Tuesday, September 11, 2012

আওয়ামী লীগকে পাশ কাটিয়ে মাঠে নামছে মহাজোটের শরিকরা


আওয়ামী লীগকে পাশ কাটিয়ে মাঠে নামছে মহাজোটের শরিকরা
 এবার বিরোধী দলের পাশাপাশি চলমান বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে মাঠে নামছে ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক দলগুলো। এ লক্ষে আওয়ামী লীগকে মাইনাস রেখে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করে আলাদা একটি বলয় গড়ে তোলার উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। সোমবার রাজধানীর বেইলি রোডের একটি অফিসে রাত সোয়া সাতটা থেকে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত রুদ্ধদ্বার এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা এ সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

পূর্ব নির্ধারিত এ বৈঠকে মহাজোটের শরিক দল ওর্য়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুর রহমান সেলিম, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য নুরুল হাসান, কামরুল আহসান, সাম্যবাদী দলের পলিটব্যুরো সদস্য আবু হামেদ সাহাবুদ্দিন, লুৎফর রহমান, গণআজাদী লীগের হাজী আব্দুস সামাদ, আব্দুল জব্বার, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের অসিত রায় অংশ নেন।

এছাড়াও মহাজোটের বাইরে গণঐক্যের আহ্বায়ক পঙ্কজ ভট্টাচার্য, জনসংহতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক শক্তিধর ত্রিপুরা এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত নেতারা মন্ত্রীদের বিতর্কিত বিভিন্ন বক্তব্যের তীব্র সমালোচনার পাশাপাশি চলমান সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের চোখে আঙুল দিয়ে ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেয়ার জন্য ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেন।

তারা এটাও বলেছেন, বর্তমান সরকার সবদিক দিয়ে সংকট জিইয়ে রেখে বেসামাল হয়ে পড়ছে। একের পর এক ইস্যু তৈরি হওয়া এবং সঠিকভাবে নিরসনের পদক্ষেপ না নেয়ায় তীব্র সমালোচনা করা হয়। তাছাড়া সমমনা রাজনৈতিক দল নিয়ে একটি আলাদা বলয় গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ বলয়ে আওয়ামী লীগকে রাখা হচ্ছে না। ইতিমধ্যে বাসদ ও সিপিবিকে এ বলয়ে যুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আগামী বুধবার জাসদ কার্যালয়ে তাহের মিলনায়তনে আরেকটি বৈঠক করে পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন।

 বৈঠকের কথা স্বীকার করে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, “আমরা জনজীবনের চলমান ইস্যুকে সামনে নিয়ে এসে সংকট উত্তরণে চেষ্টা করবো।”

গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুর রহমান সেলিম বলেন, “দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ, হলমার্ক অর্থ লোপাট এইসব সংকট নিরসনের জন্য সরকারকে সচেতন করাই আমাদের লক্ষ্য। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও মিছিল করে কর্মসূচি শুরু করবো।”

বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকের মহাজোটের শরিক দলের নেতারা সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের অসংলগ্ন বক্তব্য থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। এই জোটের সভায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য ও সাফাই সাক্ষীসহ সম্প্রতি যেসব ঘটনাবলী ঘটে চলেছে তাতে এই সরকারের সময়কালের মধ্যে বিচার সম্পন্ন হবে কিনা সে ব্যাপারে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

বক্তারা বলেন, দেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ডেসটিনির হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট, দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের পদ্মা সেতু ঋণচুক্তি বাতিল এ সম্পর্কে সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী-কর্মকর্তাদের অসংলগ্ন বক্তব্যে সমস্যার কোনো সমাধান তো হয়নি, বরং আরো জটিল হয়েছে। সম্প্রতি সোনালী ব্যাংকের হলমার্কের ঋণ কেলেঙ্কারি সবচেয়ে বড় দুর্নীতি। চার হাজার কোটি লুটপাটের ঘটনা সম্পর্কে অর্থমন্ত্রীর বেফাঁস মন্তব্য এ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত নায়কদের সহায়তা করেছে, এখনো পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ বহাল আছে।

তারা বলেন, এতবড় অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতরা দম্ভ ভরে বলছে, তারা নাকি সব নিয়মনীতি মেনেই নাকি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। এই সব দুর্নীতিবাজদের দুর্নীতি দমন কমিশনে ডেকে এক তামাশা করা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এখনো কোনো আদালতে কোনো মামলা রুজু করা হয়নি। দু’একটা ক্ষেত্রে যেটুকু হয়েছে তাও লোক দেখানো।

