Thursday, September 20, 2012
সাবেক প্রধান বিচারপতির নৈতিকতা বিরোধী ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রায় প্রত্যাখ্যান করছি

গতকাল বৃহস্পতিবার গুলশান বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য পেশ করেন দলের চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া
o বিচারের নামে এমন রায়ের নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না 0
o সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ রায়ে পার্থক্য অভূতপূর্ব এবং বিচারিক অসদাচরণ 0
o শপথের অধীন ছাড়া বিচারপতি রায় লিখতে কিংবা দস্তখত করতে পারেন না 0
o খায়রুল হক নিজের লেখা রায় ফিরিয়ে এনে পুনরায় লিখেছেন 0
o ক্ষমতাসীন সরকারের ইচ্ছা পূরণের জন্যই পরস্পর বিরোধী প্রস্তাব 0
o যৌক্তিক কারণেই এ রায় পক্ষপাতদুষ্ট, অগ্রহণযোগ্য ও বাতিলযোগ্য 0
o প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা মাত্র 0
o সংবিধান সংশোধন না করলে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে 0
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে আপিল বিভাগের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায় ‘প্রত্যাখ্যান' করে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও ১৮ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, এই রায়ের ভিত্তিতে আয়োজিত কোনো নির্বাচনে তারা অংশ নেবেন না এবং জনগণ নির্বাচন হতেও দেবে না। তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতির ওই রায় নৈতিকতা বিরোধী ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জনগণ কখনোই তা গ্রহণ করবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সম্পর্কে আদালত যে চূড়ান্ত রায় দিয়েছেন তা প্রধানমন্ত্রীর কথার হুবহু প্রতিধ্বনি। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে বলে দিয়েছেন সেভাবেই রায় দেয়া হয়েছে। সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচারের নামে এমন নিকৃষ্ট রায়ের নজির পৃথিবীর আর কোনো আদালতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরো বাড়বে। তিনি বলেন, আদালতের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় পক্ষপাতদুষ্ট, বাতিলযোগ্য এবং তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, সংসদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা মাত্র। প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকেই একটি সাজানো নির্বাচন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাঁয়তারা করছে সরকার। নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের জন্য সরকারকে সংসদে বিল তোলার আহবান জানিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, সরকার যদি সংবিধান সংশোধনের বিল পাস না করে, তাহলে চলমান আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়া তার লিখিত বক্তব্যে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রেক্ষাপট এবং এর জন্য আওয়ামী লীগ আন্দোলনের নামে যে জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচি দিয়েছিল তা উল্লেখ করেন।
গতকাল বিকেল ৩ টা ১৫ মিনিটে খালেদা জিয়া তার বক্তব্য শুরু করেন। তিনি প্রায় ৩৫ মিনিট বক্তব্য রাখেন।তার এ বক্তব্যের মধ্যে কমপক্ষে ৯ বার বিদ্যুৎ চলে যায়। ফলে বিরতি দিয়েই খালেদা জিয়া তার লিখিত বক্তব্য পেশ করেন। সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গনি, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, এম কে আনোয়ার, আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আববাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিচারপতি টি এইচ খান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, বিরোধী দলীয় নেতার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি
এই জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে মতাসীন আওয়ামী লীগ। এ জন্য একটি স্বল্পকালীন অ্যাকশান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। জানা গেছে, অতি দ্রুততার সাথে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন দিতে চায় সরকার। বিরোধী দলের সম্ভাব্য আন্দোলন কর্মসূচির প্রস্তুতির মধ্যেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। এ মাসের শেষ দিকে অথবা নভেম্বরের শুরুতেই জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়ার ঘোষণা আসতে পারে। নির্দলীয় নিরপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে বিরোধী দলের দাবির বিষয়ে পুরোপুরি না হলেও কিছুটা ছাড় দিয়েই আগাম নির্বাচনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো এ আভাস দিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্ধারিত সময়ের আগে দেয়ার ব্যাপারে সরকারের নীতিনির্ধারক মহল একমত। নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার তার আগের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছে। এখন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে নতুন ধারণা উপস্থাপন করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সংসদ ভেঙে দেয়া হবে। বুধবার জাতীয় সংসদেও প্রধানমন্ত্রী এ রকম কিছু কথা বলেছেন। তিনি এ বিষয়ে দিনণ না জানালেও তার ঘনিষ্ঠ মহলে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। সংবিধানের ৫৭ ও ৫৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভেঙে দেয়ার অনুরোধ জানাতে পারেন। এরপর নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ওই মন্ত্রিসভার আকার এবং করণীয় রাষ্ট্রপতিই নির্ধারণ করবেন। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত রায় অনুযায়ী বর্তমানে নির্দলীয় নিরপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান আর কার্যকর নেই। এ কারণে মেয়াদ পূর্তির আগেই সরকার পদত্যাগ করে আগাম নির্বাচন দিয়ে সব বিতর্কের ইতি ঘটানোর চিন্তাভাবনা করছে।
কেন আগাম নির্বাচন? : সংবিধান অনুযায়ী সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর। সে হিসাবে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হবে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। কিন্তু সে পর্যন্ত এই সরকার মতায় থাকলে তাদের লাভের চেয়ে তির দিকটাই সামনে আসছে। বিভিন্নভাবে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা হিসাব করে দেখেছেন, তাদের জনসমর্থনের পারদ দ্রুত নিম্নগামী হচ্ছে। অর্থনৈতিক েেত্র ঘোর বিশৃঙ্খলা চলছে। ব্যাংকিং খাত দেউলিয়া হওয়ার পথে। দুর্নীতি আর অদতার কথা এখন সরকারের দায়িত্বশীল লোকদেরও মুখে মুখে। শেয়ারবাজারে লুটপাট আর পদ্মা সেতু নিয়ে কেলেঙ্কারি শেষ না হতেই রাষ্ট্র মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্ক গ্রুপের অর্থ লোপাটের মতো ঘটনাগুলো দেশের গোটা অর্থনীতিতে বিপর্যয়ের আলামত দেখাচ্ছে। সুশাসন ও মানবাধিকার প্রসঙ্গ এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের ইমেজকে তিগ্রস্ত করে চলেছে। সরকারের লোকজন এবং মন্ত্রী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি নিয়ে যেসব কথা দেশে-বিদেশে আলোচিত হচ্ছে এসবের কার্যকর কোনো জবাবও তারা দিতে পারছেন না।
