আমিরাতে বাংলাদেশিদের সংকট সমাধানে দূতাবাসের ভূমিকা নেই!
![]() |
সততা, নিষ্ঠা কর্মপরায়ণতা এই ত্রি-গুণের সমষ্টিতে আশির দশক থেকে আরবদের মন জয় করেছিলাম আমরা বাঙালি তথা বাংলাদেশের জনগণ। আশির দশক থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত আরবরা আমাদের নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট ছিল। তদুপরি দ্রুত আরবি ভাষা আয়ত্ত করতে পারা এবং মুসলমান বলে সম্মান করতো। এমনও দেখা যেত, হযতো কোনো আরব ব্যবসা শুরু করার চিন্তা করছে। তখন কোনো বাংলাদেশিকে ডেকে বলতো, ব্যবসা শুরু করব। একজন লোক এনে দাও। তার প্লেন খরচ আমি দেব আর তোমাকেও খুশী করে দেব।
কিন্তু এখন আর সে সময় নেই। এখন আরবীয়দের ধরনা দিয়েও একটি শ্রম ভিসা যোগার করতে খরচ করতে উল্টো খরচ করতে হয় বাংলাদেশের প্রায় ২ লাখ টাকা। কিন্তু কেন এমন হলো?
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি গত সাড়ে ৩ বৎসর। উত্তর পেয়েছি। কিন্তু তাতে নিজেকে বাংলাদেশি বলে পরিচয় দিতে ঘৃণা বোধ করেছি। যতই ঘৃণা করি না কেন বাংলাদেশ আমার মা, আমার মাতৃভূমি। মাকে যেমন ঘৃণা করা যায় না ঠিক তেমনি মাতৃভূমিকেও। যখন এ লেখা লিখছি তখন আরব আমিরাতে (আবুধাবি, দুবাই, শারজাহ, আজমান, রাস আল খাইমাহ, উম আল কুয়াইন, ফুজাইরা) বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান করা বন্ধ ঘোষিত হয়েছে। এমনকি ভ্রমণ ভিসা, ট্রানজিট ভিসাও বন্ধ করে দিয়েছে এ দেশের সরকার।
কিন্তু কেন এই খড়গ নেমে আসল বাংলাদেশিদের ওপর? ফোন করেছিলাম বাংলাদেশ দূতাবাসের আবুধাবি শাখায় ০০৯৭১২৪৪৬২৭৪৫ নম্বরে, দূতাবাসের লেবার লেবার উইং-এর দায়িত্বে থাকা লতিফুল হক কাজমীর সঙ্গে কথা বলতে। ফোন বেজে চলল। কিন্তু ফোন রিসিভ করলেন না কেউ। তবু চতুর্থবার কর করার পর একজনকে পেলাম কিন্তু পেলাম না জনাব কাজমীকে।
ওই প্রান্ত থেকে যিনি ফোন রিসিভ করলেন, তার কাছে জানতে চাইলাম বাংলাদেশিদের ভিসা কেন বন্ধ? চটজলদি উত্তর পেলাম, ভিসা তো বন্ধ না। আরব আমিরাত সরকার সিস্টেম আপগ্রেড করতেছে। এজন্য সাময়িকভাবে ভিসা দিচ্ছে না। তবে তিনি আশা দিলেন, শীঘ্রই চালু হবে।
এরপর ফোন করলাম কনস্যুলেট অফিস দুবাইতে ০০৯৭১৪২৭২৬৯৬৬ নম্বরে। সেখান থেকে অবশ্য তাৎক্ষণিক উত্তর দিল না। কিছুক্ষণ এই-সেই বোলচালের পর জানাল, “মিয়ানমারে দাঙ্গাকবলিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশে আশ্রয় দানে অস্বীকৃতি” আমাদের ভিসা বন্ধের অন্যতম কারণ।
ফোন রিসিভকারী আরো জানালেন, সৌদি সরকারের অব্যাহত চাপের কারণেও আরব আমিরাত সরকার ভিসা বন্ধ করে দিয়ে থাকতে পারে।
‘সৌদি কেন বাংলাদেশকে চাপে রাখবে’ এই উত্তর খুঁজতে শুরু করলাম। যা পেলাম তা হলো, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাধা প্রদান এবং রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিতে বাংলাদেশ সরকারকে বাধ্য করতেই সৌদি সরকার এহেন কর্মকাণ্ড করে থাকতে পারে। এতক্ষণ যা লিখলাম, এটা পুরোটাই কূটনৈতিক। আর কুটনৈতিক বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা শূণ্য। তাই এ ব্যাপারে কোনোপ্রকার মন্তব্য কছি না। তবে সাধারণ যে সকল কারণে আরব আমিরাত সরকার ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে তা নিয়ে এখানকার কতিপয় বাংলাদেশির সঙ্গে আলোচনা করে যা পাওয়া গেল তা আপনাদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরছি।