বক্তারা বলেন, ৬ষ্ঠ বারের মতো বিদ্যুতের মূল্য বাড়ছে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না হলেও ১ সেপ্টেম্বর থেকে তা কার্যকরী হয়েছে। এতে জনগণ দু’ভাবে প্রতারিত হচ্ছে। রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট জ্বালানি তেলের ভর্তুকির টাকার সিংহভাগে এই খাতে খরচ হচ্ছে, অপরদিকে বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়ে এনার্জি রেগুলেটারি কমিশন জনগণকে প্রতারিত করছে।

১১ দলের সভায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি বন্ধ করা এবং জনস্বার্থবিরোধী রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ করে বিদ্যুতের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়।

তারা বলেন, বিদ্যুতের মূল্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রব্যমূল্য অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাবে। বাড়বে বাড়িভাড়া। বাড়িভাড়ার ক্ষেত্রে আজও কোনো নীতিমালা আছে বলে নেতারা মনে করে না। নীতিমালা যাও আছে তাকে বাস্তবায়িত করার কোনো ব্যবস্থা আছে বলে জনগণ জানে না।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির জন্য বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দেশের সার্বিক এই অবস্থায় সব অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণের সমস্যা সংকট নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।


গ্রামে যাচ্ছে ১৫৭০৩টি ট্রান্সফরমার


 সারাদেশে পল্লøী বিদ্যুৎ কার্যক্রম স¤প্রসারণে ১৫ হাজার ৭০৩টি ট্রান্সফরমার কিনবে সরকার। এতে ব্যয় হবে ১৫৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী এ কে খন্দকারের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নূরুল করিম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

মেসার্স টেকনো ভেঞ্চার ও টিএস ট্রান্সফর্মার দুই লটে এবং মেসার্স টেকনো ভেঞ্চার ও এনার্জিপ্যাক পৃথক দুটি লটে এসব ট্রান্সফরমার সরবারহ করবে।

এ ছাড়া ১১৫ কোটি ৯৮ লাখ ৭২ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৫ হাজার ৬৬০ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক তার (কন্ডাক্টর বেয়ার) কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি। এসবিএস কেবলস এবং বিআরবি কেবলস দুটি প্যাকেজে এগুলো সরবরাহ করবে।

অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে ৪৩ কোটি ৯৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৯ হাজার ৪৬০ কিলোমিটার কেবল (ইন্স্যুলেটেড কন্ডাক্টর) কেনার প্রস্তাব।

নুরুল করিম জানান, বেসরকারি খাতে ভেঞ্চার এনার্জি রিসোর্সেস পরিচালিত তিন বছর মেয়াদি সাড়ে ৩৪ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়েছে।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম কেনার অনুমোদন দিওয়ার কথা জানিয়েছেন অতিরিক্ত সচিব।

ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এলএমজে ইন্টারন্যাশনাল প্রতি মেট্রিক টন ৩৪৪ ডলার দরে এসব গম সরবরাহ করবে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৪১ কোটি ৫৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

এছাড়া ক্রয় কমিটি চট্টগ্রামের কাফকো থেকে ১০৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। 

প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ বেসরকারি খাতের’



undefined
বিদ্যুতের মোট উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক বেসরকারি খাত থেকে আসছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সাংসদ বজলুল হকের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু এ তথ্য জানান।

মন্ত্রী জানান, সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিদ্যুতের দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা আট হাজার ৩১৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে শতকরা ৪৫ ভাগ বিদ্যুৎ আসছে বেসরকারি খাত থেকে।

সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ ফরিদুন্নাহার লাইলী অপর এক প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়, প্রতিদিন গড়ে বিদ্যুতের চাহিদা ছয় হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। আর ঘাটতি প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট।

বাসা বাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রাধিকারের ভিত্তিতে সার, বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।

বিএনপি দলীয় সাংসদ আশরাফউদ্দিনের লিখিত প্রশ্নের জবাবে সংসদে তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ জানান, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা তৈরি করে গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করার কোনো চেষ্টা সরকারের নেই। দেশে গণমাধ্যম পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা ভোগ করছে। 

যুদ্ধাপরাধের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে সংসদে বিল উত্থাপন


যুদ্ধাপরাধের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে সংসদে বিল উত্থাপন

undefined
সংসদ ভবন থেকে: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে চলমান যুদ্ধাপরাধের মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তিতে সংসদে বিল উত্থাপন করা হয়েছে। রায়ের পর আপিলের সময়সীমা ৬০ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিন করার বিধান রেখে এ বিল উত্থাপন করা হয়ছে।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইবুনালস) (সেকেন্ড অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০১২’ উত্থাপন করেন আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।

