাস্থ্য সম্মত না। মিনা, মুজদালিফা ও আরফায় বাথরুমে যাওয়ার সময় আগে থেকেই ছোট করে টুকরো করা সুগন্ধি ছাড়া সাবান ও প্লাস্টিক বা পলিথিন নেবেন। বাথরুমে যে পানির পাইপ থাকে তা প্রায় সময় মাটিতে পড়ে থাকে। পলিথিন দিয়ে পাইপ ধরতে পারেন বা হ্যান্ড গ্লাভস দিয়ে। তবে হ্যান্ড গ্লাভস পরা ও খোলা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই পলিথিনই ভালো। বাথরুমের বাইরে অনেক লোক অপেক্ষা করে থাকে। তাই চেষ্টা করবেন দ্রুত কাজ শেষ করে আসতে।
২১. আরাফার ময়দানে অনেক নিম গাছ দেখতে পাবেন। এহরাম অবস্থায় আপনি কোনো গাছের ডাল ভাঙতে পারবেন না। কিন্তু অনেকেই গাছের ডাল ভেঙে মেসওয়াক করে। এ ব্যাপারে সাবধান। প্রয়োজনীয় ঔষধ সঙ্গে রাখবেন। বিশেষ করে মুভ, প্যারাসিটামল, অ্যাসিডিটির ওষুধ, স্যালাইন ইত্যাদি। তাছাড়া নিয়মিত কেউ যদি কোনো ওষুধ খায় সেগুলো কতো দিনের প্যাকেজের জন্য যাচ্ছেন সেই হিসেবে সঙ্গে রাখবেন।
২২. মদিনায় যখন মসজিদে কুবায় যাবেন, তখন হোটেল থেকে অজু করে যাবেন। কারণ বাসা থেকে অজু করে মসজিদে কুবায় দু’রাকাত নফল নামাজ পড়লে একটা উমরা হজের সওয়াব পাওয়া যায়।
২৩. জামাআরাহতে যখন পাথর মারা হয় তখন অনেকেরই একটা জোশ চলে আসে। অনেকেই জুতা, স্যান্ডেল, বোতল ছুড়ে মারেন। এটা করা যাবে না। পাথর মারার সময় দোয়া পড়ে পাথর মারতে হবে এবং মনের ভেতর এমন একটা ফিলিংস আনতে হবে যে, ‘ আমি খুব তাচ্ছিল্যের সঙ্গে পাথরটা ছুড়ে মারছি। কারণ এখানেই ইব্রাহীম (আ.) শয়তানকে পাথর ছুড়ে মেরেছিলেন তাচ্ছিল্যের সঙ্গে। কারণ তিনি আল্লাহকেই বড় মনে করেছিলেন শয়তানের থেকে। তাই আমিও আল্লাহকেই সবার চেয়ে বড় মনে করি’।
২৪. মদীনায় হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর রওজা শরীফে মেয়েদের সব সময় ঢুকতে দেওয়া হয় না। ফযর, যোহর ও এশার নামাজের পর একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঢুকতে দেয়। মেয়েদের জন্য ২৫ নং গেট দিয়ে ঢুকলে সব চেয়ে ভালো। বাংলাদেশসহ সব দেশের মেয়েদের আলাদা আলাদা করে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দৌঁড়া-দৌঁড়ি এবং ধাক্কা-ধাক্কি করবেন না। তবে ছেলেদের এমন নিয়ম নেই। সেখানে রিয়াজুল জান্নাহ দোয়া কবুলের জায়গা। শুধু মাত্র সবুজ কার্পেট বিছানো অংশটুকু রিয়াজুল জান্নাহ।
২৫. আপনার লাগেজের গাঁয়ে বাংলাদেশের পতাকার ছাপ লাগাতে হবে এবং লাগেজের গায়ে বাংলা, ইংরেজি ও আরবিতে বাংলাদেশ লিখতে হবে। তাছাড়া নিজের নাম, পাসপোর্ট নম্বর, মোয়াল্লেম নম্বর লিখতে হবে। দড়ি, টেপ, মার্কার পেন, কাঁচি, সুঁই-সুতা সঙ্গে রাখবেন।
২৭. আপনি মক্কা বা মদিনা যেখনেই থাকুন না কেন, সেখানে একটি জায়গা নির্দিষ্ট করে রাখবেন। কোনো কারণে আপনার সঙ্গী বা আপনি হারিয়ে গেলে সেই জায়গায় চলে আসবেন। সঙ্গীদের ফোন নম্বর সঙ্গে রাখবেন। আপনি নিজে হারিয়ে গেলে সেখানে অবস্থিত বাংলাদেশ হজ ক্যাম্পে জানান। তারাই আপনাকে আপনার হোটেলে পৌঁছে দেবে।
