Thursday, September 20, 2012

আবারও বাড়ল বিদ্যুতের দাম










বাড়তি বিদ্যুত্ বিলের খড়্গ আবার নেমে এসেছে গ্রাহকদের ঘাড়ে। গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম আরও ১৫ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে গ্রাহকদের এ বাড়তি দাম দিতে হবে। বিদ্যুতের পাইকারি দামও বাড়ানো হয়েছে ১৭ শতাংশ।
সরকারি এ সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেন গ্রামাঞ্চলের গ্রাহকরা। পল্লী বিদ্যুত্ সমিতির (আরইবি) গ্রাহকরা তিনশ ইউনিটের বেশি ব্যবহার করলেই মূল এককের প্রায় দ্বিগুণ বিল দিতে হবে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি ধাপ পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগের তিনটি ধাপ ভেঙে এখন ৬টি ধাপ করা হয়েছে।
এদিকে বর্তমান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এ পর্যন্ত ছয়বার দাম বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে গত মার্চ মাস থেকে ধাপ পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে বিদ্যুতের দাম ক্ষেত্রবিশেষ তিনগুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বারবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহক। তারা বলেন, দুর্নীতি ও অপব্যয়ের কারণে দেশের ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সরকার বিদ্যুত্ বিল বাড়িয়েছে। গ্রাহকদের গলা কেটে টাকা নিয়ে সরকার লুটপাটের মাধ্যমে আত্মসাত্ করেছে।
ষষ্ঠবারের মতো দাম বৃদ্ধি : গতকাল বিইআরসি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেন চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ হোসেন। এ সময় কমিশনের অপর সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ, প্রকৌশলী মো. এমদাদুল হক ও দেলোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, গ্রাহক পর্যায়ে খুচরা দাম ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটে গড় খুচরা মূল্য ৫ টাকা থেকে বেড়ে হলো ৫ টাকা ৭৫ পয়সা। পাইকারি দাম ৪ টাকা দুই পয়সা থেকে বেড়ে দাঁড়াল ৪ টাকা ৭০ পয়সা।
দাম বৃদ্ধি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, গ্রাহকদের পাশাপাশি সরকারের বিষয়টিও আমাদের দেখতে হয়। দাম বৃদ্ধি না করলে বিদ্যুত্ উত্পাদন ব্যাহত হবে। লোডশেডিং থেকে বাঁচাতেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান তিনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময় বিদ্যুতের দাম আর বাড়বে না।
বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনগণের জীবনকে দূর্বিষহ করে তোলার দায় বিইআরসি নেবে কি না—সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ ইউসুফ হোসেন বলেন, সরকার আরও বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা অনেক হিসাব-নিকাশ করেই সহনীয়ভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছি। আশা করছি, জনগণ এটা মেনে নেবে।
চেয়ারম্যানের উদ্দেশে এক সাংবাদিক প্রশ্ন রেখে বলেন, কথিত আছে নিজাম ডাকাত একসময় ধনীদের বাড়ি লুট করে গরিব ও অসহায় লোকদের মধ্যে বিলিয়ে দিত; কিন্তু আপনি বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর নামে গরিবদের গলা কেটে সরকারের হাতে টাকা তুলে দিচ্ছেন। গরিবদের আশীর্বাদে নিজাম ডাকাত নিজামউদ্দিন আউলিয়া হতে পারলে গরিবদের বদদোয়ায় আপনি কী হবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা গরিবদের গলা কাটি না। ধাপ পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন করায় সবাই বিপাকে পড়েছিল। এখন ঠিক করে ফেলেছি। আমাদের একটু ভুল হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, আমি কোথাও গেলে সবাই আমাকে ধরে বলত, কী ভাই, এক হাজার টাকার বিল এখন চার হাজার টাকা দিতে হয়। এ নিয়ে আমিও বিপাকে পড়তাম।
ছয় ধাপ : প্রথম ধাপে শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত আরইবির গ্রাহকদের জন্য ইউনিটপ্রতি ৩ টাকা ৬৬ পয়সা এবং অন্য সব সংস্থার গ্রাহকদের জন্য ৩ টাকা ৩৩ পয়সা। দ্বিতীয় ধাপে ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত আরইবিতে দাম পড়বে ৪ টাকা ৩৭ পয়সা এবং অন্যান্য সংস্থার গ্রাহকের জন্য দাম পড়বে ৪ টাকা ৭৩ পয়সা। তৃতীয় ধাপে ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত আরইবির গ্রাহকদের জন্য ইউনিটপ্রতি দাম ৪ টাকা ৫১ পয়সা এবং অন্য সব সংস্থার গ্রাহকের জন্য ৪ টাকা ৮৩ পয়সা। চতুর্থ ধাপে ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত আরইবির গ্রাহকদের জন্য ৭ টাকা ১০ পয়সা এবং অন্য সংস্থার গ্রাহকদের জন্য ৪ টাকা ৯৩ পয়সা। পঞ্চম ধাপে ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট পর্যন্ত আরইবির গ্রাহকদের জন্য ৭ টাকা ৪০ পয়সা এবং অন্যান্য সংস্থার গ্রাহকের জন্য পড়বে ৭ টাকা ৯৮ পয়সা। ষষ্ঠ ধাপে ৬০০ ইউনিট থেকে শুরু করে এর বেশি বিদ্যুত্ ব্যবহারের জন্য আরইবিসহ সব সংস্থার গ্রাহকের ইউনিটপ্রতি দাম পড়বে ৯ টাকা ৩৮ পয়সা। সব গ্রাহকই এই ধাপ সুবিধা পাবেন বলে জানান বিইআরসি চেয়ারম্যান।
ছয়বার দাম বাড়িয়ে রেকর্ড সৃষ্টি : বর্তমান সরকার ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে শুধু আরইবি গ্রাহকদের বিদ্যুতের মূল্য ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাড়ায়। এরপর ২০১০ সালের মার্চে আরইবি ছাড়া অন্যান্য সংস্থার গ্রাহকের গড়ে ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। ১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শতকরা ৫ ভাগ খুচরা দাম বাড়ানো হয়। একই বছরের ডিসেম্বর মাসে ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বাড়ানো হয়। চলতি বছরে ফেব্রুয়ারি মাসে ৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, ১ মার্চ ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং সর্বশেষ গতকাল খুচরা দাম আরও ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়।
প্রতিবাদ : বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছে ব্যবসায়ী সংগঠন ও বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহক। এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ায় রফতানিমুখী শিল্পের জন্য সমস্যার সৃষ্টি হবে; উন্নয়ন ও উত্পাদন ব্যাহত করবে। তিনি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেন।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণায় টেলিফোনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আবুল কাশেম বলেন, ভাই একটু লেখেন। আমরা আর পারছি না। সরকার পাইছে কী? যখন-তখন বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। আসলে চুরি-চামারির টাকা জোগাড় করতেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে।

No comments:

Post a Comment