পরে বিলটি ৩ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

গত ৩ সেপ্টেম্বর বিলটি মন্ত্রিসভার অনুমোদন পায়।

প্রস্তাবিত আইনে রায় ঘোষণার দিনই রায়ের সার্টিফায়েড কপি উভয় পক্ষকে দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। ওই কপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যেই আপিল করার বিধান রাখা হয়েছে। এর আগে আপিল করার সময়সীমা ৬০ দিন ছিলো।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিলটি আইনে পরিণত হলে যুদ্ধাপরাধসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দ্রুত নিষ্পন্ন করা সম্ভব হবে।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ জুন এক ট্রাইব্যুনাল থেকে অন্য ট্রইব্যুনালে মামলা স্থানান্তরের বিধান রেখে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইবুনালস) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০১২ সংসদে পাস হয়।

যুদ্ধাপরাধসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ প্রথম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এ বছরের ২২ মার্চ গঠিত হয় দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল।

নির্বিচার জাটকা নিধনে মেঘনায় ইলিশের আকাল


নির্বিচার জাটকা নিধনে মেঘনায় ইলিশের আকাল
শূন্য হাতে বাড়ি ফিরছে মতলব উত্তরের জেলেরা
মতলব উত্তর উপজেলার জেলেদের চরম দুর্দিন চলছে| জাটকা নিধন রোধে মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে লক্ষীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার মেঘনা নদী এলাকায় মার্চ-এপ্রিল দু’মাস ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিলো| কিন্তু এ নিষেধ জেলেরা মানেনি| জেলেরা নির্বিচারে জাটকা নিধন করেছে| ফলে মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে লক্ষীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীতে দেখা দিয়েছে ইলিশ মাছের আকাল| জেলেরা শূন্য হাতে বাড়ি ফিরছে| মহাজনদের টাকার জন্য চাপ ও সংসার চালানোর অর্থ সঙ্কটের কারণে জেলে পরিবারে দেখা দিয়েছে হতাশা|

ইলিশের পোনা জাটকা রক্ষায় সরকার ২০০৩ সালে মেঘনাসহ দেশের তিনটি নদী অঞ্চলকে মার্চ-এপ্রিল দু’মাস অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে| এ সময় নদীতে সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়| চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে লক্ষীপুর জেলার চরআলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনার একশ’ কিলোমিটার নদী অঞ্চল দেশের অন্যতম অভয়াশ্রম অঞ্চল| অভয়াশ্রম কার্যক্রমে সময়, মূলধন, ঝুঁকি ও আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কায় ইলিশ, পাঙ্গাস, আইড়, বোয়ালসহ বড় প্রজাতির মাছ ধরার কোনাজাল, চাপজাল ও ডোম জাল প্রকৃত জেলেরা নদীতে ফেলা বন্ধ রাখে| এ সুযোগে এক শ্রেণীর অর্থলোভী মানুষ কারেন্ট জাল ক্রয় করে কিছু সংখ্যক অপেশাদার জেলেকে দিয়ে নদীতে জাটকা নিধন করায়| অর্থলোভীদের কারণে প্রকৃত জেলেরা পরিপক্ক ইলিশ থেকে বঞ্চিত| অভয়াশ্রম কর্মসূচি শেষে জাল নৌকার মালিকরা ধারদেনা করে ও ঋণ নিয়ে জাল নৌকা মেরামত করে ভাগিদার জেলেদের দাদন টাকা দিয়ে নদীতে নামায়| জাটকা নিধন করায়, নদীতে নাব্যতা না থাকায় এবং পানি কম হওয়ায় মেঘনায় এখন ইলিশ আসছে না| ইলিশের আকালে জেলেরা বেকার হয়ে পড়েছে|

জেলেরা জানান, তারা শূন্য হাতে ফিরে আসছে| ইলিশ ধরার একটি কোনাজাল নৌকার সারাদিন মাছ ধরতে ডিজেল ও জেলেদের খাবারসহ সাড়ে তিন হাজার টাকা খরচ হয়| তার মধ্যে ডিজেল বাবদ খরচ হয় এক থেকে ২ হাজার টাকা| বর্তমানে জেলেরা খরচের অর্ধেক টাকারও মাছ বিক্রি করতে পারছেন না| জেলেদের মূলধন হারাতে হচ্ছে| মালিক ও জেলেরা বাধ্য হয়ে জাল নৌকা বন্ধ রাখছে| এখন জেলেদের দুর্দিন যাচ্ছে| মেঘনায় অভয়াশ্রম ও এখন মাছের আকালের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জাল-নৌকার মালিক ও জেলেদের রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে সুদমুক্ত ঋণ, চাল ও উপকরণ সহায়তা প্রদানের জন্য জেলে পরিবারগুলো সরকারের নিকট দাবি জানান|