২৮. ফরজ তাওয়াফের সময় প্রচণ্ড ভিড় হয়। সাফা মারওয়ায় ফরজ তাওয়াফ দোতালায় করলে ভিড় একটু কম পাওয়া যায়। কারণ সবাই চায় নিচে তাওয়াফ করতে। ফরয তাওয়াফের পর সায়ী করার সময় অনেক ভিড় হবে। তবে চার তলায় একটা সায়ী করার জায়গা আছে। সেখানে ভিড় কম হয়। জায়গাটা আগে থেকে দেখে রাখবেন। কারণ জায়গাটার সিঁড়ি পেতে কষ্ট হয়।
২৯. যেখানেই যাবেন চেষ্টা করবেন ২/৩ জন একসঙ্গে থাকতে, তাতে অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব। আর হ্যাঁ টাকা পয়সা অবশ্যই সাবধানে রাখবেন। হজের প্রতিটি কাজ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করবেন যাতে সামান্য ভুল টুকুও না হয়। কোথাও কোনো ভুল হলে অবশ্যই দম (রক্ত বা কোরবানীর মাধ্যমে কাফফারা) দিতে হবে। চেষ্টা করবেন মানুষের সৃষ্ট জটলা এড়িয়ে চলতে। মনে রাখবেন এখানে আসার পেছনে উদ্দেশ্য শুধু একটাই আর সেটা হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে গুনাহ মাফ করানো।
লেখক: সৌদি আরব করেসপন্ডেন্ট
অন্য হাজীর যেন কোনো কষ্ট না হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা জরুরি। কারণ আপনার মতো তিনিও আল্লাহর মেহমান।
৬. আপনি ভালোভাবে জেনে নিন কোন কোন স্থানে দোয়া কবুল হয়। যেমন, কাবা ঘরের ভেতর, যমযমের কাছে, সাফা-মারওয়ায়, সাফা-মারওয়ার সবুজ বাতির মাঝখানে, মাকামে ইব্রাহীমের কাছে, আরাফাতের ময়দানে, মুযদালিফায়, মিনায়, তিন জামাআরাহ এর পাশে, হাজরে আসওয়াত বা কাবা শরিফের কালো পাথরে চুমু খেয়ে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়।
৭. মক্কা-মদিনার দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে জেনে নেবেন। ফলে আপনার এজেন্সি যখন আপনাকে সেখানে ঘুরাতে নিয়ে যাবে তখন মনের মাঝে ফিলিংসটা কাজ করবে। মনে রাখবেন, দর্শনের সময় কোনো অবস্থায় দাঁড়িয়ে বা বসে হাত তুলে দোয়া করবেন না । এটা বেদাত। এগুলো করতে গেলে অনেক সময় বেকায়দায় পড়তে হয়।
৮. হজে যাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য ইবাদত তাই, নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে গিয়ে বসে না থাকলে মসজিদের ভেতর জায়গা পাবেন না। বিশেষ করে জুম্মার নামাজ শুরু হওয়ার ২ ঘণ্টা আগে গেলে মসজিদের ভেতর ভালো জায়গা পাবেন।
৯. অনেক নারী জামাতে নামাজ পড়তে পারেন না। যাওয়ার আগে শিখে নেবেন। ছেলেদের দায়িত্ব তাদের নারী আত্মীয়দের জামাতে নামাজ পড়তে শিখিয়ে দেওয়া। কারণ আমাদের দেশের নারীরা মসজিদে নামাজ পড়তে অভ্যস্ত নন।
১০. বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকে সার্বক্ষণিক আপনার পরিচয়পত্র, মোয়াল্লেম কার্ড, হোটেলের কার্ড, কব্জি বেল্ট সঙ্গে রাখবেন। মনে রাখবেন, আপনি হারিয়ে গেলে এগুলোর মাধ্যমে আপনাকে আপনার এজেন্সির কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
১১. প্রতি ওয়াক্তে জানাজার নামাজ হয়। অনেক নারীই জানাজার নামাজ পারেন না। শিখে নেবেন । পড়লে ভালো।
