বিভিন্ন মহলের আপত্তির মধ্যেই গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের বিধি পরিবর্তন করে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ সংশোধনের বিল সংসদে উত্থাপন হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ আরো স্বচ্ছ করতে এবং নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে এই আইনে এই সংশোধন আনা হচ্ছে।
অন্যদিকে ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক নোবেলবিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের অভিযোগ, সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে করায়ত্ত করতেই এই সংশোধন করছে।
ইউনূসের পাশাপাশি দেশে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং বিদেশে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন গ্রামীণ ব্যাংক আইনে এই পরিবর্তনের বিরোধিতা করে আসছে। বিরোধিতা করছে গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের অধিকাংশ সদস্যও।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের অনুপস্থিতিতে ‘গ্রামীণ ব্যাংক (সংশোধনী) বিল- ২০১২’ মঙ্গলবার সংসদে উত্থাপন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার।
এরপর স্পিকার বিলটি পরীক্ষা করে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠান।
গত বছর গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ইউনূসকে সরানোর পর তা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
এরপর গত ২ অগাস্ট সরকার গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ সংশোধন আনে, যা সংশোধিত অধ্যাদেশ আকারে ২৩ অগাস্ট জারি করেন রাষ্ট্রপতি। এই অধ্যাদেশ জারির দিনটিকে ‘কালো দিবস’ বলে আখ্যায়িত করেন নোবেলজয়ী একমাত্র বাংলাদেশি।
সংবিধানের ৯৩ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, অধ্যাদেশ জারির পর জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনেই তা অনুমোদন করতে হবে। সেজন্যই সংশোধিত এই আইন সংসদে এল।
সংসদ অধিবেশন না থাকায় ‘গ্রামীণ ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০১২’ জারি করা হয় বলে বিলে অর্থমন্ত্রী তার বিবৃতিতে বলেছেন।
আইনের এই সংশোধনের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ সংক্রান্ত বিধানের কারণে ওই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার ফলে পদটি দীর্ঘদিন শূন্য থাকে।
“গ্রামীণ ব্যাংক (সংশোধন) বিল- ২০১২ জাতীয় সংসদে পাস হলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ আরো স্বচ্ছ হবে এবং নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন হবে বলে আশা করা যায়।”
এক বছর ধরে গ্রামীণ ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আইনের সংশোধনের কারণে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ প্রক্রিয়া ও যোগ্যতায় পরিবর্তন আসছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে আলোচনা করে পাঁচ সদস্যের একটি নির্বাচন কমিটি গঠনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে চেয়ারম্যানকে।
নির্বাচন কমিটি আবেদনকারীদের মধ্য থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে তিনজনের একটি প্যানেল মনোনীত করে তা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে জমা দেবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে এর মধ্য থেকে একজনকে নিয়োগ দেবে পরিচালনা পর্ষদ।
ইউনূসসহ আইন সংশোধনের বিরোধিতাকারীরা বলে আসছেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে সরকার মনোনীত চেয়ারম্যানের ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় তার প্রভাব পড়বে।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে, তারা ক্ষমতায় গেলে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশের এই সংশোধনী বাতিল করা হবে।
১৯৮৩ সালে একটি সামরিক অধ্যাদেশের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের সূচনা হয় এবং অধ্যাদেশের মাধ্যমে এর আগেও এর আইনে সংশোধন এসেছিল বলে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ জানিয়েছেন।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইউনূস এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে এলেও অবসরের বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তার এমডি পদে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত বছরের মার্চে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন ইউনূসকে অব্যাহতি দেয়, তখন তার বয়স প্রায় ৭১ বছর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্র তখনো উষ্মা প্রকাশ করে। এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়েও বিফল হন ইউনূস।
ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের চেষ্টাকে ‘শান্তি স্থাপন’ বিবেচনা করে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংককে।
২০১০ এর ডিসেম্বরে নরওয়ের টেলিভিশনে প্রচারিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংককে দেওয়া বিদেশি অর্থ এক তহবিল থেকে অন্য তহবিলে স্থানান্তরের অভিযোগ ওঠে। এরপর দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।
এই পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম পর্যালোচনায় একটি কমিটি গঠন করে সরকার। গ্রামীণ ব্যাংক ও সহযোগী সংস্থাগুলোর কার্যক্রমে নানা ‘অসঙ্গতির’ তথ্য উঠে আসে ওই কমিটির প্রতিবেদনে। |
|
No comments:
Post a Comment