গ্রামীণ ব্যাংক বিল সংসদে উত্থাপন

গ্রামীণ ব্যাংক বিল সংসদে উত্থাপন

বিভিন্ন মহলের আপত্তির মধ্যেই গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের বিধি পরিবর্তন করে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ সংশোধনের বিল সংসদে উত্থাপন হয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ আরো স্বচ্ছ করতে এবং নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে এই আইনে এই সংশোধন আনা হচ্ছে।

অন্যদিকে ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক নোবেলবিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের অভিযোগ, সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে করায়ত্ত করতেই এই সংশোধন করছে।

ইউনূসের পাশাপাশি দেশে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং বিদেশে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন গ্রামীণ ব্যাংক আইনে এই পরিবর্তনের বিরোধিতা করে আসছে। বিরোধিতা করছে গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের অধিকাংশ সদস্যও।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের অনুপস্থিতিতে ‘গ্রামীণ ব্যাংক (সংশোধনী) বিল- ২০১২’ মঙ্গলবার সংসদে উত্থাপন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার।

এরপর স্পিকার বিলটি পরীক্ষা করে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠান।

গত বছর গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ইউনূসকে সরানোর পর তা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

এরপর গত ২ অগাস্ট সরকার গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ সংশোধন আনে, যা সংশোধিত অধ্যাদেশ আকারে ২৩ অগাস্ট জারি করেন রাষ্ট্রপতি। এই অধ্যাদেশ জারির দিনটিকে ‘কালো দিবস’ বলে আখ্যায়িত করেন নোবেলজয়ী একমাত্র বাংলাদেশি।

সংবিধানের ৯৩ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, অধ্যাদেশ জারির পর জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনেই তা অনুমোদন করতে হবে। সেজন্যই সংশোধিত এই আইন সংসদে এল।

সংসদ অধিবেশন না থাকায় ‘গ্রামীণ ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০১২’ জারি করা হয় বলে বিলে অর্থমন্ত্রী তার বিবৃতিতে বলেছেন।

আইনের এই সংশোধনের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ সংক্রান্ত বিধানের কারণে ওই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার ফলে পদটি দীর্ঘদিন শূন্য থাকে।

“গ্রামীণ ব্যাংক (সংশোধন) বিল- ২০১২ জাতীয় সংসদে পাস হলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ আরো স্বচ্ছ হবে এবং নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন হবে বলে আশা করা যায়।”

এক বছর ধরে গ্রামীণ ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আইনের সংশোধনের কারণে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ প্রক্রিয়া ও যোগ্যতায় পরিবর্তন আসছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে আলোচনা করে পাঁচ সদস্যের একটি নির্বাচন কমিটি গঠনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে চেয়ারম্যানকে।

নির্বাচন কমিটি আবেদনকারীদের মধ্য থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে তিনজনের একটি প্যানেল মনোনীত করে তা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে জমা দেবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে এর মধ্য থেকে একজনকে নিয়োগ দেবে পরিচালনা পর্ষদ।

ইউনূসসহ আইন সংশোধনের বিরোধিতাকারীরা বলে আসছেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে সরকার মনোনীত চেয়ারম্যানের ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় তার প্রভাব পড়বে।

প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে, তারা ক্ষমতায় গেলে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশের এই সংশোধনী বাতিল করা হবে।

১৯৮৩ সালে একটি সামরিক অধ্যাদেশের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের সূচনা হয় এবং অধ্যাদেশের মাধ্যমে এর আগেও এর আইনে সংশোধন এসেছিল বলে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ জানিয়েছেন।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইউনূস এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে এলেও অবসরের বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তার এমডি পদে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত বছরের মার্চে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন ইউনূসকে অব্যাহতি দেয়, তখন তার বয়স প্রায় ৭১ বছর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্র তখনো উষ্মা প্রকাশ করে। এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়েও বিফল হন ইউনূস।

ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের চেষ্টাকে ‘শান্তি স্থাপন’ বিবেচনা করে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংককে।

২০১০ এর ডিসেম্বরে নরওয়ের টেলিভিশনে প্রচারিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংককে দেওয়া বিদেশি অর্থ এক তহবিল থেকে অন্য তহবিলে স্থানান্তরের অভিযোগ ওঠে। এরপর দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।

এই পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম পর্যালোচনায় একটি কমিটি গঠন করে সরকার। গ্রামীণ ব্যাংক ও সহযোগী সংস্থাগুলোর কার্যক্রমে নানা ‘অসঙ্গতির’ তথ্য উঠে আসে ওই কমিটির প্রতিবেদনে। 

আমিরাতে বাংলাদেশিদের সংকট সমাধানে দূতাবাসের ভূমিকা নেই!


