Sunday, September 23, 2012

হট্টগোলের মধ্যে নিউ ইয়র্কে শেখ হাসিনা







বিমানবন্দরে ব্যাপক হট্টগোলের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র সফর শুরু হয়েছে।

নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি (জেএফকে) বিমানবন্দরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভের মধ্যে রোববার স্থানীয় সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে পৌঁছান শেখ হাসিনা।

ওই সময় প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে জড়ো হওয়া আওয়ামী লীগ সমর্থকরা মুহুর্মূহু স্লোগান দিচ্ছিল। অন্যদিকে কালো পতাকা নিয়ে জড়ো হয় বিএনপি সমর্থকরা।

বিমানবন্দরে দুই পক্ষের অবস্থানের কারণে বিপুল সংখ্যক দাঙ্গা পুলিশ মাঝখানে অবস্থান নেয়। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে চড়ে হোটেলে যান শেখ হাসিনা।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক গেছেন প্রধানমন্ত্রী। আট দিনের সফরে ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘের বার্ষিক সাধারণ অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেবেন।

শেখ হাসিনার এই সফরকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে কদিন ধরে প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছিল। দুই বছর আগে একই ধরনের সফরে সংঘর্ষ ঘটায় তৎপর ছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও।

ফলে নিরাপত্তার কড়াকড়ির কারণে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যেমন শেখ হাসিনার দেখা পাননি। তেমনি কালো পতাকা নিয়ে ভেতরে ঢুকতে পারেননি বিএনপি, তারেক পরিষদ ও যুবদলের নেতা-কর্মীরাও।

শেখ হাসিনা বিমানবন্দরে নামার পরপরই বাইরে পাল্টাপাল্টি স্লোগানে তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। দুই পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা থেকে হাতাহাতির উপক্রম হলে নিরাপত্তা রক্ষীরা দুই পক্ষকে থামায়।

কয়েকশ পুলিশ দুই পক্ষকেই ঘিরে রাখে। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনাকে বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিমানবন্দরে অবতরণের সঙ্গে সঙ্গে এরাইভাল টার্মিনালের সব ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়। খোলা রাখা হয় একটিমাত্র ফটক, তাতেও ছিল কড়া পাহারা, সাংবাদিকদেরও ছাড় দেয়া হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরাইভাল টার্মিনালের বিশেষ ফটক দিয়ে হোটেলে রওনা হওয়ার অন্তত ১০ মিনিট পর সবাই তা জানতে পারেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে এ মোমেন বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার ব্যাপারটি তদারকি করছে জাতিসংঘ। তারা যেভাবে চেয়েছেন সেভাবেই ঘটছে সবকিছু।”

বিমানবন্দরে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমনি, এ কে এ মোমেন ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের।

দু’বছর আগে জেএফকে বিমানবন্দরে শেখ হাসিনাকে নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে রক্ষক্ষয়ী সংঘাত হয়েছিল। সে কারণেই এবার নিরাপত্তার কড়াকড়ি ছিল বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরী।

বিমানবন্দরে শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানাতে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সহসভাপতি আকতার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, নিউ ইয়র্ক আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরনবী কমান্ডার, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।

এই কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্দিকুর রহমান  বলেন, শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তাই তাকে সাদর সম্ভাষণ জানানোর দায়িত্ব হচ্ছে প্রতিটি বাংলাদেশির।

গত সাড়ে ৩ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের জন্য শেখ হাসিনাকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ২৬ সেপ্টেম্বর ‘নাগরিক সংবর্ধনা’ দেয়ার প্রস্তুতিও নিয়েছে।

অন্যদিকে শেখ হাসিনাকে কালো পতাকা দেখাতে বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল লতিফ সরাট, গিয়াস আহমেদ, জিল্লুর রহমান জিল্লু, মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, আকতার হোসেন বাদল, গোলাম ফারুক শাহীন, এম এ বাতিন, আবু সাঈদ আহমেদ, বেলাল মাহমুদ, জসীমউদ্দিন, এম এ খালেক প্রমুখ।
‘বিশ্ব ব্যাংক নতুন কোনো শর্ত দেয়নি’


 
পদ্মা প্রকল্পে ফিরে আসার ক্ষেত্রে বিশ্ব ব্যাংক নতুন কোনো শর্ত দেয়নি বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বিশ্ব ব্যাংকের ফেরার ক্ষেত্রে আগের চার শর্তের সঙ্গে নতুন কয়েকটি যোগ হয়েছে বলে সংবাদপত্রে খবর প্রকাশের মধ্যে রোববার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ইকবাল মাহমুদ এই তথ্য জানিয়েছেন।

বহু জল ঘোলা হওয়ার পর পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের ফেরার ঘোষণা আসার পর সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, “পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংক নতুন কোনো শর্ত দেয়নি।”

দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ২৯১ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করে গত বছরের সেপ্টেম্বরে চারটি শর্ত দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক। তা পূরণ হয়নি জানিয়ে গত ২৯ জুন ১২০ কোটি ডলারে ঋণচুক্তি বাতিল করে সংস্থাটি।