১২. হজের সময় আপনি সারা দুনিয়ার মানুষকে একসঙ্গে দেখতে পাবেন। যেটা আর কোথাও পাবেন না। দেখতে পারবেন নানান মানুষের নানান রকম মত আর নিয়ম কানুন। যদি কেউ কোনো ভুল করে তাহলে তাকে সাবধানে ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে বুঝাতে চেষ্টা করুন। কাউকে সরাসরি শোধরানোর চেষ্টা করবেন না। অপর ব্যক্তি না বুঝলে চুপ থাকুন।
১৩. দোয়া কবুল হওয়ার স্থানে মন ভরে দোয়া করুন এবং আগে থেকে ঠিক করে রাখুন কি দোয়া করবেন। অনেক সময় আবেগের কারণে কি দোয়া করবেন তা মনে থাকেনা। মন ভরে কাবা ঘর দেখে নেবেন। কারণ আপনার নসিবে দ্বিতীয়বার কাবা ঘর দেখা সম্ভব নাও হতে পারে।
১৪. বিমানে ওঠার আগে থেকেই আপনার হ্যান্ড ব্যাগে পাতলা জায়নামাজ এবং স্প্রে করা যায় এমন পানির বোতল সবসময় সঙ্গে রাখবেন। যাতে অজু করার জায়গা না থাকলে স্প্রে করে হাতের তালুতে পানি নিয়ে অযুর ফরজগুলো আদায় করে অজু করে নিতে পারেন।
১৫. আপনাকে অনেকক্ষণ মসজিদে থাকতে হবে। তাই সঙ্গে খেজুর, বাদাম বা শুকনো খাবার রাখবেন। মনে রাখতে হবে, কোনোভাবেই আপনাকে অসুস্থ হওয়া চলবে না। এমন কোনো কাজ করবেন না যাতে আপনি অসুস্থ হয়ে যান। যেমন বেশি উমরা করতে গিয়ে অনেকে এমন অসুস্থ হয়ে যান যে ফরজ কাজ করতে পারেন না।
১৬. আপনি হজের আগে সামান্য রিলাক্স মুডে থাকতে পারেন, এতে হজের সময় কষ্ট কম হবে। অতিরিক্ত জিয়ারাহ বা তাওয়াফ হজের পরে করাই ভালো। প্রচুর পরিমাণে পানি ও জুস খেতে হবে। হজের সময় কমদামী এবং হাল্কা স্যান্ডেল ব্যবহার করবেন।
১৭. আপনি যখন মিনা, মুজদালিফা ও আরাফায় অবস্থান করবেন, তখন চেষ্টা করবেন আপনার ব্যাগের ওজন যেন কম হয়। কারণ অনেক হাঁটতে হবে এবং সেখানে খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করতে হবে।
১৮. জামাআরাহতে (পাথর নিক্ষেপের জায়গা) বড় ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেবে না। ব্যাগ নিয়ে ফেলে দেয় অনেক সময়। সেই ক্ষেত্রে সাবধান। নিক্ষেপ করার পাথর পারলে মোয়াল্লেমের মাধ্যমে আগেই সংগ্রহে রাখবেন।
১৯. এহরাম অবস্থায় আপনি কোনো সুগন্ধি বা সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহার করতে পারবেন না। অনেকেই বিভিন্ন লোশন ও সাবান ব্যবহার করেন যা সুগন্ধি যুক্ত। এ ক্ষেত্রে সুগন্ধিমুক্ত লোশন ও ভেসলিন ব্যবহার করতে পারেন।
২০. এহরাম অবস্থায় অনেকেই বাথরুম ব্যবহার করার পর সাবান দিয়ে হাত ধোয় না। যা স্বাস্থ্য সম্মত না। মিনা, মুজদালিফা ও আরফায় বাথরুমে যাওয়ার সময় আগে থেকেই ছোট করে টুকরো করা সুগন্ধি ছাড়া সাবান ও প্লাস্টিক বা পলিথিন নেবেন। বাথরুমে যে পানির পাইপ থাকে তা প্রায় সময় মাটিতে পড়ে থাকে। পলিথিন দিয়ে পাইপ ধরতে পারেন বা হ্যান্ড গ্লাভস দিয়ে। তবে হ্যান্ড গ্লাভস পরা ও খোলা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই পলিথিনই ভালো। বাথরুমের বাইরে অনেক লোক অপেক্ষা করে থাকে। তাই চেষ্টা করবেন দ্রুত কাজ শেষ করে আসতে।
২১. আরাফার ময়দানে অনেক নিম গাছ দেখতে পাবেন। এহরাম অবস্থায় আপনি কোনো গাছের ডাল ভাঙতে পারবেন না। কিন্তু অনেকেই গাছের ডাল ভেঙে মেসওয়াক করে। এ ব্যাপারে সাবধান। প্রয়োজনীয় ঔষধ সঙ্গে রাখবেন। বিশেষ করে মুভ, প্যারাসিটামল, অ্যাসিডিটির ওষুধ, স্যালাইন ইত্যাদি। তাছাড়া নিয়মিত কেউ যদি কোনো ওষুধ খায় সেগুলো কতো দিনের প্যাকেজের জন্য যাচ্ছেন সেই হিসেবে সঙ্গে রাখবেন।