আমিরাতে বাংলাদেশিদের সংকট সমাধানে দূতাবাসের ভূমিকা নেই!


সততা, নিষ্ঠা কর্মপরায়ণতা এই ত্রি-গুণের সমষ্টিতে আশির দশক থেকে আরবদের মন জয় করেছিলাম আমরা বাঙালি তথা বাংলাদেশের জনগণ। আশির দশক থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত আরবরা আমাদের নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট ছিল। তদুপরি দ্রুত আরবি ভাষা আয়ত্ত করতে পারা এবং মুসলমান বলে সম্মান করতো। এমনও দেখা যেত, হযতো কোনো আরব ব্যবসা শুরু করার চিন্তা করছে। তখন কোনো বাংলাদেশিকে ডেকে বলতো, ব্যবসা শুরু করব। একজন লোক এনে দাও। তার প্লেন খরচ আমি দেব আর তোমাকেও খুশী করে দেব।

কিন্তু এখন আর সে সময় নেই। এখন আরবীয়দের ধরনা দিয়েও একটি শ্রম ভিসা যোগার করতে খরচ করতে উল্টো খরচ করতে হয় বাংলাদেশের প্রায় ২ লাখ টাকা। কিন্তু কেন এমন হলো?

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি গত সাড়ে ৩ বৎসর। উত্তর পেয়েছি। কিন্তু তাতে নিজেকে বাংলাদেশি বলে পরিচয় দিতে ঘৃণা বোধ করেছি। যতই ঘৃণা করি না কেন বাংলাদেশ আমার মা, আমার মাতৃভূমি। মাকে যেমন ঘৃণা করা যায় না ঠিক তেমনি মাতৃভূমিকেও। যখন এ লেখা লিখছি তখন আরব আমিরাতে (আবুধাবি, দুবাই, শারজাহ, আজমান, রাস আল খাইমাহ, উম আল কুয়াইন, ফুজাইরা) বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান করা বন্ধ ঘোষিত হয়েছে। এমনকি ভ্রমণ ভিসা, ট্রানজিট ভিসাও বন্ধ করে দিয়েছে এ দেশের সরকার।

কিন্তু কেন এই খড়গ নেমে আসল বাংলাদেশিদের ওপর? ফোন করেছিলাম বাংলাদেশ দূতাবাসের আবুধাবি শাখায় ০০৯৭১২৪৪৬২৭৪৫ নম্বরে, দূতাবাসের লেবার লেবার উইং-এর দায়িত্বে থাকা লতিফুল হক কাজমীর সঙ্গে কথা বলতে। ফোন বেজে চলল। কিন্তু ফোন রিসিভ করলেন না কেউ। তবু চতুর্থবার কর করার পর একজনকে পেলাম কিন্তু পেলাম না জনাব কাজমীকে।

ওই প্রান্ত থেকে যিনি ফোন রিসিভ করলেন, তার কাছে জানতে চাইলাম বাংলাদেশিদের ভিসা কেন বন্ধ? চটজলদি উত্তর পেলাম, ভিসা তো বন্ধ না। আরব আমিরাত সরকার সিস্টেম আপগ্রেড করতেছে। এজন্য সাময়িকভাবে ভিসা দিচ্ছে না। তবে তিনি আশা দিলেন, শীঘ্রই চালু হবে।

এরপর ফোন করলাম কনস্যুলেট অফিস দুবাইতে ০০৯৭১৪২৭২৬৯৬৬ নম্বরে। সেখান থেকে অবশ্য তা‍ৎক্ষণিক উত্তর দিল না। কিছুক্ষণ এই-সেই বোলচালের পর জানাল, “মিয়ানমারে দাঙ্গাকবলিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশে আশ্রয় দানে অস্বীকৃতি” আমাদের ভিসা বন্ধের অন্যতম কারণ।

