
আমেরিকায় মহানবী (সা.) কে অবমাননা করে ফিলম তৈরির প্রতিবাদে গতকাল বুধবার বিক্ষোভকারীরা কায়রোয় মার্কিন দূতাবাস থেকে মার্কিন পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলে -ইন্টারনেট
মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)কে নিয়ে এক মার্কিন চলচ্চিত্রকার সিনেমা তৈরি করার প্রতিবাদে মঙ্গলবার লিবিয়া ও মিসরে প্রচন্ড বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এই সিনেমায় মহানবীকে (সা.) অবমাননা করা হয়েছে। লিবিয়ার বেনগাজীতে বিক্ষোভের সময় রকেট হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফার স্টিভেনসহ দূতাবাসের চার কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। খবর আলজাজিরা/বিবিসি/রয়টার্সের।
রাষ্ট্রদূত নিরাপত্তার জন্য কনস্যুলার ভবন থেকে বেরিয়ে গাড়িতে করে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার পথে তার গাড়ি রকেট হামলার শিকার হয়। এ হামলায় ঐ গাড়িতে থাকা অপর তিন কর্মকর্তাও নিহত হন। উল্লেখ্য, বেনগাজীতে সশস্ত্র বিক্ষোভকারীদের বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময় মার্কিন কনস্যুলেট ভবন প্রাঙ্গণেও সংঘর্ষ হয়।
এদিকে লিবিয়ার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা কমিটির মুখপাত্র আবদেল মোনেম আলদুর গতকাল বুধবার বলেছেন, সংঘর্ষের সময় একজন মার্কিন কনস্যুলেট কর্মী মারা গেছে এবং কয়েকজন আহত হয়েছে। নিকটবর্তী একটি ফার্ম থেকে কনস্যুলেট ভবন লক্ষ্য করে রকেট চালিত একাধিক গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। তিনি আরো জানান, মার্কিন কনস্যুলেট ভবনের বাইরে লিবীয় সেনাবাহিনী ও মিলিশিয়াদের মধ্যে প্রচন্ড সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং নিরাপত্তা বাহিনী ভবনের চারদিক ঘিরে রাখে।
একই দিন মিসরের রাজধানী কায়রোতে কয়েক হাজার লোক বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিক্ষোভকারীরা মার্কিন দূতাবাসে টানানো যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পতাকা নামিয়ে টুকরা টুকরা করে ছিঁড়ে ফেলে এবং সেখানে কালোরঙের একটি ইসলামী পতাকা টানিয়ে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত একজন মিসরীয় কপটিক খৃস্টানের পাঠানো একটি ভিডিওর বিতর্কিত এ ছবি নিয়ে তুলকালাম কান্ড ঘটছে।
২০০১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার বর্ষপূর্তিতে এ দুটি ঘটনা ঘটে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের বিবৃতিতে কনস্যুলেট অফিসের একজন কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনা নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিবৃতিতে হিলারি বলেন, অন্যের ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর আঘাতের যে কোন ঘটনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র দুঃখ প্রকাশ করছে।
বেনগাজীতে অবস্থানরত আল জাজিরার প্রয়োজক সুলাইমান আল দ্রেসি বলেন, নিজেদের ইসলামী শরীয়াহ আইনের সমর্থক বলে দাবিদার একদল লোক জানিয়েছে, তারা শুনেছে একটি মার্কিন চলচ্চিত্রে মহানবী (সা.)-এর প্রতি অবমাননাকর ছবির কথা শুনে তারা তাদের সামরিক গ্যারিসনে যায় এবং রাস্তায় নেমে এসে লোকজনদের জড়ো হওয়ার আহবান জানায়। তারপর তারা মার্কিন কনস্যুলেট ভবনে হামলা চালাতে এগিয়ে যায়।
অন্যদিকে কায়রোর মার্কিন দূতাবাসের সামনে প্রায় ৩ হাজার লোক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। তাদের অধিকাংশই সালাফি আন্দোলনের সমর্থক কিংবা ফুটবল প্রেমিক। এদের মধ্যে এক ডজন লোক দূতাবাসের দেয়ালে উঠে পড়ে এবং মার্কিন পতাকা নামিয়ে সেখানে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ' খচিত একটি পতাকা টানিয়ে দেয়।
দূতাবাসের বাইরে থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক শেরিন তাদরোস জানান, বিক্ষোভকারীরা পুরো চলচ্চিত্র দেখতে চায়। অনলাইনে কিছুটা অংশ আছে, বাকিটা পাওয়া যাচ্ছে না।
শেরিন বলেন, বিক্ষোভকারীদের মধ্যে যাদের সঙ্গে কথা বলেছি তাদের অধিকাংশই জানায়, তারা ছবিটির ট্রেইলর দেখেছে এবং এখন তারা পুরো ছবিটাই দেখতে চায়। এটা না দেয়া পর্যন্ত তারা দূতাবাসের সামনে অবস্থান করবে। এ সময় কয়েক হাজার দাঙ্গা পুলিশ দূতাবাসের নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত ছিল। তারা কোনরূপ শক্তি প্রয়োগ না করেই বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে সরে যেতে রাজি করায়। তাদের অধিকাংশই সরে গেলেও কিছু লোক সেখানে রয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রে হামলার বর্ষপূর্তিতে বিক্ষোভকারীরা কায়রোর মার্কিন দূতাবাসে আল কায়েদার পতাকা উড়িয়েছে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, তিনি তেমনটা মনে করেন না। তিনি বলেন, আমরা জেনেছি, কিছু লোক দেয়াল ভেঙে ভেতরে ঢুকে জাতীয় পতাকা নামিয়ে সেখানে অন্য একটি পতাকা উত্তোলন করে। আমরা একথা নিশ্চিত হয়েছি, যারা দূতাবাসের ভেতরে ঢুকে পড়েছিল তারাসহ সব বিক্ষোভকারীকে মিসরীয় পুলিশ সরিয়ে দিয়েছে।
২ ঘণ্টার এ বিতর্কিত চলচ্চিত্রের লেখক, পরিচালক ও প্রযোজক মার্কিন নাগরিক স্যাম বেসিল বলেন, এ ধরনের তীব্র প্রতিক্রিয়া হবে বলে আমি মনে করিনি। দূতাবাসের ঘটনায় আমি দুঃখিত। আমি একটা পাগল।
তিনি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে টেলিফোনে জানান, ছবিটি করা হয়েছে ইংরেজিতে। তিনি জানেন না কে তা আরবি ভাষায় রূপান্তরিত করেছে। পুরো ছবিটি এখনো প্রদর্শন করা হয়নি। এখন তিনি ছবিটা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, আমার পরিকল্পনা ছিল এ বিষয়ের ওপর ২০০ ঘণ্টার একটা সিরিজ করার।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মিসরীয় কপটিক খৃস্টান মরিস সাদেক বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, তিনি ছবিটির ভিডিও ওয়েবসাইটে স্থাপন করেন এবং কয়েকটি টিভি সেন্টারে পাঠিয়ে দেন। উল্লেখ্য, মরিস ইসলাম বিদ্বেষী হিসাবে পরিচিত।