প্রবাসী খবর


রিয়াদে প্রবাসী দম্পতির ২৫তম বিবাহ বার্ষিকীতে জমজমাট অনুষ্ঠান


undefined
গত ১১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের রিয়াদের কোকোপাম রেস্তোরাঁয় এক আনন্দঘন পরিবেশে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে ২৫তম বিবাহ বার্ষিকী পালন করেছেন এনামুল হক মিন্টু ও তার স্ত্রী সৈয়দা আতিয়া হক।

বাংলাদেশি কমিউনিটিতে অত্যন্ত বন্ধুব‍ৎসল হিসেবে পরিচিত মিন্টু-আতিয়া দম্পতির বিবাহের রজত জয়ন্তীর ওই অনুষ্ঠান সেদিন রিয়াদে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক ছোটখাটো মিলন মেলায় পরিণত হয়।

বরিশালের চাখারের কৃতি সন্তান শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের আত্মীয় এবং আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি গোলাম সবুরের মামাতো ভাই এনামুল হক মিন্টু ১৯৮৬ সাল থেকে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। বর্তমানে তিনি জার্মানির বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা বিএমডব্লিউ’র রিয়াদ অফিসে কর্মরত।

তাদের একমাত্র ছেলে ইমরানুল হক তামিম ঢাকাস্থ এআইইউবি থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অনার্স করে বর্তমানে বাবা-মার সঙ্গে রিয়াদে অবস্থান করছেন। তামিম এর আগে রিয়াদ থেকে ‘এ’ এবং ‘ও’ লেভেল পরীক্ষা কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেন।

মিন্টু-আতিয়া দম্পতির একমাত্র কন্যা তানজিনা হক মিষ্টি বর্তমানে রিয়াদের বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক স্কুল ও কলেজের ইংরেজি মাধ্যমে এ লেভেল করছে।

মিন্টুর সহধর্মীনি সৈয়দা আতিয়া বর্তমানে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক স্কুল ও কলেজের ক্যান্টিন পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। এর আগে তিনি সুনামের সঙ্গে রিয়াদ মিলিটারি হাসপাতালের ক্যান্টিন পরিচালনা করেন।

গান-বাজনা, হাসি-কৌতুক আর আলাপচারিতায় মুখর সেদিনকার অনষ্ঠানে ছিল মুখরোচক নানা-পদের দেশি-বিদেশি খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা।

প্রসঙ্গত, রিয়াদ প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির সব দল-মতের অনুসারীর কাছে মিন্টু ভাই সমান জনপ্রিয়। এ বিষয়টির উল্লেখ করে ‍অনুষ্ঠানের উপস্থাপক সালাম ভাই সবাইকে জানান, মিন্টু ভাই হচ্ছেন একজন প্রকৃত ‘জাতীয়তাবাদী আওয়ামী লীগার’! তার এ ঘোষণায় অনুষ্ঠানে খোশগল্পে রত প্রবাসীরা হাততালি দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে উপস্থিত সবাই মিন্টু-আতিয়া দম্পতি এবং তাদের দুই সন্তানের সাফল্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।


পাসপোর্ট প্রদান, নবায়ন ও ভিসা ছাড়া কাজ নেই

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ মিশনের ‍বার্ষিক খরচ ৪ কোটি টাকা!


undefined
ইউরোপে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশ হিসেবে পরিচিত নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ মিশন চালাতে বার্ষিক খরচ পড়ে আনুমানিক ৪ কোটি টাকা। হেগ শহরে ভাড়া করা এ অফিসে ৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে হাজারখানেক বাংলাদেশির পাসপোর্ট প্রদান ও নবায়ন এবং বিদেশিদের ভিসা প্রদান ছাড়া তেমন উল্লেখ করার মতো কোনো কাজই নেই।
বিশ্বের ১০টি শীর্ষস্থানীয় ডোনার হিসেবে স্বীকৃত রাষ্ট্রের মধ্যে পশ্চিম ইউরোপের এ দেশটি অষ্টম। এ রকম এক ধনী দেশে বিপুল সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ওষুধ, তৈরি পোশাক, পলিথিনসামগ্রী, বাইসাইকেলসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারছে না বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যকর ও প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক উদ্যোগ না থাকায় এ সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। চিটাগাং চেম্বারের প্রতিনিধিদলের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ মিশনের প্রধান মোহাম্মদ আলী সরকার বলেন, ‘ওষুধ বিক্রি করার যে বিপুল সুযোগ রয়েছে তা লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়কে জানানো হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এমনকি ওষুধ শিল্পের সঙ্গে জড়িত কোনো প্রতিনিধিদল নেদারল্যান্ডস সফর করেনি।’
শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ মিশন কার্যালয়ে উপস্থিত চিটাগাং   চেম্বার প্রতিনিধি দলের নেতা ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এমএ লতিফ মিশন প্রধানের কাছে জানতে চান, দেশের ওষুধ শিল্প সমিতিকে এ সুযোগের কথা জানানো হয়েছে কি না? জনাব লতিফ আরো বলেন, দেশের কোটি কোটি মানুষের পয়সায় এ মিশন চলে। প্রতিবেশী দেশ ভারত এসব বিষয়ে তর তর করে এগিয়েছে গেছে।
যথাযথ উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে  নেদারল্যান্ডসের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপুল সম্ভাবনা মাঠে মারা পড়ছে। তৈরি পোশাক খাতের পাশাপাশি ওষুধ রপ্তানির বেশ বড় বাজার রয়েছে ইউরোপের অত্যন্ত সমৃদ্ধ এই দেশটিতে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে ওষুধ রপ্তানির কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
নেদারল্যান্ডস সফররত চিটাগাং চেম্বারের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সাথে বিভিন্ন ফোরামের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনাকালে উপরোক্ত তথ্যগুলো বেরিয়ে এসেছে।
চিটাগাং চেম্বারের প্রতিনিধি দলটি নেদারল্যান্ডসের বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী, নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী এবং হেগ চেম্বারের সাথে শুক্রবার পৃথক পৃথক বৈঠক করেছে।
এসব আলাপসূত্রে জানা যায়, অর্থনৈতিকভাবে ইউরোপের দ্বিতীয় সমৃদ্ধ দেশ নেদারল্যান্ডস। শেল, ফিলিপস, ইউনিলিভারসহ বিশ্বখ্যাত বহু কোম্পানিই নেদারল্যান্ডসের। ইউরোপের অর্থনীতির অনেক বড় নিয়ন্ত্রক নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের বিশাল রপ্তানি বাজার রয়েছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডসে প্রায় ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করেছে। অপরদিকে এখান থেকে আমদানি করেছে ২০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য।
তৈরি পোশাক শিল্পের (গার্মেন্টস) মাধ্যমে বাংলাদেশ এখান থেকে বিপুল পরিমান রপ্তানি আয় করলেও বর্তমানে এ খাতে চীনা আগ্রাসন দেখা দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার একটি আশঙ্কার কথা দফায় দফায় উচ্চারিত হয়েছে শুক্রবারের বিভিন্ন বৈঠকে।
রপ্তানির এ ধস ঠেকানোর জন্য বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ ওষুধ এদেশে রপ্তানি হতে পারে। এজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলা হয়েছে দেশের বহু প্রতিষ্ঠান বিশ্বমানের ওষুধ তৈরি করছে। এদের সাথে যথাযথভাবে যোগাযোগ করে ওষুধ রপ্তানি শুরুর উদ্যোগ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে চিটাগাং চেম্বার।
চট্টগ্রাম চেম্বারের পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ওষুধ কোম্পানিগুলোর সাথে যোগাযোগ এবং প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ কর্মসূচি নিয়ে বর্তমানে ইউরোপ সফরে থাকা চেম্বার প্রতিনিধিদল এই ব্যাপারেও এগিয়ে আসার জন্য হেগের বাংলাদেশ দূতাবাসকে অনুরোধ জানিয়েছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে, নেদারল্যান্ডসে জাহাজ রপ্তানির অনেক সুযোগের কথাও। যথাযথ উদ্যোগ নিয়ে নেদারল্যান্ডসে জাহাজ রপ্তানির মাধ্যমেও রপ্তানি আয় বাড়ানো যায়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ওয়েস্টার্ন মেরিনসহ কয়েকটি জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নেদারল্যান্ডসে জাহাজ রপ্তানি শুরু করেছে। এখানে জাহাজ রপ্তানির ব্যাপারেও নেদারল্যান্ডসে বসবাসকারী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকেও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। দূতাবাস যদি এগিয়ে আসে তাহলে এক্ষেত্রটি আরো গতিশীল হয়ে উঠবে বলেও স্থানীয় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
নেদারল্যান্ডস আয়তনে বাংলাদেশের এক-চতুর্থাংশ হলেও কৃষিপণ্য উৎপাদনে এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। এদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার ব্যাপারে নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়ে আসছে। নেদারল্যান্ডস বিশ্বের যে ১৫টি দেশকে আর্থিকভাবে সহায়তা করে সেখানে বাংলাদেশ অন্যতম। বন্ধুপ্রতিম এ দেশটি থেকে কারিগরি ও প্রযুক্তি সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে পারে বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সদ্য বিদায়ী সভাপতি ও সাংসদ এমএ লতিফ এবং চেম্বার প্রেসিডেন্ট মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমের নেতৃত্বে চেম্বারের প্রতিনিধিদলটি শুক্রবার হেগ চেম্বার অব কমার্স, ডেল্টদেশ, ওয়ান উই ওয়ান ওয়ার্ল্ড এক্সপিরিয়েন্স এবং দিয়াগো বিভি কোম্পানির ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিদল ও পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছেন।
চেম্বারের প্রতিনিধি দলে মাহজাবীন মোরশেদ এমপি, চেম্বারের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মাহবুবুল আলম, চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম আকতার হোসেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতা দিদারুল আলম, হাবিবুর রহমান, জাবেদ ইকবাল, জহুরুল আলম, এসএম শফিউল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 
ব্রিটেনে বাংলাদেশি নবদম্পতির ব্যয়বহুল সংবর্ধনা
থাকছে ‘জেমস বন্ড’ ছবিতে ব্যবহূত বিমান
ব্রিটেনে বাংলাদেশি কোনো নবদম্পতির সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও ব্যতিক্রমী বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ৬ নভেম্বর। আলোচিত এই দম্পতি হলেন-বাংলাদেশের সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার তিলক চানপুর গ্রামের আবদুল হাইয়ের ছেলে আবদুল হাছান ও হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের আবদুল ওয়াহিদের কন্যা লায়লা খাতুন। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রায় ১ লাখ পাউন্ড খরচ হবে। বিবাহোত্তর সংবর্ধনার দিনে নবদম্পতি ও তাদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ‘জেমস বন্ড’ সিরিজের ‘ক্যাসিনো রয়েল’ ছবিতে ব্যবহূত ব্যয়বহুল বোয়িং-৭৪৭ বিমানে চড়ে আকাশে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটাবেন। এ সময় আরও দুটি জেট বিমান তাদের সঙ্গ দেবে। ব্যয়বহুল এই অনুষ্ঠানটি আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে ব্রিটেনের খ্যাতনামা রেস্টুরেন্ট প্রাইড অব এশিয়া। এ উপলক্ষে গত মঙ্গলবার প্রাইড অব এশিয়ার উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। গত ৩০ সেপ্টেম্বর একটি অভিজাত হোটেলে আবদুল হাছান ও লায়লা খাতুনের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে—উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বিবাহোত্তর সংবর্ধনায় জেমস বন্ড সিরিজের অভিনেতা ছাড়াও ব্রিটেনের বিভিন্ন সেলিব্রেটি ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানে হলিউড ও বলিউড শিল্পীদের নাচের অনুষ্ঠান ছাড়াও এক্সপেক্টরের শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করবেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রাইড অব এশিয়ার ওয়াজিদ হাসান সেলিম বলেন, প্রথমবারের মতো বিশাল বাজেট ও অন্যরকম এই বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করতে যাচ্ছে তার প্রতিষ্ঠান।

নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বোমা হামলার পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশী আটক

নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনার অভিযোগে এক বাংলাদেশী যুবককে গ্রেফতার করেছে নিউইয়র্ক পুলিশ ও এফবিআই।
এ ব্যাপারে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের বিবৃতিতে বলা হয়, কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান নাফিস (২১) নামের ওই বাংলাদেশির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহার ও জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদাকে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।
এফবিআই বলছে, স্থানীয় সময় বুধবার সকালে (বাংলাদেশে বুধবার সন্ধ্যা) ম্যানহাটানে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সামনে বিস্ফোরক ভর্তি ভ্যান দাঁড় করিয়ে নাফিস পাশের মিলেনিয়াম হিল্টন হোটেলে যান। সেখান থেকে তিনি ভ্যানে রেখে আসা সেলফোনে বার বার কল দিতে থাকেন এক হাজার পাউন্ড (৪৫৪ কোজি) বিস্ফোরকে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য।
কিন্তু ভ্যানে সত্যিকারের বিস্ফোরক না থাকায় সেটি আর ফাটেনি।
নিউইয়র্ক পুলিশ বলছে, নাফিস আসলে এফবিআইয়ের পাতা ফাঁদে পা দেন। তার ওপর নজর রাখা হচ্ছিল গত জুলাই থেকেই। ভ্যানটি চালিয়ে আসার সময় যে লোকটি তার পাশে ছিলেন, তিনি আসলে এফবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা, যাকে নাফিস চিনতে পারেননি।
ব্রুকলিন ফেডারেল কোর্টে নাফিসের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শিক্ষা ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসেন নাফিস। আলকায়েদা নেটওয়াকের্র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এই যুবক সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য বিশ্বস্ত লোক খোঁজা শুরু করার পর গত জুলাইয়ে এফবিআইয়ের নজরে পড়েন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, নাফিস এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি তছনছ হয়ে যায়। প্রথমে তিনি চেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করতে। এরপর তিনি রিজার্ভ ব্যাংক, নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ ও বাল্টিমোরে সেনাবাহিনীর স্থাপনায় বোমা হামলার পরিকল্পনা করেন।
তার এ পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে সহযোগী সেজে এফবিআই কর্মকর্তারাই তাকে ২০ ব্যাগ নকল বিস্ফোরক সরবরাহ করেন, যাতে তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা যায়।
এ ব্যাপারে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে মোমেন জানান, নাফিস নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যামাইকায় বসবাস করতেন বলে তারা জানতে পেরেছেন। তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা করছেন তারা। নাফিস আসলেই বাংলাদেশি কি না তাও খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।
আকরামুল কাদের বলেন, “মিডিয়ায় বাংলাদেশের নাম ফলাও করে প্রচার হচ্ছে। আমরা স্টেট ডিপার্টমেন্টে যোগাযোগ করেছি গ্রেফতার যুবকের বাবার নাম ও বাড়ির ঠিকানা জানার জন্য। সে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছিল তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।”
সূত্র : বিডিনিউজ
“আমাকে আগে নিশ্চিত হতে হবে যে সে কোন দেশের নাগরিক, কী তার জাতীয়তা। বাংলাদেশের পাসপোর্ট বহন করলেই বাঙ্গালি হবে-এমন নাও হতে পারে। রোহিঙ্গারাও নানা প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের পাসপোর্ট সংগ্রহ করছে”, বলেন রাষ্ট্রদূত।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোমেন বলেন, “নাফিস যদি বাঙ্গালি হয়েও থাকে, তবে সেটি বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা। বাংলাদেশের মানুষ এবং সরকার কখনোই সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাসী নয়।”
এদিকে নাফিসের গ্রেফতারের ঘটনায় নতুন করে অস্বস্তিতে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিরা। বুধবার ম্যানহাটানে নাফিস গ্রেফতার হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে এটিই সবচেয়ে আলোচিত খবর হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের নাম উঠে আসায় নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয় প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে।
এ ঘটনায় মার্কিন কংগ্রেসের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কমিটির চেয়ারম্যান পিটার কিং স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, “কাজী নাফিস গ্রেফতার হওয়ার ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হলো যে আর্ন্তজাতিক সন্ত্রাসী চক্র এখনও যুক্তরাষ্ট্রে মারাত্মক আঘাত হানার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।”


কুয়েতের আমিরের সঙ্গে- বৈঠক জনশক্তি নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিন : রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে বাংলাদেশ থেকে অধিক সংখ্যক দক্ষ ও আধাদক্ষ জনশক্তি আমদানি করতে কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কুয়েতে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এশীয় সহযোগিতা সংলাপ (এসিডি)-এর পাশাপাশি কুয়েতের আমিরের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক দক্ষ ও আধাদক্ষ জনশক্তি রয়েছে। তিনি বলেন, কুয়েত তাদের ক্রমবর্ধমান আইটি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট সেক্টরের জন্য এসব জনশক্তি নিতে পারে। এশিয়ার সর্ববৃহত্ ফোরাম এসিডি’র দু’দিনব্যাপী সম্মেলন গত মঙ্গলবার এখানে শুরু হয়। এশিয়ার পূর্ব থেকে পশ্চিমের ৩২টি দেশ এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছে।
বৈঠকে রাষ্ট্রপতি আগামী বছরের ২৬ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য কুয়েতের আমিরকে আমন্ত্রণ জানান। আমন্ত্রণ জানানোর জন্য কুয়েতের আমির রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। রাষ্ট্রপতি রহমান বাংলাদেশে, বিশেষ করে তেল শোধনাগারে কুয়েতি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য আমিরের প্রতি আহ্বান জানান। তেল ক্রয়ে বাংলাদেশকে কুয়েতের প্রধান উত্স হিসেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি তেলের দাম পরিশোধে বর্তমানের ত্রৈমাসিক সময় আরও বাড়াতে কুয়েতের আমিরের প্রতি অনুরোধ জানান। রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ থেকে বিশ্বমানের তৈরি পোশাক এবং ওষুধ আমদানি করতে কুয়েতের প্রতি আহবান জানান। রাষ্ট্রপতি বলেন, কুয়েতের সঙ্গে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারে আগ্রহী।
রাষ্ট্রপতি রহমান প্রথমবারের মতো এসিডি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করায় আমিরকে অভিনন্দন জানান এবং এই সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আমিরকে ধন্যবাদ জানান। কুয়েতের আমির তার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে এই সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে ধন্যবাদ জানান এবং দুটি দেশের মধ্যকার চমত্কার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
আমির ১৯৯০ সালে ইরাকি আগ্রাসনের সময় কুয়েতকে সমর্থন দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি ১৯৯০ সালের পর থেকে সেখানে কর্মরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকারও প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ শাহেদ রেজা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।