প্রথমত, এখানে বাংলাদেশিদের দ্বারা কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে যার কয়েকটি এখনো বিচারাধীন (এসব ঘটনায় জড়িত কয়েকজন গা ঢাকা দিয়েছে)।
দ্বিতীয়ত, প্রবাসী বাংলাদেশিরা যারা কোম্পানির আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত, তারা আর্থিক অনিয়ম করে সড়কপথে ওমান হয়ে বাংলাদেশে পাড়ি জমায়। এ সকল ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি তার পাসপোর্ট পুলিশ অফিসে জমা দিয়ে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে। দুঃখের কথা হলো এ ধরনের অভিযোগের সংখ্যা অগণিত।
তৃতীয়ত পতিতাবৃত্তির দালালিতে বাংলাদেশিদের আধিক্য। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমাদের ‘দেশি ভাইয়েরা’ পান-সিগারেট বিক্রির মত ‘চায়না ৫০’, ‘ফিলিপিনি ১০০’, ‘বাঙালি ১৫০’ করে হাক দিয়ে পতিতা’র দালালি করেন। মজার বিষয়টা হলো একজন গ্রাহক ধরলে আমার ওই দালাল ভাই পাবেন ১০-১৫ দিরহাম। পক্ষান্তরে ঘৃণিত এই বাণিজ্যের আয় সিংহভাগই যায় এর পরিচালনাকারী ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানিদের পকেটে। আর পুলিশি অভিযানে ধরা পড়ে দেশ-জাতির মুখ-কালা করে দালাল নামক আমার কোনো বাংলাদেশি ভাই। ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানি পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে তারা গা ঢাকা দেয়।
এছাড়াও কতিপয় বাংলাদেশি এখানে গার্মেন্টস ব্যবসার লাইসেন্স নিয়ে নারীদেরকে গার্মেন্টস এ চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এখানে নিয়ে এসে জোরপূর্বক তাদের দিয়ে পতিতাবৃত্তির চেষ্টা করে থাকে। এদের মধ্যে বহুসংখ্যক পালিয়ে গিয়ে পুলিশে অভিযোগ লেখান। আর এই অভিযোগকারীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। অবশ্য একজন বাংলাদেশি যৌনকর্মী আমাকে দুঃখ করে বলেছেন, অভিযোগ আমরা তখনি করাই যখন আমাদের অভিযোগের গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। সুতরাং অভিযোগকারীর অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশি অভিযান যখন হয় ততদিনে এর পরিচালনাকারীরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ এবং দিনারের থলিসহ চম্পট দেয় আপন দেশে।
চতুর্থত ভ্রমণ ভিসা নিয়ে আরব আমিরাতে এসে বেমালুম দেশে ফেরার কথা ভুলে গিয়ে দিব্যি নানানরকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়া। এদেরকে দেখা যায়, পান বিক্রি করতে (এখানে অবৈধ), রাস্তায় দাঁড়িয়ে মোবাইলের ব্যালেন্স বিক্রি করতে।
পঞ্চমত এখান থেকে ওমরাহ ভিসা নিয়ে সৌদি আরব গিয়ে আর ফিরে না আসা বাংলাদেশিদের এক ধরনের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।