এরপর সরকার পদ্মা প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংককে ফেরাতে নানামুখী তৎপরতা শুরু করে সরকার। সমালোচনার মুখে থাকা মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, ছুটিতে যান সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন, প্রকল্প থেকে সরানো হয় ইন্টিগ্রিটি অ্যাডভাইজর মসিউরকে।

সব শর্ত পূরণের পর গত ২০ সেপ্টেম্বর পদ্মা প্রকল্পে ফেরার ঘোষণা দেয় বিশ্ব ব্যংক।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমানকে ছুটিতে পাঠানোর কারণেই বিশ্ব ব্যাংক ফিরে এসেছে কি না- এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, “পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থায়নে ফিরে আসার ক্ষেত্রে বিশ্ব ব্যাংক যে শর্ত দিয়েছিল, তা পূরণ হয়েছে বলেই তারা ফিরে এসেছে।”

আগের চুক্তি বাতিল হওয়ায় বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করতে হবে কি না- জানতে চাইলে সচিব ইকবাল মাহমুদ স্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি।

“বহুজাতিক এই আন্তর্জাতিক সংস্থার একটি প্রতিনিধি দল অচিরেই ঢাকায় আসছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে,” বলেন তিনি।

সচিব বলেন, “পদ্মা সেতু প্রকল্প একটি চলমান প্রকল্প। এর কাজ চলছে। জাইকা ইতোমধ্যে তাদের ঋণচুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছে। এডিবি এখনো আনুষ্ঠানিক কিছু জানায়নি। বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি ও জাইকার যে টিম আসবে তারাই সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কৌশল ঠিক করবে।”

বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি ও জাইকার প্রতিনিধিরা ওয়াশিংটন, ম্যানিলা ও টোকিও থেকে আগামী সপ্তাহেই ঢাকায় আসবে বলে জানান তিনি।

ইকবাল মাহমুদ আরো বলেন, তার আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গে আলোচনার জন্য বিশ্ব ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসবে।

“তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত ও প্রকল্প বাস্তবায়নের বাস্তব কৌশল নির্ধারণ করবেন,” বলেন তিনি।

পদ্মা সেতু প্রকল্পকে সরকার গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে জানিয়ে সচিব বলেন, “আমরা (সরকার) কত দ্রুত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করব, সেটাই এখন বড় বিষয়।”

“সরকার পদ্মা সেতু প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে সহ-অর্থায়নকারীদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করবে,” যোগ করেন তিনি।

বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন বাতিলের পর নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। এ জন্য তহবিল সংগ্রহে ব্যাংক হিসাবও খোলা হয়।

ওই অনুদানের অর্থের কী হবে- জানতে চাইলে ইকবাল মাহমুদ বলেন, “বিশ্ব ব্যাংকসহ অন্য তিন দাতা সংস্থা যে অর্থায়ন করবে, তার বাইরেও অর্থের প্রয়োজন হবে। অনুদানের অর্থ সেখানে ব্যয় করা হতে পারে।”

পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের ফিরে আসার ক্ষেত্রে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, যুক্তরাজ্য ও চীন সরকারের গঠনমূলক ভূমিকার কথা তুলে ধরে দেশগুলোর প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব।


একান্ত সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী 
পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর এপ্রিল-মে মাসে