শিরোচ্ছেদ থেকে রক্ষা পেলো ৩ বাংলাদেশী



altমানিকগঞ্জের মহিদুল হত্যা মামলায় শিরোচ্ছেদ দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত তিনজন কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশী শিরোচ্ছেদ থেকে রক্ষা পেল।
তাদের ৩ জনকে ১৫ বছর করে জেল দিয়েছে সেখানকার আদালত।  মহিদুলের পরিবার ২১ লাখ টাকার বিনিময়ে ওই তিনজনকে ক্ষমা করে দেয়ায় তারা শিরোচ্ছেদ থেকে রক্ষা পেয়েছেন।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর উপ-পরিচালক খান মো. রেজাউল করিমের একটি পত্র নিহত মহিদুলের পরিবার ও জেলা প্রশাসনের কাছে আসার পর এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
মহিদুলের পরিবারের ক্ষমাপত্র এবং ব্লাড মানি গ্রহনের বিষয়টি কুয়েতের আদালতে বিবেচনায় এনে শিরোচ্ছেদ দন্ডপ্রাপ্ত মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ইকবাল ঢালী (২৫) ও তার ভাই হৃদয় ঢালী (২৩) এবং কুমিল্লা জেলার হোমনা এলাকার রমজান আলীর মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করে একেকজনকে ১৫ বছরের জেল দেয়।
মহিদুলের ভাই হাবিবুর রহমান জানান, আমরা ঐ তিন খুনীকে ক্ষমা করে দিয়ে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মাধ্যমে একটি ক্ষমা পত্র কুয়েতে পাঠিয়েছিলাম। সেখান থেকে কয়েকদিন আগে আমার পরিবারের কাছে একটি চিঠি আসে।
চিঠিতে লেখা রয়েছে শিরোচ্ছেদ দন্ডাপ্রাপ্ত তিন খুনিকে ১৫ বছর করে জেল দিয়েছে কুয়েতের আদালত।
চিঠি হাতে পেয়েই  মহিদুলের মেয়ে রাজমিন, ভাই চান মিয়া,রাজা মিয়া,বোন হনুফা বেগম,মালেকা বেগম ও জাহানারা বেগম মিলে  সিংগাইর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করি।
আগামী শনিবার কিংবা রবিরার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আমাদের পরিবারকে নিয়ে বসার কথা রয়েছে বলে তিনি জানান।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান হান্নান জানান, কুয়েতে নিহত মহিদুলের পরিবারের দেওয়া ক্ষমা পত্র কুয়েতের আদালত গ্রহন করে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তদের ১৫ বছর করে জেল দিয়েছে সেটা আমরা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর একটি পত্রের মাধ্যমে জেনেছি।
আসামীদের পক্ষের রাখা ২১ লাখ টাকা আমাদের ব্যাংক একউন্টে জমা রাখা আছে। মহিদুলের পরিবারের ওয়ারিশও ঠিক করা হয়েছে।
আগামী  রোববার তাদের মাঝে ২১ লাখ টাকা হস্তান্তর করা হবে।
সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা জানান,জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরো থেকে একটি চিঠি এসেছে। তবে এখানো আমার  কার্যালয়ে ঔ চিঠি না আসলে আমরা জেনেছি। আশা করছি  মহিদুলের প্রকৃত ওয়ারিশগনের মাঝে আগামী রবিবার  ২১ লাখ টাকা ভাগ ভাগ করে দেয়া হবে।
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার পুর্ব বান্দাইল গ্রামের তাহের আলীর ছেলে মহিদুল (৪৫) ২০১০ সালে চাকুরী নিয়ে কুয়েতে যায়।
এর পর সেখানেই খুন হন তিনি। খুনের ঘটনায় মহিদুলের দ্বীতিয় স্ত্রী কুয়েত প্রবাসী আনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে সে দেশের আদালতে ইকবাল ঢালী, হৃদয় ঢালী  ও রমজান আলীর বিরুদ্ধে মামলা করে।
মহিদুল হত্যার দায়ে ঔ তিন প্রবাসী বাংলাদেশীকে  কুয়েতের আদালত শিরোচ্ছে দন্ডাপ্রাপ্ত রায় দেয়।
কুয়েতের আইন অনুযায়ী কেবল নিহতের পরিবার ক্ষমা করলেই সেখানকার আদালত দন্ড মওকুফ বা সাজা লাঘব করতে পারে।
রায়ের পর থেকে দন্ডাদেশ প্রাপ্ত  পরিবারের পক্ষ থেকে মহিদুলের পরিবারের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চেয়ে আসছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে  কুমিল্লা, মুন্সিগঞ্জ ও মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতায় দুই পক্ষকে নিয়ে কয়েক দফা আলোচলা হয়।
শেষ পর্যন্ত ২১ লাখ টাকার বিনিময়ে চলতি বছর ৩০ জানুয়ারী মহিদুলের পরিবারের পক্ষ থেকে ক্ষমা করে দেয় এবং ক্ষমা পত্রে স্বাক্ষর করে।
ক্ষমা পত্রে স্বাক্ষর করেন,নিহত মহিদুলের মেয়ে রাজমিন, ছেলে মজিবুর রহমান, নিহতের ভাই চান মিয়া, হানিবুর রহমান ও রাজা মিয়া।
আসামী পক্ষের লোকজন ক্ষমা বাবদ ২১ লাখ টাকা বুঝিয়ে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমনের হান্নানের যৌথ ব্যাংক একাউন্টে।
চুক্তি অনুযায়ী কুয়েতের আদালত যদি আসামীদের শিরোচ্ছেদ মওকুফ করে দেয় তবেই ঐটাকা নিহত মহিদুলের পরিবারের কাছে দেয়া হবে।

পাসপোর্ট জটিলতায় লক্ষাধিক দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসীর চরম ভোগান্তি

দক্ষিণ আফ্রিকায় পাসপোর্ট জটিলতায় বিপাকে রয়েছেন বৈধ-অবৈধ লক্ষাধিক প্রবাসী বাংলাদেশী। বিশেষ করে দালালদের মাধ্যমে অবৈধ পথে যারা দক্ষিণ আফ্রিকায় গেছেন তাদের ভোগান্তি চরমে। কারণ এ দেশ-সে দেশ ঘুরে দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত পৌঁছলেও দালালরা নানা অজুহাতে তাদের পাসপোর্টসহ অন্য কাগজপত্র বুঝিয়ে না দিয়ে সটকে পড়ে। এই অবৈধ প্রবাসীরা দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের দূতাবাসে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলেও সঠিক সময়ে তা পান না; শিকার হন নানা হয়রানির। থাকেন যে কোনো সময় গ্রেফতার হওয়ার আতঙ্গে। যারা বৈধভাবে আছেন তারাও মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের আবেদন করে একই ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভুক্তভোগী অনেকের সঙ্গে কথা বলে সহযোগী দৈনিকের এক বিস্তারিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, পাসপোর্টবিহীন বাংলাদেশীদের জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট যাচাই ও পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করতে এক বছরের বেশি সময় অপেক্ষায় থাকতে হয়। পাসপোর্ট পেতে এই দীর্ঘসূত্রতার কারণে তাদের বৈধ হওয়ার বা কর্মস্থলে অনুমোদন পাওয়ার সময় পেরিয়ে যায়। তাদের কারও কারও ঠাঁই হয় দক্ষিণ আফ্রিকার কারাগারে। অনেকে গ্রেফতারের আতঙ্কে ঘর থেকে বের হতে পারেন না। এতে নিয়োগদাতার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায় অনেকের।
এক ভুক্তভোগী জানান, দালালদের মাধ্যমে ছয় লাখ টাকা খরচ করে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে এক বছর ধরে সেখানকার পোলকওয়ান শহরের একটি মোবাইল ফোনের দোকানে কাজ করছেন তিনি। ‘অনেক কষ্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে পাসপোর্ট না থাকায় বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। সাত মাস হয়ে গেলেও দূতাবাস থেকে পাসপোর্ট পাচ্ছেন না। পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট নাকি এখন আসেনি।’
আরেক প্রবাসী বাংলাদেশী জানান, তার কোনো বৈধ কাগজপত্র কিংবা পাসপোর্ট নেই। দোকান মালিক কড়া ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, পাসপোর্ট না হলে বেশি দিন কাজে রাখা হবে না। সুমন বলেন, ‘পাসপোর্ট না পেলে কাজ করা সমস্যা। কেউ কাজ নিতে চায় না। পাসপোর্টের জন্য গেলে দূতাবাসের লোকজন পাত্তা দিতে চায় না।’ প্রবাসীদের অভিযোগ, দূতাবাসের কিছু লোক দালালদের মাধ্যমে অভিবাসীদের হয়রানি করছে। চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিলে পাসপোর্ট দ্রুত পাওয়া যায়। আবার টাকা না দিলে মাসের পর মাস ঘোরানো হয়। তাদের মতে, পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট অনলাইনে আনা হলে পাসপোর্ট পেতে সময় কম লাগত। ঢাকার কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর এলাকার দবিরউদ্দিন খানের ছেলে সুমন খান দুই বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকায় আছেন। অবৈধ পথে দক্ষিণ আফ্রিকায় নিয়ে যাওয়ার সময় পাসপোর্ট রেখে দেয় দালালরা। সে থেকে পাসপোর্ট ছাড়াই লুকিয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘দূতাবাসে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু ছয় মাস হয়ে গেল, এখনও পাসপোর্ট পাইনি। দূতাবাস কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনের কাগজ আসেনি বলে পাসপোর্ট দিতে দেরি হচ্ছে।’
রিপোর্টে জানানো হয়, দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীদের বেশিরভাগেরই পাসপোর্ট নেই। বৈধ পথে যাওয়া বাংলাদেশী কর্মীর চেয়ে অবৈধ প্রবাসীর সংখ্যাই বেশি। যাদের পাসপোর্ট আছে তাদেরও বেশিরভাগের পাসপোর্ট হাতে লেখা। সরকারিভাবে দক্ষিণ আফ্রিকায় কর্মী নেয়া হয় খুবই কম, তাই বৈধ প্রবাসীর সংখ্যা সেখানে তেমন বেশি নয়। বেশিরভাগ প্রবাসী দালালদের মাধ্যমে চোরাই পথে গেছেন। সমুদ্রপথে বা পাশের দেশের সীমান্ত দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করেছেন তারা। চোরাই পথে যাওয়ার সময় তাদের পাসপোর্ট জমা রাখতে হয় দালালদের কাছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছার পর পাসপোর্ট ফেরত না দিয়ে তাদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে না পারায় অনেক পাসপোর্ট নষ্ট করে ফেলে দালালরা। এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রবাসীদের সমস্যার কথা যেখানেই শুনি, সেখানেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিই। দক্ষিণ আফ্রিকায় পাসপোর্টের কারণে কোনো সমস্যা থাকলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

রাষ্ট্রদূত কি জেগে থেকেও ঘুমিয়ে আছেন!
















আমি কলামিস্ট নই, সাংবাদিকও নই। তাই আমার লেখার হাত তাদের মত নয়। তবে একজন আমজনতা হিসেবে সমাজের চারিদিকে যা ঘটে যায় তাই নিয়ে লিখি হয়ত কোন প্রতিকার হয় না তবুও নিজের মনকে সান্ত্বনা দেই যে আমি তো সবাইকে জানানোর চেষ্টা করেছি।
আর সেকারণেই আজ আবার লিখতে বসলাম, গতকাল লিখেছিলাম কিন্তু তখন পর্যন্ত মহামান্য রাষ্ট্রদূত সাহেবের লেখাটুকু ইনকিলাবে পড়া হয়নি তাই আবার লিখতে বসলাম। যখন লিখছি তখন আরব আমিরাতে বাংলাদেশীদের জন্যে সকল প্রকার ভিসা বন্ধের ঘোষণা এসেছে, আর অমাদের মান্যবর রাষ্ট্রদূত সাহেব ইনকিলাবকে বলেছেন তার কাছে সেরকম কোন খবর নেই এ সব কিছুই নাকি মিডিয়ার সৃষ্টি। মহামান্য রাষ্ট্রদূত সাহেবের নিকট প্রশ্ন আপনি কি জেগে থেকেও ঘুমিয়ে আছেন নাকি ঘুমিয়ে থাকার ভান করছেন।
যে সকল দোহাই দিয়ে আরব আমিরাত সরকার আমাদের ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে এগুলো সত্য। কিন্তু এ অপরাধগুলোর পেছনে যে সবকারণ লুকায়িত রয়েছে তা অবশ্যই আমাদের স্বীকার করতে হবে। কারণ অপরাধ সংঘটনের কারণগুলো নির্মূল করা গেলে অপরাধের সংখ্যা কমবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
ভিসা বন্ধের ব্যাপারে দুটি প্রধান কারণ উল্লেখ করেছে আরব আমিরাত সরকার, একটি দেহব্যবসা অন্যটি জাল পাসপোর্ট অথবা জাল কাগজপত্র তৈরি করে ভিসা প্রদান।
আমাদের কাছে পাকা খবর, দেহব্যবসায় এদেশে সবচেয়ে বেশি জড়িত ভারতীয়,পাকিস্তানী, ফিলিপিনো, চাইনিজ মেয়েরা এবং এই ব্যবসার পরিচালক পর্যায়ে রয়েছে আমীরাতি, ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানীরা। কিন্তু ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানীদের ভিসাতো বন্ধ হয় না! তবে বাংলাদেশীদের উপর কেন এমন খড়গ নেমে আসবে! এখানে ভারতীয়, পাকিস্তানী কিংবা আমীরাতিদের কূটচালে মার খেয়ে যায় বাংলাদেশিরা। ওই সব দেশের লোকেরা ব্যবসা পরিচালনার মূল হোতা হলেও শ্রেফ নিয়োগের মাধ্য সামনে এগিয়ে দেয়  বাংলাদেশীদের। যাদের এ কাজ করা ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকেনা।
যখন সে ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পরিশোধের পথ পায়না, যখন বাড়িতে বাবা-মা না খেয়ে থাকেন, যখন টাকার অভাবে বোনের বিয়ে হয়না, যখন নববিবাহিতা স্ত্রী চলে যায়, যখন কফিল আকামা আটকিয়ে রেখে জোড় পূর্বক  কাজ করানো হয়, যখন দূতাবাসে গিয়ে কোন প্রকার সহযোগিতা মেলেনা, তখন ভালো মন্দ হিতাহিত জ্ঞান সে ভুলে যে কোনো কাজে প্রস্তুত হয়ে যায় বাংলাদেশি যুবকরা। তখন নিজেদের অজান্তেই সে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। যেখানে ভারত, নেপাল, শ্রীলংকার নাগরিকদের আরব আমিরাতে আসতে  ৫০ হাজার টাকা খরচ হয় সেখানে বাংলাদেশ দূতাবাসের অদক্ষতা সরকারের উদাসীনতা এবং কর্মীদের অজ্ঞতার কারণে খরচ করতে হয় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। শুধুই সরকারের উদাসীনতা বললে ভুল হবে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অতি মুনাফার চিন্তা ভিসার দাম আকাশচুম্বী করে দেয় এছাড়াও জনসংখ্যার ক্রমাগত চাপ বাংলাদেশে বেকারত্বের প্রকট সমস্যা ও ভিসার দামে প্রভাব ফেলে।
আরও একটি অন্যতম কারণ হল আমরা যারা এখানে বসবাস করি তাদের কোন না কোন আত্মীয় সব সময়ই বিদেশে পাড়ি জমানোর তাগাদা দিতে থাকে আর এ তাগাদা থেকেই দাম যাই হোক ভিসার একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। যেহেতু একটি ভিসা বেরোলে তার ওপর নজর পড়ে একাধিক বাংলাদেশি ভাইয়ের সুযোগ বুঝে ভিসা প্রদানকারী কোম্পানি/ব্যক্তিটিও ভিসাকে নিলামে তুলে দেয়।

জাল পাসপোর্ট দিয়ে আরব আমিরাতে ভ্রমণ তথা জাল ডকুমেন্ট তৈরি করে ভিসা ইস্যু করিয়ে নেওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে আমি খুব বেশিদিন ধরে অবগত নেই, মাস ছয়েক আগে আমার পরিচিত এক ভদ্রলোক একটি ভিসা দেখিয়ে আমাকে অনলাইনে চেক করতে বললেন। চেক করে কোথাও কিছু পেলাম না। বুঝলাম পুরোটাই দুই নম্বর। কিন্তু কিভাবে সম্ভব দুই নম্বর কাগজপত্র তৈরি করে আরব আমিরাতে আসা? আমাদের দূতাবাসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে যোগসাজশ অথবা ইমিগ্রেশণ পুলিশের যোগসাজশ ছাড়া এটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। আরও একটি বিষয় হল, সাধারণত সাধারণ শ্রেণীর কেউ এ ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম।
আমরা প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের জন্যে সোনার ডিম পাড়া  হাঁস এসকল হাঁসের বাচ্চাদের বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সরকারের। অথচ আমাদের ব্যাপারে সরকারের কোন মাথা ব্যথা নেই। সরকার শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবাসী রেমিট্যান্স কত ডলার জমা আছে সেই হিসেব কষতেই সময় কাটায় আর তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে।

প্রবাসীদের কষ্টার্জিত টাকায় চলে বাংলাদেশের দূতাবাস গুলো তথাপিও দূতাবাসের স্যুটেড ব্যুটেড সাহেবেরা সেই প্রবাসীদের সহিত প্রভূসুলভ আচরণ করে! প্রতি ১ পাতা ফটোকপিতে দিতে হয় এক দিরহাম। প্রশ্ন একটাই এই এক দিরহাম যাচ্ছে কোন খাতায়? আসুন মহামান্য স্যুটেড বুট্যেড সাহেবেরা সাহেবি ভুলে ৯-৫টা অফিস টাইম ভুলে প্রবাসীদের উন্নয়নে কাজ করি। জ্ঞান দিচ্ছি না আবার আদেশ ও করছিনা, কারণ দুটোর কোনটা করার যোগ্যতাই আমার নেই শুধু অনুরোধ করছি।
কাকুতি মিনতি করে দূতাবাসের সম্মানিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের অনুরোধ করছি নিজ স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে আমাদের জন্যে কিছু একটা করুন।
শাহরীয়ার আহম্মেদ অক্ষর
আবুধাবী, আরব আমীরাত

প্রবাসে শিশু বিকাশে বাংলাভাষা ও সংস্কৃতি



সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি, বাঙলা আমাদের মাতৃভাষা। সাত সমুদ্র তেরো নদী পেড়িয়ে পৃথিবীর অপর প্রান্তে এসেও সেই কৃষ্টি আর সংস্কৃতিকে আমরা কখনো ভুলে যাইনি- কারণ আমাদের মনের গভীরে আজও সেই চিরসবুজ শান্তির সুনিবিড় শেকড়টি গাঁথা রয়েছে- আর তার কারণ, মনে প্রাণে আজও আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি, দুধে-ভাতে বাঙালি।
তাই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের সবার প্রিয় সবুজ বাংলার মাটিতে যেমন করে সূর্য লাল টুকটুকে আগুন ছড়ায় ঠিক তেমনি করে প্রবাসের মাটিতেও সূর্য ঐ একই রং ছড়ায় আর সেই রংয়ের আবেশে বাতাসে বয়ে যায় সূরের মূর্ছনা, কারণ বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে সংগীত আর সংস্কৃতি চর্চা শুধু মনের ক্ষুধাই মিটায় না এর মাধ্যমে খুঁজে পাই সাধারণ মানুষের জীবনচিত্র, তার সাথে খুঁজে পাই সব ধর্মের মর্মকথা । আমরা যখন বাংলা গানগুলো শুনি তখন প্রত্যেকটি অর্থ আমরা আলাদাভাবে বুঝতে পারি, সুতরাং আমরা যদি আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ছোট্ট শিশুদের মনে বাংলা সংস্কৃতির ছোট্ট রেখাবিন্দু গেঁথে দিতে পারি তাহলে তাদের মনেও একদিন আমাদের মত করেই কাঁদবে দেশ ও মাটির মমতাই- কারণ আজকের শিশু আমাদের আগামী দিনের উজ্জ্বল ভবিষ্যত।

আমাদের বাঙালিদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি, বর্ণমালা, নিজস্ব ষড়ঋতু, নিজস্ব নববর্ষ, গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা। আমরা জানি প্রত্যেকটি দেশেরই তাদের নিজস্ব জাতীয় প্রতীক থাকে ঠিক তেমনি বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই- আছে জাতীয় কবি, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতি সৌধ, আছে জাতীয় ফল কাঁঠাল, জাতীয় বৃক্ষ আমগাছ, আছে জাতীয় ফুল শাপলা, জাতীয় মাছ ইলিশ। আর যখন জাতীয় পাখির কথা আসে তখন দোয়েল-এর নামটা মনে এলেই মনটা ভরে যায় এই ভেবে যে পাখিটা ছোট্ট হলে কী হবে- সে কিন্তু সোনার বাংলাকে গর্বিত করেছে তার সুরের মূর্ছনায়। এই সাধারণ কয়েকটা প্রতীকই কিন্তু একটি শিশুর মনকে অনেক