পাশাপাশি আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধের বিষয়টি এখন আর কারো অজানা নয়। সরকার নিজ দলের চেয়েও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে বহিরাগত হিসাবে পরিচিতদের ওপর, যারা আওয়ামী লীগের মূলধারার বাইরের শক্তি। মন্ত্রিপরিষদে এবং উপদেষ্টা হিসেবে সরকারে এদের একচ্ছত্র আধিপত্যে বিরক্ত আওয়ামী লীগের মূলধারার নেতাকর্মীরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী নির্বাচনে দলের ভেতরকার এই শক্তি সক্রিয় ভূমিকা না রাখার আশঙ্কা রয়েছে। সে রকমটি হলে নির্বাচনে শাসক দলের জন্য বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিরোধী দলের অবস্থা : বিরোধী দলের দুর্বল অবস্থান এবং আন্দোলনে তাদের প্রলম্বিত প্রস্তুতি আগাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, বর্তমানে বিএনপি যে রণাত্মক ভূমিকায় রয়েছে তা থাকতে থাকতেই একটি নির্বাচনের ঘোষণা দিলে তারা আর আন্দোলনে নামার সুযোগ পাবে না। বিএনপি যদি নির্দলীয় সরকারের দাবিতে অনড় অবস্থান বজায় রাখে তবে তাদের ছাড়াই নির্বাচন দেয়া হবে। সে নির্বাচনে সরকার সমর্থক অন্যান্য দল অংশ নেবে। এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য সমমনা দলের সাথে সরকারের একটি সমঝোতাও হয়েছে। সরকারের অনিয়ম ও দুর্নীতির যে বিষয়গুলো বিরোধী দল পুঁজি করে প্রচারণা চালাচ্ছে সে অবস্থায় তাদের নির্বাচনে শরিক করে ঝামেলা বাড়াতে চাইছে না সরকার। সরকারের কাছে যেটাকে সবচেয়ে বড় যুক্তি হিসেবে মনে করা হচ্ছে তা হলো বিরোধীরা আন্দোলনের যে হুমকিই দিক না কেন, বাস্তবে সে সামর্থ্য তাদের নেই। নির্বাচন ঠেকানোর মতো সামর্থ্যও বিরোধী দলের নেই বলে সরকারপক্ষীয়দের ধারণা। আগাম নির্বাচন দিলে বিরোধী দল বিভক্তও হয়ে পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে, যা সরকারের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে। সরকারের একাধিক সংস্থা প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সহযোগী শক্তি হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকেই মনে করে থাকে। বর্তমানে জামায়াত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিষয়েই ব্যস্ত। স্বাভাবিকভাবে সাংগঠনিক কাজ করার সামর্থ্য এখন তাদের সীমিত। এ অবস্থায় নির্বাচন হলে দল দু’টির মধ্যে ব্যবধান বাড়বে বলে সরকারের বিশ্বাস। এ ছাড়া বিএনপির আগের মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনের সময় বিরোধী দলের দাবি মানতে বেগম খালেদা জিয়াকে তার পরামর্শকেরা অনুরোধ করেছিলেন। তেমনিভাবে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে কিছুটা আগাম নির্বাচন দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। সেসব পরামর্শ উপো করার পরিণতি ভালো হয়নি বলেই বর্তমান সরকারের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন। আরো খারাপ পরিণতির আগেই তাই নির্বাচন দেয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
বিদেশীদের দূতিয়ালি : উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের েেত্র বর্তমান সরকার একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখার নীতি গ্রহণ করেছিল। কিন্তু সম্প্রতি সেই ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানের ব্যত্যয় দেখা যাচ্ছে। নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বিরূপ আচরণের কারণে শক্তিশালী দাতা ও সাহায্য সংস্থাগুলো সরকারের ওপর বিরক্ত। এসব সংস্থার অভিভাবক হিসেবে পরিচিতির শক্তিগুলোও বাংলাদেশে মতার পালাবদলে অবাধ ও নিরপে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প।ে সরকারকে তারা বিভিন্নভাবে বিষয়টি জানিয়েও দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতার রাজনীতিতে নাক গলানো প্রভাবশালী একটি দেশের সাথে সখ্যের জোরে সরকার সেই শক্তিগুলোর সাথে দরকষাকষি করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থ ছাড় এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রশ্নে সরকার তাই নিজেদের অবস্থান ণে ণে পরিবর্তন করছে। তারা এখন মনে করছে পদত্যাগ করে আগাম নির্বাচন দিলে এক ঢিলে দুই পাখিই মারা যাবে। যতদূর জানা গেছে, এ বিষয়ে প্রতিবেশী দেশের সাথে কোনোরকম সমঝোতা প্রতিষ্ঠার জন্য নেপথ্যে তৎপরতা চলছে।
সরকারের প্রস্তুতি : আগাম নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতিই সরকার নিচ্ছে। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে সচিবদের বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের সচিব বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপে হবে। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, এই সরকারের আমলে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তার সবই অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। কাজেই এই সরকারের অধীনেই নির্বাচন নিরপে ও অবাধ হওয়া সম্ভব। গত সোমবার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনারও বলেছেন, তারা আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রস্তুত।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সরকারের ভেতরে বর্তমানে নির্বাচন প্রস্তুতি জোরালোভাবে শুরু হয়েছে। সব কাজেই দ্রুততার সাথে তারা এগোচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রশাসনে কয়েক দফা পরিবর্তন আনা হয়েছে। সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিব, জেলা প্রশাসক পদে অনেক ওলট পালট করা হয়েছে। সরকারের অতীব আস্থা ও বিশ্বাসভাজন হওয়া সত্ত্বেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পরিবর্তন আসন্ন বলে জানা গেছে। মাঠপর্যায়েও পুলিশে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বেসামরিক পর্যায়ে এসব পরিবর্তনকে রুটিনমাফিক বলা হলেও তা আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি সামনে রেখেই করা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, সচিবদের সাথে বিশেষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন। সেখানে নির্বাচনমুখী কথাবার্তাই প্রাধান্য পায়। সচিবরা দু’টি দাবির কথা বলেছেন। এর একটি হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তাদের আদালত অবমাননার আইন সংশোধন করে তাদের জন্য দায়মুক্তির বিধান এবং অন্যটি তাদের বেতন বৃদ্ধি। প্রধানমন্ত্রী সেখানে কোনো প্রতিশ্র“তি দেননি। তবে সচিবদের অনেকে প্রধানমন্ত্রীকে তুষ্ট করার মতো কথাবার্তাই বলেছেন।
