Thursday, September 13, 2012


যে কারণে মন্ত্রী হলেন না


আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভার চতুর্থ দফা সম্প্রসারণে মন্ত্রী হতে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদ এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা সে প্রস্তাবে রাজি হননি। কেন তাঁরা মন্ত্রিসভায় যোগ দিলেন না, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য হলো তাঁরা দলের ও মহাজোটের হয়ে কাজ করতে চান।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বনানীর বাসভবনে তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের কাছে এবং ওয়ার্কার্স পার্টির এক বিজ্ঞপ্তিতে রাশেদ খান মেননের মন্ত্রিসভায় যোগ না দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

তোফায়েল আহমেদ: ‘আমার মতো তোফায়েল আহমেদ মন্ত্রিসভায় না এলে কিছু যায় আসে না।’ মন্ত্রী হিসেবে শপথ না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত সরকারের শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রথমত, এই মুহূর্তে আমি রাজনৈতিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নই। দ্বিতীয়ত, আমাকে কাপাসিয়া উপনির্বাচনের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, এখন আমি নির্বাচন পরিচালনার সেই দায়িত্বই ভালোভাবে পালন করতে চাই।’
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘মন্ত্রিত্ব থেকে দল অনেক বড়। নিজেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে ধন্য মনে করি। সেই লক্ষ্যে নিয়েই দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি। দলের হয়ে কাজ করে যাই।’
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘যাঁরা মন্ত্রী আছেন, বাকি দিনগুলো তাঁরা ভালোভাবে কাজ করতে পারবেন। এ ছাড়াও যাঁরা নতুন করে যোগ দিয়েছেন, তাঁরাও যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। আমার মতো একজন তোফায়েল আহমেদ মন্ত্রিসভায় যোগদান না করলে তাতে কিছুই যায় আসে না। দলের প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ, হতাশা ও বঞ্চনা নেই।’ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কোনো ভুল-বোঝাবুঝি নেই বলেও তিনি জানান। কোনো ধরনের হতাশা থেকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি না, সাংবাদিদের এমন প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ এ সব কথা বলেন।

রাশেদ খান মেনন: মন্ত্রিসভা গঠন ও রাষ্ট্র পরিচালনায় ওয়ার্কার্স পার্টিসহ ১৪ দলের কোনো ধরনের অংশগ্রহণ ছিল না। মূলত এ কারণে এক বছর আগে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
মন্ত্রিসভায় যোগ না দিলেও ওয়ার্কার্স পার্টি সংসদে ও সংসদের বাইরে সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে। মন্ত্রী হওয়ার আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে মহাজোটের শরিক এই দলটি। মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পাওয়ার পর আজ দুপুরে বৈঠকে বসে পার্টির পলিটব্যুরো। আর বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়।
দলের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বলা হয়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২৩ দফার ভিত্তিতে ১৪ দলের দীর্ঘ ধারাবাহিক আন্দোলন ও মহাজোটভিত্তিক নির্বাচনেরই ফলাফল। সেই ধারাবাহিকতায় মহাজোট সরকারে ১৪ দলের শরিক হিসেবে ওয়ার্কার্স পার্টি অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু মন্ত্রিসভা গঠনসহ রাষ্ট্র পরিচালনার কোনো ক্ষেত্রেই ওয়ার্কার্স পার্টিসহ ১৪ দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী অথবা আওয়ামী লীগের এ যাবত্ কোনো আলোচনা হয়নি। এ বিষয়ে ওয়ার্কার্স পার্টি ১৪ দলকে সক্রিয় করার জন্য বারবার তাগাদা দিয়েছে। কিন্তু কোনো ফল হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর সিদ্ধান্ত নেয়, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মন্ত্রিসভায় ওয়ার্কার্স পার্টির যোগদানের আর কোনো অবকাশ নেই। তবে ওয়ার্কার্স পার্টি সংসদে ও সংসদের বাইরে সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে এবং একইভাবে ১৪ দলসহ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যকে আরও দৃঢ় করে বিএনপি-জামায়াতসহ দক্ষিণপন্থী সাম্প্রদায়িক শক্তির ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের সব ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করবে।

No comments:

Post a Comment