অসাধারণভাবে প্রভাবিত করতে পারে। আর মা বাবা হিসেবে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে কখন কীভাবে এই ছোট্ট ছোট্ট চিত্রগুলো ওদের সামনে তুলে ধরতে হবে। এক সময় আমরা যেমন করে আমাদের মাতৃভূমিতে মা-বাবার হাত ধরে চলতে শিখেছি, ভালো-মন্দের ব্যবধান বুঝতে শিখেছি ঠিক তেমনি করে প্রবাসী জীবনেও আমরা সবাই মিলে কেন্দ্রীভূত হয়ে শিশু বিকাশের আত্মপ্রত্যয়ে সহযোগিতা করতে পারি।
সাংস্কৃতিক সংস্থা ‘ঝংকার’ আশাবাদী যে একদিন এই ছোট্ট ছোট্ট শিশু শিল্পীর আত্মপ্রত্যয় আকৃষ্ট করবে যুক্তরাষ্ট্র তথা ক্যানেটিকাটের সকল বাঙালি শ্রোতাদের, তাদের সাংস্কৃতিক প্রতিভা, নাচ, গানের তালের মূর্ছনায় কখনো মনের আনন্দে আবার কখনো বেদনায় জড়িয়ে মন চাইবে হারিয়ে যেতে সেই দিন গুলোতে যেদিনগুলো অনেক আগেই আমরা পিছনে ফেলে চলে এসেছি।
তাই আজ আমার বিশেষ অনুরোধ যুক্তরাষ্ট্র তথা ক্যানেটিকাটের সকল মা-বাবার কাছে আসুন আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করি যেন এই প্রবাসে প্রতিটি ঘরে ঘরে বাংলা ভাষা আর সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি তুলে ধরতে পারি বাঙালি ঐতিহ্যকে- তাহলে আমরা মনের তৃপ্তি নিয়ে বলতে পাবরো প্রবাসী জীবন যাপন করলেও আমরা আমাদের দেশ, দেশের মাটি আর দেশপ্রেমকে একটু হলেও ভবিষ্যতের চাবিকাঠি যাদের হাতে আছে- তাদের মনে অনুপ্রবেশ করতে পেরেছি।

ইতালিতে বাংলাদেশী জাল পাসপোর্ট বাণিজ্যের অভিযোগ
ইতালিতে বাংলাদেশী অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ করে দেয়ার নাম করে পাসপোর্ট বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে| এতে ব্যাপক হারে হয়রানির শিকার হচ্ছে ভেতরে অবস্থিত অবৈধ বাংলাদেশীরা| বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বাংলাদেশী নাগরিকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে একটি ক্ষমতাশীন মহল অবৈধভাবে পাসপোর্ট বাণিজ্য করে বেড়াচ্ছে| নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইতালির ভেনিস শহরে কর্মরত একজন বাংলাদেশী এম লোকমান হোসেনের বাসা থেকে ৭০০ ইউরোর বিনিময়ে পুরাতন তারিখে ইস্যুকৃত পাসপোর্ট গ্রহণ করেন| ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর রোমসহ ইতালির বিভিন্ন শহরে অবৈধ অভিবাসীদের মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি হয়|

এ বিষয়ে ইতালিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর সৈয়দ মঈনুল হাসানের কাছে ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা জানি যে, একটি কুচক্রী মহল আমাদের স্বাক্ষর এবং সিল জাল করে এ অসৎ কাজ করে যাচ্ছে| এ ব্যাপারে দূতাবাস কোনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি ব্যাপারটা এড়িয়ে যান| এদিকে ইতালি সরকার ঘোষিত অবৈধদেরকে বৈধ করে নিতে যে সুযোগ দিয়েছে তা গ্রহণ করার জন্য অবৈধ বাংলাদেশীরা দূতাবাস থেকে কোনো প্রকার সহযোগিতা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে| অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলো ঃ আলী হোসেন, আবুল হোসেন, বাবলুসহ আরও অনেকে|

উল্লেখ্য, ইতালিতে কাতার থেকে আগত নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত শাহাদাত হোসেনকে ইতালির রাষ্ট্রপতি এখনো পরিচয়পত্র না দেয়ার কারণে অফিসিয়াল কর্মকাণ্ড ধীর গতিতে চলছে বলে জানা গেছে| অন্যদিকে ইতালি প্রবাসীদের প্রাণের দাবি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দূতাবাসের নানা সমস্যা সঠিকভাবে তদন্ত করে সহসাই যেনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়|


আমিরাতে ভিসা বন্ধে দূতাবাসের উদাসীনতা দায়ী নয় কি?


 সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) বসবাস করছি গত প্রায় চারটি বছর ধরে। এখানকার সব আইন সম্পর্কে অবগত না হলেও বেশ কিছু নিয়মকানুনের ব্যাপারে অবগত আছি।

গত প্রায় আট মাস ধরে ক্রমাগত একটার পর একটা লেখা পাঠিয়েছি  লেখায় বারবার উল্লেখ করেছি যে, ভিসা বন্ধ হতে পারে বাংলাদেশিদের জন্য, অবশেষে গত ঈদুল ফিতরের সময় থেকে আনঅফিসিয়ালি ভিসা ইস্যু বন্ধ ছিল। কিন্তু গত ৪ অক্টোবর অফিসিয়ালি ঘোষণা আসে ভিসা বন্ধের।

আরব আমিরাত সরকার ‍বাংলাদেশের সরকারকে ঈদুল ফিতর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে দিয়েছিল। এসময়ের মধ্যে আমিরাতের সরকার আশা করেছিল, আমাদের দেশের সরকারি পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার জন্য প্রস্তাব আসবে। কিন্তু প্রস্তাব আসেনি, আমাদের দূতাবাসের মহামান্য অধিকর্তারা অন্ধকারেই রেখেছেন সরকারের কর্তাব্যক্তিদের। আর ভিসা বন্ধের খবরটি এখানকার মিডিয়াতে এমন ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছে যে, তা প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নেই।

অফিসিয়াল ঘোষণা আসার পরে পুরো কমিউনিটিতে এক প্রকার আতংক বিরাজ করছে। এ দেশের সরকার যে সব কারণ দেখিয়ে ভিসা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে, সে সব অপরাধের সঙ্গে যে শুধুমাত্র বাংলাদেশিরা জড়িত বিষয়টা এমন নয়--এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে হাজারগুণ বেশি জড়িত ভারতীয় ও পাকিস্তানিরা। কিন্তু তাদের মিডিয়া তাদের দূতাবাস এতটাই শক্তিশালী যে, এসব খবর আরব আমিরাত সরকারের কাছে পৌঁছাতেই পারে না।

আজকাল টকশোতে দেখা যায় প্রবাসীকল্যাণ সচিবকে, আর তার মুখ থেকে একটি কথা শোনা যায়, তা হলো: বাংলাদেশি জনশক্তির পরিমাণ বেশি হয়ে যাওয়াই ভিসা বন্ধের অন্যতম কারণ! প্রবাসীকল্যাণ সচিবের কাছে প্রশ্ন, আপনার কাছে পরিসংখ্যান আছে কি? আরব আমিরাতে সর্বমোট কত লাখ ভারতীয় ও পাকিস্তানি রয়েছে? আরব আমিরাত চেয়ে রেমিট্যান্সের কত শতাংশ বাংলাদেশিরা ট্রান্সফার করে? আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এ ব্যাপারে আমাদের সচিবদের কাছে কোনো তথ্যই নাই। শুধু বলার কথা বলে দিচ্ছেন “আমরা সংখ্যায় বেশি আর সমান্তরাল করার জন্যই ভিসা বন্ধ।”

যদি তার সঙ্গে একমতও হয় যে, আমরা সংখ্যায় বেশি কিন্তু কোন ক্যাটাগরিতে? সমান্তরালেরর প্রশ্ন যখন আসে তখন কেন আমাদের দেশের কর্তব্যক্তিরা তুলে ধরেন না যে, রেমিট্যান্সের দিক দিয়ে তো আমরা ৭৫ শতাংশ পিছিয়ে। আমাদের দূতাবাসে জনবলের অভাব রয়েছে, এ কথা যেমন সত্য তেমনি সমস্যা সমাধানে কোনো প্রকার ব্যবস্থা না নেওয়াও আমাদের দূতাবাস কর্মচারীদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

জানি এ লেখার কোনো প্রতিফলন ঘটবে না দূতাবাস কর্মচারীদের মধ্যে। তবু লিখলাম হয় তো একদিন তাদের ঘুম ভাঙবে, হয়তো একদিন তারা আমাদের জন্য কিছু একটা করবেন, হয় তো একদিন সব সমস্যার সমাধান হবে।

‘আমার পরিবারকে একনজর দেখতে চাই!’


বিষয়টা বলা যায় একেবারেই সম্ভব ছিল না। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অসাধারণ ও মানবিক কর্তব্যবোধ আর একটি এনজিও’র উদ্যোগে শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়।
চতুর্থ মাত্রার ক্যান্সারে আক্রান্ত সিঙ্গাপুর প্রবাসী বাংলাদেশি নির্মাণ শ্রমিক রুহুল আমীনের জীবন প্রদীপ নিভু নিভু বিষয়টি সবাই জানতেন। জেনে গিযেছিলেন তিনি নিজেও। দেশে স্বজনরাও জানতেন। এসময় তিনি তার অন্তিম ইচ্ছার কথা জানালেন, আমি দেশে ফিরতে চাই। পরিবারের সবাইকে দেখতে চাই!
মাস কয়েক আগে শরীর দুর্বল এবং কাশির প্রচণ্ডতায় ক্লিনিকে গেলে সেখান থেকে তাকে হাসপাতালে রেফার করা হয়। ডাক্তার তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপত্র এবং ঔষধ দিয়ে বিদায় করেন।
কিন্তু ঔষধ সেবনের পরও আরোগ্য লাভ না করায় ফের ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে তাকে দ্রুত স্থানীয় তান তক সেন হাসপাতোলে পাঠানো হয়। সেখানে ডাক্তাররা রুহুল আমীনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নিশ্চিত হন তার ফুসফুস, হৃদপিণ্ড এবং যকৃতে পানি জমেছে এবং মরণব্যাধি ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গেই। এছাড়া তার পরিস্থিতি এতোটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে আগামী সাতদিনও আয়ু পাবে কিনা সন্দেহ। তাকে সিঙ্গাপুরের সর্বোন্নত জীবন রক্ষাকারী ব্যবস্থার আওতায় রাখা হয় গত ১৩ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হবার পর থেকেই।
এদিকে, রুহুল আমীনের শেষবারের মত পরিবারের সবাইকে দেখতে চাওয়ার আকুতিতে প্রবাসের সহকর্মী আর হাসপাতালের চিকি‍ৎসক-নার্স সবাই আবেগাপ্লুত হলেন। কিন্তু উপায় কী! তাকে রোগী হিসেবে দেশে পাঠাতে হলেও যে একাধিক টিকিট দরকার। সে অনেক খরচা।
এমতাবস্থায় স্থানীয় ডাক্তারদের পরামর্শক্রমে তাকে দেশে ফেরত পাঠাতে বাংলা পত্রিকা ‘বাংলার কন্ঠ’র পক্ষ থেকে বাংলাদেশ বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার আরিফ উল্লাহ’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মানবিক সহায়তার আশ্বাস প্রদান করে বলেন, হাসপাতাল থেকে যদি ডাক্তাররা  ‘ফিট ফর ফ্লাই’ সার্টিফিকেট প্রদান করেন তবে রুহুল আমীনকে বহন করার জন্য প্রথম শ্রেণির তিন/চারটি সিটের ব্যবস্থা করে দেবেন তিনি। কিন্তু ডাক্তাররা তাকে সে ধরণের কোনো সার্টিফিকেট প্রদান করতে নারাজ। শুধুমাত্র এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করেই তাকে দেশে পাঠানো যেতে পারে-  সাফ জানিয়ে দিলেন ডাক্তাররা। 
রুহুল আমীনের পরিবার এয়ার অ্যাম্বুরেন্সের এতো বিপুল ব্যয়ভার বহন করতে অক্ষম। এসময় ঘটনাচক্রে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশ থেকে ভিআইপি যাত্রী নিয়ে সিঙ্গাপুর আসলে ফেরার পথে শুধুমাত্র ওয়ান ওয়ে’র খরচে তাকে ২৭-০৯-১২ রাত সাড়ে ৮টায় সম্পূর্ণ জীবন রক্ষাকারী সাপোর্ট এবং একটি ছোট মেডিকেল টিমসহ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
পরদিন শুক্রবার বাংলাদেশে স্বজনদের মাঝে উপস্থিত হন রুহুল আমিন। এরপর স্বজন পরিবেষ্টিত অবস্থায় শেষনিঃস্বাস ত্যাগ করেন। অন্তিম আশা পূরণ হয় তার।
প্রসঙ্গত, রুহুল আমীনের চিকিৎসা সেবার সহযোগিতায় সিঙ্গাপুরে শ্রমজীবী অভিবাসীদের জন্য নিবেদিত সংগঠন ‘দিবাশ্রম’র চেয়ারম্যান দেবী ফরডাইস এবং বাংলার কণ্ঠ’র সম্পাদক এ কে এম মোহসীন এগিয়ে আসেন এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করেন। ফলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যয়বহুল ১৫ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার খরচ বহন করেন শ্রমজীবী প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান টিডব্লিওসি টু’র একজন স্বেচ্ছাসেবী মিস মু অং।
এছাড়া রুহুল আমীনের পরিবারের জন্য আরোও ১০০০ সিঙ্গাপুর ডলার সহায়তা প্রদান করেন তিনি।
অসুস্থকালীন রুহুল আমীনের করুণ অবস্থার কথা জানিয়ে বাংলার কণ্ঠ’র পক্ষ থেকে বাংলাদেশ হাই কমিশনারের একান্ত সহকারীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
এছাড়াও রুহুল আমীনের নিকটাত্মীয় এবং স্থানীয় স্বেচ্ছা চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হেলথ সার্ভ’র পক্ষ থেকে হাই কমিশনের শ্রম কাউন্সিলরকে ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করা হয়।
বাংলাদেশে রুহুল আমীনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান মাইগ্রেন্ট স্যাঙ্কচুয়ারি ফাউন্ডেশন (মিসাফ) বাংলাদেশ জানায়, জনশক্তি রফতানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বাংলাদেশ’র সহকারী পরিচালক জাহেদ হোসেন বিমানবন্দর থেকে রুহুল আমীনের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেয়ার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেন।
বিষয়টি সিঙ্গাপুরের পত্র-পত্রিকায় ব্যাপক প্রচার পায়।
প্রবাসে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং






কলামিস্ট নই, সাংবাদিকও নই। তাই আমার লেখার হাত তাদের মত নয়। তবে একজন আমজনতা হিসেবে সমাজের চারিদিকে যা ঘটে যায় তাই নিয়ে লিখি হয়ত কোন প্রতিকার হয় না তবুও নিজের মনকে সান্ত্বনা দেই যে আমি তো সবাইকে জানানোর চেষ্টা করেছি।
আর সেকারণেই আজ আবার লিখতে বসলাম, গতকাল লিখেছিলাম কিন্তু তখন পর্যন্ত মহামান্য রাষ্ট্রদূত সাহেবের লেখাটুকু ইনকিলাবে পড়া হয়নি তাই আবার লিখতে বসলাম। যখন লিখছি তখন আরব আমিরাতে বাংলাদেশীদের জন্যে সকল প্রকার ভিসা বন্ধের ঘোষণা এসেছে, আর অমাদের মান্যবর রাষ্ট্রদূত সাহেব ইনকিলাবকে বলেছেন তার কাছে সেরকম কোন খবর নেই এ সব কিছুই নাকি মিডিয়ার সৃষ্টি। মহামান্য রাষ্ট্রদূত সাহেবের নিকট প্রশ্ন আপনি কি জেগে থেকেও ঘুমিয়ে আছেন নাকি ঘুমিয়ে থাকার ভান করছেন।
যে সকল দোহাই দিয়ে আরব আমিরাত সরকার আমাদের ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে এগুলো সত্য। কিন্তু এ অপরাধগুলোর পেছনে যে সবকারণ লুকায়িত রয়েছে তা অবশ্যই আমাদের স্বীকার করতে হবে। কারণ অপরাধ সংঘটনের কারণগুলো নির্মূল করা গেলে অপরাধের সংখ্যা কমবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
ভিসা বন্ধের ব্যাপারে দুটি প্রধান কারণ উল্লেখ করেছে আরব আমিরাত সরকার, একটি দেহব্যবসা অন্যটি জাল পাসপোর্ট অথবা জাল কাগজপত্র তৈরি করে ভিসা প্রদান।
আমাদের কাছে পাকা খবর, দেহব্যবসায় এদেশে সবচেয়ে বেশি জড়িত ভারতীয়,পাকিস্তানী, ফিলিপিনো, চাইনিজ মেয়েরা এবং এই ব্যবসার পরিচালক পর্যায়ে রয়েছে আমীরাতি, ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানীরা। কিন্তু ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানীদের ভিসাতো বন্ধ হয় না! তবে বাংলাদেশীদের উপর কেন এমন খড়গ নেমে আসবে! এখানে ভারতীয়, পাকিস্তানী কিংবা আমীরাতিদের কূটচালে মার খেয়ে যায় বাংলাদেশিরা। ওই সব দেশের লোকেরা ব্যবসা পরিচালনার মূল হোতা হলেও শ্রেফ নিয়োগের মাধ্য সামনে এগিয়ে দেয়  বাংলাদেশীদের। যাদের এ কাজ করা ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকেনা।
যখন সে ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পরিশোধের পথ পায়না, যখন বাড়িতে বাবা-মা না খেয়ে থাকেন, যখন টাকার অভাবে বোনের বিয়ে হয়না, যখন নববিবাহিতা স্ত্রী চলে যায়, যখন কফিল আকামা আটকিয়ে রেখে জোড় পূর্বক  কাজ করানো হয়, যখন দূতাবাসে গিয়ে কোন প্রকার সহযোগিতা মেলেনা, তখন ভালো মন্দ হিতাহিত জ্ঞান সে ভুলে যে কোনো কাজে প্রস্তুত হয়ে যায় বাংলাদেশি যুবকরা। তখন নিজেদের অজান্তেই সে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। যেখানে ভারত, নেপাল, শ্রীলংকার নাগরিকদের আরব আমিরাতে আসতে  ৫০ হাজার টাকা খরচ হয় সেখানে বাংলাদেশ দূতাবাসের অদক্ষতা সরকারের উদাসীনতা এবং কর্মীদের অজ্ঞতার কারণে খরচ করতে হয় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। শুধুই সরকারের উদাসীনতা বললে ভুল হবে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অতি মুনাফার চিন্তা ভিসার দাম আকাশচুম্বী করে দেয় এছাড়াও জনসংখ্যার ক্রমাগত চাপ বাংলাদেশে বেকারত্বের প্রকট সমস্যা ও ভিসার দামে প্রভাব ফেলে।
আরও একটি অন্যতম কারণ হল আমরা যারা এখানে বসবাস করি তাদের কোন না কোন আত্মীয় সব সময়ই বিদেশে পাড়ি জমানোর তাগাদা দিতে থাকে আর এ তাগাদা থেকেই দাম যাই হোক ভিসার একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। যেহেতু একটি ভিসা বেরোলে তার ওপর নজর পড়ে একাধিক বাংলাদেশি ভাইয়ের সুযোগ বুঝে ভিসা প্রদানকারী কোম্পানি/ব্যক্তিটিও ভিসাকে নিলামে তুলে দেয়।