ফোন রিসিভকারী আরো জানালেন, সৌদি সরকারের অব্যাহত চাপের কারণেও আরব আমিরাত সরকার ভিসা বন্ধ করে দিয়ে থাকতে পারে।

‘সৌদি কেন বাংলাদেশকে চাপে রাখবে’ এই উত্তর খুঁজতে শুরু করলাম। যা পেলাম তা হলো, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাধা প্রদান এবং রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিতে বাংলাদেশ সরকারকে বাধ্য করতেই সৌদি সরকার এহেন কর্মকাণ্ড করে থাকতে পারে। এতক্ষণ যা লিখলাম, এটা পুরোটাই কূটনৈতিক। আর কুটনৈতিক বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা শূণ্য। তাই এ ব্যাপারে কোনোপ্রকার মন্তব্য কছি না। তবে সাধারণ যে সকল কারণে আরব আমিরাত সরকার ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে তা নিয়ে এখানকার কতিপয় বাংলাদেশির সঙ্গে আলোচনা করে যা পাওয়া গেল তা আপনাদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরছি।

প্রথমত, এখানে বাংলাদেশিদের দ্বারা কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে যার কয়েকটি এখনো বিচারাধীন (এসব ঘটনায় জড়িত কয়েকজন গা ঢাকা দিয়েছে)।

দ্বিতীয়ত, প্রবাসী বাংলাদেশিরা যারা কোম্পানির আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত, তারা আর্থিক অনিয়ম করে সড়কপথে ওমান হয়ে বাংলাদেশে পাড়ি জমায়। এ সকল ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি তার পাসপোর্ট পুলিশ অফিসে জমা দিয়ে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে। দুঃখের কথা হলো এ ধরনের অভিযোগের সংখ্যা অগণিত।
তৃতীয়ত পতিতাবৃত্তির দালালিতে বাংলাদেশিদের আধিক্য। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমাদের ‘দেশি ভাইয়েরা’ পান-সিগারেট বিক্রির মত ‘চায়না ৫০’, ‘ফিলিপিনি ১০০’, ‘বাঙালি ১৫০’ করে হাক দিয়ে পতিতা’র দালালি করেন। মজার বিষয়টা হলো একজন গ্রাহক ধরলে আমার ওই দালাল ভাই পাবেন ১০-১৫ দিরহাম। পক্ষান্তরে ঘৃণিত এই বাণিজ্যের আয় সিংহভাগই যায় এর পরিচালনাকারী ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানিদের পকেটে। আর পুলিশি অভিযানে ধরা পড়ে দেশ-জাতির মুখ-কালা করে দালাল নামক আমার কোনো বাংলাদেশি ভাই। ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানি পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে তারা গা ঢাকা দেয়।

এছাড়াও কতিপয় বাংলাদেশি এখানে গার্মেন্টস ব্যবসার লাইসেন্স নিয়ে নারীদেরকে গার্মেন্টস এ চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এখানে নিয়ে এসে জোরপূর্বক তাদের দিয়ে পতিতাবৃত্তির চেষ্টা করে থাকে। এদের মধ্যে বহুসংখ্যক পালিয়ে গিয়ে পুলিশে অভিযোগ লেখান। আর এই অভিযোগকারীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। অবশ্য একজন বাংলাদেশি যৌনকর্মী আমাকে দুঃখ করে বলেছেন, অভিযোগ আমরা তখনি করাই যখন আমাদের অভিযোগের গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। সুতরাং অভিযোগকারীর অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশি অভিযান যখন হয় ততদিনে এর পরিচালনাকারীরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ এবং দিনারের থলিসহ চম্পট দেয় আপন দেশে।
চতুর্থত ভ্রমণ ভিসা নিয়ে আরব আমিরাতে এসে বেমালুম দেশে ফেরার কথা ভুলে গিয়ে দিব্যি নানানরকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়া। এদেরকে দেখা যায়, পান বিক্রি করতে (এখানে অবৈধ), রাস্তায় দাঁড়িয়ে মোবাইলের ব্যালেন্স বিক্রি করতে।

পঞ্চমত এখান থেকে ওমরাহ ভিসা নিয়ে সৌদি আরব গিয়ে আর ফিরে না আসা বাংলাদেশিদের এক ধরনের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।

