একান্ত সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী
পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর এপ্রিল-মে মাসে

চুক্তি বাতিল করে আবার তা পুনর্বহাল বিশ্বব্যাংকের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। এখন আমরা দুর্ভাবনামুক্ত
আগামী বছর এপ্রিল-মেতে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। প্রয়োজনীয় দরপত্র আহ্বান করা হবে নভেম্বরে। দরপত্র চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে জানুয়ারিতে। বিশ্বব্যাংক ও অন্য দাতাদের সঙ্গে কথা বলার পর পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজের বিস্তারিত সময়সূচি ঘোষণা করা হবে। গতকাল রোববার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সমকালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পদ্মা সেতু নিয়ে নানা কথা বলেন।
কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় এর নির্মাণ ব্যয় বাড়বে কি-না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, নির্মাণ ব্যয় সামান্য বাড়তে পারে। বাড়তি ব্যয় ১০ থেকে ১৫ কোটি ডলারের বেশি হবে না। প্রকল্প এলাকার পুনর্বাসনের কাজ শেষ হয়েছে। জাজিরা অংশের সংযোগ সড়কের কাজও চলছে। এসব কাজ তো এগিয়েই রয়েছে। সব কাজ নতুন করে শুরু করতে হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুব সম্ভবত সেটা করতে হবে না। এডিবি ও জাইকা তা চাইছে না। কারণ এতে আরও অনেক সময় লেগে যাবে। তবে এ বিষয়টি দাতা সংস্থাগুলো সবাই মিলে নির্ধারণ করবে। কিছু বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। তবে সে ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত নই।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসা আমাদের জন্য একটি আনন্দময় সুসংবাদ। চুক্তি বাতিল করে আবার তা পুনর্বহাল বিশ্বব্যাংকের ইতিহাসে নজিরবিহীন। তারা ১০ দিন সময় চেয়েছিল। আমরা বলেছিলাম, তিন দিনের মধ্যে আসুন। আশা করছি খুব শিগগিরই তারা আসবে। তারা আসার পর অন্য তিন দাতা জাইকা, এডিবি ও আইডিবির প্রতিনিধিদের সঙ্গে একসঙ্গে বৈঠক হবে। শিগগিরই বিশ্বব্যাংকের একাধিক টিম আসছে। তিনি বলেন,
'বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে। জাপান তো সব সময় আমাদের সঙ্গেই ছিল। ভারত তো ছিলই। সারাদেশ যখন পদ্মা সেতুর বিষয়ে উদ্বিগ্ন, ঠিক তখন বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসা সার্বিক অবস্থার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আমরাও চূড়ান্ত কোনো ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত দুুশ্চিন্তায় ছিলাম। এখন আমরা দুর্ভাবনামুক্ত। এখন আমরা বলতে পারি, পদ্মা সেতু হচ্ছে।' অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আমি বারবার বলে আসছিলাম যে, বিশ্বব্যাংক যে অপবাদ দিয়েছিল, তাতে ভুল ছিল। তারা যে ভুল করেছিল, তা একদিন প্রমাণিত হবে।'
মালয়েশিয়ার প্রস্তাবের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'মালয়েশিয়াকে অখুশি হওয়ার মতো কিছুই করা হবে না। তাদেরকে আমরা পিপিপির অধীনে অন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের অফার দিতে পারি। আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে তাদের প্রস্তাব কাজে লাগাতে পারব। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনের কাজও শুরু হবে। মালয়েশিয়াকে এ ধরনের কোনো প্রকল্পে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিতে পারি। তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলব। পদ্মা সেতু নিয়ে অনিশ্চয়তার মুহূর্তে তারা এগিয়ে এসেছিল। এ কথা আমরা ভুলব না।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিক প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'তিনি যে সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন তার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করেছে। তিনি এ ধরনের সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। আমাদের ওপর যে অপবাদ দেওয়া হয়েছে, শুরু থেকেই তার বিরোধিতা করে আসছি। সুবিধাজনক কোনো সময়ে দেশবাসীকে সব বিষয়ে বিস্তারিত অবহিত করব।'
অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক গত বছর সেপ্টেম্বরে তাদের কথিত দুর্নীতি সংক্রান্ত চিঠি দেয়। আমরা অক্টোবরে তাদের চিঠির উত্তর দিই। তারা অক্টোবরে কোনো উত্তর না দিয়ে বারবার সময় নিতে থাকে। তারা সম্পূর্ণ সন্দেহের বশবর্তী হয়ে ঋণচুক্তি বাতিল করে। এর পেছনে অন্য আর কোনো কারণ ছিল কি-না তা কোনো না কোনো সময় জানা যাবে। বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্টের নেওয়া পদক্ষেপের স্বচ্ছতা নিয়ে আমাদের সন্দেহ রয়েছে। দুর্নীতির যে অভিযোগ তিনি করেছিলেন, তার কোনো প্রমাণ দেওয়া হয়নি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সৈয়দ আবুল হোসেনকে সরিয়ে দেওয়ার পর তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। নিজের কাঁধে মিথ্যা অপবাদের বোঝা নিয়ে সরে যাওয়ার এক নজির সৃষ্টি করেছেন তিনি। আবুল হোসেন পদত্যাগ করার সময় আমাকে বলেছিলেন, দুর্নীতির অপবাদ নিয়ে পদত্যাগের কারণে আগামী নির্বাচনে তার ওপর প্রভাব পড়তে পারে। তবুও তিনি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে পদত্যাগ করেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, মসিউর রহমানকেও মিথ্যা অপবাদে সরে যেতে হলো। এমন এক সময় আসবে, যখন তারা দু'জনই নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করবেন। এ জন্য হয়তো আমাদের কিছুুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
বিশ্বব্যাংক ফিরে না এলে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে অর্থ সংগ্রহের যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা এখন আর কার্যকর নয় বলে অর্থমন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে সাড়ে ছয়শ' মিলিয়ন ডলার অর্থ জোগান দিতে হবে বাংলাদেশকে। এর জন্য চাঁদা সংগ্রহের প্রয়োজন নেই।
No comments:
Post a Comment