জাল পাসপোর্ট দিয়ে আরব আমিরাতে ভ্রমণ তথা জাল ডকুমেন্ট তৈরি করে ভিসা ইস্যু করিয়ে নেওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে আমি খুব বেশিদিন ধরে অবগত নেই, মাস ছয়েক আগে আমার পরিচিত এক ভদ্রলোক একটি ভিসা দেখিয়ে আমাকে অনলাইনে চেক করতে বললেন। চেক করে কোথাও কিছু পেলাম না। বুঝলাম পুরোটাই দুই নম্বর। কিন্তু কিভাবে সম্ভব দুই নম্বর কাগজপত্র তৈরি করে আরব আমিরাতে আসা? আমাদের দূতাবাসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে যোগসাজশ অথবা ইমিগ্রেশণ পুলিশের যোগসাজশ ছাড়া এটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। আরও একটি বিষয় হল, সাধারণত সাধারণ শ্রেণীর কেউ এ ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম।
আমরা প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের জন্যে সোনার ডিম পাড়া  হাঁস এসকল হাঁসের বাচ্চাদের বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সরকারের। অথচ আমাদের ব্যাপারে সরকারের কোন মাথা ব্যথা নেই। সরকার শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবাসী রেমিট্যান্স কত ডলার জমা আছে সেই হিসেব কষতেই সময় কাটায় আর তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে।

প্রবাসীদের কষ্টার্জিত টাকায় চলে বাংলাদেশের দূতাবাস গুলো তথাপিও দূতাবাসের স্যুটেড ব্যুটেড সাহেবেরা সেই প্রবাসীদের সহিত প্রভূসুলভ আচরণ করে! প্রতি ১ পাতা ফটোকপিতে দিতে হয় এক দিরহাম। প্রশ্ন একটাই এই এক দিরহাম যাচ্ছে কোন খাতায়? আসুন মহামান্য স্যুটেড বুট্যেড সাহেবেরা সাহেবি ভুলে ৯-৫টা অফিস টাইম ভুলে প্রবাসীদের উন্নয়নে কাজ করি। জ্ঞান দিচ্ছি না আবার আদেশ ও করছিনা, কারণ দুটোর কোনটা করার যোগ্যতাই আমার নেই শুধু অনুরোধ করছি।
কাকুতি মিনতি করে দূতাবাসের সম্মানিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের অনুরোধ করছি নিজ স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে আমাদের জন্যে কিছু একটা করুন।
শাহরীয়ার আহম্মেদ অক্ষর
আবুধাবী, আরব আমীরাত

প্রবাসে শিশু বিকাশে বাংলাভাষা ও সংস্কৃতি



সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি, বাঙলা আমাদের মাতৃভাষা। সাত সমুদ্র তেরো নদী পেড়িয়ে পৃথিবীর অপর প্রান্তে এসেও সেই কৃষ্টি আর সংস্কৃতিকে আমরা কখনো ভুলে যাইনি- কারণ আমাদের মনের গভীরে আজও সেই চিরসবুজ শান্তির সুনিবিড় শেকড়টি গাঁথা রয়েছে- আর তার কারণ, মনে প্রাণে আজও আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি, দুধে-ভাতে বাঙালি।
তাই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের সবার প্রিয় সবুজ বাংলার মাটিতে যেমন করে সূর্য লাল টুকটুকে আগুন ছড়ায় ঠিক তেমনি করে প্রবাসের মাটিতেও সূর্য ঐ একই রং ছড়ায় আর সেই রংয়ের আবেশে বাতাসে বয়ে যায় সূরের মূর্ছনা, কারণ বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে সংগীত আর সংস্কৃতি চর্চা শুধু মনের ক্ষুধাই মিটায় না এর মাধ্যমে খুঁজে পাই সাধারণ মানুষের জীবনচিত্র, তার সাথে খুঁজে পাই সব ধর্মের মর্মকথা । আমরা যখন বাংলা গানগুলো শুনি তখন প্রত্যেকটি অর্থ আমরা আলাদাভাবে বুঝতে পারি, সুতরাং আমরা যদি আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ছোট্ট শিশুদের মনে বাংলা সংস্কৃতির ছোট্ট রেখাবিন্দু গেঁথে দিতে পারি তাহলে তাদের মনেও একদিন আমাদের মত করেই কাঁদবে দেশ ও মাটির মমতাই- কারণ আজকের শিশু আমাদের আগামী দিনের উজ্জ্বল ভবিষ্যত।

আমাদের বাঙালিদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি, বর্ণমালা, নিজস্ব ষড়ঋতু, নিজস্ব নববর্ষ, গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা। আমরা জানি প্রত্যেকটি দেশেরই তাদের নিজস্ব জাতীয় প্রতীক থাকে ঠিক তেমনি বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই- আছে জাতীয় কবি, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতি সৌধ, আছে জাতীয় ফল কাঁঠাল, জাতীয় বৃক্ষ আমগাছ, আছে জাতীয় ফুল শাপলা, জাতীয় মাছ ইলিশ। আর যখন জাতীয় পাখির কথা আসে তখন দোয়েল-এর নামটা মনে এলেই মনটা ভরে যায় এই ভেবে যে পাখিটা ছোট্ট হলে কী হবে- সে কিন্তু সোনার বাংলাকে গর্বিত করেছে তার সুরের মূর্ছনায়। এই সাধারণ কয়েকটা প্রতীকই কিন্তু একটি শিশুর মনকে অনেক

অসাধারণভাবে প্রভাবিত করতে পারে। আর মা বাবা হিসেবে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে কখন কীভাবে এই ছোট্ট ছোট্ট চিত্রগুলো ওদের সামনে তুলে ধরতে হবে। এক সময় আমরা যেমন করে আমাদের মাতৃভূমিতে মা-বাবার হাত ধরে চলতে শিখেছি, ভালো-মন্দের ব্যবধান বুঝতে শিখেছি ঠিক তেমনি করে প্রবাসী জীবনেও আমরা সবাই মিলে কেন্দ্রীভূত হয়ে শিশু বিকাশের আত্মপ্রত্যয়ে সহযোগিতা করতে পারি।
সাংস্কৃতিক সংস্থা ‘ঝংকার’ আশাবাদী যে একদিন এই ছোট্ট ছোট্ট শিশু শিল্পীর আত্মপ্রত্যয় আকৃষ্ট করবে যুক্তরাষ্ট্র তথা ক্যানেটিকাটের সকল বাঙালি শ্রোতাদের, তাদের সাংস্কৃতিক প্রতিভা, নাচ, গানের তালের মূর্ছনায় কখনো মনের আনন্দে আবার কখনো বেদনায় জড়িয়ে মন চাইবে হারিয়ে যেতে সেই দিন গুলোতে যেদিনগুলো অনেক আগেই আমরা পিছনে ফেলে চলে এসেছি।
তাই আজ আমার বিশেষ অনুরোধ যুক্তরাষ্ট্র তথা ক্যানেটিকাটের সকল মা-বাবার কাছে আসুন আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করি যেন এই প্রবাসে প্রতিটি ঘরে ঘরে বাংলা ভাষা আর সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি তুলে ধরতে পারি বাঙালি ঐতিহ্যকে- তাহলে আমরা মনের তৃপ্তি নিয়ে বলতে পাবরো প্রবাসী জীবন যাপন করলেও আমরা আমাদের দেশ, দেশের মাটি আর দেশপ্রেমকে একটু হলেও ভবিষ্যতের চাবিকাঠি যাদের হাতে আছে- তাদের মনে অনুপ্রবেশ করতে পেরেছি।

ইতালিতে বাংলাদেশী জাল পাসপোর্ট বাণিজ্যের অভিযোগ
ইতালিতে বাংলাদেশী অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ করে দেয়ার নাম করে পাসপোর্ট বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে| এতে ব্যাপক হারে হয়রানির শিকার হচ্ছে ভেতরে অবস্থিত অবৈধ বাংলাদেশীরা| বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বাংলাদেশী নাগরিকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে একটি ক্ষমতাশীন মহল অবৈধভাবে পাসপোর্ট বাণিজ্য করে বেড়াচ্ছে| নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইতালির ভেনিস শহরে কর্মরত একজন বাংলাদেশী এম লোকমান হোসেনের বাসা থেকে ৭০০ ইউরোর বিনিময়ে পুরাতন তারিখে ইস্যুকৃত পাসপোর্ট গ্রহণ করেন| ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর রোমসহ ইতালির বিভিন্ন শহরে অবৈধ অভিবাসীদের মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি হয়|

এ বিষয়ে ইতালিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর সৈয়দ মঈনুল হাসানের কাছে ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা জানি যে, একটি কুচক্রী মহল আমাদের স্বাক্ষর এবং সিল জাল করে এ অসৎ কাজ করে যাচ্ছে| এ ব্যাপারে দূতাবাস কোনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি ব্যাপারটা এড়িয়ে যান| এদিকে ইতালি সরকার ঘোষিত অবৈধদেরকে বৈধ করে নিতে যে সুযোগ দিয়েছে তা গ্রহণ করার জন্য অবৈধ বাংলাদেশীরা দূতাবাস থেকে কোনো প্রকার সহযোগিতা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে| অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলো ঃ আলী হোসেন, আবুল হোসেন, বাবলুসহ আরও অনেকে|

উল্লেখ্য, ইতালিতে কাতার থেকে আগত নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত শাহাদাত হোসেনকে ইতালির রাষ্ট্রপতি এখনো পরিচয়পত্র না দেয়ার কারণে অফিসিয়াল কর্মকাণ্ড ধীর গতিতে চলছে বলে জানা গেছে| অন্যদিকে ইতালি প্রবাসীদের প্রাণের দাবি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দূতাবাসের নানা সমস্যা সঠিকভাবে তদন্ত করে সহসাই যেনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়|


আমিরাতে ভিসা বন্ধে দূতাবাসের উদাসীনতা দায়ী নয় কি?


 সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) বসবাস করছি গত প্রায় চারটি বছর ধরে। এখানকার সব আইন সম্পর্কে অবগত না হলেও বেশ কিছু নিয়মকানুনের ব্যাপারে অবগত আছি।

গত প্রায় আট মাস ধরে ক্রমাগত একটার পর একটা লেখা পাঠিয়েছি  লেখায় বারবার উল্লেখ করেছি যে, ভিসা বন্ধ হতে পারে বাংলাদেশিদের জন্য, অবশেষে গত ঈদুল ফিতরের সময় থেকে আনঅফিসিয়ালি ভিসা ইস্যু বন্ধ ছিল। কিন্তু গত ৪ অক্টোবর অফিসিয়ালি ঘোষণা আসে ভিসা বন্ধের।

আরব আমিরাত সরকার ‍বাংলাদেশের সরকারকে ঈদুল ফিতর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে দিয়েছিল। এসময়ের মধ্যে আমিরাতের সরকার আশা করেছিল, আমাদের দেশের সরকারি পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার জন্য প্রস্তাব আসবে। কিন্তু প্রস্তাব আসেনি, আমাদের দূতাবাসের মহামান্য অধিকর্তারা অন্ধকারেই রেখেছেন সরকারের কর্তাব্যক্তিদের। আর ভিসা বন্ধের খবরটি এখানকার মিডিয়াতে এমন ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছে যে, তা প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নেই।

অফিসিয়াল ঘোষণা আসার পরে পুরো কমিউনিটিতে এক প্রকার আতংক বিরাজ করছে। এ দেশের সরকার যে সব কারণ দেখিয়ে ভিসা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে, সে সব অপরাধের সঙ্গে যে শুধুমাত্র বাংলাদেশিরা জড়িত বিষয়টা এমন নয়--এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে হাজারগুণ বেশি জড়িত ভারতীয় ও পাকিস্তানিরা। কিন্তু তাদের মিডিয়া তাদের দূতাবাস এতটাই শক্তিশালী যে, এসব খবর আরব আমিরাত সরকারের কাছে পৌঁছাতেই পারে না।

আজকাল টকশোতে দেখা যায় প্রবাসীকল্যাণ সচিবকে, আর তার মুখ থেকে একটি কথা শোনা যায়, তা হলো: বাংলাদেশি জনশক্তির পরিমাণ বেশি হয়ে যাওয়াই ভিসা বন্ধের অন্যতম কারণ! প্রবাসীকল্যাণ সচিবের কাছে প্রশ্ন, আপনার কাছে পরিসংখ্যান আছে কি? আরব আমিরাতে সর্বমোট কত লাখ ভারতীয় ও পাকিস্তানি রয়েছে? আরব আমিরাত চেয়ে রেমিট্যান্সের কত শতাংশ বাংলাদেশিরা ট্রান্সফার করে? আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এ ব্যাপারে আমাদের সচিবদের কাছে কোনো তথ্যই নাই। শুধু বলার কথা বলে দিচ্ছেন “আমরা সংখ্যায় বেশি আর সমান্তরাল করার জন্যই ভিসা বন্ধ।”

যদি তার সঙ্গে একমতও হয় যে, আমরা সংখ্যায় বেশি কিন্তু কোন ক্যাটাগরিতে? সমান্তরালেরর প্রশ্ন যখন আসে তখন কেন আমাদের দেশের কর্তব্যক্তিরা তুলে ধরেন না যে, রেমিট্যান্সের দিক দিয়ে তো আমরা ৭৫ শতাংশ পিছিয়ে। আমাদের দূতাবাসে জনবলের অভাব রয়েছে, এ কথা যেমন সত্য তেমনি সমস্যা সমাধানে কোনো প্রকার ব্যবস্থা না নেওয়াও আমাদের দূতাবাস কর্মচারীদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

জানি এ লেখার কোনো প্রতিফলন ঘটবে না দূতাবাস কর্মচারীদের মধ্যে। তবু লিখলাম হয় তো একদিন তাদের ঘুম ভাঙবে, হয়তো একদিন তারা আমাদের জন্য কিছু একটা করবেন, হয় তো একদিন সব সমস্যার সমাধান হবে।

‘আমার পরিবারকে একনজর দেখতে চাই!’


বিষয়টা বলা যায় একেবারেই সম্ভব ছিল না। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অসাধারণ ও মানবিক কর্তব্যবোধ আর একটি এনজিও’র উদ্যোগে শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়।
চতুর্থ মাত্রার ক্যান্সারে আক্রান্ত সিঙ্গাপুর প্রবাসী বাংলাদেশি নির্মাণ শ্রমিক রুহুল আমীনের জীবন প্রদীপ নিভু নিভু বিষয়টি সবাই জানতেন। জেনে গিযেছিলেন তিনি নিজেও। দেশে স্বজনরাও জানতেন। এসময় তিনি তার অন্তিম ইচ্ছার কথা জানালেন, আমি দেশে ফিরতে চাই। পরিবারের সবাইকে দেখতে চাই!
মাস কয়েক আগে শরীর দুর্বল এবং কাশির প্রচণ্ডতায় ক্লিনিকে গেলে সেখান থেকে তাকে হাসপাতালে রেফার করা হয়। ডাক্তার তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপত্র এবং ঔষধ দিয়ে বিদায় করেন।
কিন্তু ঔষধ সেবনের পরও আরোগ্য লাভ না করায় ফের ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে তাকে দ্রুত স্থানীয় তান তক সেন হাসপাতোলে পাঠানো হয়। সেখানে ডাক্তাররা রুহুল আমীনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নিশ্চিত হন তার ফুসফুস, হৃদপিণ্ড এবং যকৃতে পানি জমেছে এবং মরণব্যাধি ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গেই। এছাড়া তার পরিস্থিতি এতোটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে আগামী সাতদিনও আয়ু পাবে কিনা সন্দেহ। তাকে সিঙ্গাপুরের সর্বোন্নত জীবন রক্ষাকারী ব্যবস্থার আওতায় রাখা হয় গত ১৩ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হবার পর থেকেই।
এদিকে, রুহুল আমীনের শেষবারের মত পরিবারের সবাইকে দেখতে চাওয়ার আকুতিতে প্রবাসের সহকর্মী আর হাসপাতালের চিকি‍ৎসক-নার্স সবাই আবেগাপ্লুত হলেন। কিন্তু উপায় কী! তাকে রোগী হিসেবে দেশে পাঠাতে হলেও যে একাধিক টিকিট দরকার। সে অনেক খরচা।
এমতাবস্থায় স্থানীয় ডাক্তারদের পরামর্শক্রমে তাকে দেশে ফেরত পাঠাতে বাংলা পত্রিকা ‘বাংলার কন্ঠ’র পক্ষ থেকে বাংলাদেশ বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার আরিফ উল্লাহ’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মানবিক সহায়তার আশ্বাস প্রদান করে বলেন, হাসপাতাল থেকে যদি ডাক্তাররা  ‘ফিট ফর ফ্লাই’ সার্টিফিকেট প্রদান করেন তবে রুহুল আমীনকে বহন করার জন্য প্রথম শ্রেণির তিন/চারটি সিটের ব্যবস্থা করে দেবেন তিনি। কিন্তু ডাক্তাররা তাকে সে ধরণের কোনো সার্টিফিকেট প্রদান করতে নারাজ। শুধুমাত্র এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করেই তাকে দেশে পাঠানো যেতে পারে-  সাফ জানিয়ে দিলেন ডাক্তাররা। 
রুহুল আমীনের পরিবার এয়ার অ্যাম্বুরেন্সের এতো বিপুল ব্যয়ভার বহন করতে অক্ষম। এসময় ঘটনাচক্রে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশ থেকে ভিআইপি যাত্রী নিয়ে সিঙ্গাপুর আসলে ফেরার পথে শুধুমাত্র ওয়ান ওয়ে’র খরচে তাকে ২৭-০৯-১২ রাত সাড়ে ৮টায় সম্পূর্ণ জীবন রক্ষাকারী সাপোর্ট এবং একটি ছোট মেডিকেল টিমসহ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
পরদিন শুক্রবার বাংলাদেশে স্বজনদের মাঝে উপস্থিত হন রুহুল আমিন। এরপর স্বজন পরিবেষ্টিত অবস্থায় শেষনিঃস্বাস ত্যাগ করেন। অন্তিম আশা পূরণ হয় তার।
প্রসঙ্গত, রুহুল আমীনের চিকিৎসা সেবার সহযোগিতায় সিঙ্গাপুরে শ্রমজীবী অভিবাসীদের জন্য নিবেদিত সংগঠন ‘দিবাশ্রম’র চেয়ারম্যান দেবী ফরডাইস এবং বাংলার কণ্ঠ’র সম্পাদক এ কে এম মোহসীন এগিয়ে আসেন এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করেন। ফলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যয়বহুল ১৫ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার খরচ বহন করেন শ্রমজীবী প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান টিডব্লিওসি টু’র একজন স্বেচ্ছাসেবী মিস মু অং।
এছাড়া রুহুল আমীনের পরিবারের জন্য আরোও ১০০০ সিঙ্গাপুর ডলার সহায়তা প্রদান করেন তিনি।
অসুস্থকালীন রুহুল আমীনের করুণ অবস্থার কথা জানিয়ে বাংলার কণ্ঠ’র পক্ষ থেকে বাংলাদেশ হাই কমিশনারের একান্ত সহকারীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
এছাড়াও রুহুল আমীনের নিকটাত্মীয় এবং স্থানীয় স্বেচ্ছা চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হেলথ সার্ভ’র পক্ষ থেকে হাই কমিশনের শ্রম কাউন্সিলরকে ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করা হয়।
বাংলাদেশে রুহুল আমীনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান মাইগ্রেন্ট স্যাঙ্কচুয়ারি ফাউন্ডেশন (মিসাফ) বাংলাদেশ জানায়, জনশক্তি রফতানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বাংলাদেশ’র সহকারী পরিচালক জাহেদ হোসেন বিমানবন্দর থেকে রুহুল আমীনের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেয়ার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেন।
বিষয়টি সিঙ্গাপুরের পত্র-পত্রিকায় ব্যাপক প্রচার পায়।
প্রবাসে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং


























































































