Monday, October 1, 2012

মতলব উত্তরের ফরাজিকান্দির পীর শায়খ মানযূর আহমাদ আর বেঁচে নেই

দেশবরেণ্য আলেমে দ্বীন, আধ্যাত্মিক প্রাণপুরুষ, একজন খাঁটি রাসূল প্রেমিক, বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের প্রেসিডিয়াম সদস্য, মতলব উত্তরের ফরাজীকান্দি দরবার শরীফের পীর সাহেব ও নেদায়ে ইসলামের চেয়ারম্যান আল্লামা শায়খ ড. মানযূর আল-আহমাদী উয়েসী রিফায়ী আর বেঁচে নেই| তিনি পবিত্র মদিনা শরীফে গতকাল সোমবার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টায় ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিলল্লাহে....রাজেউন)| তিনি পবিত্র হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে মদিনায় অবস্থান করছিলেন| ওফাতকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭১ বছর| তাঁর এই আকস্মিক ইন্তেকালে দেশব্যাপী ভক্তবৃন্দ তথা মতলবের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে| গতকাল বাদ আসর মদিনা শরীফে তাঁর জানাজা নামাজ শেষে জান্নাতুল বাকীতে তাঁকে সমাহিত করা হয়| বিষয়টি যেনো যাঁর প্রেমিক তাঁর কাছেই শুয়ে গেলেন এই নির্ভেজাল রাসূল প্রেমিক|

তাঁর পারিবারিক ও ভক্তদের সূত্রে জানা যায়, তিনি গেলো রমজান মাসে মদিনা শরীফে মসজিদে নববীতে ইতেকাফে ছিলেন| এরপর ১৫/২০ দিন আগে তিনি দেশে এসেছেন| গত ৩/৪ দিন আগে তিনি হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে আবার সৌদি আরব যান| সৌদি আরব গিয়েই তিনি মদিনা শরীফ চলে যান এবং রাসূল পাক (সাঃ)-এর রওজার পাশে অবস্থান করছিলেন| আর এ অবস্থায়ই তিনি ইহজগত ত্যাগ করেন| তাঁর ভক্তরা আরো জানান, হুজুর কেবলা দয়াল নবীজীর শানে অসংখ্য নাতে রাসূল ও কাসীদা লিখেছেন এবং তিনি নিজেই সুর করেছেন| তিনি সব সময় রাসূল (সাঃ)কে উদ্দেশ্য করে এই পংক্তি সুর দিয়ে পাঠ করতেন ’দিওনা রাসূলাল্লাহ দিওনা বিদায়, ভুলনা হাবীবাল্লাহ ভুলনা আমায়|’ আল্লাহ তাঁর মনের এই বাসনাই কবুল করলেন| তিনি এই পংক্তিটি যখন পাঠ করতেন তখন তাঁর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরতো|

আল্লামা শায়খ ড. মানযূর আল-আহমাদী উয়েসী রিফায়ী শুধু ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিতই ছিলেন না, আধুনিক সব ধরনের শিক্ষাই তিনি গ্রহণ করেন| তিনি একজন আধ্যাত্মিক সাধকও ছিলেন| বিভিন্ন&ধসঢ়; বিভাগের শিক্ষা গ্রহণে তিনি ছিলেন বরাবরই প্রথম স্থান অধিকারী| তিনি বিএ (অনার্স), এলএলবি (ফার্স্ট ক্লাস), মমতাজুল মোহাদ্দেসীন, মমতাজুল ফোকাহা (ফার্স্ট ক্লাস), ডিপ্লোমা (ইউএল), এফসিটি (ফার্স্ট ক্লাস), এমএ (ফার্স্ট ক্লাস), পিএইচডি (গবেষক) ডিগ্রি লাভ করেন|

শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ফরাজীকান্দি উয়েসীয়া কামিল মাদ্রাসা| ফরাজীকান্দির মতো নিভৃত এক পল্লীতে তিনি গড়ে তোলেন বিশাল কমপ্লেক্স| নারী শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন নেদায়ে ইসলাম মহিলা ফাযিল মাদ্রাসা| তাঁর প্রচেষ্টাতেই প্রক্রিয়াধীন আছে নেদায়ে ইসলাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়| সাড়ে ৩ শতাধিক এতিমদের লালন-পালনের জন্যে নির্মিত হয় আল-আমিন এতিমখানা| চিকিৎসার জন্যে তিনি তৈরি করেন খাজা গরীবে নেওয়াজ হাসপাতাল ও ফ্রি ফ্রাইডে ক্লিনিক| এতিমদের পুঁথিগত বিদ্যা শিক্ষার পাশাপাশি টেকনিক্যাল শিক্ষারও ব্যবস্থা করে দেন তিনি| এ ছাড়াও কৃষি, মৎস্য, পোল্ট্রি, গো পালনসহ বিভিন্ন কাজে হাতে-কলমে পারদর্শী করে গড়ে তুলতেন এই এতিমদের|

শিক্ষা বিস্তার ও মানব কল্যাণে এক অনন্য ভূমিকা পালন করার মধ্য দিয়ে তিনি চাঁদপুর জেলাতে এক অনন্য ইতিহাস স্থাপন করেছেন|

আজ মঙ্গলবার ঐতিহাসিক ফরাজীকান্দি কমপ্লেক্সে শায়খ মানযূর আহমাদের ইন্তেকালে দিনব্যাপী কোরআনখানি, মিলাদ, ফাতেহা, বিভিন্ন খতম ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে|

No comments:

Post a Comment