চুক্তি বাতিল করে আবার তা পুনর্বহাল বিশ্বব্যাংকের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। এখন আমরা দুর্ভাবনামুক্ত
আগামী বছর এপ্রিল-মেতে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। প্রয়োজনীয় দরপত্র আহ্বান করা হবে নভেম্বরে। দরপত্র চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে জানুয়ারিতে। বিশ্বব্যাংক ও অন্য দাতাদের সঙ্গে কথা বলার পর পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজের বিস্তারিত সময়সূচি ঘোষণা করা হবে। গতকাল রোববার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সমকালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পদ্মা সেতু নিয়ে নানা কথা বলেন।
কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় এর নির্মাণ ব্যয় বাড়বে কি-না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, নির্মাণ ব্যয় সামান্য বাড়তে পারে। বাড়তি ব্যয় ১০ থেকে ১৫ কোটি ডলারের বেশি হবে না। প্রকল্প এলাকার পুনর্বাসনের কাজ শেষ হয়েছে। জাজিরা অংশের সংযোগ সড়কের কাজও চলছে। এসব কাজ তো এগিয়েই রয়েছে। সব কাজ নতুন করে শুরু করতে হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুব সম্ভবত সেটা করতে হবে না। এডিবি ও জাইকা তা চাইছে না। কারণ এতে আরও অনেক সময় লেগে যাবে। তবে এ বিষয়টি দাতা সংস্থাগুলো সবাই মিলে নির্ধারণ করবে। কিছু বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। তবে সে ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত নই।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসা আমাদের জন্য একটি আনন্দময় সুসংবাদ। চুক্তি বাতিল করে আবার তা পুনর্বহাল বিশ্বব্যাংকের ইতিহাসে নজিরবিহীন। তারা ১০ দিন সময় চেয়েছিল। আমরা বলেছিলাম, তিন দিনের মধ্যে আসুন। আশা করছি খুব শিগগিরই তারা আসবে। তারা আসার পর অন্য তিন দাতা জাইকা, এডিবি ও আইডিবির প্রতিনিধিদের সঙ্গে একসঙ্গে বৈঠক হবে। শিগগিরই বিশ্বব্যাংকের একাধিক টিম আসছে। তিনি বলেন,
'বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে। জাপান তো সব সময় আমাদের সঙ্গেই ছিল। ভারত তো ছিলই। সারাদেশ যখন পদ্মা সেতুর বিষয়ে উদ্বিগ্ন, ঠিক তখন বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসা সার্বিক অবস্থার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আমরাও চূড়ান্ত কোনো ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত দুুশ্চিন্তায় ছিলাম। এখন আমরা দুর্ভাবনামুক্ত। এখন আমরা বলতে পারি, পদ্মা সেতু হচ্ছে।' অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আমি বারবার বলে আসছিলাম যে, বিশ্বব্যাংক যে অপবাদ দিয়েছিল, তাতে ভুল ছিল। তারা যে ভুল করেছিল, তা একদিন প্রমাণিত হবে।'
মালয়েশিয়ার প্রস্তাবের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'মালয়েশিয়াকে অখুশি হওয়ার মতো কিছুই করা হবে না। তাদেরকে আমরা পিপিপির অধীনে অন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের অফার দিতে পারি। আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে তাদের প্রস্তাব কাজে লাগাতে পারব। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনের কাজও শুরু হবে। মালয়েশিয়াকে এ ধরনের কোনো প্রকল্পে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিতে পারি। তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলব। পদ্মা সেতু নিয়ে অনিশ্চয়তার মুহূর্তে তারা এগিয়ে এসেছিল। এ কথা আমরা ভুলব না।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিক প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'তিনি যে সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন তার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করেছে। তিনি এ ধরনের সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। আমাদের ওপর যে অপবাদ দেওয়া হয়েছে, শুরু থেকেই তার বিরোধিতা করে আসছি। সুবিধাজনক কোনো সময়ে দেশবাসীকে সব বিষয়ে বিস্তারিত অবহিত করব।'
অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক গত বছর সেপ্টেম্বরে তাদের কথিত দুর্নীতি সংক্রান্ত চিঠি দেয়। আমরা অক্টোবরে তাদের চিঠির উত্তর দিই। তারা অক্টোবরে কোনো উত্তর না দিয়ে বারবার সময় নিতে থাকে। তারা সম্পূর্ণ সন্দেহের বশবর্তী হয়ে ঋণচুক্তি বাতিল করে। এর পেছনে অন্য আর কোনো কারণ ছিল কি-না তা কোনো না কোনো সময় জানা যাবে। বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্টের নেওয়া পদক্ষেপের স্বচ্ছতা নিয়ে আমাদের সন্দেহ রয়েছে। দুর্নীতির যে অভিযোগ তিনি করেছিলেন, তার কোনো প্রমাণ দেওয়া হয়নি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সৈয়দ আবুল হোসেনকে সরিয়ে দেওয়ার পর তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। নিজের কাঁধে মিথ্যা অপবাদের বোঝা নিয়ে সরে যাওয়ার এক নজির সৃষ্টি করেছেন তিনি। আবুল হোসেন পদত্যাগ করার সময় আমাকে বলেছিলেন, দুর্নীতির অপবাদ নিয়ে পদত্যাগের কারণে আগামী নির্বাচনে তার ওপর প্রভাব পড়তে পারে। তবুও তিনি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে পদত্যাগ করেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, মসিউর রহমানকেও মিথ্যা অপবাদে সরে যেতে হলো। এমন এক সময় আসবে, যখন তারা দু'জনই নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করবেন। এ জন্য হয়তো আমাদের কিছুুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
বিশ্বব্যাংক ফিরে না এলে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে অর্থ সংগ্রহের যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা এখন আর কার্যকর নয় বলে অর্থমন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে সাড়ে ছয়শ' মিলিয়ন ডলার অর্থ জোগান দিতে হবে বাংলাদেশকে। এর জন্য চাঁদা সংগ্রহের প্রয়োজন নেই।

‘অন্য কোনো ফর্মুলা নয়, তত্ত্বাবধায়কই চাই’

 
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ছাড়া অন্য কোনো পন্থা মেনে না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।

রোববার দিনাজপুরের জনসভায় তিনি বলেছেন, “কোনো ফর্মুলায় কাজ হবে না। দলীয় নয়, নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে।”

“তা না হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করব, সরকার পালানোর পথ পাবে না,” একইসঙ্গে সরকারকে হুঁশিয়ার করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের কারণে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হবে। তবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না দাবি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি।

নির্বাচনকালে সরকার অর্র্ন্তবতী সরকারের দায়িত্ব পালন করবে বলে সরকারি দলের নেতারা বলে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে বলেছেন, নির্বাচনের সময় মন্ত্রিসভা ছোটও হতে পারে।

নির্বাচনকালে মন্ত্রিসভায় বিরোধী দলকে স্থান দেয়ার কথাও ইতোপূর্বে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে দিনাজপুরে জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব স্পষ্টতওই প্রত্যাখ্যান করলেন বিরোধী নেতা।