আবদুুল মতিন সাহেবের সঙ্গে আমার পরিচয় কিছুটা হঠাৎ করেই। জার্মানি থেকে ফিরতি পথে, ট্রেনের জন্য হল্যান্ডের সীমান্ত শহর ভেনলোর রেলস্টেশনে অপেক্ষা করছি। শেষ বিকেলের ব্যস্ততা প্রায় কমে এসেছে। কিছুটা নীরব স্টেশনে আশপাশে কেউ বাংলায় কথা বললে তো চমকে উঠতেই হয়। হয়েছিলও এমন। মতিন সাহেব আমাকে চমকে দিয়েছিলেন। তবে সে চমকের বড় অংশটা বোধহয় কিছুটা বাকিই ছিল। ১২ বছর পর পর 'ওয়ার্ল্ড হর্টিকালচার এক্সপো' নামে বিশ্বব্যাপী একটা প্রদর্শনী হয়। মূলত এক একটা দেশের জীববৈচিত্র্যকে তুলে আনার একটা চেষ্টা এই প্রদর্শনীতে করা হয়। তবে ব্যাপারটা শুধু উদ্ভিদবিজ্ঞানের জটিল সব ব্যাপারে আটকে থাকে না। সেখানে বলতে গেলে একটা দেশ পুরোটাই মূলত উঠে আসে। সে দেশের সংস্কৃতি, মানুষের জীবনযাপনের ধরন, কুটির শিল্প, ইতিহাস_ এককথায় পরিধিটা অনেক বড়।
এবার 'ফ্লোরিয়াড ২০১২' নামে প্রদর্শনীটা জার্মানি আর হল্যান্ডের সীমান্তঘেঁষা শহর ভেনলোতে হচ্ছে। আমি যে শহরে থাকি, সেখান থেকে অনেকটা দূরে। প্রায় দেড়শ' কিলোমিটার। একদিন সময় করে মতিন সাহেবের 'বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন' দেখতে গেলাম। শুরুতেই যে চমৎকার তথ্যটা দিয়ে মতিন সাহেব অবাক করলেন, সেটা হচ্ছে সারাবিশ্বের প্রায় প্রতিটা দেশ থেকেই নাকি এই প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের জন্য দরখাস্ত জমা পড়েছে। যাচাই-বাছাই করে শেষ পর্যন্ত গুটিকয়েক দেশকে (সম্ভবত ৩০টি) এখানে আসার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে। আমাদের বাংলাদেশ সেই গুটিকয়েক দেশের মধ্যে একটি।
এরপর হেঁটে যেতে যেতে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের সামনে দাঁড়িয়ে পড়তেই হয়। প্যাভিলিয়নের সামনে কিছুটা উঁচু এক ফ্ল্যাগস্ট্যান্ডে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়ছে। বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের ভেতরে ঢোকার পরপরই চমৎকার একটা ভালোলাগা ছুঁয়ে গেল। ঢোকার পথেই আমাদের স্বাধীনতার ওপর ইংরেজিতে লেখা ছবিওয়ালা ভারী দুটি রেফারেন্স বই সাজিয়ে রাখা হয়েছে। বিদেশি লোকজন সেসব বইয়ের পাতা উল্টেপাল্টে পড়ছে। ছোট ছোট রিকশা আর ঢাকার রাজপথে দৌড়ে বেড়ানো মিনিবাসগুলো একটা তাকে সুন্দর করে সাজানো রয়েছে। নিচের দিকে মাটির কলস, হাঁড়ি-পাতিল, বেতের চেয়ার_ কী নেই সেখানে! দেয়ালে ঝুলছে সুন্দরবনের বাঘের ছবি। লালনের একতারা, কাঁসার ঘোড়া, তাঁতের শাড়ি, গামছা, নকশিকাঁথা_ সবই আছে।
কথা হয় আবদুুল মতিন সাহেবের সঙ্গে। 'কীভাবে আনলেন এত কিছু? সরকার পাঠিয়েছে?' মতিন সাহেবে স্মিত হেসে 'না' জানিয়ে মাথা ঝাঁকালেন। এর পরের গল্পটুকু মতিন সাহেবের। 'ফ্লোরিয়াড-২০১২' নামের এই প্রদর্শনীর বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নের যাবতীয় খরচ ব্যক্তিগতভাবে তিনি বহন করছেন। সে খরচের তালিকায় রয়েছে পুরো একটা জাহাজের কনটেইনার বহনের খরচ, প্যাভিলিয়নের জায়গার ভাড়া, কর্মচারীদের বেতনসহ আরও নানা কিছু। সরকারি কোনো ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই একজন মানুষ প্রায় সাত মাস ধরে ইউরোপের খুব ব্যয়বহুল একটা দেশে বাংলাদেশকে নিয়ে একটা প্রদর্শনী চালিয়ে যাচ্ছেন_ ব্যাপারটা জেনে যারপরনাই অবাক হতেই হলো।
এ ধরনের প্রদর্শনী থেকে টুকটাক স্যুভেনির বিক্রি করে টাকার অঙ্ক বিবেচনায় কতটুকু লাভবান হওয়া যায়, সে হিসাবটা বোধহয় হাতে গুনেই করে ফেলা যায়। কিন্তু আসল লাভের হিসাবটা তো করা যেতে পারে অন্য একটা খাতায়। প্রতিদিন দেশ-বিদেশের হাজারো লোকজন তাঁতের শাড়ি, বেতের ঝুড়ি আর রাজশাহীর কাঁসাশিল্পের খুব কাছাকাছি যেতে পারছে। তারা এসব হাতে ছুঁয়ে দেখছে, অবাক হচ্ছে, প্রশংসা করছে। এই 'বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন' ইতিমধ্যেই বাইরের অন্তত কিছুসংখ্যক বিনিয়োগকারীকে যে বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রহী করেনি, সেটাই-বা কীভাবে বলি?
আমি যত দূর জানি, ঘরের শোভা বাড়ায় এমন ছোটখাটো জিনিসগুলোর এখন পর্যন্ত বড় একটা বাজার তুরস্ক। পোশাক শিল্পের মতো এই বাজারটা তো বাংলাদেশও হতে পারত। এখন পর্যন্ত হয়নি, কারণ আমরা সেভাবে বহির্বিশ্বকে দেখাতেই পারিনি_ কী অনন্য সব সৃষ্টিতে আমরা সমৃদ্ধ।
অবশ্য এমনটা যে বেশিদিন থাকবে না, সেটা এখন আশা করা যেতেই পারে। মতিন সাহেবের মতো ব্যবসায়ীরা যে শুধু আজীবন গতানুগতিক ব্যবসাই করে যান, এই ধারণাটা পাল্টাচ্ছে। তারাও বুঝেছেন, আমাদের নিজস্বতার জায়গাটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। ব্র্যান্ডিং ব্যাপারটা আসলে দরকার সেখানেই।

ইতালিতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বাংলাদেশী শ্রমিকের বৈধতা


ইতালিতে অবৈধ বাংলাদেশীরা শ্রমিক বৈধতা পাচ্ছে না । বরং প্রতিদিন তারা বহিষ্কারের আতংকে ভোগছেন।   জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনৈক কর্মকর্তা।
ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছিলো  ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ইতালিতে অবৈধভাবে বসবাসীকারী শ্রমিকরা বৈধতার জন্য আবেদন করতে পারবেন । কিন্তু কেউ আবেদন করতে গেলে তাকে অবৈধ বলে গণ্য করে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বিধি মোতাবেক কোনো শ্রমিক কোনো মালিকের অধীনে ৩ মাস কাজ করলে সেই শ্রমিক অনলাইনে আবেদন করতে পারবে। একইসঙ্গে অবৈধ কাজের পারমিট পেতে তাদের ৩ মাসের জন্য ১ হাজার ইউরো জরিমানা দিতে হবে।
এছাড়াও আবেদনকারী যে মালিকের অধীনে পারমিট নেবেন, সে মালিককে ৬ মাসের রেসিডেন্স পারমিট-সহ বিগত বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইতালিতে উপস্থিত থাকার প্রমাণ দেখাতে হবে। এবং কোনো শ্রমিক অবৈধভাবে থাকার সময় কোনো প্রকার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে , তার আবেদন  গ্রহণযোগ্য হবে না।
সূত্রটি জানায়, শেষোক্ত নিয়মটিকে ভিত্তি করে বিভিন্ন অজুহাতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের হয়রানি করা হচ্ছে। নিরুপায় শ্রমিকরা ইতালীয় বাংলাদেশ দূতাবাসে গেলেও তারা কোনো প্রকার সহযোগিতা  করতে পারছে না।

তানজানিয়া থেকে ফিরেছেন ২০ বাংলাদেশি

আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ার কারাগারে আটক ২০ জন বাংলাদেশি আজ শুক্রবার সকালে দেশে ফিরেছেন। টার্কিশ এয়ারলাইনসের একটি বিমানে তাঁরা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। তাঁদের দেখে স্বজনেরা এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিমানবন্দরে তৈরি হয় আবেগঘন পরিবেশ।
এই বাংলাদেশিরা হলেন—আনিস খান, বিটু মিয়া, আলীনূর, ফারুক হাওলাদার, ওহিদ হাওলাদার, মোহাম্মদ রাসেল, কালা চান, জাহিনুর রহমান, আমানুল হক, ফজলুল হক, বিল্লাল, আবদুল মালেক, আলাউদ্দিন, জামাল হোসেন, আবু নাসের, রমজান মিয়া, শহীদি আহমেদ, মাসুম মিয়া, কাবিল মিয়া ও হেলালউদ্দিন।
দালালদের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার পথে গত বছর এসব বাংলাদেশি তানজানিয়া পুলিশের হাতে আটক হন। দীর্ঘদিন তাঁরা কারাগারে ছিলেন। দরিদ্র পরিবারগুলো তাঁদের ফেরত আনার খরচ দিতে পারছিল না। এ তথ্য জানতে পেরে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এমজিএইচ গ্রুপ আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব করে। এরপর বিএমইটি ও কেনিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস ভ্রমণের কাগজপত্র তৈরি করে তাঁদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয

মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তার অকাল মূত্যঃ স্বজনদের আহাজারী


undefined

মালয়েশিয়া বাংলাদেশ দূতাবাসের ব্যক্তিগত অফিসার মহাব্বত হোসেন (৪৬) গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ১২.৩০ মিনিটে হার্ট ষ্ঠ্রোকে ইন্তেকাল করিয়াছেন (ইন্নাইল্লাইহে…রাজীউন) মরহুমের নামাজে জানাযা ২৫ শে সেপ্টেম্বর বায়তুল আমান মসজিদ, দামাই কুয়ালালামপুরে বাদ জুহরের পরে অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হাইকমিশনার একে এম আতিকুর রহমানসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। জানাযায় আরো শরিক হন বাংলাদেশ আওয়ামী নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনগণ। জানাযা শেষে সবার মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। হাইকমিশনারের কর্মকর্তাবৃন্দ চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি। বাংলাদেশ হাইকমিশনার একে এম আতিকুর রহমান উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে তার রুহের মাগফেরাত কামনার জন্য দোয়া করতে বলেন। এমন সময় তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের অঝোর কান্নায় উপস্থিত সকলে চোখের পানি রাখতে পারেনি। উল্লেখ্য যে, মহাব্বত হোসেন গত ২৩ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ার স্থানীয় সময় রাত ১২.৩০ ঘটিকায় মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হয়ে হাসপাতাল আমপাং পুত্রি হাসাপাতাল নিলে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহৃৃ.. রাজেউন)। তার দেশের ময়মনসিংহ জেলা, মুক্তগাছা উপজেলা, ডাকঘর-খেজুরিয়া জানি, বানিয়া কাজী গ্রামের বাসিন্দা। তার পিতার নাম মৃত ইয়াকুব আলী। তিনি মালয়েশিয়াতে পরিবার পরিজন নিয়ে দীর্ঘ দিন যাবৎ বসবাস করে আসছেন। স্ত্রী ও দুই মেয়ে সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান। বড় মেয়ে সানজিতা আকাতার (১৩) ও ছোট মেয়ে সিনিয়া (৬) মালয়েশিয়া ফেরবিয়া ইংলিশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ছাত্রী। হাইকমিশন সূত্রে জানা যায়, মরহুমের লাশ ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বিমানে দেশে প্রেরণ করা হবে।

২৩শে সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের জাতীয় দিবস 

রাজকীয় সৌদি আয়তনের দিক থেকে পশ্চিম এশিয়ার সর্ববৃহৎ দেশ। আরব উপদ্বীপের বিরাট অংশই এ রাজ্যের আওতায়। নদীবিহীন এ দেশটি আরব বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। বর্তমান বিশ্বের মজুদ তেলের এক-তৃতীয়াংশের অধিকারী ও মানবিক সাহায্যে বিশ্বসেরা এবং বিনিয়োগে সপ্তম স্থান অধিকারী মুসলিম বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তিশালী এ দেশটির বাদশাহ প্রভাবশালী বিশ্বব্যক্তিত্বের মধ্যে চতুর্থ ও মুসলিম নেতৃবৃন্দের মধ্যে প্রথম স্থানের অধিকারী। জি-২০-এর একমাত্র মুসলিম রাষ্ট্র সৌদি আরব। নিম্নে এর সাধারণ মৌলিক সর্বশেষ তথ্যাবলি প্রদান করা হলোÑ

