Saturday, September 29, 2012

 মালয়েশিয়ার কূটনীতির ফাঁদে বাংলাদেশ
 



পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়ন এবং জনশক্তি রফতানির চুক্তি নিয়ে মালয়েশিয়ার কূটনৈতিক দাবার চালে বন্দি হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতু নিয়ে ‘এতদূর’ যাওয়ার পর এখন আবারও বিশ্বব্যাংকের দ্বারস্থ হওয়ার খবরে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের ওপর নাখোশ হয়েছে। পদ্মা সেতুর অর্থ না নিলে মালয়েশিয়ায় পাঁচ লাখ জনশক্তি রফতানির সম্ভাবনা অঙ্কুরে বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে মালয়েশিয়া সরকারের সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি প্রকাশও করা হয়েছে। সেইসঙ্গে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি বাজার খোলার আগেই বাংলাদেশ সরকার ও বায়রার মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়টিতেও মালয়েশিয়া বিরক্ত বলে সূত্রের খবর।
মালয়েশিয়া পদ্মা সেতুর অর্থায়নের জন্য আগামী অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর কথা জানিয়েছেন দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মালয়েশিয়ার বিশেষ দূত এস সামি ভেল্লু। এদিকে মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানি চুক্তি এগিয়ে নিতে আগামী ২ অক্টোবর কুয়ালালামপুর যাচ্ছে দুই দেশের যৌথ কমিটির

বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল। তবে এরই মধ্যে মালয়েশিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা বারনামায় শুক্রবার এ চুক্তি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। মালয়েশিয়া সরকারের সূত্র উল্লেখ করে বারনামা বলে, পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে মালয়েশিয়া বাংলাদেশে গেছে আমাদের আরেক মুসলিম দেশে সহায়তার সদিচ্ছা নিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশ কুয়ালালামপুরের সেই সদিচ্ছাকে অবহেলা করছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন আমাদের সরকারেরও ভেবে দেখতে হবে বাংলাদেশ থেকে নতুন করে আর জনশক্তি নেওয়া হবে কি না।’ পদ্মা সেতু নিয়ে মালয়েশিয়া সরকারের আশঙ্কার কথা জানিয়ে বারনামা বলে, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে এখন হয়তো যেনতেন একটি চুক্তির মুখোমুখি হতে পারে মালয়েশিয়া অথবা তারা এ প্রকল্পে আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়তে পারে। এরই মধ্যে মাসের পর মাস বৈঠক হয়েছে। পরামর্শক ফি দিতে হয়েছে। প্রকল্পের উপযুক্ততা যাচাই করতে হয়েছে। এতে বেশ অর্থ ব্যয় হয়েছে মালয়েশিয়ার।’
পদ্মা সেতু নিয়ে গত ২৭ আগস্ট চূড়ান্ত প্রস্তাব দেয় মালয়েশিয়া। সেদিন ঢাকার সেতু ভবনে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের হাতে এই প্রস্তাবের অনুলিপি তুলে দেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত সামি ভেলু। সেতুর অর্থ মালয়েশিয়া দিলেও এর নির্মাণকাজ করবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান স্যামসাং ইঞ্জিনিয়ারিং। গত ৩১ জানুয়ারি ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করে মালয়েশিয়ার একটি প্রতিনিধি দল পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের আগ্রহ প্রকাশ করে। এরপর গত ১০ এপ্রিল মালয়েশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে সরকার।
বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার একেএম আতিকুর রহমান গতকাল জানান, মালয়েশিয়ার অর্থায়ন নিয়ে এখনও চূড়ান্ত কিছু হয়নি। আলোচনা চলছে। পদ্মা সেতুর অর্থ না নিলে জনশক্তি রফতানি বাধার মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। এদিকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে গঠিত যৌথ কমিটির বাংলাদেশের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল আগামী ২ অক্টোবর কুয়ালালামপুর যাচ্ছে। সেখানে জনশক্তি আমদানি-রফতানির বিষয়ে সমঝোতা স্মারকের খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার কথা বলে জানান প্রতিনিধি দলের সদস্য এবং জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক বেগম শামসুন নাহার। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার যৌথ কমিটির প্রথম বৈঠক গত ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। মালয়েশিয়ায় এবারের বৈঠকে বাংলাদেশ বর্তমানে কতজন কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠানোর জন্য প্রস্তুত, এর মধ্যে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মী সংখ্যা কত, কোন পেশার কতজন কর্মী রয়েছেন, কোন পদ্ধতিতে বাংলাদেশ তাদের পাঠাবে-এসব খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে মালয়েশিয়ায় আলোচনা হবে। এই যৌথ কমিটি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়টি চূড়ান্ত করার কথা। ২০০৭ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানি বন্ধ আছে। এবার নিষেধাজ্ঞা তোলার পাশাপাশি এদেশ থেকে পাঁচ লাখের মতো কর্মী নেওয়ার একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়।

No comments:

Post a Comment