এ দিকে সদ্য মন্ত্রিপরিষদে যে পরিবর্তন এসেছে সেখানে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ যোগ দিতে অসম্মত হওয়ার পরও তাকে আবার কেবিনেটে আনার চিন্তাভাবনা চলছে। তোফায়েলকে দলের প্রেসিডিয়ামের সদস্য করে উপদেষ্টা পদমর্যাদা অথবা পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে কেবিনেটে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
কেন আগাম নির্বাচন? : সংবিধান অনুযায়ী সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর। সে হিসাবে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হবে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। কিন্তু সে পর্যন্ত এই সরকার মতায় থাকলে তাদের লাভের চেয়ে তির দিকটাই সামনে আসছে। বিভিন্নভাবে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা হিসাব করে দেখেছেন, তাদের জনসমর্থনের পারদ দ্রুত নিম্নগামী হচ্ছে। অর্থনৈতিক েেত্র ঘোর বিশৃঙ্খলা চলছে। ব্যাংকিং খাত দেউলিয়া হওয়ার পথে। দুর্নীতি আর অদতার কথা এখন সরকারের দায়িত্বশীল লোকদেরও মুখে মুখে। শেয়ারবাজারে লুটপাট আর পদ্মা সেতু নিয়ে কেলেঙ্কারি শেষ না হতেই রাষ্ট্র মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্ক গ্রুপের অর্থ লোপাটের মতো ঘটনাগুলো দেশের গোটা অর্থনীতিতে বিপর্যয়ের আলামত দেখাচ্ছে। সুশাসন ও মানবাধিকার প্রসঙ্গ এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের ইমেজকে তিগ্রস্ত করে চলেছে। সরকারের লোকজন এবং মন্ত্রী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি নিয়ে যেসব কথা দেশে-বিদেশে আলোচিত হচ্ছে এসবের কার্যকর কোনো জবাবও তারা দিতে পারছেন না।
পাশাপাশি আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধের বিষয়টি এখন আর কারো অজানা নয়। সরকার নিজ দলের চেয়েও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে বহিরাগত হিসাবে পরিচিতদের ওপর, যারা আওয়ামী লীগের মূলধারার বাইরের শক্তি। মন্ত্রিপরিষদে এবং উপদেষ্টা হিসেবে সরকারে এদের একচ্ছত্র আধিপত্যে বিরক্ত আওয়ামী লীগের মূলধারার নেতাকর্মীরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী নির্বাচনে দলের ভেতরকার এই শক্তি সক্রিয় ভূমিকা না রাখার আশঙ্কা রয়েছে। সে রকমটি হলে নির্বাচনে শাসক দলের জন্য বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিরোধী দলের অবস্থা : বিরোধী দলের দুর্বল অবস্থান এবং আন্দোলনে তাদের প্রলম্বিত প্রস্তুতি আগাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, বর্তমানে বিএনপি যে রণাত্মক ভূমিকায় রয়েছে তা থাকতে থাকতেই একটি নির্বাচনের ঘোষণা দিলে তারা আর আন্দোলনে নামার সুযোগ পাবে না। বিএনপি যদি নির্দলীয় সরকারের দাবিতে অনড় অবস্থান বজায় রাখে তবে তাদের ছাড়াই নির্বাচন দেয়া হবে। সে নির্বাচনে সরকার সমর্থক অন্যান্য দল অংশ নেবে। এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য সমমনা দলের সাথে সরকারের একটি সমঝোতাও হয়েছে। সরকারের অনিয়ম ও দুর্নীতির যে বিষয়গুলো বিরোধী দল পুঁজি করে প্রচারণা চালাচ্ছে সে অবস্থায় তাদের নির্বাচনে শরিক করে ঝামেলা বাড়াতে চাইছে না সরকার। সরকারের কাছে যেটাকে সবচেয়ে বড় যুক্তি হিসেবে মনে করা হচ্ছে তা হলো বিরোধীরা আন্দোলনের যে হুমকিই দিক না কেন, বাস্তবে সে সামর্থ্য তাদের নেই। নির্বাচন ঠেকানোর মতো সামর্থ্যও বিরোধী দলের নেই বলে সরকারপক্ষীয়দের ধারণা। আগাম নির্বাচন দিলে বিরোধী দল বিভক্তও হয়ে পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে, যা সরকারের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে। সরকারের একাধিক সংস্থা প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সহযোগী শক্তি হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকেই মনে করে থাকে। বর্তমানে জামায়াত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিষয়েই ব্যস্ত। স্বাভাবিকভাবে সাংগঠনিক কাজ করার সামর্থ্য এখন তাদের সীমিত। এ অবস্থায় নির্বাচন হলে দল দু’টির মধ্যে ব্যবধান বাড়বে বলে সরকারের বিশ্বাস। এ ছাড়া বিএনপির আগের মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনের সময় বিরোধী দলের দাবি মানতে বেগম খালেদা জিয়াকে তার পরামর্শকেরা অনুরোধ করেছিলেন। তেমনিভাবে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে কিছুটা আগাম নির্বাচন দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। সেসব পরামর্শ উপো করার পরিণতি ভালো হয়নি বলেই বর্তমান সরকারের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন। আরো খারাপ পরিণতির আগেই তাই নির্বাচন দেয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
বিদেশীদের দূতিয়ালি : উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের েেত্র বর্তমান সরকার একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখার নীতি গ্রহণ করেছিল। কিন্তু সম্প্রতি সেই ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানের ব্যত্যয় দেখা যাচ্ছে। নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বিরূপ আচরণের কারণে শক্তিশালী দাতা ও সাহায্য সংস্থাগুলো সরকারের ওপর বিরক্ত। এসব সংস্থার অভিভাবক হিসেবে পরিচিতির শক্তিগুলোও বাংলাদেশে মতার পালাবদলে অবাধ ও নিরপে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প।ে সরকারকে তারা বিভিন্নভাবে বিষয়টি জানিয়েও দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতার রাজনীতিতে নাক গলানো প্রভাবশালী একটি দেশের সাথে সখ্যের জোরে সরকার সেই শক্তিগুলোর সাথে দরকষাকষি করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থ ছাড় এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রশ্নে সরকার তাই নিজেদের অবস্থান ণে ণে পরিবর্তন করছে। তারা এখন মনে করছে পদত্যাগ করে আগাম নির্বাচন দিলে এক ঢিলে দুই পাখিই মারা যাবে। যতদূর জানা গেছে, এ বিষয়ে প্রতিবেশী দেশের সাথে কোনোরকম সমঝোতা প্রতিষ্ঠার জন্য নেপথ্যে তৎপরতা চলছে।
সরকারের প্রস্তুতি : আগাম নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতিই সরকার নিচ্ছে। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে সচিবদের বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের সচিব বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপে হবে। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, এই সরকারের আমলে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তার সবই অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। কাজেই এই সরকারের অধীনেই নির্বাচন নিরপে ও অবাধ হওয়া সম্ভব। গত সোমবার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনারও বলেছেন, তারা আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রস্তুত।