সরকারি নাম : আল মামলাকাতুল আরবিয়্যাতুস সউদিয়া (রাজকীয় সৌদি আরব) Kingdom of Saudi Arabia (KSA)
প্রথম সৌদি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা : ১৭৪৪ ঈসায়ি, প্রতিষ্ঠাতা : মুহাম্মাদ বিন সাউদ
দ্বিতীয় সৌদি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা : ১৮২৪ ঈসায়ি, প্রতিষ্ঠাতা : তুর্কি বিন আবদুল্লাহ
তৃতীয় সৌদি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা : ১৯২৬ ঈসায়ি, প্রতিষ্ঠাতা : আবদুল আযীয বিন আবদুর রহমান
স্বীকৃতি লাভ : ২০শে মে ১৯২৭ ঈসায়ি
একত্রীকরণ ও স্বাধীনতা : ১৯৩২ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর সব গোত্র ও প্রদেশ একত্রীকরণ করা হয়। সে জন্য প্রতি বছর ২৩শে সেপ্টেম্বরই সৌদি আরবের জাতীয় দিবস উদযাপন করা হয়। এটি সৌর হিজরি সনের প্রথম দিন।
রাজধানী : রিয়াদ। এ ছাড়াও সৌদি আরবে ১৩টি প্রাদেশিক প্রশাসনিক রাজধানী আছে।
সরকারপদ্ধতি : একচ্ছত্র রাজতন্ত্র, রাষ্ট্রপ্রধানÑ খাদিমুল হারামাইন বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আযীয আল-সাউদ ও যুবরাজ সালমান বিন আবদুল আযীয আল-সাউদ।
আয়তন : প্রায় ২২,৫০,০০০ বর্গকিলোমিটার বা ৮,২৯,৯৯৬ বর্গমাইল
ভৌগোলিক সীমারেখা : উত্তরে- জর্ডান ও ইরাক, দক্ষিণেÑ ওমান ও ইয়ামন, পূর্বেÑ কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও আরব সাগর, পশ্চিমেÑ লোহিত সাগর।
ধর্ম : সৌদি আরবের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। সৌদি পরিচয় বহনকারী সবাই মুসলমান। তাদের অধিকাংশই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের অনুসারী। তবে আল-কাতিফ, আল-আহসা, নাজরানে কিছু শিয়াদের বসবাস রয়েছে। সেখানে অবস্থানরত অমুসলিম জনগণও তাদের মানবিক ও ধর্মীয় অধিকার পুরোপুরিভাবে ভোগ করছে।
ভাষা : আরবি, তবে আরবির পাশাপাশি বর্তমানে ব্যাপক হারে ইংরেজির ব্যবহার লক্ষণীয়।
জনসংখ্যা : ২,৮৬,৮৬,৬৩৩ জন (২০১০ সাল) জন্ম বৃদ্ধির হার ১.৮%, জন্মের হার ২৮.৫ ও প্রতি হাজারে শিশু মৃত্যুর হার ১১.৫, গড় আয়ু পুরুষ : ৭৪ বছর, মহিলা : ৭৮ বছর, প্রতি বর্গমাইলে জনবসতির ঘনত্ব ২৯ জন। প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনবসতির ঘনত্ব ১৪ জন (২০০৯)।
জনশক্তি : ৬০,৪৯,০০০ জন, তন্মধ্যে শতকরা ৩৫ জন বিদেশী। শিল্প পক্ষত্রে শতকরা ২৫ ভাগ, চাকরি ক্ষেত্রে শতকরা ৬৩ ভাগ ও কৃষি ক্ষেত্রে শতকরা ১২ ভাগ (২০০৫ সাল)।
মাথাপিছু আয় : ২৫৪৬৬ মার্কিন ডলার, জিডিপি : ২২৬৩৫।
জাতীয় সঙ্গীত : ইসলামের মহানুভবতায় দেশপ্রেমকে উজ্জীবিতকরণের ও দেশের উন্নতিকল্পে দায়িত্ববোধ জাগ্রতকরণের বিষয়সংবলিত।
জাতীয় পরিচয় : সাউদি
স্থানীয় সময় : +৩ ঘণ্টা অর্থাৎ বাংলাদেশের দুপুর ১২টায় সাউদিতে সকাল ৯টা।
জাতীয় পতাকা : পতাকার রঙ সবুজ। দৈর্ঘ্যরে দুই-তৃতীয়াংশ প্রস্থ এতে তাওহিদের মর্মবাণীÑ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ” (আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্যিকারের ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল) এই কালিমা আরবিতে উৎকীর্ণ রয়েছে। কালিমার নিচেই একটি কোষমুক্ত তরবারি অঙ্কিত রয়েছে, যা দ্বারা ন্যায়বিচারকে বোঝানো হয়েছে। এ কালিমা উৎকীর্ণ থাকায় সৌদি আরবের পতাকা কখনো অর্ধনমিত করা হয় না। সবুজ রঙ ইসলামের ঐতিহ্যের দিকে ইঙ্গিতবহ।
জাতীয় প্রতীক : আড়াআড়ি দুইটি তরবারির ওপর একটি খেজুরগাছ হলো সৌদি আরবের জাতীয় প্রতীক। খেজুরগাছ দ্বারা বোঝানো হয়েছে সমৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধি। আর তরবারি দ্বারা ন্যায়বিচার, শক্তি ও নিরাপত্তা বোঝানো হয়েছে।
জাতীয় পঞ্জিকা : মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের ঐতিহাসিক ঘটনা স্মরণার্থে রচিত হিজরি সন অনুযায়ী সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। ৩৫৪ দিনে ও ১২ মাসে এক চান্দ্রহিজরি বর্ষ গণনা করা হয়। ঈদ ও অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান এই হিজরি তারিখ অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হয়। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বর্তমানে আরবির পাশাপাশি ইংরেজি তারিখ অনুযায়ী করা হয়।
সরকারি ছুটি : সাপ্তাহিক ছুটি বৃহস্পতি ও শুক্রবার। এ ছাড়াও ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, হজ ও জাতীয় দিবসে সরকারি ছুটি রয়েছে।
আবহাওয়া : তাপমাত্রা ১২ থেকে ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করে। বৃষ্টিপাত বিক্ষিপ্ত ও অনিয়মিত। দীর্ঘস্থায়ী উষ্ম ও শুষ্ক গ্রীষ্মকাল। রাতে তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়। শীতকালে হালকা তুষারপাত হয়।
জাতিসত্তা : আরব ৯০%, আফ্রো-এশীয় ১০%।
মুদ্রা : সৌদি রিয়াল, ১০০ হালালায় ১ রিয়াল (১ মার্কিন ডলার সমান ৩.৭৫ সৌদি রিয়াল)
সংবিধান : ইসলামি আইন (শরিয়া) মোতাবেক রচিত, ১৯৯৩ সালে এতে সরকারের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কিত ধারা ও উপধারা সংযোজন করা হয়েছে।
আইন বিভাগীয় ক্ষমতা : সৌদি মন্ত্রী পরিষদ। বর্তমানে সৌদিতে ২২টি মন্ত্রণালয় আছে।
১. পররাষ্ট্র, ২. ইসলামিক, দাওয়াহ, ওয়াক্ফ ও ইরশাদ ৩. হজ ৪. স্বরাষ্ট্র ৫. বিচার ৬. অর্থায়ন ৭. অর্থ ও পরিকল্পনা ৮. প্রতিরক্ষা ও বিমান চলাচল ৯. সংস্কৃতি ও তথ্য ১০. শিক্ষা ১১. উচ্চশিক্ষা ১২. স্বাস্থ্য ১৩. বাণিজ্য ও শিল্প ১৪. পেট্রল ও খনিজ ১৫. কৃষি ১৬. শ্রম ১৭. সামাজিক বিষয়ক ১৮. পৌর ও পল্লী ১৯. জনসেবা ২০. যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি ২১. পরিবহন ২২. পানি ও বিদ্যুৎ।
বিচারব্যবস্থা : ইসলামি আইন অনুযায়ী বিচারব্যবস্থা পরিচালিত হয়।
গুরুত্বপূর্ণ শহর ও লোকসংখ্যা : (১) রিয়াদ, ৫৪৩১৮৯৩ (২) জিদ্দা (মক্কাঞ্চল), ৩৪৩০৬৯৭ (৩) মক্কা মুকাররমা, ১৫৩৪৭৩১ (৪) মদিনা মুনাওয়ারা, ১১০০০৯৩ (৫) দাম্মাম (পূর্বাঞ্চল), ৯০৩৩১২ (৬) তায়েফ (মক্কাঞ্চল), ৬৬০৭৮৮ (৭) আল-আহসা (পূর্বাঞ্চল), ৭২৮১২১ (৮) বুরাইদা (আল-কাছিম অঞ্চল), ৬১৪০৯৩ (৯) তাবুক, ৫০২৬২৬ (১০) আল-খুবার (পূর্বাঞ্চল), ৪৫৭৭৪৫ (১১) খামিস মুশাইয়াত (আছির অঞ্চল), ৪৩০৮২৮ (১২) আল-জুবাইল (পূর্বাঞ্চল), ৩৩৭৭৭৮ (১৩) হাইল, ৩১০৮৯৭ (১৪) নাজরান, ২৯৮২৮৮ (১৫) হাফরুল বাতন (পূর্বাঞ্চল), ২৭১৬৪২ (১৬) জাযান, ২৫১৯৩৩ (১৭) আবহা (আছির অঞ্চল), ২৩৬১৫৭ (১৮) ইয়ানবু (মদিনা অঞ্চল), ২৩৩২৩৬ (১৯) আরআর (উত্তরাঞ্চল), ১৬৭০৫৭ (২০) উনায়জা (আল-কাছিম অঞ্চল), ১৫২৮৯৫।
শিক্ষা : শিক্ষার হার ৯৫%। তন্মধ্যে পুরুষ- ৮৪.৭%, মহিলা-৭০৮%। সৌদি আরব আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। প্রাথমিক থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত সব নাগরিকের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা। বর্তমানে সৌদি আরবের বাজেটের ২৫% এ খাতের জন্য বরাদ্দ। সেখানে বসবাসরত বিদেশীদের সন্তানদের শিক্ষার সুন্দর ব্যবস্থা বিদ্যমান। রিয়াদ, জিদ্দা ও দাম্মামে অবস্থিত বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত।
সংস্কৃতি : সৌদি আরবের সংস্কৃতি মূলত ইসলামি শরিয়াত ও ইসলামি শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভূমি মক্কা ও মদিনা উভয়টি সৌদি আরবে অবস্থিত হওয়ায় ইসলামি সংস্কৃতি খুবই শক্তিশালী। প্রতিদিনই পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের জন্য আজান হওয়ামাত্রই সব কিছুকে পেছনে ফেলে সবাই মসজিদপানে ছুটে যান, যা বিশ্বের দ্বিতীয় আর কোনো দেশে দেখা যায় না।
স্বাস্থ্য : স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু ব্যয় উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে চতুর্থ। বিদেশীসহ সব নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। ২০০৮ সালের তথ্য অনুযায়ী সৌদি আরবে হাসপাতালসংখ্যা ৩৯৩টি, শয্যাসংখ্যা ৫৩৮১৯টি, চিকিৎসক ৪৭৯১৯ জন, নার্সসংখ্যা ৯৩৭৩৫, সহকারী স্বাস্থ্যকর্মী ৫১২৮৮ জন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৩১৩০টি (১৯৮৬ সরকারি)।
মোট জাতীয় আয় : মোট জাতীয় আয় বৃদ্ধির হার ১৩.৫% (২০০৮ সাল)
অর্থনীতি : সৌদি অর্থনীতি মূলত তেলকেন্দ্রিক। বিশ্বের অন্যতম তেল উৎপাদনকারী দেশ সৌদি আরবের ৯০% ভাগের বেশি আয় আসে তেল রফতানি থেকে এবং ৭৫% ভাগ আসে রাজস্ব থেকে। দাহরানে অবস্থিত আরামকো সৌদি তেল ব্যবস্থাপনার সরকারি কোম্পানি।
প্রাকৃতিক সম্পদ : তেল ও গ্যাস সৌদি আরবের প্রাকৃতিক সম্পদ। বর্তমানে প্রতিদিন ১১ মিলিয়ন ব্যারেল করে তেল উৎপাদন হচ্ছে। বর্তমানে গ্যাসের মজুদ ১৮০.৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। এ ছাড়া সেখানে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ, রৌপ্য, তামা, দস্তা, সীসা, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, ইউরেনিয়াম, শিল্পের কাঁচামাল, ফসফেট, কয়লা, পাথর ও নির্মাণসামগ্রীর বিশাল মজুদ মরুময় দেশটিতে আছে।
শিল্প : বর্তমানে সৌদি আরবে দুই ধরনের শিল্প আছে। (১) ভারী (২) মাঝারি। ভারী শিল্পের মধ্যে রয়েছে তেল শোধনাগার, যা বছরে ৬৫২ মিলিয়ন ব্যারেল তেল পরিশোধন করে। পাশাপাশি বিটুমিন শিল্প যা ১৯৯০ পর্যন্ত ১৪ মিলিয়ন টন উৎপাদন করেছে। মাঝারি শিল্পের মধ্যে রয়েছে খাদ্যদ্রব্য, নির্মাণসামগ্রী, রাসায়নিক ও খনিজদ্রব্য। যা দেশটিকে দ্রুত শিল্পায়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে শিল্পকে উৎসাহিত করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি সুদবিহীন শিল্পঋণ প্রদান, কারখানার জন্য জায়গা ভাড়া প্রদান, সকল সুযোগ-সুবিধাসংবলিত শিল্প এলাকায় শ্রমিকদের বাসস্থান নির্মাণ, নামমাত্র মূল্যে সমস্ত চাহিদা জোগান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে ক্রয়ের ক্ষেত্রে দেশে উৎপাদিত দ্রব্যাদির অগ্রাধিকার দেয়া হয়। যাকাত ব্যতীত সর্বপ্রকার শুল্ক মাফ করা হয়। বর্তমানে মাঝারি আয়তনের শিল্প ইউনিটের সংখ্যা ২৩০০টি। সেখানে বিনিয়োগ রয়েছে ২৬ বিলিয়ন ডলার। সেখানে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার।
ভূমিরূপ : প্রধানত চার ভাগ। তন্মধ্যে (১) হিজায ও আছির এলাকার পাহাড়ি অঞ্চল; (২) নজদ এলাকার উঁচু ভূমি; (৩) বালুময় মরুভূমি এবং (৪) পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলীয় সমতল ভূমি।
কৃষি : কৃষি ক্ষেত্রে সৌদি আরব অতি অল্প সময়েই দ্রুত উন্নয়ন সাধিত করেছে। যদিও সেখানে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যেমনÑ স্বল্প বৃষ্টি, ভূগর্ভস্থ পানির স্বল্পতা, সৌদি জনগণের কৃষির প্রতি অনীহা, কৃষিযোগ্য ভূমিসমূহ অধিক বালুকাময় বা অনেক উঁচু ও অনেক নিচু। তবুও কৃষি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিনামূল্যে জমি বিতরণ করে দেয়ায় তা চাষের আওতায় এসেছে। উপরন্তু বিনা সুদে কৃষিঋণ বিতরণ করা হয় এবং উৎপাদিত ফসল সরকার অতি উচ্চ মূল্য দিয়ে সরাসরি কৃষক থেকেই ক্রয় করে নেয়। আর এসব কারণেই খাদ্যে আমদানিনির্ভর দেশটি অতি অল্প সময়ের মধ্যেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন হয়েছে এবং কিছু কিছু পণ্যের যেমন গম রফতানিকারক দেশও হয়েছে। এতে করে ১৭ বছরের মধ্যে কৃষি আবাদযোগ্য ভূমির আয়তন প্রায় চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ভূমিতে বর্তমানে শতকরা ৭৩ ভাগ খাদ্যদ্রব্য ও শতকরা ২৭ ভাগে তরিতরকারি, ফল ও ঘাস উৎপাদিত হচ্ছে। কৃষিভূমির শতকরা ৫৭ ভাগ রিয়াদ, আল-কাছিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। শতকরা ১৯ ভাগ জাযান, আসির, নাজরান, বাহা ও উত্তরাঞ্চলে। শতকরা ১৩ ভাগ হাইল, তাবুক ও আল-জাওফে। বাকি ১১ ভাগ পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে।
বিদ্যুৎ : সৌদি আরবের সব আবাদি এলাকায় ইতোমধ্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় এসেছে। ২০০৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৮১০৯৮ মিলিয়ন কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫৩% বাসাবাড়ি, ১২% বাণিজ্যিক, ১১% সরকারি, ১৮% শিল্প, ২% কৃষি এবং ৪% অন্যান্য খাতে ব্যবহৃত হয়।
দুই মসজিদের উন্নয়ন : সৌদি আরব হারামাইনের দেশ। তাই খাদিমুল খারামাইন এই পবিত্র দুই মসজিদের উন্নয়নের জন্য অকাতরে অর্থ ব্যয় করেন। হজ্জযাত্রী, উমরাকারী ও যিয়ারতের উদ্দেশ্যে আগমনকারীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির নিমিত্তে বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমান প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মসজিদদ্বয়ের ধারণক্ষমতা তিন গুণ বৃদ্ধি পাবে।
মানবিক সাহায্য : জাতিসঙ্ঘ কর্তৃক প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যায় যে, ২০০৮ সালের মানবিক সাহায্য ফান্ডে বিশ্বের সর্বোচ্চ ২০টি দাতা দেশের মধ্যে সৌদি আরব শীর্ষস্থান অধিকার করেছেÑ যা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। প্রতি বছর রমজান মাসে সৌদি সরকার বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী শুভেচ্ছা উপহারস্বরূপ উন্নতমানের খেজুর প্রেরণ করে থাকে।
সৌদি-বাংলা সম্পর্ক : বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে সুদৃঢ় সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। বাংলাদেশ ১৯৭৬ সালের ৮ জানুয়ারি সৌদি আরবে বাংলাদেশী দূতাবাস খোলে ও সৌদি আরব ১৯৭৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে সৌদি দূতাবাস খোলার মাধ্যমে এ সম্পর্ক আরো দৃঢ়তর হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সৌদি আরবকে অগ্রাধিকার দেন। বর্তমানে সৌদি আরবে ২০ লক্ষের বেশি বাংলাদেশী সৌদি আরবের উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখছেন।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ৩৭% সৌদি আরব থেকে আসে। বাংলাদশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান সৌদি-বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এগ্রিকালচারাল কোম্পানি (সাবিনকো), মানারাত, ইবনে সিনা, ইসলামী ব্যাংক, সৌদি-বাংলা গ্রুপ এবং বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদসহ শত শত মসজিদ, মাদরাসা, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, সিডরে অবারিত সহায়তা, রমজানে খেজুর ও কোরবানির গোশত প্রদান, শীতলক্ষ্যা সেতু ও মগবাজার ফাইওভারে অর্থায়ন ও দ্বিপাক্ষিক ভ্রমণ ও বৈঠক সব কিছুই এ সম্পর্কের নিদর্শন। ইতোমধ্যে দুই দেশের মধ্যে অনেক বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ও ইসলামিক বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

ভিসার পর এমআরপি জটিলতায় আমিরাতে প্রবাসী বাঙালিরা

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্লিপ্ততা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশের দূতাবাস কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় ভিসা বন্ধের পর মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট জটিলতা ছাড়া ভিসাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে অচলাবস্থা না কাটায় প্রবাসী বাঙালিরা চরম উত্কণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। সম্প্রতি আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সাল থেকে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) ছাড়া লিখিত পাসপোর্ট গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। এতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থানকারী বাংলাদেশীদের নতুন করে সমস্যায় পড়তে হবে।

ইউএই প্রবাসী বাংলাদেশী সাংবাদিক শিবলী আল সাদিক জানিয়েছেন, সেদেশে বেসরকারি হিসেবে বৈধ ও অবৈধ মিলে প্রবাসী বাংলাদেশীর সংখ্যা হচ্ছে ১৫ লাখ। আর মাত্র তিন মাসের মধ্যে এ বিপুল পরিমাণ বাংলাদেশীকে এমআরপি দেয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ২০১১ সালের ১৪ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে আমিরাত সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দ্রুত পাসপোর্ট তৈরি করতে মেশিন দিতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী তখন সে প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। এতে বাংলাদেশ দূতাবাস ভয়াবহ সঙ্কটে পড়েছে।
দুবাইয়ের বাংলাদেশ কনস্যুলেট সূত্র জানিয়েছে, জনবল এবং এমআরপি মেশিনের অভাব সঙ্কটকে আরও ঘনীভূত করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৬০ হাজার এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে দুবাইয়ের বাংলাদেশ কনস্যুলেট থেকে। একমাত্র দুবাই ও আমিরাতেই ৮ লাখ বাংলাদেশীর অবস্থান। তাই কনস্যুলেটের পক্ষে কোনোভাবেই চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে লাখ লাখ প্রবাসীর হাতে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট তুলে দেয়া সম্ভব নয়।
এদিকে আবুধাবীর বাংলাদেশী দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে তারা প্রতিদিন ৫০০ এমআরপি সরবরাহ করতে পারছে। ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত তারা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট সরবরাহ করেছে ৭০ হাজার। অথচ দশ লাখেরও বেশি বাংলাদেশী প্রবাসীকে এমআরপি সরবরাহ করতে লাগবে কমপক্ষে ৫ বছর। এ অবস্থায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অধিকতর উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনবোধে বাংলাদেশ থেকে জনবল ও মেশিন রিডেবল মেশিন পাঠিয়ে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।
প্রবাসী বাংলাদেশীরা জানিয়েছেন, কনস্যুলেট কর্মকর্তাদের দুর্ব্যবহার, সঠিক সময়ে এমআরপি না দেয়া ও দালালচক্রের কারণে তাদের প্রতিনিয়ত হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্কট ঘনীভূত হওয়ার পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী মন্ত্রণালয়সহ সরকারর উচ্চপর্যায়ের কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না। দূতাবাসগুলোর বক্তব্য, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এ ব্যাপারে দু’দেশের মধ্যে বৈঠক না হলে সমস্যার সমাধান দূতাবাস বা কনস্যুলেট কর্মকর্তার পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য, আন্তজার্তিক সিভিল অর্গানাইজেশনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বরের পর থেকে বিশ্বে হাতে লেখা পাসপোর্ট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।

