Sunday, September 9, 2012

হলমার্কের ঘটনা ভয়াবহ, এর সাথে বাইরের লোকও জড়িত : অর্থমন্ত্রী


হলমার্কের ঘটনা ভয়াবহ, এর সাথে বাইরের লোকও জড়িত : অর্থমন্ত্রী

অর্থ উপদেষ্টাকে ছুটিতে পাঠানো যেতে পারে ; দোষীরা যাতে পালাতে না পারে সে জন্য মামলা করা হচ্ছে

হলমার্কের ঘটনা ভয়াবহ, এর সাথে বাইরের লোকও জড়িত : অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী এবার স্বীকার করলেন, হলমার্কের ঘটনা ভয়াবহ। এতে সোনালী ব্যাংকের লোকজনের পাশাপাশি বাইরের লোকও জড়িত। শোনা যাচ্ছে তারা দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছে। তাই জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে হঠাৎ করে ডাকা এক ব্রিফিংয়ে গতকাল তিনি এ কথা বলেন। 
অর্থমন্ত্রী বলেন, হলমার্ক এখন নতুন ইস্যু। পুরো ব্যাংকিং সেক্টরে জালিয়াতি। তবে এটিও সত্যি এক হাতে তালি বাজে না। এখানে সবারই দোষ আছে, অতিকথন আছে। সেটি আমিও করেছি। এর পরও কিছু বিষয়ে সাবধান হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, যদি বলা হয় ব্যাংকিং খাতে ধস নেমেছে, তবে এর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হয় বিদেশ থেকে। এ ক্ষেত্রে সবার প্রাজ্ঞ মন্তব্য রাখতে হবে। এখানে আমিও কিছু কথা বলেছি। এটি আমি কিছু দিন আগেও বলেছি। আমি একটা ভুল কথা বলেছিলাম, এটিও এর একটা কারণ। 
সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্কের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনাকে ভয়াবহ হিসেবে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এত টাকা জালিয়াতি হয়ে গেল তা কেউ দেখলই না। সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা একা এটি করতে পারে না। এখানে শুধু শাখার লোকজনই নন, ব্যাংকিং খাতের বাইরের লোকও জড়িত। তিনি বলেন, এ জালিয়াতি ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। এখানেও আরেকটি বিষয় আছে, সেটি হলো ইমিডিয়েট অ্যাকশন অনেক সময় খুব ভালো, আবার অনেক সময় শক্তি সাহস পায় না। ১৯৯৬ সালে স্টক মার্কেটে যেসব মামলা করা হয়েছিল, সেগুলোর আজ পর্যন্ত কোনো সমাধান নেই। কারণ এসব ব্যাপারে সাক্ষীর অভাব। আমি প্রায়ই বলি, আমাদের দেশে দুর্নীতি প্রমাণ করার কেস সীমিত। এর একটি প্রধান কারণ সামাজিক আচরণ। এর সাথে ওর পরিচয়, ওর সাথে এর আত্মীয়তা এসবÑ বিষয় তো স্বাভাবিক। এসব কারণে আমার একটা প্রস্তাব আছে। সেটা হলো, পাবলিক ট্রায়ালের মতো কিছু করা উচিত। আইনগতভাবে কিছু করা উচিত। ওই ১০৭ ধারা, ১০৯ ধারা এসব আর কী। পরে তিনিই আবার আক্ষেপ করে বলেন, কিন্তু তা কি সম্ভব? 
হলমার্কের জালিয়াতি ঘটনা উদঘাটনে সোনালী ব্যাংকের ‘ফাংশনাল অডিটকে’ একটি ভালো কাজ হিসেবে উল্লেখ করে মুহিত বলেন, মামলা করা এখন খুবই জরুরি। মামলা অনুযায়ী কিছু ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। বিশেষ করে অনেকেই দেশ থেকে পালানোর পথ করছে, সেগুলো বন্ধ করা জরুরি। এ ছাড়া টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করে যেতে হবে। এখানে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। আজকে (রোববার) আবার কৃষি ব্যাংকের আরেকটি খবর বেরিয়েছে। ১৮৫ কোটি টাকার জালিয়াতি। তবে এটি ছোট। এত বড় নয়। 
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটা ফ্রড (জালিয়াতি) ধরা পড়লে প্রথমেই সেই বিষয়ে অবগত হতে হবে। সেকেন্ডলি, সেই মোতাবেক পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা এখানে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। দু’জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে, ১৯ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। দু’জন অতি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তাদেরও ওএসডি করা হয়েছে। কোনো দিন কেউ এত স্টেপ কখনো নেয়নি। যত কিছুই বলুক না কেন? বাজারে বলা আর পালন করা এক নয়।