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সরকারের ভেতরে বর্তমানে নির্বাচন প্রস্তুতি জোরালোভাবে শুরু হয়েছে। সব কাজেই দ্রুততার সাথে তারা এগোচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রশাসনে কয়েক দফা পরিবর্তন আনা হয়েছে। সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিব, জেলা প্রশাসক পদে অনেক ওলট পালট করা হয়েছে। সরকারের অতীব আস্থা ও বিশ্বাসভাজন হওয়া সত্ত্বেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পরিবর্তন আসন্ন বলে জানা গেছে। মাঠপর্যায়েও পুলিশে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বেসামরিক পর্যায়ে এসব পরিবর্তনকে রুটিনমাফিক বলা হলেও তা আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি সামনে রেখেই করা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, সচিবদের সাথে বিশেষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন। সেখানে নির্বাচনমুখী কথাবার্তাই প্রাধান্য পায়। সচিবরা দু’টি দাবির কথা বলেছেন। এর একটি হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তাদের আদালত অবমাননার আইন সংশোধন করে তাদের জন্য দায়মুক্তির বিধান এবং অন্যটি তাদের বেতন বৃদ্ধি। প্রধানমন্ত্রী সেখানে কোনো প্রতিশ্র“তি দেননি। তবে সচিবদের অনেকে প্রধানমন্ত্রীকে তুষ্ট করার মতো কথাবার্তাই বলেছেন।
এ দিকে সদ্য মন্ত্রিপরিষদে যে পরিবর্তন এসেছে সেখানে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ যোগ দিতে অসম্মত হওয়ার পরও তাকে আবার কেবিনেটে আনার চিন্তাভাবনা চলছে। তোফায়েলকে দলের প্রেসিডিয়ামের সদস্য করে উপদেষ্টা পদমর্যাদা অথবা পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে কেবিনেটে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
আবারও বাড়ল বিদ্যুতের দাম

বাড়তি বিদ্যুত্ বিলের খড়্গ আবার নেমে এসেছে গ্রাহকদের ঘাড়ে। গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম আরও ১৫ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে গ্রাহকদের এ বাড়তি দাম দিতে হবে। বিদ্যুতের পাইকারি দামও বাড়ানো হয়েছে ১৭ শতাংশ।
সরকারি এ সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেন গ্রামাঞ্চলের গ্রাহকরা। পল্লী বিদ্যুত্ সমিতির (আরইবি) গ্রাহকরা তিনশ ইউনিটের বেশি ব্যবহার করলেই মূল এককের প্রায় দ্বিগুণ বিল দিতে হবে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি ধাপ পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগের তিনটি ধাপ ভেঙে এখন ৬টি ধাপ করা হয়েছে।
এদিকে বর্তমান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এ পর্যন্ত ছয়বার দাম বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে গত মার্চ মাস থেকে ধাপ পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে বিদ্যুতের দাম ক্ষেত্রবিশেষ তিনগুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বারবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহক। তারা বলেন, দুর্নীতি ও অপব্যয়ের কারণে দেশের ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সরকার বিদ্যুত্ বিল বাড়িয়েছে। গ্রাহকদের গলা কেটে টাকা নিয়ে সরকার লুটপাটের মাধ্যমে আত্মসাত্ করেছে।
ষষ্ঠবারের মতো দাম বৃদ্ধি : গতকাল বিইআরসি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেন চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ হোসেন। এ সময় কমিশনের অপর সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ, প্রকৌশলী মো. এমদাদুল হক ও দেলোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, গ্রাহক পর্যায়ে খুচরা দাম ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটে গড় খুচরা মূল্য ৫ টাকা থেকে বেড়ে হলো ৫ টাকা ৭৫ পয়সা। পাইকারি দাম ৪ টাকা দুই পয়সা থেকে বেড়ে দাঁড়াল ৪ টাকা ৭০ পয়সা।
দাম বৃদ্ধি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, গ্রাহকদের পাশাপাশি সরকারের বিষয়টিও আমাদের দেখতে হয়। দাম বৃদ্ধি না করলে বিদ্যুত্ উত্পাদন ব্যাহত হবে। লোডশেডিং থেকে বাঁচাতেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান তিনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময় বিদ্যুতের দাম আর বাড়বে না।
বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনগণের জীবনকে দূর্বিষহ করে তোলার দায় বিইআরসি নেবে কি না—সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ ইউসুফ হোসেন বলেন, সরকার আরও বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা অনেক হিসাব-নিকাশ করেই সহনীয়ভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছি। আশা করছি, জনগণ এটা মেনে নেবে।
চেয়ারম্যানের উদ্দেশে এক সাংবাদিক প্রশ্ন রেখে বলেন, কথিত আছে নিজাম ডাকাত একসময় ধনীদের বাড়ি লুট করে গরিব ও অসহায় লোকদের মধ্যে বিলিয়ে দিত; কিন্তু আপনি বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর নামে গরিবদের গলা কেটে সরকারের হাতে টাকা তুলে দিচ্ছেন। গরিবদের আশীর্বাদে নিজাম ডাকাত নিজামউদ্দিন আউলিয়া হতে পারলে গরিবদের বদদোয়ায় আপনি কী হবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা গরিবদের গলা কাটি না। ধাপ পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন করায় সবাই বিপাকে পড়েছিল। এখন ঠিক করে ফেলেছি। আমাদের একটু ভুল হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, আমি কোথাও গেলে সবাই আমাকে ধরে বলত, কী ভাই, এক হাজার টাকার বিল এখন চার হাজার টাকা দিতে হয়। এ নিয়ে আমিও বিপাকে পড়তাম।
ছয় ধাপ : প্রথম ধাপে শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত আরইবির গ্রাহকদের জন্য ইউনিটপ্রতি ৩ টাকা ৬৬ পয়সা এবং অন্য সব সংস্থার গ্রাহকদের জন্য ৩ টাকা ৩৩ পয়সা। দ্বিতীয় ধাপে ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত আরইবিতে দাম পড়বে ৪ টাকা ৩৭ পয়সা এবং অন্যান্য সংস্থার গ্রাহকের জন্য দাম পড়বে ৪ টাকা ৭৩ পয়সা। তৃতীয় ধাপে ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত আরইবির গ্রাহকদের জন্য ইউনিটপ্রতি দাম ৪ টাকা ৫১ পয়সা এবং অন্য সব সংস্থার গ্রাহকের জন্য ৪ টাকা ৮৩ পয়সা। চতুর্থ ধাপে ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত আরইবির গ্রাহকদের জন্য ৭ টাকা ১০ পয়সা এবং অন্য সংস্থার গ্রাহকদের জন্য ৪ টাকা ৯৩ পয়সা। পঞ্চম ধাপে ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট পর্যন্ত আরইবির গ্রাহকদের জন্য ৭ টাকা ৪০ পয়সা এবং অন্যান্য সংস্থার গ্রাহকের জন্য পড়বে ৭ টাকা ৯৮ পয়সা। ষষ্ঠ ধাপে ৬০০ ইউনিট থেকে শুরু করে এর বেশি বিদ্যুত্ ব্যবহারের জন্য আরইবিসহ সব সংস্থার গ্রাহকের ইউনিটপ্রতি দাম পড়বে ৯ টাকা ৩৮ পয়সা। সব গ্রাহকই এই ধাপ সুবিধা পাবেন বলে জানান বিইআরসি চেয়ারম্যান।