পাসপোর্ট নিয়ে ভোগান্তি


মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এবং তদন্ত সংস্থা পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) টানাপড়েনে প্রবাসীদের পাসপোর্ট নবায়নে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এর ফাঁদে পড়ে প্রায় ৯ মাস আগে আবেদন করেও পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি প্রায় তিন হাজার প্রবাসী। মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট নিয়ে অনেক প্রবাসী বিভিন্ন দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, অনেকে
পুলিশের হাতে গ্রেফতার হচ্ছেন। কেউ বিদেশ থেকে চলে
আসতেও
বাধ্য হচ্ছেন। আবার পুলিশি তদন্তের দীর্ঘসূত্রতায় দেশে আবেদন করেও প্রায় ৯১ হাজার আবেদনকারীর আবেদন ঝুলে আছে। পুলিশের বিশেষ শাখার এসপি নজরুল ইসলাম সমকালকে জানিয়েছেন, ওই তিন হাজার প্রবাসীর পুলিশি তদন্তের তথ্য আরও প্রায় পাঁচ মাস আগে দেওয়া হয়েছে। এখন বিষয়টি এমআরপি প্রকল্প কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করছে। অন্যদিকে এমআরপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেফায়েতউল্ল্যাহ সমকালকে বলেন, প্রবাসীদের পাসপোর্ট নবায়নে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। বড় কোনো সমস্যা নেই। পুলিশের বিশেষ শাখা অনলাইনে তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত খুব বেশি আগ্রহী নয়। পুলিশি তদন্তের দীর্ঘসূত্রতার কারণে এ মুহূর্তে দেশ থেকে করা প্রায় ৯১ হাজার আবেদন ঝুলে আছে। তিনি জানান, এরই মধ্যে দেশ থেকে আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে পুলিশি তদন্ত ছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে পাসপোর্ট ইস্যু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শিগগির এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
প্রবাসীদের কান্না :
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে পুলিশের বিশেষ শাখার সামনে ঘোরাঘুরি করছিলেন সত্তর বছর বয়সী আবদুল মান্নান। তার ছেলে মোহাম্মদ সুমন বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছেন। গত ডিসেম্বরে সুমন দক্ষিণ আফ্রিকার দূতাবাসের মাধ্যমে প্রচলিত পাসপোর্ট এমআরপিতে পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেন। মোহাম্মদ মান্নান সমকালকে বলেন, প্রতি মাসেই তিনি ঢাকা আসছেন ছেলের পাসপোর্ট নবায়নের খবর নিতে। পাসপোর্ট নবায়নের কোনো খবর পাচ্ছেন না। মোহাম্মদ মান্নান জানান, পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় সুমন দক্ষিণ আফ্রিকায় কর্মবিহীন অবস্থায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এসবি অফিস থেকে বলা হয়েছে, সুমনের তদন্ত প্রতিবেদন আরও অনেক আগে জমা দেওয়া হয়েছে। আবার আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট অফিসে গেলে বলা হয়, তদন্ত রিপোর্ট আসেনি। এ কারণে পাসপোর্ট ইস্যু করা হচ্ছে না।
দুই কর্তৃপক্ষের টানাপড়েনই মূল কারণ : অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে ২ হাজার ৯০৭ প্রবাসীর তদন্তের তথ্য পাসপোর্ট অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ গত ২০ মে পাঠানো হয় ৮৫৫ জনের তথ্য। প্রত্যেকের পুলিশ তদন্ত রিপোর্ট ইতিবাচক। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী প্রবাসীদের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজারের ওপরে। পাসপোর্ট নবায়ন না হওয়ায় বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের দুর্ভোগের কথা জানিয়ে জানুয়ারি মাসেই প্রবাসীদের আবেদনের বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করার তাগিদ দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ কারণে পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে গত জানুয়ারি মাসেই প্রায় তিন হাজারের বেশি আবেদনকারীর তথ্য পাঠানো হয়। বেশিরভাগ স্থানে অনলাইন সুবিধা না থাকায় প্রিন্ট কপিতে এসব তথ্য পাসপোর্ট অধিদফতর, এমআরপি প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরে দেখা যায়, অনলাইনে তথ্য না পাওয়ার কারণে এমআরপি প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এসব আবেদনকারীর আবেদনপত্রে পুলিশি তদন্ত 'পেন্ডিং' উল্লেখ করেছে। এ কারণে পাসপোর্ট ইস্যু হয়নি। বর্তমানে পুলিশের বিশেষ শাখার ৭০টি ইউনিটের মধ্যে ৫৩টি ইউনিটে কম্পিউটার থাকলেও অনলাইন যোগাযোগ অচল। এ ছাড়া পৃথক সার্ভার স্থাপন ও কম্পিউটারের সঙ্গে প্রিন্টার, স্ক্যানারসহ অন্যান্য অতি প্রয়োজনীয় ডিভাইস সরবরাহ করা হয়নি। ফলে পুলিশের বিশেষ শাখার পক্ষে প্রথমে প্রবাসীদের আবেদন সম্পর্কে কোনো তথ্য জানাই সম্ভব হচ্ছে না। আবার যে ক'টি ইউনিটে অনলাইন সচল আছে, সার্ভার এবং অনলাইন ড্যাশবোর্ড ব্যবহারের সুযোগ না থাকায় সেগুলো থেকেও প্রবাসীদের আবেদনের ব্যাপারে সার্বক্ষণিক তথ্য পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমআরপি কর্তৃপক্ষ অনলাইনে তথ্য না পেলে এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী হচ্ছে না। তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে পুলিশের বিশেষ শাখার জন্য ৫০ টেরাবাইট ডাটা ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন সার্ভার স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এবং স্বরাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে একাধিক বৈঠক হলেও এই সার্ভার স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি।
শুধু প্রবাসীরাই নন, দেশের আবেদনকারীরাও পাসপোর্ট পেতে দীর্ঘসূত্রতায় পড়ছেন। জরুরি ভিত্তিতে ৬ হাজার টাকা দিয়ে আবেদন করেও প্রায় ১৫ থেকে ২০ দিনের আগে পাসপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি প্রচলিত পাসপোর্টধারীরা মেশিন রিডেবল করতে এসেও এ সমস্যায় পড়ছেন।
এসবি ও এমআরপি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : 
পুলিশের বিশেষ শাখার এসপি নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ভুক্তভোগী প্রবাসীদের অনেকের আত্মীয়স্বজন এসবি অফিসে ঘুরলেও এক্ষেত্রে এসবির করণীয় কিছু নেই। কারণ এই প্রবাসীদের তদন্ত রিপোর্ট আরও আগেই পাঠানো হয়েছে। পুলিশি তদন্তের দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, জরুরি ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। হজের সময় মাত্র ১৫ দিনে ১ লাখ ৭ হাজার হজযাত্রীর আবেদন তদন্ত করা হয়েছে। এসবির নিজস্ব সার্ভার না থাকা এবং বেশিরভাগ ইউনিটে অনলাইন যোগাযোগ অচল থাকার কারণে অনলাইনে তথ্য পেতে এবং পাঠাতে সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
অন্যদিকে এমআরপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেফায়েতউল্ল্যাহ বলেন, যখন পুলিশের চাহিদা অনুযায়ী কম্পিউটার এবং অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে, অনলাইন সংযোগও দেওয়া হয়েছে। আসলে পুলিশের বিশেষ শাখা অনলাইন ব্যবহারে এখন পর্যন্ত আগ্রহী হয়ে ওঠেনি এবং এটিই বড় সমস্যা।



আমিরাতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিপাকে: 
টুরিস্ট ও ট্রানজিট ভিসাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে

সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে প্রবাসীদের মাঝে হতাশা নেমে এসেছে। পাশাপাশি সৌদি আরবের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার আরব আমিরাতে ভিসা বন্ধের ঘটনা সংশ্লিষ্ট সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ মিশনগুলোর নিষ্ক্রিয়তা পরিস্থিতিকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যায় তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। গালফ নিউজের বিজনেস এডিটর সাইফুর রহমান জানান, ভিসা বন্ধ প্রত্রিয়া শুরু হয়েছে ২০ দিন পূর্ব থেকে।

কিন্তু এব্যাপারে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং কন্সুলেট নিষ্ক্রিয়, যা বাংলাদেশিদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। এ পর্যায়ে সরকারের উদাসিনতা আরো বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাই এখনি বিষয়টি নিয়ে আমিরাত সরকারের সাথে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হওয়া উচিত। অন্যথায় রেমিটেন্স প্রবাহ অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে। আমিরাত ইমিগ্রেশন গত ২ সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা দেয়া স্থগিত রেখেছে। শুধু মাত্র টুরিস্ট এবং ট্রানজিট ভিসা এখনো চালু রয়েছে। এদিকে, হঠাৎ করে আমিরাতে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রদান বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, ম্যান পাওয়ার ব্যবসায়ী, ভিসা প্রার্থী এবং প্রবাসে অবস্থানরত হাজার হাজার প্রবাসী বিপাকে পড়েছেন। শত শত কোম্পানি লাখ লাখ দিরহাম ডিপোজিট প্রদান করে হাজার হাজার শ্রমিকের জন্য লেবার মিনিস্ট্রি থেকে ভিসার অনুমতি নিলেও তা এখন বাতিল হয়ে গেছে। অচিরেই ট্রানজিট এবং টুরিস্ট ভিসাও বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ মিশনগুলো থেকে এ ব্যাপারে কোন সুদত্তর পাচ্ছেন না প্রবাসীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আমিরাত ইমিগ্রেশন ও লেবার মিনিস্ট্রিতে প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি এভসকন্ডিং হওয়ার অভিযোগ চিহ্নিত হওয়ায় আমিরাত সরকার এই পদেক্ষেপ নিয়েছে। তবে এই পর্যন্ত আমিরাত ইমিগ্রেশন অফিসিয়াল কোন বক্তব্য প্রদান করেনি। এই ব্যপারে দুবাইস্থ বাংলাদেশ কন্সুলেটের কন্সাল জেনারেল আবু জাফর বলেন, আমি এই ব্যপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঈদের ছুটিতে থাকায় বিষয়টি নিয়ে কথা বলা যায়নি। বাংলাদেশ দূতাবাসে বাংলাদেশ সরকার নিযুক্ত রাষ্টদূত নাজমূল কাওনাইনের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ছুটিতে দেশে আছেন বলে জানা যায়। দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি কামরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রবাসীরা প্রচুর অভিযোগ করেছেন। তবে আমিরাত সরকারের পক্ষ থেকে অফিসিয়ালি আমরা কিছু জানতে পারিনি। তাদের সাথে আমরা ২/১ দিনের মধ্যে কথা বলবো, তারপর কি হয়েছে জানাতে পারবো। দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তারা এই ব্যাপারে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। প্রবাসীরা জানান, হঠাৎ করে আমিরাতে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা এই প্রথম। আগে কয়েক বার আরবীদের ঘরের ভিসা নানা কারণে কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে তা খুলে দেয়া হয়। কিন্তু এই বার টুরিস্ট এবং ট্রানজিট ছাড়া সকল ভিসার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে আমিরাত সরকার। ভিসা বন্ধ হওয়ার পিছনে সাধারণ প্রবাসীরা কিছু সংখ্যক বাংলাদেশির অপরাধ প্রবণতাকে দায়ী করেছেন। তারা বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ট্রানজিট হিসাবে ব্যবহার করে কিছু সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি সৌদি আরবে অবৈধভাবে হাজার হাজার লোক পাচার করেছে। তাছাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবৈধভাবে বাংলাদেশি পার্সপোট দিয়ে আমিরাতে নিয়ে যাওয়া এবং সেখান থেকে বিভিন্ন দেশে প্রাচার করাসহ পাসপোর্ট জাল, ভিসা জাল করে একাধিক ভিসা তৈরিসহ নানা অপরাধের সাথে জড়িত হয়েছে বাংলাদেশিরা। এছাড়াও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাম্প্রতিক সময়ে নানা উশৃঙ্খল আচরণ আমিরাত প্রসাশনকে ভাবিয়ে তুলেছে। ফলে আমিরাত সরকার ভিসা বন্ধের মত পদেক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে বলে প্রবাসীরা জানান। এদিকে, মিরসরাইয়ের প্রবাসী বাংলাদেশি মোরশেদুল আলম জানান, আমি ৩ বছর আগে কাজ নিয়ে একটি কোম্পানিতে আসি। কিন্তু আমার কোম্পানিতে লেবার ইমিগ্রেশনের হিসাব অনুযায়ী লোক থাকার কথা ছিল ১০ জন। সেখানে আমার স্পন্সরকে কিছু অসাধু বাংলাদেশি টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ৫০ টি জাল ভিসা বের করেছে। এই বিষয়টি ধরা পড়ে লেবার ইমিগ্রেশনে। ফলে আমার কোম্পানির লাইসেন্সটি কালো তালিকাভুক্ত হয়ে যায়। এই প্রেক্ষিতে আমি বৈধ থাকা সত্ত্বেও আমার ভিসাটি বাতিল করতে হচ্ছে। কিন্তু ভিসা বন্ধ থাকার প্রেক্ষিতে আমি অন্য কোন লাইসেন্সে ভিসাও লাগাতে পারছিনা। ফলে আমাকে অবশ্যই দেশে ফিরে যেতে হবে। রাউজান এলাকার প্রবাসী সাইফুল আলম তার কোম্পানি থেকে ভিসা বাতিল করে অন্য কোম্পানিতে ভিসা লাগানোর জন্য প্রক্রিয়া চালিয়ে আসাছিলেন। ভিসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে তিনি আর ভিসা লাগাতে পারছেন না। তিনি এখন প্রতিদিন জরিমানা গুনছেন তার আমিরাত অবস্থানের সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার কারণে। এভাবে দিন দিন প্রবাসীদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম হচ্ছে ভিসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে। ফলে বাংলাদেশ সরকারের এ বিষয়টি নিয়ে জরুরি পদেক্ষপ নেয়া উচিত বলে মনে করেন প্রবাসী নেতৃবৃন্দ।


সৌদিতে বাঙালির দুঃখ কাফালা জটিলতা
চীনের অধিবাসীদের দুঃখ হোয়াং হো নদীর ভাঙ্গন| আর সৌদি আরব প্রবাসী বাঙালিদের দুঃখ কাফালা জটিলতা| সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশীরা কাফালা আর ভিসা বন্ধ থাকার কারণে চরম দুর্ভোগের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করছে| কাফালা বন্ধ থাকার ফলে কোনো বাঙালি ভালো কোনো কোম্পানীতে দরখাসত&ধসঢ়;দ করতে পারছে না| মালিক ভালো না হলে পূর্বে যে কেউ অন্যত্র ট্রান্সফার হতে পারতো| বেশ কয়েক বছর ধরে এ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তা এখন সম্ভব হয় না| মালিকদের ইচ্ছামত চলা, তাদের ইচ্ছামতো যে বেতন দিবে তা বাধ্য হয়ে গ্রহণ করতে হবে| মোট কথা বর্তমানে প্রবাসী বাঙালিদের স্বাধীনতা নেই| সরকার পরিবর্তন হলে প্রবাসীদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না| অথচ এই প্রবাসীদের হাড়ভাঙ্গা খাটুনি আর ঘামে ঝরা শ্রমে উপার্জিত রেমিটেন্সে বাংলাদেশ সরকার চলছে| বাংলাদেশ সরকার মুখে প্রবাসীদের জন্যে জান কোরবানের কথা বললেও বাসত&ধসঢ়;দবের সাথে কোনো মিল নেই| বর্তমান শ্রমমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন মুখে যা বলছেন, তার সাথে বাসত&ধসঢ়;দবতার মিল খুঁজে পাবেন না| আজ আর কাউকে এই মরম্নর জাহাজের উপর সওয়ার হয়ে কোথাও যেতে দেখি না| ২০০৮ এ আমি সৌদি আরবে আসি| আজ পর্যনত&ধসঢ়;দ নিজের চোখে অতীতের দৃশ্য দেখি নি| মানুষ কোথাও যেতে এখন গাড়ি ব্যবহার করে| আর মরম্নভূমির জাহাজকে গৃহপালিত পশু হিসাবে ব্যবহার করে দুধ আর মাংসের জন্য| আমি সৌদি আরবের রিয়াদ, জেদ্দা, মক্কা, মদিনা, জিজান, আলবাহা, আবা খামিছ এবং নাজরানসহ বেশ কিছু জায়গা ঘুরেছি| আগের মত রাসত&ধসঢ়;দার পাশে সেই জাহাজকে দেখিনি তেমন একটা| যা-ও দেখেছি দু-একটা| তাও চার পাশে নেট দিয়ে ঘেরা বাউন্ডারির ভিতরে| বাংলাদেশে যেমন সিলভারের আবির্ভাবে পুরাতন মাটির হাঁড়ি-পাতিল, কলস, মাটির ব্যাংক, মাটির ঘর বিলীন হয়ে গেছে| ধ্বংস হয়ে গেছে কুমার পাড়ার ঐতিহ্য| তেমনি সৌদি আরবের বিশ্ব খ্যাত মরম্নভূমির জাহাজ নামে পরিচিত উট হারিয়ে যাচ্ছে যান্ত্রিক যন্ত্রের তাণ্ডবে| তাই এই ব্যানারে সৌদির বন্ধু মুহাম্মদ ঈদ আল-বালাদ, মোহাম্মদ হোসাইন-এর সাথে আলাপ হলে তারা বলেন, এক সময় আমার বাবার অনেক উট ছিলো| আজ আগের মত নেই| শুধু দুধ আর মাংসের জন্য কিছু উট আছে| দিন বদলের কথা বলে আমরা ঐতিহ্যকে বদলে কোনো পথে যাচ্ছি| একদিন মরম্নর জাহাজ নামে খ্যাত উট আর দেখা যাবে না| তাই কেউ আর জাহাজ ও বলবে না| আর এটাই বাসত&ধসঢ়;দব|
আরব আমিরাতে ভিসা বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগে থেকেই| অথচ সংশিস্নষ্ট মন্ত্রী মিডিয়ার সামনে বলছেন ভিন্ন কথা| তিনি বলেন এই রকম কিছু ঘটেনি| অথচ আমরা যারা প্রবাসে কর্মরত আছি তারা বাসত&ধসঢ়;দবতা কি তা দেখছি| তারা তো দু চারদিনের জন্যে এসে চলে যান| আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এই যাবৎ বেশ কয়েকবার সৌদি সফর করলেন| প্রবাসীদের জন্য সুফল কী হলো তা আজও আমরা প্রবাসী বাঙালিরা জানি না| দেশে ফিরে বলছেন সৌদি সরকারের সাথে আমাদের সব ধরনের আলোচনা হয়েছে| সব সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিচ্ছেন| বাসত&ধসঢ়;দবে কই! কিছুই হলো না আজ পর্যনত&ধসঢ়;দ| অথচ পার্শবর্তী দেশ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে উদ্দেশ্যে আসেন তার সুফল সৌদি আরবে কর্মরত ভারতের নাগরিকরা ভোগ করেন| তারা তাদের জনগণের জন্য আনত&ধসঢ়;দরিক| গত ১৯ আগস্ট সৌদি আরবস্থ বাংলাদেশী হাইকমিশনার মোঃ শহিদুল ইসলামের সাথে আলোচনা হলে তিনি বলেন, বাঙালিদের অপকর্মের ফসল এটা| এখানে রাজনীতি মারামারি এতো বেশি করেছে যে, তাতে সৌদি সরকার তিতা হয়ে গেছে| তাই আজ আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশীদের এই চরম দুর্দশা| তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে জোরালো ভূমিকা নিতে হবে| বন্ধ থাকা কাফালা আর ভিসা চালু করার প্রক্রিয়া চালাতে হবে| পাশাপাশি দুষ্টলোকদের নিধন করতে হবে| বর্তমান সরকারের কাছে প্রবাসীদের দাবি কাফালা আর ভিসা চালুর ব্যাপারে সরকার বাসত&ধসঢ়;দবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে|


আমিরাতে বাংলাদেশিদের সংকট সমাধানে দূতাবাসের ভূমিকা নেই!


সততা, নিষ্ঠা কর্মপরায়ণতা এই ত্রি-গুণের সমষ্টিতে আশির দশক থেকে আরবদের মন জয় করেছিলাম আমরা বাঙালি তথা বাংলাদেশের জনগণ। আশির দশক থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত আরবরা আমাদের নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট ছিল। তদুপরি দ্রুত আরবি ভাষা আয়ত্ত করতে পারা এবং মুসলমান বলে সম্মান করতো। এমনও দেখা যেত, হযতো কোনো আরব ব্যবসা শুরু করার চিন্তা করছে। তখন কোনো বাংলাদেশিকে ডেকে বলতো, ব্যবসা শুরু করব। একজন লোক এনে দাও। তার প্লেন খরচ আমি দেব আর তোমাকেও খুশী করে দেব।

কিন্তু এখন আর সে সময় নেই। এখন আরবীয়দের ধরনা দিয়েও একটি শ্রম ভিসা যোগার করতে খরচ করতে উল্টো খরচ করতে হয় বাংলাদেশের প্রায় ২ লাখ টাকা। কিন্তু কেন এমন হলো?