ষষ্ঠত ভিসা বিক্রি করা এখানে অবৈধ। সাধারণত প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো ভিসা বাবদ সামান্য কিছু অর্থই গ্রহণ করে। কিন্তু দেখা গেল এখানে আসার পর কোনো এক শ্রমিক হেলথ ফিটনেসে (স্বাস্থ্য পরীক্ষায়) উত্তীর্ণ হতে পারলো না। সেক্ষেত্রে তাকে ফেরত পাঠানোই কোম্পানির দায়িত্ব। কিন্তু ওই শ্রমিক ভাইটি আর ফেরত যেতে চায় না। কারণ তিনি তার ভিটে, মাটি, সহায়, সম্বল বিক্রি করে এখানে এসেছেন। তো কি আর করা? কোম্পানি থেকে ফেরার হয়ে (পালিয়ে আত্মগোপনে গিয়ে অবৈধভাবে কাজ করা) আরো একজন অবৈধ রেসিডেন্সের কাতারে নাম লেখায়।
সর্বোপরি ফ্রি ভিসার নাম করে এখানে নিয়ে আসা হয় শিক্ষিত, আধা-শিক্ষিত এবং নিরক্ষর ব্যক্তিদের, কিন্তু পরবর্তীতে তাদেরকে ভিসা প্রদানকারী ব্যক্তিকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। সুতরাং ফ্রি ভিসায় আসা ব্যক্তিরা হয়ে যান অবৈধ।
এখানে অধিকাংশ পত্রিকার নিয়ন্ত্রণ ভারতীয় কিংবা পাকিদের হাতে। বিষয়টা এমন যে আমাদের বাংলাদেশিদের কেউ অধিক খাবার খাওয়ার দরূন জোড়ে বায়ূ ত্যাগ করলেও তা বোমা ফাটানোর মত করে প্রকাশ করতে ওস্তাদ এখানকার ভারতীয় এবং পাকিস্তানি মিডিয়া। বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে নেতিবাচক ঘটনা হলে তিলকে তাল বানাতে এখানকার মিডিয়াগুলোর তুলনা নেই। সেখানে এসব প্রতিরোধে আমাদের লেবার উইং অথবা মিডিয়ার ভূমিকা নেই বললেই চলে। এখানকার মিডিয়াগুলো বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে ‘চিলে কান নিয়ে যাওয়া’র মত গল্প তৈরি করে আমাদের বদনাম রটিয়ে দেয়।
এসব কিছুর পরে বর্তমানে আরব আমিরাত সরকার বাংলাদেশিদের ধরপাকড় শুরু করেছে পুরো আরব আমিরাত জুড়েই। এর কারণ কি জানতে চেয়েছিলাম এখানকার এক পুলিশ সদস্যের কাছে এবং পরিচিত এক আরব নাগরিকের কাছে। পুলিশ জানালেন, এটা তাদের রুটিন ওয়ার্ক। ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই তারা যে সকল বাংলাদেশিদের কাছে কাগজপত্র নেই তাদের ফেরত পাঠাবে। এবং নতুন করে ভিসা দেওয়া শুরু করবে। তাই যে সমস্ত পাঠক আরব আমিরাতে আছেন, তাদের কাছে অনুরোধ, সম্ভাব্য ঝামেলা এড়াতে ‘বতাকা (আইডি), এমিরেটস আইডি কার্ড এবং পাসপোর্ট এর ভিসা পেইজ কপি করে সঙ্গে রাখুন।
নানাবিধ কারণে আমাদের কোম্পানি পরিবর্তন (ট্রান্সফার) হওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। হতে পারে কোম্পানির হাতে কাজ নেই অথবা নতুন কোনো কোম্পানিতে পদোন্নতি নেয়া। কিন্তু এখন সময় এতটাই খারাপ যে এরকম ভিসা ট্রান্সফারও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে (বাংলাদেশিদের জন্য)। তাই সকল বাংলাদেশি ভাইদের প্রতি অনুরোধ, তারা যেন নতুন কোনো চাকরির চেষ্টা না করেন। কারণ, এতে আপনি হারাতে পারেন আপনার বর্তমান চাকরি এবং বিকল্প রাস্তা না থাকায় দেশে ফেরা ছাড়া আপনার আর কোনো অবশিষ্ট থাকবে না।
সর্বশেষে সম্মানিত পাঠক, এখানে শুধু সমস্যাগুলো লিখলাম। ্েসেবের সমাধানও নিশ্চয়ই আছে। সমাধান (প্রস্তাবনা) নিয়ে আমি একটি আর্টিকেল তৈরির কাজ করছি। আপনারা আপনাদের মতামত আমাকে ইমেইলে জানাতে পারেন।
কিন্তু এখন আর সে সময় নেই। এখন আরবীয়দের ধরনা দিয়েও একটি শ্রম ভিসা যোগার করতে খরচ করতে উল্টো খরচ করতে হয় বাংলাদেশের প্রায় ২ লাখ টাকা। কিন্তু কেন এমন হলো?