ষষ্ঠত ভিসা বিক্রি করা এখানে অবৈধ। সাধারণত প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো ভিসা বাবদ সামান্য কিছু অর্থই গ্রহণ করে। কিন্তু দেখা গেল এখানে আসার পর কোনো এক শ্রমিক হেলথ ফিটনেসে (স্বাস্থ্য পরীক্ষায়) উত্তীর্ণ হতে পারলো না। সেক্ষেত্রে তাকে ফেরত পাঠানোই কোম্পানির দায়িত্ব। কিন্তু ওই শ্রমিক ভাইটি আর ফেরত যেতে চায় না। কারণ তিনি তার ভিটে, মাটি, সহায়, সম্বল বিক্রি করে এখানে এসেছেন। তো কি আর করা? কোম্পানি থেকে ফেরার হয়ে (পালিয়ে আত্মগোপনে গিয়ে অবৈধভাবে কাজ করা) আরো একজন অবৈধ রেসিডেন্সের কাতারে নাম লেখায়।

সর্বোপরি ফ্রি ভিসার নাম করে এখানে নিয়ে আসা হয়  শিক্ষিত, আধা-শিক্ষিত এবং নিরক্ষর ব্যক্তিদের, কিন্তু পরবর্তীতে তাদেরকে ভিসা প্রদানকারী ব্যক্তিকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। সুতরাং ফ্রি ভিসায় আসা ব্যক্তিরা হয়ে যান অবৈধ।

এখানে অধিকাংশ পত্রিকার নিয়ন্ত্রণ ভারতীয় কিংবা পাকিদের হাতে। বিষয়টা এমন যে আমাদের বাংলাদেশিদের কেউ অধিক খাবার খাওয়ার দরূন জোড়ে বায়ূ ত্যাগ করলেও তা বোমা ফাটানোর মত করে প্রকাশ করতে ওস্তাদ এখানকার ভারতীয় এবং পাকিস্তানি মিডিয়া। বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে নেতিবাচক ঘটনা হলে তিলকে তাল বানাতে এখানকার মিডিয়াগুলোর তুলনা নেই। সেখানে এসব প্রতিরোধে আমাদের লেবার উইং অথবা মিডিয়ার ভূমিকা নেই বললেই চলে। এখানকার মিডিয়াগুলো বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে ‘চিলে কান নিয়ে যাওয়া’র মত গল্প তৈরি করে আমাদের বদনাম রটিয়ে দেয়।

এসব কিছুর পরে বর্তমানে আরব আমিরাত সরকার বাংলাদেশিদের ধরপাকড় শুরু করেছে পুরো আরব আমিরাত জুড়েই। এর কারণ কি জানতে চেয়েছিলাম এখানকার এক পুলিশ সদস্যের কাছে এবং পরিচিত এক আরব নাগরিকের কাছে। পুলিশ জানালেন, এটা তাদের রুটিন ওয়ার্ক। ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই তারা যে সকল বাংলাদেশিদের কাছে কাগজপত্র নেই তাদের ফেরত পাঠাবে। এবং নতুন করে ভিসা দেওয়া শুরু করবে। তাই যে সমস্ত পাঠক আরব আমিরাতে আছেন, তাদের কাছে অনুরোধ, সম্ভাব্য ঝামেলা এড়াতে ‘বতাকা (আইডি), এমিরেটস আইডি কার্ড এবং পাসপোর্ট এর ভিসা পেইজ কপি করে সঙ্গে রাখুন।

নানাবিধ কারণে আমাদের কোম্পানি পরিবর্তন (ট্রান্সফার) হওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। হতে পারে কোম্পানির হাতে কাজ নেই অথবা নতুন কোনো কোম্পানিতে পদোন্নতি নেয়া। কিন্তু এখন সময় এতটাই খারাপ যে এরকম ভিসা ট্রান্সফারও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে (বাংলাদেশিদের জন্য)। তাই সকল বাংলাদেশি ভাইদের প্রতি অনুরোধ, তারা যেন নতুন কোনো চাকরির চেষ্টা না করেন। কারণ, এতে আপনি হারাতে পারেন আপনার বর্তমান চাকরি এবং বিকল্প রাস্তা না থাকায় দেশে ফেরা ছাড়া আপনার আর কোনো অবশিষ্ট থাকবে না।

সর্বশেষে সম্মানিত পাঠক, এখানে শুধু সমস্যাগুলো লিখলাম। ্েসেবের সমাধানও নিশ্চয়ই আছে। সমাধান (প্রস্তাবনা) নিয়ে আমি একটি আর্টিকেল তৈরির কাজ করছি। আপনারা আপনাদের মতামত আমাকে ইমেইলে জানাতে পারেন। 

‘এনজিও নিয়ন্ত্রণের বদলে সরকারি সংস্থার দুর্নীতি তদন্তে কমিশন করা উচিৎ’