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি গত সাড়ে ৩ বৎসর। উত্তর পেয়েছি। কিন্তু তাতে নিজেকে বাংলাদেশি বলে পরিচয় দিতে ঘৃণা বোধ করেছি। যতই ঘৃণা করি না কেন বাংলাদেশ আমার মা, আমার মাতৃভূমি। মাকে যেমন ঘৃণা করা যায় না ঠিক তেমনি মাতৃভূমিকেও। যখন এ লেখা লিখছি তখন আরব আমিরাতে (আবুধাবি, দুবাই, শারজাহ, আজমান, রাস আল খাইমাহ, উম আল কুয়াইন, ফুজাইরা) বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান করা বন্ধ ঘোষিত হয়েছে। এমনকি ভ্রমণ ভিসা, ট্রানজিট ভিসাও বন্ধ করে দিয়েছে এ দেশের সরকার।

কিন্তু কেন এই খড়গ নেমে আসল বাংলাদেশিদের ওপর? ফোন করেছিলাম বাংলাদেশ দূতাবাসের আবুধাবি শাখায় ০০৯৭১২৪৪৬২৭৪৫ নম্বরে, দূতাবাসের লেবার লেবার উইং-এর দায়িত্বে থাকা লতিফুল হক কাজমীর সঙ্গে কথা বলতে। ফোন বেজে চলল। কিন্তু ফোন রিসিভ করলেন না কেউ। তবু চতুর্থবার কর করার পর একজনকে পেলাম কিন্তু পেলাম না জনাব কাজমীকে।

ওই প্রান্ত থেকে যিনি ফোন রিসিভ করলেন, তার কাছে জানতে চাইলাম বাংলাদেশিদের ভিসা কেন বন্ধ? চটজলদি উত্তর পেলাম, ভিসা তো বন্ধ না। আরব আমিরাত সরকার সিস্টেম আপগ্রেড করতেছে। এজন্য সাময়িকভাবে ভিসা দিচ্ছে না। তবে তিনি আশা দিলেন, শীঘ্রই চালু হবে।

এরপর ফোন করলাম কনস্যুলেট অফিস দুবাইতে ০০৯৭১৪২৭২৬৯৬৬ নম্বরে। সেখান থেকে অবশ্য তা‍ৎক্ষণিক উত্তর দিল না। কিছুক্ষণ এই-সেই বোলচালের পর জানাল, “মিয়ানমারে দাঙ্গাকবলিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশে আশ্রয় দানে অস্বীকৃতি” আমাদের ভিসা বন্ধের অন্যতম কারণ।

ফোন রিসিভকারী আরো জানালেন, সৌদি সরকারের অব্যাহত চাপের কারণেও আরব আমিরাত সরকার ভিসা বন্ধ করে দিয়ে থাকতে পারে।

‘সৌদি কেন বাংলাদেশকে চাপে রাখবে’ এই উত্তর খুঁজতে শুরু করলাম। যা পেলাম তা হলো, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাধা প্রদান এবং রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিতে বাংলাদেশ সরকারকে বাধ্য করতেই সৌদি সরকার এহেন কর্মকাণ্ড করে থাকতে পারে। এতক্ষণ যা লিখলাম, এটা পুরোটাই কূটনৈতিক। আর কুটনৈতিক বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা শূণ্য। তাই এ ব্যাপারে কোনোপ্রকার মন্তব্য কছি না। তবে সাধারণ যে সকল কারণে আরব আমিরাত সরকার ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে তা নিয়ে এখানকার কতিপয় বাংলাদেশির সঙ্গে আলোচনা করে যা পাওয়া গেল তা আপনাদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরছি।

প্রথমত, এখানে বাংলাদেশিদের দ্বারা কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে যার কয়েকটি এখনো বিচারাধীন (এসব ঘটনায় জড়িত কয়েকজন গা ঢাকা দিয়েছে)।

দ্বিতীয়ত, প্রবাসী বাংলাদেশিরা যারা কোম্পানির আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত, তারা আর্থিক অনিয়ম করে সড়কপথে ওমান হয়ে বাংলাদেশে পাড়ি জমায়। এ সকল ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি তার পাসপোর্ট পুলিশ অফিসে জমা দিয়ে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে। দুঃখের কথা হলো এ ধরনের অভিযোগের সংখ্যা অগণিত।
তৃতীয়ত পতিতাবৃত্তির দালালিতে বাংলাদেশিদের আধিক্য। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমাদের ‘দেশি ভাইয়েরা’ পান-সিগারেট বিক্রির মত ‘চায়না ৫০’, ‘ফিলিপিনি ১০০’, ‘বাঙালি ১৫০’ করে হাক দিয়ে পতিতা’র দালালি করেন। মজার বিষয়টা হলো একজন গ্রাহক ধরলে আমার ওই দালাল ভাই পাবেন ১০-১৫ দিরহাম। পক্ষান্তরে ঘৃণিত এই বাণিজ্যের আয় সিংহভাগই যায় এর পরিচালনাকারী ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানিদের পকেটে। আর পুলিশি অভিযানে ধরা পড়ে দেশ-জাতির মুখ-কালা করে দালাল নামক আমার কোনো বাংলাদেশি ভাই। ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানি পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে তারা গা ঢাকা দেয়।

এছাড়াও কতিপয় বাংলাদেশি এখানে গার্মেন্টস ব্যবসার লাইসেন্স নিয়ে নারীদেরকে গার্মেন্টস এ চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এখানে নিয়ে এসে জোরপূর্বক তাদের দিয়ে পতিতাবৃত্তির চেষ্টা করে থাকে। এদের মধ্যে বহুসংখ্যক পালিয়ে গিয়ে পুলিশে অভিযোগ লেখান। আর এই অভিযোগকারীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। অবশ্য একজন বাংলাদেশি যৌনকর্মী আমাকে দুঃখ করে বলেছেন, অভিযোগ আমরা তখনি করাই যখন আমাদের অভিযোগের গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। সুতরাং অভিযোগকারীর অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশি অভিযান যখন হয় ততদিনে এর পরিচালনাকারীরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ এবং দিনারের থলিসহ চম্পট দেয় আপন দেশে।
চতুর্থত ভ্রমণ ভিসা নিয়ে আরব আমিরাতে এসে বেমালুম দেশে ফেরার কথা ভুলে গিয়ে দিব্যি নানানরকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়া। এদেরকে দেখা যায়, পান বিক্রি করতে (এখানে অবৈধ), রাস্তায় দাঁড়িয়ে মোবাইলের ব্যালেন্স বিক্রি করতে।

পঞ্চমত এখান থেকে ওমরাহ ভিসা নিয়ে সৌদি আরব গিয়ে আর ফিরে না আসা বাংলাদেশিদের এক ধরনের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।

ষষ্ঠত ভিসা বিক্রি করা এখানে অবৈধ। সাধারণত প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো ভিসা বাবদ সামান্য কিছু অর্থই গ্রহণ করে। কিন্তু দেখা গেল এখানে আসার পর কোনো এক শ্রমিক হেলথ ফিটনেসে (স্বাস্থ্য পরীক্ষায়) উত্তীর্ণ হতে পারলো না। সেক্ষেত্রে তাকে ফেরত পাঠানোই কোম্পানির দায়িত্ব। কিন্তু ওই শ্রমিক ভাইটি আর ফেরত যেতে চায় না। কারণ তিনি তার ভিটে, মাটি, সহায়, সম্বল বিক্রি করে এখানে এসেছেন। তো কি আর করা? কোম্পানি থেকে ফেরার হয়ে (পালিয়ে আত্মগোপনে গিয়ে অবৈধভাবে কাজ করা) আরো একজন অবৈধ রেসিডেন্সের কাতারে নাম লেখায়।

সর্বোপরি ফ্রি ভিসার নাম করে এখানে নিয়ে আসা হয়  শিক্ষিত, আধা-শিক্ষিত এবং নিরক্ষর ব্যক্তিদের, কিন্তু পরবর্তীতে তাদেরকে ভিসা প্রদানকারী ব্যক্তিকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। সুতরাং ফ্রি ভিসায় আসা ব্যক্তিরা হয়ে যান অবৈধ।

এখানে অধিকাংশ পত্রিকার নিয়ন্ত্রণ ভারতীয় কিংবা পাকিদের হাতে। বিষয়টা এমন যে আমাদের বাংলাদেশিদের কেউ অধিক খাবার খাওয়ার দরূন জোড়ে বায়ূ ত্যাগ করলেও তা বোমা ফাটানোর মত করে প্রকাশ করতে ওস্তাদ এখানকার ভারতীয় এবং পাকিস্তানি মিডিয়া। বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে নেতিবাচক ঘটনা হলে তিলকে তাল বানাতে এখানকার মিডিয়াগুলোর তুলনা নেই। সেখানে এসব প্রতিরোধে আমাদের লেবার উইং অথবা মিডিয়ার ভূমিকা নেই বললেই চলে। এখানকার মিডিয়াগুলো বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে ‘চিলে কান নিয়ে যাওয়া’র মত গল্প তৈরি করে আমাদের বদনাম রটিয়ে দেয়।

এসব কিছুর পরে বর্তমানে আরব আমিরাত সরকার বাংলাদেশিদের ধরপাকড় শুরু করেছে পুরো আরব আমিরাত জুড়েই। এর কারণ কি জানতে চেয়েছিলাম এখানকার এক পুলিশ সদস্যের কাছে এবং পরিচিত এক আরব নাগরিকের কাছে। পুলিশ জানালেন, এটা তাদের রুটিন ওয়ার্ক। ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই তারা যে সকল বাংলাদেশিদের কাছে কাগজপত্র নেই তাদের ফেরত পাঠাবে। এবং নতুন করে ভিসা দেওয়া শুরু করবে। তাই যে সমস্ত পাঠক আরব আমিরাতে আছেন, তাদের কাছে অনুরোধ, সম্ভাব্য ঝামেলা এড়াতে ‘বতাকা (আইডি), এমিরেটস আইডি কার্ড এবং পাসপোর্ট এর ভিসা পেইজ কপি করে সঙ্গে রাখুন।

নানাবিধ কারণে আমাদের কোম্পানি পরিবর্তন (ট্রান্সফার) হওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। হতে পারে কোম্পানির হাতে কাজ নেই অথবা নতুন কোনো কোম্পানিতে পদোন্নতি নেয়া। কিন্তু এখন সময় এতটাই খারাপ যে এরকম ভিসা ট্রান্সফারও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে (বাংলাদেশিদের জন্য)। তাই সকল বাংলাদেশি ভাইদের প্রতি অনুরোধ, তারা যেন নতুন কোনো চাকরির চেষ্টা না করেন।

  মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার হাতছাড়ার আশঙ্কা

নতুন সঙ্কট সরকার-ব্যবসায়ী দ্বন্দ্ব
জনশক্তি রফতানি খাতে নতুন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কুয়েত, ইরাক, লিবিয়ার পর সর্বশেষ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কার্যত দেশের জনশক্তি বন্ধ হয়ে গেছে। এ খাতের উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা এখন অপেক্ষার প্রহর গুনছেন নতুন করে মালয়েশিয়ার বাজারের আশায়। যদিও নতুন সঙ্কট হিসেবে দেখা দিয়েছে সরকার-ব্যবসায়ী দ্বন্দ্ব। এই খাতের ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন নিজেদের দ্বন্দ্বের কারণে মালয়েশিয়া হয়তো বাংলাদেশ থেকে লোক নেওয়া বন্ধ করে দেবে। বাংলাদেশ সরকার ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে নয়, নিজেরাই মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে চায়। কিন্তু মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের মাধ্যমেই লোক নিতে আগ্রহী। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর সঙ্গে এই খাতের দ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে গেছে যে, তিনি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দেখা করতেও রাজি নন।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গত ৩ দশকের মধ্যে এত খারাপ অবস্থা আর হয়নি। পরিস্থিতি এমন হয়েছে, সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিসংখ্যান অনুসারে, বাংলাদেশের শ্রমবাজারের ৮০ শতাংশই হল মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক। এক সময় মুসলমান দেশ হিসেবে লোক নিয়োগে বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দিলেও এখন একেবারে বন্ধ। সেখানে লোক যাচ্ছে হিন্দুপ্রধান দেশ নেপাল, ভারত ও পাকিস্তান থেকে।
জনশক্তি রফতানি ব্যবসায়ীরা বলেন, কূটনৈতিক তত্পরতার অভাবে মূলত জনশক্তি রফতানিতে এই মহামন্দা তৈরি হয়েছে। তারা আরও বলেন, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে এই খাতে মন্দা বইতে শুরু করে। তখন পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে কোনো উদ্যোগও ছিল না। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কুয়েত সফরে গিয়ে সেসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করে জনশক্তির বন্ধ বাজার খোলার অনুরোধ জানান। কিন্তু পরে কূটনৈতিক তত্পরতা অব্যাহত না থাকায় পরিস্থিতির আর উন্নতি হয়নি বলে মনে করেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। বন্ধ পুরনো শ্রমবাজার তো খোলেইনি, সে সঙ্গে প্রায় তিন বছর ধরে প্রবাসী শ্রমিকদের দেশে ফেরত আসার সংখ্যা বৃদ্ধি থামানো যাচ্ছে না। আর শ্রমবাজারের বর্তমান এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ এবং এই খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বায়রা নেতারা বলছেন, জনশক্তি রফতানিতে এ রকম ভয়াবহ মন্দা আগে কখনও আসেনি। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, দৈনন্দিন খরচ চালাতে না পেরে অনেক ব্যবসায়ী কর্মচারী ছাঁটাই এবং অফিস ছোট করে ফেলছেন। কয়েক বছর ধরে চলে আসা মন্দা এখন মহামন্দায় রূপ নিয়েছে।
জনশক্তি রফতানি কমে যাওয়ায় এ খাতের অনেক ব্যবসায়ী অফিস বন্ধ করে দিয়েছেন। আবার অনেকে কোনো রকমে চালু রাখতে পারলেও খরচ কমাতে কর্মী ছাঁটাই করছেন। সম্প্রতি এ খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বায়রার এক মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীরা প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, সময়মতো প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে না পারায় এ খাতে অচল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বায়রা সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, আমাদের শ্রমবাজার ক্রমেই বন্ধ হয়ে আসছে। এ খাতে নতুন নতুন সঙ্কট দেখা দিলেও সমাধানের চেষ্টা নেই। সহসা এ বিষয়ে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে শ্রমবাজারে ধস নামবে।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ার বাজার আমাদের জন্য বন্ধ থাকলেও এখন মালয়েশীয় সরকার আবার বাংলাদেশি শ্রমিক নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এতে করে এই খাতের জন্য একটা বিরাট সুযোগ এসেছে। কিন্তু এ বিষয়ে সরকারের নীতির কারণে সে সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কারণ সরকার চাচ্ছে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি করতে। এতে নানা রকম ঝামেলা বাড়বে। বিশেষ করে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, সরকারি তত্ত্বাবধানে জনশক্তি রফতানি করতে গিয়ে সরকার কখনোই সফল হয়নি। এবারও সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া বিশ্বের সব দেশেই বেসরকারি উদ্যোক্তারাই জনশক্তি রফতানি করে থাকেন। 
তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে এই উদ্যোক্তারাই এ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৮০ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠিয়েছেন। সুতরাং এসব উদ্যোক্তার প্রতি আস্থা হারালে চলবে না। তবে আমি মনে করি, শ্রমবাজারে যে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসন সম্ভব। সরকার এবং উদ্যোক্তারা একত্রে যদি বিষয়টি তদারক করে তাহলে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব। বিশেষ করে এখন সঠিক সময়ে দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, যেসব দেশ আমাদের দেশ থেকে শ্রমিক নিচ্ছে না তারা কিন্তু অন্য দেশ থেকে শ্রমিক ঠিকই নিচ্ছে। তাহলে আমাদের দেশ থেকে কেন নেবে না। আমাদের এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। 
অন্যদিকে নতুন শ্রমবাজার খোঁজার চেষ্টায় পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে সরকার পাঁচটি কমিটি করে। কমিটি নতুন বাজারের খোঁজে বিভিন্ন দেশ সফরও করে। কিন্তু নতুন কোনো বাজার খুঁজে পাওয়া যায়নি। 



ভিসা ও কপিল পরিবর্তন বন্ধের জন্য সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশিরাই দায়ী
undefined
সৌদি আরবে প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছেন এবং সৌদিতে সর্বস্তরেই বাংলাদেশিরা কাজ করে যাচ্ছেন। কায়িক শ্রমের পেশা ছাড়াও অধিকাংশই পেশায় বাংলাদেশিদের সুনাম দীর্ঘ দিনের। কিন্তু দুঃখের বিষয় বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশিদের কোন ভিসা ইস্যু হচ্ছেনা, এমন কি কোনো বাংলাদেশি কপিল পরিবর্তন ও পেশা পরিবর্তন করতে পারছেন না। বাংলাদেশিদেরকে এই দেশের সৌদি নাগরিকরা আর আগের মত ভাল চোখেও দেখছে না। বাংলাদেশিরা অনান্য দেশের শ্রমিকদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি কাজ করতে পারেন তারপরেও মালিদের মন জোগাতে পারছেন না। এবং বেতনও কম দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে বেতন দেওয়া হয় তাতে নিজের খাওয়ার খরচই হয় না।

এবার আসি অন্য প্রসঙ্গে- সৌদিআরবে, রিয়াদে দুইটি স্থান আছে নাম, হারা এবং বাথা এই দুই জায়গায় বিপুল সংখ্যাক বাংলাদেশি রয়েছেন। এর মাঝে কিছু কুচক্রির আবির্ভাব ঘটেছে যারা বিএনপি অথবা আওমালীগের রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। তাদের ভীতর অনেকেই রয়েছে যারা হুন্ডি, থাইল্যান্ডের লটারি কিংবা জুয়ার সাথে জড়িত এবং একদল রয়েছে যাদের এই দেশের কিছু অসৎ পুলিশের সাথে ভাল সম্পর্ক রয়েছে। আর এই অসৎ পুলিশের মাধ্যমে কিছু অসৎ বাংলাদেশি নিজের দেশের মানুষকেই হয়রানি করছে এবং এই দেশের প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন ভাবে চাঁদা আদায় করছে। এমনকি কিছু বাংলাদেশি পরিবারে দিনে দুপুরে ডাকাতির ঘটনাও ঘটেছে।

হারায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের বাস। এখানে বিশেষ করে ফেনি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দোহার, বরিশাল, টাঙ্গাইল ও সিলেট জেলার ভিন্ন ভিন্ন গ্র“প রয়েছে। ছোটখাট বিষয় নিয়ে এক জেলা অন্য জেলার সাথে রাস্তায় নেমে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এমনকি খুনাখুনি-রক্তারক্তির ঘটনাও ঘটে।

এই ঘটনা গুলোর খবর বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে এই দেশের জনগণ ও সরকারের কাছে পৌছে যায়, যা বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছে।

এই ঘটনা গুলো মুষ্টিমেয় কিছু লোক ঘটিয়ে যাচ্ছে এবং যার পেছনে এই দেশে প্রবাসী বিএনপি কিংবা আওমালীগের কিছু নেতার হাত রয়েছে। এই মুষ্টিমেয় কিছু অসৎ বাংলাদেশীর জন্য ২৫ লাখ সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভবিষ্যত আজ অনিশ্চয়তার দিকে।

আগেই উল্লেখ করেছি এরইমধ্যে সৌদি সরকার বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছে। আর এভাবে চলতে থাকলে সৌদিআরবে বাংলাদেশিদের ভবিষ্যতে ভালো কিছু আশা করা যায় না।

আমরা মনে করি বাংলাদেশ সরকারকে এ ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিতে হবে। সৌদিআরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। আমরা সেই অপেক্ষায়ই রয়েছি।


সৌদি আরবের রিয়াদে টুইন এক্সেলে ঈদ উৎসব

গত বৃহস্প্রতিবার সন্ধা ৭ টায় সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের বিন সোলায়মান শপিং মল এর ১১ তলায় টুইন এক্সেলে মিলনায়তনে এক আনন্দ ঘন পরিবেশে ঈদ উত্সবের আয়োজন করা হয়। আবু মুজাহিদ হানিফ এর পরিচালনায় আরিফুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে  অনুষ্ঠান এ প্রধান  অতিথি হিসেবে উপস্থিথ ছিলেন টুইন এক্সেল কোম্পানির মার্কেটিং ম্যানেজার লিটন মিয়াজী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কোম্পানির সিনিয়র সহযোগী সদস্য আলহাজ আবু সাইদ।এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কোম্পানির সহযোগী সদস্য ইন্জি: এম ,এ ইউসুফ , নেসার উদ্দিন, নুর আলম, ইসমাইল ইসলাম, ফরহাদ শরিফ, ডা: দেলোয়ার, জসিম উদ্দিন, মামুনুর রশিদ দুলাল, মিজানুর রহমান, কামাল উদ্দিন, সফিকুল ইসলাম, মুক্তি যুদ্দা মোহাম্মদ হোসাইন, জাহাঙ্গীর আলম। অনুষ্ঠানের বক্তারা সৌদি আরবের প্রচলিত আইন কানুন মেনে চলার জন্য এবং ভালো কাজের মাদ্যমে দেশের আর্থিক উন্নয়নে ভুমিকা রাখার জন্য আহবান জানানো হয়। অনুষ্ঠানে গোল্ড বিজয়ীদের সংবর্দনা এবং নতুন পার্টনারদের পরিচয় করে দেয়া হয়। এছাড়া অনুষ্ঠানে নতুন অপার হিসেবে   মোবাইল ও লেপটপ দেয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে ২ শতাদিক লোকের জন্য নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।

No comments:

Post a Comment