Sunday, September 9, 2012

মতলব উত্তরে পাটের উৎপাদন ও মূল্যহ্রাস পাওয়ায় চাষীরা হতাশ


মতলব উত্তরে পাটের উৎপাদন ও মূল্যহ্রাস পাওয়ায় চাষীরা হতাশ

post-image
চলতি মৌসুমে মতলব উত্তর উপজেলায় পাটের আবাদ করে চাষীরা চরম বিপাকে পড়েছে। খরা ও বৃষ্টিপাতের অভাবে পাটের ফলন আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া পাটের বাজারমূল্য আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় কৃষকরা পাটের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাটের মূল্যহ্রাসের কারণে পাটচাষীদের মাথায় হাত পড়েছে। অনেক চাষী এখনো পাট কাটেনি। ক্ষেতে পাটগাছ শুকিয়ে খড়িতে পরিণত হচ্ছে। এছাড়া পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ার কারণে চাষীরা এখনো পাটের ‘জাগ’ দিতে পারছে না। 
পাটচাষীরা জানায়, প্রতি বিঘা জমিতে গতবছর ৮ থেকে ১০ মণ পাট উৎপাদন হলেও এবার উৎপাদন নেমে এসেছে মাত্র ৫ থেকে ৬ মণে। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে বর্তমানে প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে ৮শ’ থেকে ১২শ’ টাকায়। দেশী পাট ৮শ’, তোষা ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকায়।
এ প্রসঙ্গে পূর্ব নাউরী গ্রামের কৃষক মকরম আলী জানান, পাট বোনা, নিড়ানি, কাটা-ধোয়া, সার প্রয়োগসহ প্রতিবিঘা জমিতে পাট আবাদে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু পাট উৎপাদন হয়েছে বিঘা প্রতি ৬ মণ। পাটশোলাসহ পাট বিক্রি করে তার উৎপাদন খরচও ঘরে আসবে না।
ব্রাক্ষ্মণচক গ্রামের আলী জানান, এবার পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবার শুরু থেকে পাট চাষে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। পানির অভাবে এ এলাকায় অনেক কৃষক এখনো পাট না কাটায় ক্ষেতেই পাটগাছ শুকিয়ে খড়িতে পরিণত হচ্ছে। এখনো অনেক চাষী পানির অভাবে পাটের ‘জাগ’ দিতে পারছে না উপজেলার ছেংগারচর বাজারে প্রতি হাটবারে পাট বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার মণ, গত হাটে সেখানে অর্ধেকেরও কম পাট বিক্রি হয়েছে। পাটের দাম না থাকায় অনেক চাষী পাট বিক্রি করতে না পেরে বাড়িতে ফিরে গেছে। অনেকেই আবার পেটের দায়ে পানির দামে পাট বিক্রি করেছে। ফরিয়া ও দালালদের মাধ্যমে পাট না কিনে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে পাট ক্রয় করার দাবি জানান সরকারের কাছে চাষীরা।
চর কাশিমের মুরাদ মিয়ার হাটের পাট ব্যবসায়ীরা জানায়, পাটের বাজার মন্দা, বিদেশের কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের পাট না কিনায় কোম্পানীগুলোও পাট কিনছে না বলে তারাও কিনতে পারছে না। মৌসুমের শুরুতে সরকার পাটের মূল্য নির্ধারণ করলেও সরকার বর্তমানে পূর্ব নির্ধারিত মূল্যে ক্রয় করছে না। ফলে ব্যবসায়ীরা কম মূল্যে পাট ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, সরকারিভাবে পাট দেশের বাইরে বাজারজাত করার জন্য সঠিক উদ্যোগ নিচ্ছে না। দেশের মধ্যে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সঠিক মূল্যে পাট না কিনে প্রতিনিয়ত পাটের দাম কমিয়ে সরকার টাকা দেয় না বলে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। এছাড়াও তাদের ফরিয়া ও দালালদের মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে পাট ক্রয় করছে। বিগত বছর জেলায় পাটের মান ভাল হলেও এবার বন্যার কারণে জামালপুরে নিম্নমানের পাট উৎপাদন হয়েছে। এসব কারণেও উপজেলায় পাটের মূল্য হ্রাস পেয়েছে।
মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছাইফুল আলম জানান, পাটের বাজার এভাবে থাকলে কৃষকেরা একদিন পাট চাষ ছেড়ে দিয়ে অন্য লাভজনক ফসল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবে। প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত ও পানির অভাবে এবার ফলন কম হয়েছে। এ ছাড়া খাল-বিলে পানি না থাকায় পুকুরে ডোবায় চাষীরা পাটের জাগ দিতে বাধ্য হয়েছে। ফলে পাটের রং ও মান ভাল হয়নি। নানাবিধ কারণে এবার পাটের উৎপাদন হ্রাস পায়। 
সরকার নির্ধারিত মূল্যে পাট ক্রয় করা না হলে উপজেলার চাষীরা আগামি পাট চাষে আগ্রহ হারাবে এবং ব্যবসায়ীরাও পাট ক্রয় থেকে বিরত থাকবে বলে মনে করেন উপজেলার সচেতন মহল।

No comments:

Post a Comment