ছয়বার দাম বাড়িয়ে রেকর্ড সৃষ্টি : বর্তমান সরকার ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে শুধু আরইবি গ্রাহকদের বিদ্যুতের মূল্য ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাড়ায়। এরপর ২০১০ সালের মার্চে আরইবি ছাড়া অন্যান্য সংস্থার গ্রাহকের গড়ে ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। ১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শতকরা ৫ ভাগ খুচরা দাম বাড়ানো হয়। একই বছরের ডিসেম্বর মাসে ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বাড়ানো হয়। চলতি বছরে ফেব্রুয়ারি মাসে ৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, ১ মার্চ ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং সর্বশেষ গতকাল খুচরা দাম আরও ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়।
প্রতিবাদ : বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছে ব্যবসায়ী সংগঠন ও বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহক। এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ায় রফতানিমুখী শিল্পের জন্য সমস্যার সৃষ্টি হবে; উন্নয়ন ও উত্পাদন ব্যাহত করবে। তিনি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেন।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণায় টেলিফোনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আবুল কাশেম বলেন, ভাই একটু লেখেন। আমরা আর পারছি না। সরকার পাইছে কী? যখন-তখন বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। আসলে চুরি-চামারির টাকা জোগাড় করতেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে।
সরকারি এ সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেন গ্রামাঞ্চলের গ্রাহকরা। পল্লী বিদ্যুত্ সমিতির (আরইবি) গ্রাহকরা তিনশ ইউনিটের বেশি ব্যবহার করলেই মূল এককের প্রায় দ্বিগুণ বিল দিতে হবে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি ধাপ পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগের তিনটি ধাপ ভেঙে এখন ৬টি ধাপ করা হয়েছে।
এদিকে বর্তমান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এ পর্যন্ত ছয়বার দাম বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে গত মার্চ মাস থেকে ধাপ পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে বিদ্যুতের দাম ক্ষেত্রবিশেষ তিনগুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বারবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহক। তারা বলেন, দুর্নীতি ও অপব্যয়ের কারণে দেশের ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সরকার বিদ্যুত্ বিল বাড়িয়েছে। গ্রাহকদের গলা কেটে টাকা নিয়ে সরকার লুটপাটের মাধ্যমে আত্মসাত্ করেছে।
ষষ্ঠবারের মতো দাম বৃদ্ধি : গতকাল বিইআরসি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেন চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ হোসেন। এ সময় কমিশনের অপর সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ, প্রকৌশলী মো. এমদাদুল হক ও দেলোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, গ্রাহক পর্যায়ে খুচরা দাম ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটে গড় খুচরা মূল্য ৫ টাকা থেকে বেড়ে হলো ৫ টাকা ৭৫ পয়সা। পাইকারি দাম ৪ টাকা দুই পয়সা থেকে বেড়ে দাঁড়াল ৪ টাকা ৭০ পয়সা।
দাম বৃদ্ধি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, গ্রাহকদের পাশাপাশি সরকারের বিষয়টিও আমাদের দেখতে হয়। দাম বৃদ্ধি না করলে বিদ্যুত্ উত্পাদন ব্যাহত হবে। লোডশেডিং থেকে বাঁচাতেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান তিনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময় বিদ্যুতের দাম আর বাড়বে না।
বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনগণের জীবনকে দূর্বিষহ করে তোলার দায় বিইআরসি নেবে কি না—সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ ইউসুফ হোসেন বলেন, সরকার আরও বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা অনেক হিসাব-নিকাশ করেই সহনীয়ভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছি। আশা করছি, জনগণ এটা মেনে নেবে।
চেয়ারম্যানের উদ্দেশে এক সাংবাদিক প্রশ্ন রেখে বলেন, কথিত আছে নিজাম ডাকাত একসময় ধনীদের বাড়ি লুট করে গরিব ও অসহায় লোকদের মধ্যে বিলিয়ে দিত; কিন্তু আপনি বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর নামে গরিবদের গলা কেটে সরকারের হাতে টাকা তুলে দিচ্ছেন। গরিবদের আশীর্বাদে নিজাম ডাকাত নিজামউদ্দিন আউলিয়া হতে পারলে গরিবদের বদদোয়ায় আপনি কী হবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা গরিবদের গলা কাটি না। ধাপ পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন করায় সবাই বিপাকে পড়েছিল। এখন ঠিক করে ফেলেছি। আমাদের একটু ভুল হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, আমি কোথাও গেলে সবাই আমাকে ধরে বলত, কী ভাই, এক হাজার টাকার বিল এখন চার হাজার টাকা দিতে হয়। এ নিয়ে আমিও বিপাকে পড়তাম।
ছয় ধাপ : প্রথম ধাপে শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত আরইবির গ্রাহকদের জন্য ইউনিটপ্রতি ৩ টাকা ৬৬ পয়সা এবং অন্য সব সংস্থার গ্রাহকদের জন্য ৩ টাকা ৩৩ পয়সা। দ্বিতীয় ধাপে ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত আরইবিতে দাম পড়বে ৪ টাকা ৩৭ পয়সা এবং অন্যান্য সংস্থার গ্রাহকের জন্য দাম পড়বে ৪ টাকা ৭৩ পয়সা। তৃতীয় ধাপে ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত আরইবির গ্রাহকদের জন্য ইউনিটপ্রতি দাম ৪ টাকা ৫১ পয়সা এবং অন্য সব সংস্থার গ্রাহকের জন্য ৪ টাকা ৮৩ পয়সা। চতুর্থ ধাপে ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত আরইবির গ্রাহকদের জন্য ৭ টাকা ১০ পয়সা এবং অন্য সংস্থার গ্রাহকদের জন্য ৪ টাকা ৯৩ পয়সা। পঞ্চম ধাপে ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট পর্যন্ত আরইবির গ্রাহকদের জন্য ৭ টাকা ৪০ পয়সা এবং অন্যান্য সংস্থার গ্রাহকের জন্য পড়বে ৭ টাকা ৯৮ পয়সা। ষষ্ঠ ধাপে ৬০০ ইউনিট থেকে শুরু করে এর বেশি বিদ্যুত্ ব্যবহারের জন্য আরইবিসহ সব সংস্থার গ্রাহকের ইউনিটপ্রতি দাম পড়বে ৯ টাকা ৩৮ পয়সা। সব গ্রাহকই এই ধাপ সুবিধা পাবেন বলে জানান বিইআরসি চেয়ারম্যান।
ছয়বার দাম বাড়িয়ে রেকর্ড সৃষ্টি : বর্তমান সরকার ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে শুধু আরইবি গ্রাহকদের বিদ্যুতের মূল্য ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাড়ায়। এরপর ২০১০ সালের মার্চে আরইবি ছাড়া অন্যান্য সংস্থার গ্রাহকের গড়ে ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। ১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শতকরা ৫ ভাগ খুচরা দাম বাড়ানো হয়। একই বছরের ডিসেম্বর মাসে ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বাড়ানো হয়। চলতি বছরে ফেব্রুয়ারি মাসে ৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, ১ মার্চ ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং সর্বশেষ গতকাল খুচরা দাম আরও ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়।
