 |
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইটসূচির বিপর্যয়ে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম |
|
একটি উড়োজাহাজ হারিয়েই ফ্লাইট বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। রোববার বাতিল হয়েছে তিনটি নির্ধারিত ফ্লাইট। ভোগান্তিতে পড়েছেন বিভিন্ন দেশের যাত্রীরা।
রোববার সকালে সরেজমিনে হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, নির্ধারিত ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় বহিঃগামী টার্মিনালে শতশত যাত্রী অপেক্ষা করছেন, যাদের বেশিরভাগই কুয়ালালামপুর, রিয়াদ, দুবাই, জেদ্দার যাত্রী।
চুক্তির মেয়াদ শেষের আগেই পর্তুগালের বিমান সংস্থা এয়ার আটলান্টার কাছ থেকে ভাড়ায় আনা পাঁচ শতাধিক আসনের একটি বোয়িং-৭৪৭ চলে যাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিমান জানিয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ২৫০ ঘণ্টা করে বছরে ৩ হাজার ঘণ্টা ফ্লাই করার কথা ছিলো ওই উড়োজাহাজটির। ২০ সেপ্টেম্বর চুক্তি শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু গত ১২ সেপ্টেম্বর মাস্কাট বিমানবন্দরে ২২৫ জন যাত্রী ফেলে নিজ দেশে চলে যায় উড়োজাহাজটি।
বোয়িং-৭৪৭ উড়োজাহাজটি দিয়ে কুয়ালালামপুর, জেদ্দা, রিয়াদ, মাস্কটসহ মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে ফ্লাইট পরিচালনা করা হতো।
বিমানের তথ্য অনুযায়ী, ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বোয়িং-৭৪৭ উড়োজাহাজটি দিয়ে প্রায় আটটি ফ্লাইট পরিচালনার কথা ছিলো। এর প্রত্যেকটি ফ্লাইটে সাড়ে চারশ’র বেশি যাত্রী বহন করার কথা।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আটকে পড়া ওই যাত্রীদের অপেক্ষাকৃত ছোট বিমানে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে গিয়ে ভেঙে পড়েছে বিমানের নিয়মিত ফ্লাইট।
নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানিয়েছে, রোববার মধ্যপ্রাচ্যের ফ্লাইট ঠিক রাখতে আন্তর্জাতিক রুটে ঢাকা-লন্ডন (বিজি-০০৫)ও ঢাকা-আবুধাবি (বিজি-০২৭) এবং অভ্যন্তরীণ রুটের ঢাকা-সিলেটের (বিজি-০৬১) নিয়মিত ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে ফ্লাইট সূচিতে জটের কারণে শাহজালালে আটকা পড়েছেন হাজার খানেক যাত্রী। তারা বলছেন, ফ্লাইট বাতিল হলেও প্রাপ্য কোনো সুবিধা দিচ্ছে না বিমান কর্তৃপক্ষ।
বিমানবন্দরের ২ নম্বর টার্মিনালে মালয়েশিয়াগামী আনিসুর রহমান বলেন, “গতকাল দুপুর সাড়ে ১১টায় আমার ফ্লাইট ছিল। কিন্তু এখানে আসার পরে জানতে পারলাম আমার তা বাতিল হয়েছে। আমাকে পুনরায় আগামীকাল সাড়ে ৮টায় যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।”
ফ্লাইট বাতিল হলে যাত্রীদের বিমানের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করার কথা নিয়ম থাকলেও এ ধরনের কোনো সুবিধা তিনি পাননি বলেও অভিযোগ করেন।
শুধু আনিসুর নয়, মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে বিমানন্দরেই অপেক্ষা করছেন ভৈরবের মো. মাসুম। একই পরিস্থিতিতে পড়েছেন নারায়ণগঞ্জের সজিব মিয়া। বিমানের একটি ফ্লাইটে দুবাই যাওয়ার কথা ছিলো তার।
“গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় আমার ফ্লাইট ছিলো। এখানে আসার পর জানানো হয়েছে দেরি হবে। আজ রাত ১০ টায় যোগাযোগ করতে বলা হলেও ভরসা করতে পারছি না,” ক্ষোভের সুরে বলেন সজিব মিয়া।
আর ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে আবুধাবি যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা শফিউল্লাহ কান্না যেন থামানোই যাচ্ছিল না। সান্ত¦না দেয়ার মানুষের সংখ্যা কম না হলেও ভরসা যেন পাচ্ছেন না তিনি।
মো. শফিউল্লাহ বলেন, “গত ১৪ সেপ্টেম্বর আমরা চারজন আবুধাবি যাওয়ার জন্য এখানে আসি। এখন বলা হচ্ছে আগামী কাল দুপুর ২টায় যোগাযোগ করতে। এখানে থাকা খাওয়া সব মিলিয়ে পকেটের সব টাকা শেষ। আমি জানি না, এখন কী করবো, পকেটে আছে মাত্র ১শ টাকা।”
অন্যদিকে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার দাবিতে বিমানবন্দরেই বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিমানের কুয়েতের যাত্রীরা। এক পর্যায়ে সাংবাদিকরা পৌঁছালে বিমান কর্মচারীরা তাদের টার্মিনালের ভেতরে নিয়ে যায়। তবে টার্মিনালের ভেতরে কোনো সাংবাদিককে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
এসব বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভারপ্রাপ্ত ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মোসাদ্দেক আহমেদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। |
|
No comments:
Post a Comment