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি গত সাড়ে ৩ বৎসর। উত্তর পেয়েছি। কিন্তু তাতে নিজেকে বাংলাদেশি বলে পরিচয় দিতে ঘৃণা বোধ করেছি। যতই ঘৃণা করি না কেন বাংলাদেশ আমার মা, আমার মাতৃভূমি। মাকে যেমন ঘৃণা করা যায় না ঠিক তেমনি মাতৃভূমিকেও। যখন এ লেখা লিখছি তখন আরব আমিরাতে (আবুধাবি, দুবাই, শারজাহ, আজমান, রাস আল খাইমাহ, উম আল কুয়াইন, ফুজাইরা) বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান করা বন্ধ ঘোষিত হয়েছে। এমনকি ভ্রমণ ভিসা, ট্রানজিট ভিসাও বন্ধ করে দিয়েছে এ দেশের সরকার।
কিন্তু কেন এই খড়গ নেমে আসল বাংলাদেশিদের ওপর? ফোন করেছিলাম বাংলাদেশ দূতাবাসের আবুধাবি শাখায় ০০৯৭১২৪৪৬২৭৪৫ নম্বরে, দূতাবাসের লেবার লেবার উইং-এর দায়িত্বে থাকা লতিফুল হক কাজমীর সঙ্গে কথা বলতে। ফোন বেজে চলল। কিন্তু ফোন রিসিভ করলেন না কেউ। তবু চতুর্থবার কর করার পর একজনকে পেলাম কিন্তু পেলাম না জনাব কাজমীকে।
ওই প্রান্ত থেকে যিনি ফোন রিসিভ করলেন, তার কাছে জানতে চাইলাম বাংলাদেশিদের ভিসা কেন বন্ধ? চটজলদি উত্তর পেলাম, ভিসা তো বন্ধ না। আরব আমিরাত সরকার সিস্টেম আপগ্রেড করতেছে। এজন্য সাময়িকভাবে ভিসা দিচ্ছে না। তবে তিনি আশা দিলেন, শীঘ্রই চালু হবে।
এরপর ফোন করলাম কনস্যুলেট অফিস দুবাইতে ০০৯৭১৪২৭২৬৯৬৬ নম্বরে। সেখান থেকে অবশ্য তাৎক্ষণিক উত্তর দিল না। কিছুক্ষণ এই-সেই বোলচালের পর জানাল, “মিয়ানমারে দাঙ্গাকবলিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশে আশ্রয় দানে অস্বীকৃতি” আমাদের ভিসা বন্ধের অন্যতম কারণ।
ফোন রিসিভকারী আরো জানালেন, সৌদি সরকারের অব্যাহত চাপের কারণেও আরব আমিরাত সরকার ভিসা বন্ধ করে দিয়ে থাকতে পারে।
‘সৌদি কেন বাংলাদেশকে চাপে রাখবে’ এই উত্তর খুঁজতে শুরু করলাম। যা পেলাম তা হলো, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাধা প্রদান এবং রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিতে বাংলাদেশ সরকারকে বাধ্য করতেই সৌদি সরকার এহেন কর্মকাণ্ড করে থাকতে পারে। এতক্ষণ যা লিখলাম, এটা পুরোটাই কূটনৈতিক। আর কুটনৈতিক বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা শূণ্য। তাই এ ব্যাপারে কোনোপ্রকার মন্তব্য কছি না। তবে সাধারণ যে সকল কারণে আরব আমিরাত সরকার ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে তা নিয়ে এখানকার কতিপয় বাংলাদেশির সঙ্গে আলোচনা করে যা পাওয়া গেল তা আপনাদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরছি।
প্রথমত, এখানে বাংলাদেশিদের দ্বারা কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে যার কয়েকটি এখনো বিচারাধীন (এসব ঘটনায় জড়িত কয়েকজন গা ঢাকা দিয়েছে)।
