Monday, September 17, 2012

এমএলএম আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড



undefined
সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা ও পাঁচ বছর কারাদণ্ডের বিধান রেখে ডাইরেক্ট সেল আইন ২০১২-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এটি মূলত বহুস্তর বিপণন (এমএলএম) নিয়ন্ত্রণ-সম্পর্কিত আইন। প্রতারণা ও জালিয়াতির দায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি এটা।
আজ সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এ বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য জানান।
এই আইনের খসড়া তৈরি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত ৩০ আগস্ট তারা তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠায়। ১৪টি অধ্যায়, ৪৮টি ধারা ও দুটি তফসিল মিলিয়ে এই খসড়া আইন।
আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, যারা এর মধ্যে এ ব্যবসা করছে, নতুন করে তাদের লাইসেন্স করতে হবে।
খসড়া আইনের ১২ থেকে ২৯, অর্থাত্ মোট ১৮টি ধারায় শাস্তি সম্পর্কে কথা বলা হয়েছে। খসড়া অনুযায়ী, আইন লঙ্ঘনকারীদের জেল খাটতে হবে তিন থেকে পাঁচ বছর। লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসার জন্য সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা ও তিন থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। লাইসেন্স নবায়ন ছাড়া ব্যবসা করলে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা ও ছয় থেকে ১২ মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট পণ্য ছাড়া অন্য পণ্যের ব্যবসা করলে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা ও তিন থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। মোড়কবিহীন পণ্যের ব্যবসা করলে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা ও এক-দুই বছরের কারাদণ্ড। পরিবেশকদের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও এক থেকে তিন বছরের কারাদণ্ডের শাস্তির প্রস্তাব করা হয়েছে আইনে।
খসড়ার সারসংক্ষেপে বলা হয়, ‘এমএলএম কোম্পানির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে দেশে কোনো আইন নেই। কোম্পানি আইনে নিবন্ধন নিয়ে বা সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে এ ব্যবসা করা হচ্ছে। এরা কখনো উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করছে জনগণকে। আবার কখনো অলীক পণ্য বিপণনে অস্বাভাবিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে আসছে।’ এ কাজ আর করা যাবে না বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়।
আইনের চতুর্থ অধ্যায়ের প্রস্তাব অনুযায়ী, কিছু ক্ষেত্রে এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসা নিষিদ্ধ করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন পিরামিডসদৃশ বিক্রয় কার্যক্রম করা যাবে না। অবস্তুগত বা অলীক পণ্য এবং সময়ের ধারাবাহিকতা বা পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিপণনযোগ্য হবে—এমন পণ্য বা সেবা নিয়েও ব্যবসা করা যাবে না।
আইন লঙ্ঘন হলে লাইসেন্স বাতিল: যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের পরিদপ্তর (রেজসকো) থেকে বিদ্যমান ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের আওতায় লাইসেন্স ও নিবন্ধন নেওয়ার কথা আইনে বলা হয়েছে। তবে আইন যথাযথভাবে পরিপালিত না হলে যেকোনো সময় লাইসেন্স বাতিল করা যাবে।
লাইসেন্স পাওয়ার জন্য নামের ছাড়পত্র, সংঘবিধি ও সংঘস্মারক, পণ্যতালিকা, ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি এবং কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের সমপরিমাণ অর্থের ব্যাংক গ্যারান্টি নিয়ে আবেদন করতে হবে। কাগজপত্র যাচাই করে ২৫ দিনের মধ্যে প্রয়োজনে শুনানি গ্রহণ করে লাইসেন্স দেওয়া হবে।
কী কী পণ্যের ব্যবসা করা যাবে: 
এমএলএম পদ্ধতিতে যেসব পণ্যের ব্যবসা করা যাবে, এর একটি তালিকা আইনের দ্বিতীয় তফসিলে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে: গৃহস্থালি, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক, হোম এপ্লায়েন্স, প্রসাধন ও টয়লেট্রিজ, হারবাল, টেলিমার্কেটিং, কৃষিজ ও কৃষিজাত, টেলিকমিউনিকেশন সেবা বা ব্যবহারযোগ্য পণ্য এবং প্রশিক্ষণসংক্রান্ত সেবা ও পণ্য। তবে চতুর্থ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, এই তালিকা কমানো-বাড়ানোর এখতিয়ার সরকারের হাতে থাকবে।
এখন এই খসড়া আইন যাচাই-বাছাইয়ের (ভোটিং) জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আবারও মন্ত্রিসভায় তোলা হবে। পরে তা উপস্থাপন করা হবে জাতীয় সংসদে।

No comments:

Post a Comment