Thursday, October 18, 2012

যুক্তরাষ্ট্রে মিডিয়ার খবর নাফিসের ঘটনা : সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নতুন ফ্রন্ট বাংলাদেশ : সহযোগী সন্দেহে এক মার্কিনি গ্রেফতার

নাফিসকে গ্রেফতারের পর যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বাংলা-দেশকে সন্ত্রাস-বিরোধী যুদ্ধের নয়া ফ্রন্ট মনে করছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত টিভি স্টেশন সিবিএস নিউজের এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।
সিবিএস নিউজ বলেছে, সন্ত্রাস বিশেষজ্ঞরা ফেডা-রেল রিজার্ভ ভবন উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনাকে বিভিন্ন কারণে উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন। এর মধ্যে সন্দেহভাজন কাজী নাফিস বাংলাদেশী হওয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে বাংলাদেশকে নতুন ফ্রন্ট হিসেবে উল্লেখ করেছেন তারা।
সিবিএস নিউজের বরাত দিয়ে নিউজওয়ার্ল্ড জানায়, নিউইয়র্কে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী আক্রমণের পরিকল্পনা ফাঁস হলেও বাংলাদেশী নাফিসের পরিকল্পনা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। সবকিছু দেখে মনে হয়েছে সে তার উদ্দেশ্য সাধনে ছিল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ভয়াবহ জিহাদ সংঘটনই ছিল তার মূল চিন্তা ও চেতনা। ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী ঘটনার চেয়েও ভয়াবহ ছিল
তার পরিকল্পনা। নিউইয়র্ক সিটির জন জে কলেজ অব ক্রিমিনাল জাস্টিসের শিক্ষক ড. মাকি হ্যাবারফিল্ড বলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই নাফিসের পরিকল্পনা ছিল বড় কিছু একটা করার। সিবিএস নিউজ বলেছে, কথিত সন্ত্রাসী ঘটনা ব্যর্থ হলেও এর ফলে অনেক নতুন ঘটনা ঘটতে পারে। আরও অনেক তরুণ এতে উদ্বুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার কথিত পরিকল্পনার অভিযোগে বুধবার নাফিসকে গ্রেফতার করে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় অপরাধ তদন্ত ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের এক বিবৃতিতে বলা হয়, নাফিসের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহার ও জঙ্গি সংগঠন আল কায়দাকে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
নাফিস বলত, প্রকৃত মুসলমান সহিংসতায় বিশ্বাস করে না : সন্ত্রাসবাদী পরিকল্পনার অভিযোগে নিউইয়র্কে বাংলাদেশী যুবক কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান নাফিস এফবিআইর হাতে গ্রেফতার হওয়ায় বিস্মিত হয়েছেন তার মার্কিন সহপাঠীরা। নাফিসের ভূয়সী প্রশংসা করে তারা বলেছেন, ‘নাফিস ছিল ভদ্র ও বিনয়ী। সে বলত, প্রকৃত মুসলমান কখনও সহিংসতায় বিশ্বাস করে না।’ ফক্স নিউজ এ খবর দিয়েছে।
গতকাল মার্কিন টিভি চ্যানেল ফক্স নিউজের অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর নাফিস প্রথমে ভর্তি হন সাউথইস্ট মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে তার সহপাঠী ডিয়ন ডানকান বলেন, ‘নাফিস ছিলেন ভালো মানুষ। তার মধ্যে কখনও মার্কিন বিরোধিতা দেখিনি। সে ছিল বিশ্বস্ত ও সত্ লোক। ডানকান বলেন, ‘নাফিস ছিল ভদ্র ও বিনয়ী। সে ছিল পরোপকারী। একজন ভালো মুসলিমের কাছ থেকে আপনি যেমনটা আশা করেন, সে ছিল তেমনই। সে দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত।’
ওই ইউনিভার্সিটিতে তার আরেক সহপাঠী ডাউ বলেন, ‘নাফিস লাদেনের প্রশংসা করেছে ঠিকই। তবে সে বলেছে, লাদেন টুইন টাওয়ারে হামলা করেছে বলে সে বিশ্বাস করে না। নাফিস বলত, লাদেন ছিল ধর্মপরায়ণ এবং একজন ধার্মিক লোক কখনও এ কাজ করতে পারে না।’ ডাউ বলেন, নাফিস তাকে এক কপি কোরআন শরিফ উপহার দিয়ে তা পড়তে বলেছিল। তবে কোরআন পড়ার জন্য সে কখনও পীড়াপীড়ি করেনি।’
নাফিসের পরিবারও একই ধরনের কথা বলেছে। তারা বলেছেন, নাফিস এফবিআইর সাজানো নাটকের শিকার। নাফিস শিশুর মতো সরল মনের অধিকারী বলে মন্তব্য করেছে তার পরিবার ও নিকটজনরা।
এফবিআই যে কৌশল নিয়ে এভাবে সম্ভাব্য অপরাধীদের গ্রেফতার করে তা নিয়ে মার্কিন মুল্লুকেও প্রশ্নও উঠেছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশের ভাষ্যমতেই এফবিআইর এজেন্ট ও ইনফরমার এ ধরনের অপারেশন চালাতে নাফিসকে উত্সাহিত করেছেন, তাকে নির্দেশনা দিয়েছেন, অর্থ দিয়েছেন, এমনকি হামলা চালাতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পর্যন্ত সরবরাহ দিয়েছেন। সমালোচকরা মনে করছেন, উপযুক্ত সরকারি সহায়তা ছাড়া এমন একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারত না নাফিস।
এক্ষেত্রে নিউইয়র্ক টাইমস ২০০৯ সালের একটি ঘটনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছে। ওই বছর বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ব্রনক্সে রিভারডেল সেকশনে একটি উপাসনালয়ের সামনে বাসায় তৈরি বোমা স্থাপন করেছিল। ওই ঘটনায় ৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তাতেও সরকারি ইনফরমারের ভূমিকা ছিল। এ মামলাটি যে বিচারক দেখছিলেন, তিনি এতে আইন প্রয়োগকারী এজেন্টদের ভূমিকার সমালোচনা করেন। ওই এজেন্টরা ওই ব্যক্তিদের বোমা পাতার পরিকল্পনা সামনে এগিয়ে নিতে সহায়তা করেছিল। বিচারক তাই সমালোচনায় বলেছিলেন, ‘দ্য গভর্নমেন্ট মেড দেম টেররিস্টস’ (সরকার তাদের সন্ত্রাসী বানিয়েছে।’
নাফিসের সহযোগী সন্দেহে এক মার্কিনি গ্রেফতার : নাফিসের সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগের সূত্র ধরে ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগো থেকে এক মার্কিন নাগরিককে গ্রেফতার করেছে এফবিআই। তার নাম হাওয়ার্ড উইলি কারটার। গতকাল নিউইয়র্ক টাইমসে এ খবর প্রকাশিত হয়।
কারটারের বাসা থেকে অপ্রাপ্তবয়স্কদের যৌন সম্পর্কের ৩০টি ভিডিও এবং সহস্রাধিক ছবি জব্দ করা হয় বলেও এসব প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তবে আদালতের বরাত দিয়ে এসব প্রতিবেদনে বলা হয়, কারটারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে লিপ্ত থাকার কোনো অভিযোগ এখনও দায়ের করা হয়নি।