দ্বিতীয়ত, প্রবাসী বাংলাদেশিরা যারা কোম্পানির আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত, তারা আর্থিক অনিয়ম করে সড়কপথে ওমান হয়ে বাংলাদেশে পাড়ি জমায়। এ সকল ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি তার পাসপোর্ট পুলিশ অফিসে জমা দিয়ে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে। দুঃখের কথা হলো এ ধরনের অভিযোগের সংখ্যা অগণিত।
তৃতীয়ত পতিতাবৃত্তির দালালিতে বাংলাদেশিদের আধিক্য। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমাদের ‘দেশি ভাইয়েরা’ পান-সিগারেট বিক্রির মত ‘চায়না ৫০’, ‘ফিলিপিনি ১০০’, ‘বাঙালি ১৫০’ করে হাক দিয়ে পতিতা’র দালালি করেন। মজার বিষয়টা হলো একজন গ্রাহক ধরলে আমার ওই দালাল ভাই পাবেন ১০-১৫ দিরহাম। পক্ষান্তরে ঘৃণিত এই বাণিজ্যের আয় সিংহভাগই যায় এর পরিচালনাকারী ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানিদের পকেটে। আর পুলিশি অভিযানে ধরা পড়ে দেশ-জাতির মুখ-কালা করে দালাল নামক আমার কোনো বাংলাদেশি ভাই। ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানি পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে তারা গা ঢাকা দেয়।
এছাড়াও কতিপয় বাংলাদেশি এখানে গার্মেন্টস ব্যবসার লাইসেন্স নিয়ে নারীদেরকে গার্মেন্টস এ চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এখানে নিয়ে এসে জোরপূর্বক তাদের দিয়ে পতিতাবৃত্তির চেষ্টা করে থাকে। এদের মধ্যে বহুসংখ্যক পালিয়ে গিয়ে পুলিশে অভিযোগ লেখান। আর এই অভিযোগকারীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। অবশ্য একজন বাংলাদেশি যৌনকর্মী আমাকে দুঃখ করে বলেছেন, অভিযোগ আমরা তখনি করাই যখন আমাদের অভিযোগের গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। সুতরাং অভিযোগকারীর অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশি অভিযান যখন হয় ততদিনে এর পরিচালনাকারীরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ এবং দিনারের থলিসহ চম্পট দেয় আপন দেশে।
চতুর্থত ভ্রমণ ভিসা নিয়ে আরব আমিরাতে এসে বেমালুম দেশে ফেরার কথা ভুলে গিয়ে দিব্যি নানানরকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়া। এদেরকে দেখা যায়, পান বিক্রি করতে (এখানে অবৈধ), রাস্তায় দাঁড়িয়ে মোবাইলের ব্যালেন্স বিক্রি করতে।
পঞ্চমত এখান থেকে ওমরাহ ভিসা নিয়ে সৌদি আরব গিয়ে আর ফিরে না আসা বাংলাদেশিদের এক ধরনের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।
ষষ্ঠত ভিসা বিক্রি করা এখানে অবৈধ। সাধারণত প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো ভিসা বাবদ সামান্য কিছু অর্থই গ্রহণ করে। কিন্তু দেখা গেল এখানে আসার পর কোনো এক শ্রমিক হেলথ ফিটনেসে (স্বাস্থ্য পরীক্ষায়) উত্তীর্ণ হতে পারলো না। সেক্ষেত্রে তাকে ফেরত পাঠানোই কোম্পানির দায়িত্ব। কিন্তু ওই শ্রমিক ভাইটি আর ফেরত যেতে চায় না। কারণ তিনি তার ভিটে, মাটি, সহায়, সম্বল বিক্রি করে এখানে এসেছেন। তো কি আর করা? কোম্পানি থেকে ফেরার হয়ে (পালিয়ে আত্মগোপনে গিয়ে অবৈধভাবে কাজ করা) আরো একজন অবৈধ রেসিডেন্সের কাতারে নাম লেখায়।