২২. মদিনায় যখন মসজিদে কুবায় যাবেন, তখন হোটেল থেকে অজু করে যাবেন। কারণ বাসা থেকে অজু করে মসজিদে কুবায় দু’রাকাত নফল নামাজ পড়লে একটা উমরা হজের সওয়াব পাওয়া যায়।
২৩. জামাআরাহতে যখন পাথর মারা হয় তখন অনেকেরই একটা জোশ চলে আসে। অনেকেই জুতা, স্যান্ডেল, বোতল ছুড়ে মারেন। এটা করা যাবে না। পাথর মারার সময় দোয়া পড়ে পাথর মারতে হবে এবং মনের ভেতর এমন একটা ফিলিংস আনতে হবে যে, ‘ আমি খুব তাচ্ছিল্যের সঙ্গে পাথরটা ছুড়ে মারছি। কারণ এখানেই ইব্রাহীম (আ.) শয়তানকে পাথর ছুড়ে মেরেছিলেন তাচ্ছিল্যের সঙ্গে। কারণ তিনি আল্লাহকেই বড় মনে করেছিলেন শয়তানের থেকে। তাই আমিও আল্লাহকেই সবার চেয়ে বড় মনে করি’।
২৪. মদীনায় হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর রওজা শরীফে মেয়েদের সব সময় ঢুকতে দেওয়া হয় না। ফযর, যোহর ও এশার নামাজের পর একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঢুকতে দেয়। মেয়েদের জন্য ২৫ নং গেট দিয়ে ঢুকলে সব চেয়ে ভালো। বাংলাদেশসহ সব দেশের মেয়েদের আলাদা আলাদা করে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দৌঁড়া-দৌঁড়ি এবং ধাক্কা-ধাক্কি করবেন না। তবে ছেলেদের এমন নিয়ম নেই। সেখানে রিয়াজুল জান্নাহ দোয়া কবুলের জায়গা। শুধু মাত্র সবুজ কার্পেট বিছানো অংশটুকু রিয়াজুল জান্নাহ।
২৫. আপনার লাগেজের গাঁয়ে বাংলাদেশের পতাকার ছাপ লাগাতে হবে এবং লাগেজের গায়ে বাংলা, ইংরেজি ও আরবিতে বাংলাদেশ লিখতে হবে। তাছাড়া নিজের নাম, পাসপোর্ট নম্বর, মোয়াল্লেম নম্বর লিখতে হবে। দড়ি, টেপ, মার্কার পেন, কাঁচি, সুঁই-সুতা সঙ্গে রাখবেন।
২৭. আপনি মক্কা বা মদিনা যেখনেই থাকুন না কেন, সেখানে একটি জায়গা নির্দিষ্ট করে রাখবেন। কোনো কারণে আপনার সঙ্গী বা আপনি হারিয়ে গেলে সেই জায়গায় চলে আসবেন। সঙ্গীদের ফোন নম্বর সঙ্গে রাখবেন। আপনি নিজে হারিয়ে গেলে সেখানে অবস্থিত বাংলাদেশ হজ ক্যাম্পে জানান। তারাই আপনাকে আপনার হোটেলে পৌঁছে দেবে।
২৮. ফরজ তাওয়াফের সময় প্রচণ্ড ভিড় হয়। সাফা মারওয়ায় ফরজ তাওয়াফ দোতালায় করলে ভিড় একটু কম পাওয়া যায়। কারণ সবাই চায় নিচে তাওয়াফ করতে। ফরয তাওয়াফের পর সায়ী করার সময় অনেক ভিড় হবে। তবে চার তলায় একটা সায়ী করার জায়গা আছে। সেখানে ভিড় কম হয়। জায়গাটা আগে থেকে দেখে রাখবেন। কারণ জায়গাটার সিঁড়ি পেতে কষ্ট হয়।
২৯. যেখানেই যাবেন চেষ্টা করবেন ২/৩ জন একসঙ্গে থাকতে, তাতে অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব। আর হ্যাঁ টাকা পয়সা অবশ্যই সাবধানে রাখবেন। হজের প্রতিটি কাজ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করবেন যাতে সামান্য ভুল টুকুও না হয়। কোথাও কোনো ভুল হলে অবশ্যই দম (রক্ত বা কোরবানীর মাধ্যমে কাফফারা) দিতে হবে। চেষ্টা করবেন মানুষের সৃষ্ট জটলা এড়িয়ে চলতে। মনে রাখবেন এখানে আসার পেছনে উদ্দেশ্য শুধু একটাই আর সেটা হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে গুনাহ মাফ করানো।