প্রতিবাদ : বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছে ব্যবসায়ী সংগঠন ও বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহক। এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ায় রফতানিমুখী শিল্পের জন্য সমস্যার সৃষ্টি হবে; উন্নয়ন ও উত্পাদন ব্যাহত করবে। তিনি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেন।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণায় টেলিফোনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আবুল কাশেম বলেন, ভাই একটু লেখেন। আমরা আর পারছি না। সরকার পাইছে কী? যখন-তখন বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। আসলে চুরি-চামারির টাকা জোগাড় করতেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে।
পদ্মায় ফিরেছে বিশ্ব ব্যাংক
|
‘রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আজ বৃহস্পতিবার বলেছেন, সাবেক বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক অবসর গ্রহণের আগে এবং পরে পৃথক রায় দিয়ে বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেয়া সুপ্রিম কোর্টের রায়কে অস্পষ্ট এবং অগ্রহণযোগ্য হিসেবেও অভিহিত করেছেন।
আজ বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বেগম জিয়া এ মন্তব্য করেন। রোববার সুপ্রিম কোর্ট ওই রায় প্রকাশ করে।
বিরোধী দল বলে আসছে, ওই রায়ে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে।
খালেদা জিয়া আগেই জানিয়েছেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা ছাড়া তার দল নির্বাচনে যাবে না।
রায় সম্পর্কে খালেদা জিয়া আরো বলেন, এই রায় নৈতিকতাবিরোধী। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে এই রায় দেয়া হয়েছে। এটি দেশের রাজনৈতিক সংকট আরো বাড়াবে। জাতিকে এর মাধ্যমে বিচার বিভাগকে দলীয়করণের দৃষ্টান্ত দেখতে হলো। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এ রায় তাই জনগণ মেনে নেবে না।
তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক রায়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের হুবহু প্রতিধ্বনি এবং তাদের পূর্ববর্তী রায়ের সঙ্গে স্পষ্টতই অসঙ্গতিপূর্ণ। মাননীয় সাবেক প্রধান বিচারপতির এমন পপাতদুষ্ট আচরণ একটি মারাত্মক বিচারিক অসদাচারণ।
তিনি বলেন, এই মন্দ দৃষ্টান্ত দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ শুধু নয়, গোটা দেশ ও দেশের জনগণকে হেয় করবে।
সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ১৮ দলের অবস্থানও তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আর এ গনি, টি এইচ খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নজরুল ইসলাম খানসহ বিএনপির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এখানে খালেদা জিয়ার লিখিত বক্তব্য পুরোটা তুলে ধরা হলো-
‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আপনারা জানেন যে, ১৯৯৬ সালের আগে দেশের সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান ছিল না। ১৯৯৫ সাল থেকে বর্তমানে মতাসীন আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামসহ কতিপয় রাজনৈতিক দলকে সাথে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সহিংস আন্দোলন শুরু করে। তারা দিনের পর দিন হরতাল করেছে, যানবাহন ও সম্পদের বিপুল তি সাধন করেছে, নীরিহ মানুষের জীবন নাশ করেছে, সংসদ বর্জন করেছে এবং শেষ পর্যন্ত এই দাবিতে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ পর্যন্ত করেছে। তাদের সেই পদত্যাগের ফলে জাতীয় সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে সংবিধান সংশোধন অসম্ভব হয়ে পড়ে। ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্র“য়ারি জাতীয় সংসদের নির্বাচনের পর দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থনে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুমোদনের মাধ্যমে আমরা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিধান করি। এই বিধানের অধীনে ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগ ও তার সমমনা দলগুলো পুনরায় আন্দোলনের নামে সহিংসতা শুরু করে। ক্রমাগত হরতাল, জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচি, অবরোধ এবং শেষ পর্যন্ত লগি-বৈঠা আন্দোলনে প্রকাশ্য রাজপথে মানুষ খুনের ঘটনা ঘটিয়ে তারা দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এরই সুযোগে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারীর আবরণে দেশে চলমান গণতন্ত্র ধ্বংস করে প্রতিষ্ঠিত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ছদ্মাবরণে সেনা সমর্থিত এক অসংবিধানিক সরকার। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এই অসংবিধানিক সরকারকে তাদের আন্দোলনের ফসল বলে ঘোষণা দেন এবং তাদের সকল অপকর্মকে আগাম বৈধতা প্রদান করেন। দীর্ঘ ২ বছর ধরে সেই সরকার দেশকে রাজনীতিহীন এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বহীন করার অপচেষ্টা চালায়। তাদের অপশাসনে অতিষ্ঠ জনগণের আন্দোলনের মুখে তারা জরুরী অবস্থা বহাল রেখেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়। আমরা জরুরি অবস্থার মধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে তারা জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারে বাধ্য হয়। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ সেই অবৈধ সরকারের সকল অপকর্মের বৈধতা দেয়ার ঘোষণা দিয়ে তাদের সাথে অশুভ আঁতাত করে এবং জরুরী অবস্থার মধ্যেই নির্বাচনে যেতে রাজি হয়। তাদের এই আঁতাত বুঝতে পেরেও জনগণকে তাদের হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেয়া এবং অনির্বাচিত স্বৈরশাসন থেকে জনগণকে মুক্ত করার জন্য আমরা নির্বাচনে অংশ নেই। নীল নকশার সেই নির্বাচনে মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের সহায়তায় ব্যাপক কারচুপি সম্পর্কে আপনারা সবাই অবহিত আছেন।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ কখনো নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তনের কথা বলেনি। তাদের নির্বাচনী ইশতেহারেও এ সম্পর্কে কোনো কথা নেই। এমন কি সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে গঠিত সংসদীয় কমিটিতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার সুপারিশ করেছে। একইভাবে দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণী-পেশার সংগঠন, সংবিধান বিশেষজ্ঞগণও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পে মত দিয়েছেন।
এরপর সরকার তাদের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়ায় নির্বাচনে অবধারিত পরাজয়ের বিষয়টি বুঝতে পেরে মত পাল্টিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের কথা বলা শুরু করে।
