হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় ‘দোষারোপের খেলা’ সম্পর্কে সত্য উদঘাটনে বিচারিক কমিশন গঠনের আদেশ চেয়ে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন হয়েছে।
তিনজন আইনজীবীর পক্ষে ড. বেলাল হোসেন জয় মঙ্গলবার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের বেঞ্চে এই আবেদন উপস্থাপন করেন।
পরে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলার চাপের কারণে আজ শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা কম। সেক্ষেত্রে আমরা অবকাশের পর শুনানি জন্য কোনো বেঞ্চে নিয়ে যাব।”
অবকাশ শেষে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর হাই কোর্ট খোলার কথা রয়েছে।
রিট আবেদনে আমানতকারীদের তহবিল ও জনগণের টাকার নিরাপত্তা বিধানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ, রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত এবং বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ দায়িত্ব, কর্তব্য ও দায় নির্ধারণ করে দেওয়ার আর্জিও জানানো হয়।
ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা মোকাবেলায় দেশের অর্থ ও ব্যাংক খাত সংস্কারেরও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে আবেদনে।
রিটকারী তিন আইনজীবী হলেন- কেএম জাবির, মো আওলাদ হোসেন ও মাহমুদ হোসেন। তারা সোমবার আবেদনটি করলেও তা মঙ্গলবার আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
রিটে ব্যাংকিং বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।
রাষ্ট্রয়াত্ত ও বেসরকারি ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ, পর্যবেক্ষণ এবং তদারকিতে নিষ্ক্রিয়তা এবং ব্যর্থতার মাধ্যমে আমানতকারীদের তহবিল এবং জনগণের টাকা ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া এবং ব্যাংকগুলো সম্পর্কে জনগণের বিশ্বাসে চিড় ধরানোর মতো ঘটনা সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ এবং তথ্য অধিকার আইনের লঙ্ঘন হওয়ায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন আইন অনুসারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে না- সে বিষয়ে রুলও চেয়েছেন তারা।
আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর অর্থমন্ত্রীকে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। যাতে বলা হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে সোনালী ব্যাংকের ঋণে অনিয়মের ঘটনাকে ‘মারাত্মক’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই কেলেঙ্কারির ৩৫ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন টাকার মধ্যে ২৭ বিলিয়নের সুবিধাভোগী হিসাবে হলমার্কের নাম এসেছে।
বেলাল হোসেন জয় বলেন, “আজ (মঙ্গলবার) একটি জাতীয় দৈনিকে বলা হয়েছে, ব্যাংক পাড়ায় মোট ১০ হাজার কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে। এই অনিয়ম মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। এ কারণেই এই রিটটি দায়ের করা হয়েছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে নিয়ম ভেঙে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে ছয়টি প্রতিষ্ঠান তিন হাজার ৬০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা সরিয়ে ফেলেছে, যার মধ্যে হলমার্ক গ্রুপ একাই তুলে নিয়েছে দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি।
ঋণ দেওয়ায় অনিয়মের অভিযোগে সোনালী ব্যাংকের অন্তত ২০ জন কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ওএসডি করা হয়েছে দুই উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালককে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে তদন্তও শুরু হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনিয়মের অভিযোগে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ারও সুপারিশ করলেও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এর বিরোধিতা করেন। এই কেলেঙ্কারির পর ব্যাপক সমালোচনার মধ্যেই সরকার ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল ইসলামকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পুনর্নিয়োগ দিয়েছে।
এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকজনও জড়িত বলে অভিযোগ করে আসছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। |
|
No comments:
Post a Comment