Monday, September 17, 2012

বিশিষ্ট আইনজীবীদের অভিমত শপথবিহীন খায়রুল হকের রায়ে স্বাক্ষর করা সংবিধানের লঙ্ঘন


তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর সাবেক প্রধান বিচারপতি অবসরে যাওয়ার পর রায়ে স্বাক্ষর করার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের বিশিষ্ট আইনজীবীরা। তারা বলেছেন, বিচারপতিরা শপথ নিয়ে বিচার কাজ করেন। অবসরে যাওয়ার পর শপথ কার্যকর থাকে না। ২০১১ সালের ১৭ মে অবসরে গেছেন এবিএম খায়রুল হক। ফলে শপথহীন অবস্থায় তার রায়ে স্বাক্ষর করার আইনগত অধিকার নেই। রায়ে স্বাক্ষর করায় সংবিধানের লঙ্ঘন হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন বিশিষ্ট এই আইনজীবীরা।
এ প্রসঙ্গে দেশের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক বিচারপতি টিএইচ খান রায়ে বলেছেন, আগে থেকেই বলেছি, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক এ রায় দেয়ার অধিকার হারিয়েছেন। এ কথাটার তোয়াক্কা করেছেন বলে মনে হয় না। এটা সংবিধানের লঙ্ঘন। শপথ গ্রহণের পর অবসরে যাওয়া এটা সংবিধানের বিধান। মন্ত্রী বা বিচারপতিদের কার্যকর হয় শপথ নেয়ার দিন থেকে। এর গুরুত্বটা কি আরো বেশি করে বলতে হবে? এটা সংবিধানের বাধ্যবাধকতা।
কিন্তু বিচারপতি খায়রুল হক সাহেব ১০ মে ২০১১ সংক্ষিপ্ত কয়েকটি বাক্যে রায় দিয়েছিলেন। তারপরে ১৭ মে অবসর নিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অবসর নেয়ার পরে কলম ধরতে পারেন কি না। ১৮ মে থেকে উনি কলম ধরতে পারেন না। এটা সো সিম্পল। ১৬ মাস পর উনি পূর্ণাঙ্গ রায় দিয়েছেন তা নাকি বাংলায় লিখেছেন। ১৭ মে এর পরে তার রায় দেয়ার কোনো অধিকার নেই। লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে এটা করা হয়েছে। এটা কিভাবে হয়। খায়রুল হক ছাড়া বাকী ছয় বিচারপতি রায়টা দিলেও সমস্যা ছিল না।
সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে শতাধিক বিচারপতি রয়েছে। তারা এটা লক্ষ্য করেননি। ইতোমধ্যে একটা কানাঘুষা হয়েছে, তিনি একবার বলেছিলেন, ২৯ মার্চ ২০১২ রায় জমা দিয়েছেন। পরে অন্যান্য বিচারপতিরা তার সাথে কিছু কিছু দ্বিমত পোষণ করেছেন বলে জমা দেয়া রায় আবার ফেরত নিয়ে গেছেন এবং গত বৃহস্পতিবার রি রাইট করেছেন। এগুলো কি? তিনি কি তখন বিচারপতি ছিলেন? তিনি বিচারপতি ছিলেন ১৭ মে পর্যন্ত।
এর বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নিবেন কি না এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা চেষ্টা করব। অরণ্যের রোদন করব। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট হলে করা যেত। কারণ এত বড় একটা জঘন্য উদাহরণ। এত বড় একটা জখম বা ঘা। যা নিয়ে জনগণ বেঁচে থাকবে যে, চাকরি শেষ হওয়ার ১৬ মাস পরে রায় দেয়া যায়।
এখন কেউ যদি রসিকতা করে বলেন যে, কবরে গিয়েও রায় লিখে পাঠিয়ে দেয়া যাবে। গায়ের জোরে এ রায় এটা করা হয়েছে। এর জন্য লজ্জা পাওয়া উচিত। যা হবার তো তা হয়ে গেছে। এ রায়টি ছিল একটি শো পিস। ১৬ কোটি মানুষকে বোঝানোর জন্য এ রায় দেয়া হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায় আসার আগে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনীতে ৫১টি জায়গায় ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়ে স্বাক্ষর করার ‘আইনগত অধিকার' নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। তিনি বলেন, সাবেক এই প্রধান বিচারপতির রায়ে স্বাক্ষর করার আইনগত অধিকার নেই।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, রায় ঘোষণার ১৬ মাস পর সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক রায়ে স্বাক্ষর করেছেন। তিনি এখন আর ‘সিটিং জাজ' নন। তিনি এখন আর শপথের মধ্যে নেই। তাই এই রায়ে স্বাক্ষর করার আইনগত অধিকারও তার নেই।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, একজন বিচারপতি শপথ নেন সংবিধানের অধীন। সংবিধান অনুযায়ী বিচার কাজ পরিচালনায় রাগ-অনুরাগের ঊর্ধ্বে থেকে বিচার কাজ করবেন বলে এই শপথ নেয়া হয়। অবসরের ডান সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে। ফলে অবসরের পর বিচারপতির আর শপথ কার্যকর থাকে না। শপথবিহীন অবস্থায় তার রায় লেখা বা স্বাক্ষর করা আইনসঙ্গত হবে না। আইনগত এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন ওঠবে। কারণ শপথে না থাকায় তিনি রাগ-অনুরাগের বশবর্তী হয়ে রায়কে প্রভাবিত করতে পারেন। শপথে থাকলে এমনটি হত না। তাই শপথের পর রায় লেখা কতোটা আইনসঙ্গত হবে এটার বার দেশের জনগণের ওপর ছেড়ে দিলাম।
সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, একজন বিচারপতির শপথ কার্যকর থাকে যতদিন তিনি বিচারপতি থাকেন। অবসরে চলে গেলে শপথ আর কার্যকর থাকে না। বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ২০১১ সালের ১৭ মে অবসরে চলে গেছেন। অবসরে যাওয়ার ১৬ মাস পর তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়ে স্বাক্ষর করেছে। এটা নজীরবিহীন। শপথ কার্যকর না থাকায় তিনি আইনগতভাবে রায়ে স্বাক্ষর করতে পারেন না।

No comments:

Post a Comment