‘এনজিও নিয়ন্ত্রণের বদলে সরকারি সংস্থার দুর্নীতি তদন্তে কমিশন করা উচিৎ’

ঢাকা: এনজিও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার বদলে বাংলাদেশে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো ও সরকারি সংস্থার দুর্নীতি তদন্তে কমিশন করা উচিৎ বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইট্‌স ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এর এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড অ্যাডাম্‌স।

বাংলাদেশে কার্য্যক্রম পরিচালনারত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বা এনজিওগুলোর কর্মকাণ্ডর ওপর নজরদারি এবং এগুলোকে নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কমিশন গঠনে বাংলাদেশ সরকারের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় এ বক্তব্য দেন ব্রাড অ্যাডাম্‌স। এ সংক্রান্ত এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে নিজেদের অসন্তুষ্টির কথা প্রকাশ করেছে এইচআরডব্লিউ।
হলমার্ক কেলেঙ্কারি 
তদন্তে বিচারিক কমিশন গঠনের আবেদন 
 হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় ‘দোষারোপের খেলা’ সম্পর্কে সত্য উদঘাটনে বিচারিক কমিশন গঠনের আদেশ চেয়ে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন হয়েছে।

তিনজন আইনজীবীর পক্ষে ড. বেলাল হোসেন জয় মঙ্গলবার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের বেঞ্চে এই আবেদন উপস্থাপন করেন।

পরে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলার চাপের কারণে আজ শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা কম। সেক্ষেত্রে আমরা অবকাশের পর শুনানি জন্য কোনো বেঞ্চে নিয়ে যাব।”

অবকাশ শেষে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর হাই কোর্ট খোলার কথা রয়েছে।

রিট আবেদনে আমানতকারীদের তহবিল ও জনগণের টাকার নিরাপত্তা বিধানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ, রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত এবং বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ দায়িত্ব, কর্তব্য ও দায় নির্ধারণ করে দেওয়ার আর্জিও জানানো হয়।

ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা মোকাবেলায় দেশের অর্থ ও ব্যাংক খাত সংস্কারেরও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে আবেদনে।

রিটকারী তিন আইনজীবী হলেন- কেএম জাবির, মো আওলাদ হোসেন ও মাহমুদ হোসেন। তারা সোমবার আবেদনটি করলেও তা মঙ্গলবার আদালতে উপস্থাপন করা হয়।

রিটে ব্যাংকিং বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।

রাষ্ট্রয়াত্ত ও বেসরকারি ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ, পর্যবেক্ষণ এবং তদারকিতে নিষ্ক্রিয়তা এবং ব্যর্থতার মাধ্যমে আমানতকারীদের তহবিল এবং জনগণের টাকা ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া এবং ব্যাংকগুলো সম্পর্কে জনগণের বিশ্বাসে চিড় ধরানোর মতো ঘটনা সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ এবং তথ্য অধিকার আইনের লঙ্ঘন হওয়ায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন আইন অনুসারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে না- সে বিষয়ে রুলও চেয়েছেন তারা।

আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর অর্থমন্ত্রীকে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। যাতে বলা হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে সোনালী ব্যাংকের ঋণে অনিয়মের ঘটনাকে ‘মারাত্মক’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই কেলেঙ্কারির ৩৫ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন টাকার মধ্যে ২৭ বিলিয়নের সুবিধাভোগী হিসাবে হলমার্কের নাম এসেছে।

বেলাল হোসেন জয় বলেন, “আজ (মঙ্গলবার) একটি জাতীয় দৈনিকে বলা হয়েছে, ব্যাংক পাড়ায় মোট ১০ হাজার কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে। এই অনিয়ম মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। এ কারণেই এই রিটটি দায়ের করা হয়েছে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে নিয়ম ভেঙে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে ছয়টি প্রতিষ্ঠান তিন হাজার ৬০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা সরিয়ে ফেলেছে, যার মধ্যে হলমার্ক গ্রুপ একাই তুলে নিয়েছে দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি।

ঋণ দেওয়ায় অনিয়মের অভিযোগে সোনালী ব্যাংকের অন্তত ২০ জন কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ওএসডি করা হয়েছে দুই উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালককে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে তদন্তও শুরু হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনিয়মের অভিযোগে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ারও সুপারিশ করলেও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এর বিরোধিতা করেন। এই কেলেঙ্কারির পর ব্যাপক সমালোচনার মধ্যেই সরকার ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল ইসলামকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পুনর্নিয়োগ দিয়েছে।

এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকজনও জড়িত বলে অভিযোগ করে আসছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।