লেখক: সৌদি আরব করেসপন্ডেন্ট
ইসলামের আলোয় আলোকিত জীবন- পর্ব ১
ইসলাম যেমন সুন্দর, তেমনি জীবনের প্রতিটি কাজে ইসলামের প্রয়োগ ইসলামের এই সৌন্দর্য আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। ব্যক্তি জীবনের ক্ষুদ্র বিষয় থেকে শুরু করে সব বিষয়েই ইসলামের সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান রয়েছে।
আমরা ধারাবাহিকভাবে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিনিয়ত করে থাকি এমন কিছু বিষয়ে ইসলামের বিধিবিধান সহিহ হাদিসের আলোকে আলোচনা করব।
আজ আমরা খাবার গ্রহণের ব্যাপারে মহানবী (সা.) এর কিছু সুন্নাহ তুলে ধরবো।
খাবার গ্রহণের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের রিজিক দাতা, তাই খাবার গ্রহণের পূর্বে আল্লহকে স্মরণ করে শুরু করতে হবে। এতে যেমন আল্লহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয় সঙ্গে সঙ্গে খাবারের বরকত বেড়ে যায়।
মহানবী (সা.) বিভিন্ন সময়ে সাহাবীদের সঙ্গে এই বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তেমনি কয়েকটি হাদিস এখানে উল্লেখ করা হলো:
বিসমিল্লাহ বলে ডান হাত দিয়ে খাওয়া শুরু করা
হযরত উমর ইবনে সালামাহ(রা) বর্ণনা করেন, রাসুল(সা.) তাকে বলেছেন, বিসমিল্লাহ বলে ডান হাত দিয়ে খাবার খাও এবং নিজের সামনে থেকে খাও।(বুখারী, মুসলিম, রিয়াদ উস সালেহিন ৭২৮)
হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ খাবার খাবে সে যেন (প্রথমে) বিসমিল্লাহ বলে। যদি সে প্রথমে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায়, তবে যেন সে ‘বিসমিল্লাহি আওয়াল্লাহু ওয়া আখেরাহু (আল্লাহর নামেই সূচনা ও সমাপ্তি)’ বলে।(আবু দাউদ ও তিরমিযি,রিয়াদ উস সালেহিন ৭২৯)
খাবারের দোষ অন্বেশন না করা
মহানবী(স) কখন খাবারের দোষ ত্রুটি প্রকাশ করতেন না। তাই আমাদের ও উচিত খাবারের দোষ ত্রুটি অন্বেশন না করা। আমাদের পারিবারিক জীবনের নানা কলহের মাঝে অপসন্দনীয় খাবার একটি উল্লেখযোগ্য কারন। খাবারের লবন, মরিচ, তেলের তারতম্যের কারনে অনেক পরিবারেই দিনের পর দিন মনমালিন্য হয়ে থাকে। কিন্তু রাসুল(স) এর সুন্নাহর অনুসরন করলে এমন অনাকাংখিত অশান্তির উদয় হওয়ার কথা নয়।
বুখারী ও মুসলিমে এসেছে, হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল(সা.) কখনো খাবারের দোষ অন্বেশন করেননি। যদি তার পছন্দ হতো তাহলে খেয়ে নিতেন, আর যদি পছন্দ না হতো তাহলে রেখে দিতেন।
এই হাদিস থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি যে কখনো যদি খাবার পছন্দ নাও হয় তাহলে তার দোষগুলো প্রকাশ করে কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবে না।
খাবারের পাত্র পরিস্কার করে খাওয়া
আমাদের অনেকেই আধুনিকতার দোহাই দিয়ে প্লেটে কিছু খাবার রেখেই উঠে যায়, কিন্তু এটা করা একেবারেই উচিত নয়, বরং পুরো প্লেটের খাবার যথাযথভাবে খেয়ে নিতে মহানবী (সা.) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন।