সোনালী ব্যাংকের বোর্ড : অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা মিনিমাম (ন্যূনতম) বোর্ড রেখেছি, যাতে কোরাম পূরণ হতে পারে। তিনজন সদস্য দিয়ে কোরাম হয়। আমার যে সরকারি কর্মচারী তাকে আমি রেখেছি। চেয়ারম্যান আগুনের মধ্যে আছেন আমার মতোই। আগুনে থাকলেও আগুন থেকে পালিয়ে গেলে হয় না। এ ছাড়াও একজন এফসিওকে রাখা হয়েছে। পরে সোনালী ব্যাংকে আরো পরিচালক নিয়োগ দেয়া হবে। এ ব্যাপারে আমি অর্থনীতি সমিতি, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট সমিতির সাথে কথা বলেছি। চীন থেকে ফিরে আসার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। 
পদ্মা সেতু ইস্যু ও মসিউর রহমানের পদত্যাগ : পদ্মা সেতুর বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, পদ্মার ব্যাপারে সবাই জানেন যে, আমাদের লাইফ লাইন আছে ২১ তারিখ পর্যন্ত। আমরা বিশ্বব্যাংক, জাইকা, এডিবির সাথে কাজ করছি। আমি প্রথম থেকেই বলছি, এখনো বলছি, হোপফুললি এটির একটা সুষ্ঠু সমাধান হবে। সুষ্ঠুৃ সমাধান হলে আমি বলব।
তিনি বলেন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সাথে আলোচনা হয়েছে। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে প্রজেক্টটাকে কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। এর ব্যাপারে মোর অর লেস একটা অ্যাগ্রিমেন্ট হয়েছে। আরো কিছু বাকি আছে। 
বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের মধ্যে কোনো সত্যতা নেই উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রথম থেকেই আমি এটি বলছি। আমি এখনো মনে করি পদ্মাতে কোনো দুর্নীতি হয়নি ও হবেও না। তারা বলছেন, দুর্নীতি হতে পারে। এ সম্ভাবনাকে রহিত করার জন্যই তাদের সব প্রচেষ্টা। সুতরাং এখানে ঐকমত্য হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। আমার আশা হলো, এ মাসেই বিভিন্ন প্রসেস শুরু হয়ে যাবে।
পদ্মা সেতু বিকল্প অর্থায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অল্টারনেটিভ একটা প্রোগ্রাম আমরা করি। সেটি করতে সময় লাগবে না। কারণ সেখানে সরকার সব সিদ্ধান্তের অধিকারী। সরকার কখনো একটা চ্যানেলে নির্ভর করতে পারে না। অল্টারনেটিভ চিন্তা করতে হয়। মালয়েশিয়ার একটি প্রস্তাব রয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রস্তাবে ক’দিন পরপর বলা হয়, চূড়ান্ত প্রস্তাব। কিন্তু চূড়ান্ত প্রস্তাবও চূড়ান্ত হয় না। এবারের প্রস্তাবও সেই রকম। এটি একটা সমস্যা। 
বিশ্বব্যাংকের শর্তানুসারে ড. মসিউর রহমান পদত্যাগ করবেন কি নাÑ এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওরা যা চেয়েছে, তার সমাধান হলো ছুটি। অর্থ উপদেষ্টাকে ছুটিতে পাঠানো যেতে পারে। পদত্যাগ নয়। তবে মসিউরের পদত্যাগের ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী কিছু বলতে রাজি হননি।
তিনি আরো বলেন, আবুল হোসেন একজন রাজনৈতিকব্যক্তিত্ব। উনি তার কাজ করেছেন। 
গ্রামীণ ব্যাংক : তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকে যেসব হয়েছে বা গ্রামীণ ব্যাংক গত ২৫ বছরে যেসব ক্ষমতা ব্যবহার করেছে, এটি আইনগতভাবে ঠিক নয়। এ বিষয়ে বেশি কিছু বলা ঠিক নয়। আমরা একটা জিনিস ঠিক করেছি আরেকটা করতে হবে। ডিরেক্টরও নিয়োগ দিতে হবে। এটি শুধু আপত্তির কারণে আটকে আছে। প্রতিষ্ঠানটিকে ভালো করে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এটি করতেই হবে।

No comments:

Post a Comment