সর্বোপরি ফ্রি ভিসার নাম করে এখানে নিয়ে আসা হয় শিক্ষিত, আধা-শিক্ষিত এবং নিরক্ষর ব্যক্তিদের, কিন্তু পরবর্তীতে তাদেরকে ভিসা প্রদানকারী ব্যক্তিকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। সুতরাং ফ্রি ভিসায় আসা ব্যক্তিরা হয়ে যান অবৈধ।
এখানে অধিকাংশ পত্রিকার নিয়ন্ত্রণ ভারতীয় কিংবা পাকিদের হাতে। বিষয়টা এমন যে আমাদের বাংলাদেশিদের কেউ অধিক খাবার খাওয়ার দরূন জোড়ে বায়ূ ত্যাগ করলেও তা বোমা ফাটানোর মত করে প্রকাশ করতে ওস্তাদ এখানকার ভারতীয় এবং পাকিস্তানি মিডিয়া। বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে নেতিবাচক ঘটনা হলে তিলকে তাল বানাতে এখানকার মিডিয়াগুলোর তুলনা নেই। সেখানে এসব প্রতিরোধে আমাদের লেবার উইং অথবা মিডিয়ার ভূমিকা নেই বললেই চলে। এখানকার মিডিয়াগুলো বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে ‘চিলে কান নিয়ে যাওয়া’র মত গল্প তৈরি করে আমাদের বদনাম রটিয়ে দেয়।
এসব কিছুর পরে বর্তমানে আরব আমিরাত সরকার বাংলাদেশিদের ধরপাকড় শুরু করেছে পুরো আরব আমিরাত জুড়েই। এর কারণ কি জানতে চেয়েছিলাম এখানকার এক পুলিশ সদস্যের কাছে এবং পরিচিত এক আরব নাগরিকের কাছে। পুলিশ জানালেন, এটা তাদের রুটিন ওয়ার্ক। ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই তারা যে সকল বাংলাদেশিদের কাছে কাগজপত্র নেই তাদের ফেরত পাঠাবে। এবং নতুন করে ভিসা দেওয়া শুরু করবে। তাই যে সমস্ত পাঠক আরব আমিরাতে আছেন, তাদের কাছে অনুরোধ, সম্ভাব্য ঝামেলা এড়াতে ‘বতাকা (আইডি), এমিরেটস আইডি কার্ড এবং পাসপোর্ট এর ভিসা পেইজ কপি করে সঙ্গে রাখুন।
নানাবিধ কারণে আমাদের কোম্পানি পরিবর্তন (ট্রান্সফার) হওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। হতে পারে কোম্পানির হাতে কাজ নেই অথবা নতুন কোনো কোম্পানিতে পদোন্নতি নেয়া। কিন্তু এখন সময় এতটাই খারাপ যে এরকম ভিসা ট্রান্সফারও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে (বাংলাদেশিদের জন্য)। তাই সকল বাংলাদেশি ভাইদের প্রতি অনুরোধ, তারা যেন নতুন কোনো চাকরির চেষ্টা না করেন। কারণ, এতে আপনি হারাতে পারেন আপনার বর্তমান চাকরি এবং বিকল্প রাস্তা না থাকায় দেশে ফেরা ছাড়া আপনার আর কোনো অবশিষ্ট থাকবে না।
সর্বশেষে সম্মানিত পাঠক, এখানে শুধু সমস্যাগুলো লিখলাম। ্েসেবের সমাধানও নিশ্চয়ই আছে। সমাধান (প্রস্তাবনা) নিয়ে আমি একটি আর্টিকেল তৈরির কাজ করছি। আপনারা আপনাদের মতামত আমাকে ইমেইলে জানাতে পারেন।
No comments:
Post a Comment