হযরত জাবির (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) হাতের আঙ্গুল ও খাবার পাত্র চেটে খেতে নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি বলেছেন, তোমরা জান না তোমাদের খাবারের কোন অংশে বরকত রয়েছে।(মুসলিম)
প্লেটের কিনারা থেকে শুরু করা খাবারের প্লেটের মাঝখান থেকে খাওয়া শুরু করা উচিত নয়।
এই সংক্রান্ত একটি হাদিস হচ্ছে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) রাসুল (সা.) এর থেকে বর্ণনা করেন, বরকত খাবারের (প্লেটের) মাঝখানে অবতীর্ণ হয়। সুতরাং কিনারা থেকে খাবার গ্রহণ কর, মাঝখান থেকে খেয়ো না।(আবু দাউদ ও তিরমিযি, রিয়াদ উস সালেহিন ৭৪৪)
অন্যের সঙ্গে খাবার ভাগ করে খাওয়া
মানুষের সঙ্গে খাবার ভাগ করে খাওয়ার মাধ্যমে যেমন খাবারের অপচয় রোধ হয় তেমনি পরস্পরের মাঝে ভ্রাত্রিত্ববোধ আরও বাড়ে, রাসুল (সা.) এই বিষয়েও আমাদের দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
হযরত জাবির (রা) বর্ণনা করেন, আমি রাসুলকে (সা.) বলতে শুনেছি, এক ব্যক্তির খাবার দুই ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট এবং দুই ব্যক্তির খাবার চার ব্যক্তির জন্য আর চার ব্যক্তির খাবার আট ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট।(মুসলিম)
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক কিছুই খাবার খাওয়ার সঙ্গে জড়িত। আমাদের সামাজিকতা ও উৎসব প্রধানত খাবার কেন্দ্রিক, তাই খাবার গ্রহণের সময় এই ছোট ছোট বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল করে অনুশীলন করলে এটাও আমাদের পরকালের পাথেয় হয়ে থাকবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: হাদিসগুলো রিয়াদুস সালেহিন (বাংলা অনুবাদ) বই থেকে নেওয়া হয়েছে।
লেখক- শিক্ষার্থী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
আমরা ধারাবাহিকভাবে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিনিয়ত করে থাকি এমন কিছু বিষয়ে ইসলামের বিধিবিধান সহিহ হাদিসের আলোকে আলোচনা করব।
আজ আমরা খাবার গ্রহণের ব্যাপারে মহানবী (সা.) এর কিছু সুন্নাহ তুলে ধরবো।
খাবার গ্রহণের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের রিজিক দাতা, তাই খাবার গ্রহণের পূর্বে আল্লহকে স্মরণ করে শুরু করতে হবে। এতে যেমন আল্লহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয় সঙ্গে সঙ্গে খাবারের বরকত বেড়ে যায়।
মহানবী (সা.) বিভিন্ন সময়ে সাহাবীদের সঙ্গে এই বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তেমনি কয়েকটি হাদিস এখানে উল্লেখ করা হলো:
বিসমিল্লাহ বলে ডান হাত দিয়ে খাওয়া শুরু করা
হযরত উমর ইবনে সালামাহ(রা) বর্ণনা করেন, রাসুল(সা.) তাকে বলেছেন, বিসমিল্লাহ বলে ডান হাত দিয়ে খাবার খাও এবং নিজের সামনে থেকে খাও।(বুখারী, মুসলিম, রিয়াদ উস সালেহিন ৭২৮)
হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ খাবার খাবে সে যেন (প্রথমে) বিসমিল্লাহ বলে। যদি সে প্রথমে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায়, তবে যেন সে ‘বিসমিল্লাহি আওয়াল্লাহু ওয়া আখেরাহু (আল্লাহর নামেই সূচনা ও সমাপ্তি)’ বলে।(আবু দাউদ ও তিরমিযি,রিয়াদ উস সালেহিন ৭২৯)
খাবারের দোষ অন্বেশন না করা
মহানবী(স) কখন খাবারের দোষ ত্রুটি প্রকাশ করতেন না। তাই আমাদের ও উচিত খাবারের দোষ ত্রুটি অন্বেশন না করা। আমাদের পারিবারিক জীবনের নানা কলহের মাঝে অপসন্দনীয় খাবার একটি উল্লেখযোগ্য কারন। খাবারের লবন, মরিচ, তেলের তারতম্যের কারনে অনেক পরিবারেই দিনের পর দিন মনমালিন্য হয়ে থাকে। কিন্তু রাসুল(স) এর সুন্নাহর অনুসরন করলে এমন অনাকাংখিত অশান্তির উদয় হওয়ার কথা নয়।
বুখারী ও মুসলিমে এসেছে, হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল(সা.) কখনো খাবারের দোষ অন্বেশন করেননি। যদি তার পছন্দ হতো তাহলে খেয়ে নিতেন, আর যদি পছন্দ না হতো তাহলে রেখে দিতেন।
এই হাদিস থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি যে কখনো যদি খাবার পছন্দ নাও হয় তাহলে তার দোষগুলো প্রকাশ করে কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবে না।
খাবারের পাত্র পরিস্কার করে খাওয়া
আমাদের অনেকেই আধুনিকতার দোহাই দিয়ে প্লেটে কিছু খাবার রেখেই উঠে যায়, কিন্তু এটা করা একেবারেই উচিত নয়, বরং পুরো প্লেটের খাবার যথাযথভাবে খেয়ে নিতে মহানবী (সা.) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন।
হযরত জাবির (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) হাতের আঙ্গুল ও খাবার পাত্র চেটে খেতে নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি বলেছেন, তোমরা জান না তোমাদের খাবারের কোন অংশে বরকত রয়েছে।(মুসলিম)
প্লেটের কিনারা থেকে শুরু করা খাবারের প্লেটের মাঝখান থেকে খাওয়া শুরু করা উচিত নয়।
এই সংক্রান্ত একটি হাদিস হচ্ছে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) রাসুল (সা.) এর থেকে বর্ণনা করেন, বরকত খাবারের (প্লেটের) মাঝখানে অবতীর্ণ হয়। সুতরাং কিনারা থেকে খাবার গ্রহণ কর, মাঝখান থেকে খেয়ো না।(আবু দাউদ ও তিরমিযি, রিয়াদ উস সালেহিন ৭৪৪)
অন্যের সঙ্গে খাবার ভাগ করে খাওয়া
মানুষের সঙ্গে খাবার ভাগ করে খাওয়ার মাধ্যমে যেমন খাবারের অপচয় রোধ হয় তেমনি পরস্পরের মাঝে ভ্রাত্রিত্ববোধ আরও বাড়ে, রাসুল (সা.) এই বিষয়েও আমাদের দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
হযরত জাবির (রা) বর্ণনা করেন, আমি রাসুলকে (সা.) বলতে শুনেছি, এক ব্যক্তির খাবার দুই ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট এবং দুই ব্যক্তির খাবার চার ব্যক্তির জন্য আর চার ব্যক্তির খাবার আট ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট।(মুসলিম)
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক কিছুই খাবার খাওয়ার সঙ্গে জড়িত। আমাদের সামাজিকতা ও উৎসব প্রধানত খাবার কেন্দ্রিক, তাই খাবার গ্রহণের সময় এই ছোট ছোট বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল করে অনুশীলন করলে এটাও আমাদের পরকালের পাথেয় হয়ে থাকবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: হাদিসগুলো রিয়াদুস সালেহিন (বাংলা অনুবাদ) বই থেকে নেওয়া হয়েছে।