অন্যদিকে সেই সময় নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি জনাব এ বি এম খায়রুল হক হঠাৎ করে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের বিষয়ে বহু আগের এক রীট মামলা হতে উদ্ভুত আপিল শুনানীর জন্য গ্রহণ করেন। বিষয়টি সাংবিধানিকভাবে অতীব গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় আদালতের বন্ধু হিসাবে যে ৮ জন সিনিয়র আইনজীবিকে মতামত দিতে ডাকা হয়েছিল তাদের ৭ জনই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা বহাল রাখা এবং এই ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় সংবিধানের সাথে অসংগতিপূর্ণ নয় বলে মত দেন। এতদসত্ত্বেও সাবেক প্রধান বিচারপতি জনাব এ বিএম খায়রুল হক গত বছর ১৭ মে তারিখে অবসরে যাওয়ার মাত্র এক সপ্তাহ আগে ১০ মে তারিখে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে এক সংপ্তি রায় ঘোষণা করেন। এটি ছিল একটি বিভক্ত রায়। তিনি প্রকাশ্য আদালতে যে সংপ্তি ও বিভক্ত রায় ঘোষণা করেছিলেন তার সাথে অবসরে যাওয়ার ১৬ মাস পরে গত কয়েকদিন আগে প্রকাশিত রায়ের সুস্পষ্ট পার্থক্য অভূতপূর্ব এবং বিচারিক অসদাচারণ। আমরা তার এই আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আমরা দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষন করে বলতে চাই যে Ñ
ক। বিচারকগণ পপাতহীন থেকে সুবিচার করার যে প্রতিশ্র“তি ঘোষণা করে বিচারক হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন- অবসরে যাওয়ার পর তারা সেই শপথের অধীন থাকেন না। আর সে কারণেই অবসরপ্রাপ্ত কোনো বিচারপতি আদালতে বসতে পারেন না, শুনানী করতে পারেন না এবং একই কারণে কোন মামলার রায়ও লিখতে কিংবা তাতে দস্তখত করতে পারেন না। কিন্তু বিচারপতি খায়রুল হক তাই করেছেন। ফলে এই রায় যৌক্তিক কারণেই পপাতদুষ্ট, অগ্রহণযোগ্য ও বাতিলযোগ্য।
খ। ১০ মে, ২০১১ তারিখে প্রকাশ্য আদালতে ঘোষিত রায়ে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী, ১৯৯৬ ভাবিসাপেে (চৎড়ংঢ়বপঃরাবষু) বাতিল ও মতা বহির্ভূত ঘোষণা করে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন যেÑ
“জাতীয় সংসদের দশম ও একাদশ নির্বাচন অনাদিকাল থেকে চলে আসা নীতির ভিত্তিতে ত্রয়োদশ সংশোধনীর বিধানসমূহের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে, যা অন্যবিধভাবে বৈধ নয়Ñ প্রয়োজনের কারণে বৈধ; জনগণের নিরাপত্তার জন্যÑযা সর্বোচ্চ আইন এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্যÑ যা সর্বোচ্চ আইন।”
ঐ রায়ে আরো বলা হয়েছিলÑ
“যা হোক, ইতিমধ্যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসাবে সাবেক প্রধান বিচারপতি অথবা আপীল বিভাগের কোন বিচারপতিকে নিয়োগ দানের বিধানটি বাদ দেয়ার জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার েেত্র জাতীয় সংসদ স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।”
অথচ, সম্প্রতি প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক তারই ঘোষিত রায় থেকে সরে গিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিবর্তে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব করেছেন।
প্রকাশ্য আদালতে ঘোষিত সংপ্তি রায় এবং পরবর্তী পর্যায়ে ঘোষিত লিখিত রায়ে এমন গরমিল নজিরবিহীন। এ ঘটনা যে হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্যই ঘটানো হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
উল্লেখ্য যে, সাম্প্রতিক রায়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের যে নির্দেশনা দিয়েছেনÑতা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের হুবহু প্রতিধ্বনি এবং তাদের পূর্ববর্তী রায়ের সাথে স্পষ্টত:ই অসঙ্গতিপূর্ণ। মাননীয় সাবেক প্রধান বিচারপতির এমন পপাতদুষ্ট আচরণ একটি মারাত্মক বিচারিক অসদাচারণ।
এই মন্দ দৃষ্টান্ত দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ শুধু নয় - গোটা দেশ ও দেশের জনগণকে হেয় করবে।
গ। বিচারপতি আঃ ওয়াহাব মিয়া সাবেক প্রধান বিচারপতির লেখা রায়ের সাথে ১০ মে ২০১১ তারিখে ঘোষিত রায়ের অসঙ্গতির কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করে তার সাথে দ্বিমত পোষণ করে আলাদা রায় দিয়েছেন। বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বিচারপতি আঃ ওয়াহাব মিয়ার সাথে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করেছেন। একই সাথে তারা ত্রয়োদশ সংশোধনীকে সাংবিধানিকভাবে অপরিহার্য্য এবং সংবিধানের মূল চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক নয় বলেও মত দিয়েছেন।
একই মত দিয়েছেন বিচারপতি ইমান আলীও। তিনি আরো বলেছেন যে, এই রায়ের ফলে দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট আরো ঘনীভূত হবে।
সাবেক প্রধান বিচারপতি টেলিভিশনে দেয়া এক সাাৎকারে বলেছিলেন যে তিনি ২৯ মার্চ, ২০১২ তারিখে তার লেখা রায় সই করে জমা দিয়েছেন।
গত রবিবার সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন যে, জমাকৃত রায়ে পরিবর্তন ও পরিমার্জনের জন্য তিনি সেই রায় ফেরত নিয়ে কয়েক মাস পরে আবার জমা দিয়েছেন। অর্থাৎ একই রায় তিনি ২ বার লিখেছেন এবং ২ বার দস্তখত করেছেন। মতাসীন সরকারের অভিপ্রায় অনুযায়ী লেখার জন্যই যে তিনি নিজের লেখা রায় ফিরিয়ে এনে পুনরায় লিখেছেন তা সুষ্পষ্ট হয়েছে নতুন রায়ে সরকারি অবস্থানের পে লেখা বিভিন্ন প্রস্তাবে।
তার এই আচরণ একেবারেই বিচারক সুলভ নয়Ñ বরং নৈতিকতা বিরোধী। ফলে অনিবার্য্যভাবেই এই রায়ের স্বচ্ছতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে - যার জবাব দেয়ার নৈতিক দায়িত্ব সাবেক প্রধান বিচারপতির।
প্রবীন আইনজীবি ব্যারিস্টার রফিকুল হক তার এই পরিবর্তন - পরিমার্জনের বিষয়টিকে বিশ্রীরকম ভুল ও অসদাচারন বলে বর্ণনা করেছেন।
বার কাউন্সিলের নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রবীন আইনজীবি এ্যাড. খন্দকার মাহবুব হোসেন একে সরাসরি প্রতারণা বলেছেন।
ঘ। ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের মূল কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে যেÑ অনির্বাচিত ব্যক্তিদের দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালিত হতে পারে না। অথচ ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রস্তাব করা হয়েছে যে, মতাসীন সরকারই সংপ্তিাকারে নতুন নির্বাচিত সরকারের মতাগ্রহণ করা পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে। যদিও রায়ের অন্য অংশে নির্বাচনের ৪২ দিন আগে সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সংসদ বহাল না থাকলে কেউই নির্বাচিত থাকেন না।
তাহলে ঐ ৪২ দিন-অর্থাৎ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলাকালে, নির্বাচনের সময় এবং নতুন সরকার মতা গ্রহণ করা পর্যন্ত অনির্বাচিত ব্যক্তিরা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন কোন যুক্তিতে ? এটি বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের স্ববিরোধিতার অসংখ্য উদাহরণের মধ্যে একটি।