লেখক- শিক্ষার্থী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়









১।
ইদু মিয়া (৭৮), হজযাত্রী আইডি নং ৫১১০০৬, পাসপোর্ট নং এসি ৫৫৫০৯৬৬,
ঠিকানা: ৩৪২/বি খিলগাঁও তালতলা, রামপুরা ঢাকা। তিনি গত ৩০ সেপ্টেম্বর মারা
যান। তিনি গত ১৮ সেপ্টেম্বর সৌদি যান।
২।
আলিম উদ্দিন মাস্টার (৬১), হজযাত্রী আইডি নং ২৩৫২০৫, পাসপোর্ট নং এসি
১১৪৪৩০৭, ঠিকানা: ৯০ ভাগলপুর, সাভার, ঢাকা। তিনি গত ৩০ সেপ্টেম্বর মারা
যান। তিনি গত ২৮ সেপ্টেম্বর সৌদি যান।
৩।
আকরাম উল্লাহ (৯), হজযাত্রী আইডি নং ২৭৮৩০৬, পাসপোর্ট নং এডি ৫০৩০২২৩,
ঠিকানা: ৪৭/বি পুরানা মোগলটুলি, বংশাল, ঢাকা। তিনি গত ৩০ সেপ্টেম্বর মারা
যান। তিনি গত ২৭ সেপ্টেম্বর সৌদি যান।
৪।
এ লতিফ সরকার (৫৮), হজযাত্রী আইডি নং ১৬০১৯৩, পাসপোর্ট নং এসি ৬৭৫৯৫৫৭,
ঠিকানা: বড়ুয়া, লালমনিরহাট। তিনি গত ২৯ সেপ্টেম্বর মারা যান। তিনি গত ২৬
সেপ্টেম্বর সৌদি যান।
৫।
আইয়ুব খান(৪৫), হজযাত্রী আইডি নং ৫২০৩০২, পাসপোর্ট নং এসি ০৯৬২৪৯০,
ঠিকানা: ঘোসাইপুর, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ। তিনি গত ২৮ সেপ্টেম্বর মারা যান।
তিনি গত ২৭ সেপ্টেম্বর সৌদি যান।
৬।
শফিউল আলম চৌধুরী (৬৪), হজযাত্রী আইডি নং ০১৯১১৬, পাসপোর্ট নং এএ ৮৫০৩৪০,
ঠিকানা: রাউজান, চট্টগ্রাম। তিনি গত ২৭ সেপ্টেম্বর মারা যান।
৭।
আনোয়ারা বেগম (৫৫), হজযাত্রী আইডি নং ৩৮৮২৭০, পাসপোর্ট নং এসি ৫৪৬৪৪৭৬,
ঠিকানা: ২৪৭নং পশ্চিম ধীরাশ্রম, গাজীপুর। তিনি গত ২৫ সেপ্টেম্বর মারা যান।
তিনি গত ২৩ সেপ্টেম্বর সৌদি যান।
৮।
রওশন আরা বেগম (৫১), হজযাত্রী আইডি নং ৯৯১৮৭১, পাসপোর্ট নং এসি ০১৯৮৭৯২,
ঠিকানা: সুজলপুর, বীরগঞ্জ, দিনাজপুর। তিনি গত ২৪ সেপ্টেম্বর মারা যান। তিনি
গত ১৯ সেপ্টেম্বর সৌদি যান।
৯।
আব্দুল সাঈদ আলিম (৬৭), হজযাত্রী আইডি নং ৯৯০৭৫১, পাসপোর্ট নং এএ ৮৩৩৯০০৯,
ঠিকানা: ১৪৫/এ উত্তর বাসাবো, ঢাকা মেট্রো। তিনি গত ২৪ সেপ্টেম্বর মারা
যান। তিনি গত ১৮ সেপ্টেম্বর সৌদি যান।
১০।
রিজিয়া (৬৬), হজযাত্রী আইডি নং ৫১৪১৬৮, পাসপোর্ট নং এবি ৪৫৪৭৯১৭, ঠিকানা:
নীলেরপাড়া, জয়দেবপুর, গাজীপুর। তিনি গত ২৩ সেপ্টেম্বর সৌদি যান এবং একইতিন
মারা যান।
১১।
মমতাজ উদ্দিন মণ্ডল (৬২), হজযাত্রী আইডি নং ২৬৮০৪২, পাসপোর্ট নং এসি
৭৮৬০৪০৯, ঠিকানা: নিউ কলেজ রোড, থানা ও জেলা জামালপুর। তিনি গত ২০
সেপ্টেম্বর মারা যান। তিনি গত ১৭ সেপ্টেম্বর সৌদি যান।
১২।
ইউসুফ আলী তালুকদার (৬৭), হজযাত্রী আইডি নং ০৩৭২৩৬, পাসপোর্ট নং এসি
৪৩১৭২১৬, ঠিকানা: সাতপোয়া উদয় মোড়, সরিষাবাড়ি, জামালপুর। তিনি গত ২০
সেপ্টেম্বর মারা যান। তিনি গত ১৭ সেপ্টেম্বর সৌদি যান।
১৩।
আজিজুল হক (৯০), হজযাত্রী আইডি নং ৯৯১৩৩৩, পাসপোর্ট নং এসি ২৮২৯০০৯,
ঠিকানা: গোরপাড়া, মাদারগঞ্জ, জামালপুর। তিনি গত ২০ সেপ্টেম্বর মারা যান।
তিনি গত ১৮ সেপ্টেম্বর সৌদি যান।








No comments:
Post a Comment