উল্লেখযোগ্য যে, ১০ মে ২০১১ তারিখে যখন সংপ্তি রায় ঘোষণা করা হয় তখন জাতীয় সংসদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান ছিল। বর্তমান সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংসদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার ৯০ দিন আগে থেকেই নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু করার বিধান রেখেছে। সদ্য ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে নির্বাচনের পূর্ববর্তী ৪২ দিনের উল্লেখ স্পষ্টত:ই সরকারি ইচ্ছার সাথে সঙ্গতি রেখেই করা হয়েছে। আদালতের রায়কে রাজনীতিকরণের এ এক চরম নিন্দনীয় দৃষ্টান্ত।
মতাসীন সরকারের ইচ্ছা পূরণের জন্যই যে এসব পরস্পর বিরোধী প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। বিচারের নামে দলীয়করণের এমন নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত পৃথিবীর কোনো আদালতে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
আমরা মনে করি যে নৈতিকতা বিরোধী ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এই রায় যৌক্তিক কারণেই অকার্যকর। এই রায়ের কারণে দেশে অনভিপ্রেত অস্থিরতা সৃষ্টি হবে এবং রাজনৈতিক সংকট আরো বৃদ্ধি পাবে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আমরা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। ১৯৭৫ সালে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠার সময় বিচার বিভাগকে প্রশাসনের অধীন করা হয়েছিল। আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তা থেকে বিচার বিভাগকে মুক্ত করেছিলেন।
দেশের জনগণ বিচার বিভাগকে দলীয় প্রভাবমুক্ত এক নিরপে প্রতিষ্ঠান হিসাবে দেখতে চায়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তারা সুবিচার থেকে বঞ্চিত ও আশাহত হয়েছে।
আমরা ঘোষণা করছি যে, সাবেক প্রধান বিচারপতির দেয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত, অযৌক্তিক ও পরস্পর বিরোধী রায় জনগণ কখনো গ্রহণ করবে না এবং তার ভিত্তিতে আয়োজিত কোনো নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করবে না।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
১০ মে ২০১১ ঘোষিত সংপ্তি রায়ে উল্লেখিত “প্রয়োজনের কারণে বৈধ এবং দেশ ও জনগণের স্বার্থ-যা সর্বোচ্চ আইন”-তা রার কোন তাগিদ মতাসীন সরকার অনুভব করেনি।
প্রধান বিরোধী দলসহ দেশের প্রায় সবগুলো রাজনৈতিক দল-এমন কি মতাসীন মহাজোটের অংশীদার কয়েকটি দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক সমাজ এবং দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের তীব্র আপত্তি তারা গ্রাহ্য করেনি।
তারা স্বৈরতান্ত্রিক বাকশাল কায়েমের মতো দ্রুততার সাথে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুমোদনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে দলীয় সরকার এবং বর্তমান সংসদ বহাল রেখে তার অধীনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের অগণতান্ত্রিক আইন পাশ করেছে।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের নামে প্রহসন করে পুনরায় রাষ্ট্র মতা দখলের সরকারি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণের আন্দোলন চলছে এবং ক্রমান্বয়েই তা তীব্রতর হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকারকে তাদের অনৈতিক ইচ্ছাপূরণের হাতিয়ার হিসাবে নতুন করে লেখা এই রায় উপহার দেয়া হলো।
একই সাথে সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী অপ্রাসঙ্গিক হওয়া সত্ত্বেও এই রায়ে অবৈধ ফখরুদ্দিন সরকারকে বৈধতা দেয়া হয়েছে Ñ যা এই রায়কে রাজনীতিকরণের আর একটি দৃষ্টান্ত। জাতির দুর্ভাগ্য যে, দলীয় স্বার্থে বিচার বিভাগকে ব্যবহারের এমন নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত তাদের প্রত্য করতে হলো।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
মতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের কোন নির্বাচনী প্রতিশ্র“তিই আজ পর্যন্ত পুরণ করতে পারেনি। দ্রব্য মূল্যের অব্যাহত ঊর্ধ্বগতিতে জনগণ দিশেহারা, গ্যাস-বিদ্যুত পানির অভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত। আইন-শৃঙ্খলার এতই অবনতি ঘটেছে যে, মানুষ ঘরে-বাইরে কোথাও নিরাপদ নয়। ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমসহ গুম হওয়া কারও কোন সন্ধান নেই।
সাংবাদিক সাগর-রুনি দম্পতিসহ কোন খুনেরই সুরাহা হচ্ছে না। সীমান্তে প্রতিদিন দেশের মানুষ খুন হচ্ছে, অবাধে চোরাচালান চলতে থাকায় দেশের শিল্প-বাণিজ্য ধ্বংসের মুখে। সরকার ও সরকারি দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বনিু পর্যায় পর্যন্ত প্রায় সকলেই দুর্নীতি ও অনাচারে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। এই সরকার আগের মেয়াদে দেশকে দুর্নীতির শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিল। এবারও তাদের দুর্নীতি দেশের সীমা পেরিয়ে বিদেশেও বি¯তৃত হয়েছে।
আজ আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি দুর্নীতির অভিযোগে কলংকিত। জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে সরকার গদি রায় ব্যস্ত। এই অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। জনগণ এই দুরাবস্থা থেকে মুক্তি চায়। তারা জুলুম, নিপীড়ন, দুর্নীতি ও দুঃশাসনের অবসান চায়। সরকার উচ্চ আদালত থেকে শুরু করে দেশের সকল প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করে অকার্যকর করে ফেলেছে। কোন প্রতিষ্ঠানের উপরই আজ আর জনগণের আস্থা নেই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি লাভের জন্যই আমরা অবাধ ও নিরপে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছি। আর এমন নির্বাচন কেবল নির্দলীয় - নিরপে সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হতে পারে। কাজেই নির্দলীয় - নিরপে সরকারের অধীনেই জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের গণদাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জনগণের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। অবসরপ্রাপ্ত কোন সাবেক প্রধান বিচারপতির পপাত দুষ্ট রায় এই আন্দোলনকে দুর্বল কিংবা ব্যাহত করতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল সংসদে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা জনগণকে বিভ্রান্ত করার আর একটি অপচেষ্টা মাত্র। তিনি প্রকৃতপে মতায় অধিষ্ঠিত থেকেই একটি সাজানো নির্বাচনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাঁয়তারা করছেন। এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার।
জনগণের ভোটাধিকার রার জন্য নির্দলীয়, নিরপে সরকারের কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ কোন অবস্থাতেই দেশে দলীয় সরকারের অধীনে সাজানো নির্বাচন মেনে নেবে না।
আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক বিষয়ে জনগণই সকল মতার উৎস।
জনগণের আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয়নি - এবারও হবে না ইন্শাআল্লাহ।
আপনাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ-জিন্দাবাদ।’
Subscribe to:
Posts (Atom)