Sunday, September 9, 2012

বারাক ওবামার বিশেষ দূতের মন্তব্য : যুক্তরাষ্ট্র গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যত্ নিয়ে শঙ্কিত


বারাক ওবামার বিশেষ দূতের মন্তব্য : যুক্তরাষ্ট্র গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যত্ নিয়ে শঙ্কিত

গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যত্ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নারীবিষয়ক বিশেষ দূত মেলঅ্যান ভারভিয়ের।
গতকাল সন্ধ্যায় নগরীর একটি রেস্তোরাঁয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ভারভিয়ের বলে, গ্রামীণ ব্যাংক শুধু এ দেশেই অভাবনীয় উন্নয়ন করেছে তা নয়, বিশ্বের দরিদ্র মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন তথা দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। তাই গ্রামীণ ব্যাংকের অখণ্ডতা ও কার্যকারিতা বজায় রাখার ব্যাপারে আমরা সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।’ এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা।
মেলঅ্যান ভারভিয়ের বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংক এ দেশের ৮০ লাখ নারীর জীবনমান উন্নয়নে এক অতুলনীয় অবদান রেখেছে। এ দেশের বাইরেও আজ এর কার্যকারিতা ছড়িয়ে পড়েছে। ১৯৯৫ সালে হিলারী ক্লিনটনের সঙ্গে এবং কয়েক মাস আগে আমি গ্রামীণ ভিলেজ ঘুরে এসে এর স্বাতন্ত্র্য উপলব্ধি করেছি।’
গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাপারে সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে কি-না, জানতে চাইলে মেলঅ্যান ভারভিয়ের বলেন, ‘আমাদের কাছে বাংলাদেশ ও গ্রামীণ ব্যাংক দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই না বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হোক, আবার গ্রামীণ ব্যাংকও কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হোক, সেটাও আমরা চাই না।’ ভারভিয়ের আরও বলেন, ‘আমি বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে এসে নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে সরকারের মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এর আগেও অনেকবার বলেছি। আজও বলছি, রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। আর এভাবেই একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। আমরা আশা করছি, খুব শিগগিরই এর সুষ্ঠু সমাধান পাওয়া যাবে।’
রাষ্ট্রদূত আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশে ক্রমর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে এরই মধ্যে অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। আমরা চাই তাদের সেই শঙ্কা কেটে গিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে সমৃদ্ধির মাধ্যমে এ দেশ এশিয়ান টাইগার হিসেবে আবির্ভূত হবে।’
মেলঅ্যান ভারভিয়ের দুই দিনের রাঙামাটি পার্বত্য জেলা সফর শেষে আজ সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে এসে পৌঁছেন। কাল সোমবার চট্টগ্রামে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে ‘তৃণমূল পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়ন’ বিষয়ক সম্মেলনে তার যোগ দেয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় সাইলো প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের স্কুল ফিডিং ও পুষ্টি কর্মসূচির সহায়তায় প্রদত্ত ১০ হাজার ৪৪০ মেট্রিক টন গমের আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন এমপি, বিশ্বখাদ্য কর্মসূচির বাংলাদেশ কান্ট্রি পরিচালক ক্রিস্টা রাডের অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন।
এসময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের আওতায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ সবই একটি শান্তিময়, নিরাপদ, সমৃদ্ধ, সুস্থ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রসারের প্রতি সচেষ্ট। এমন একটি বাংলাদেশ আমেরিকার জনগণ, দক্ষিণ এশিয়ার ও সর্বোপরি স্বয়ং বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বলে আমার বিশ্বাস।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ম্যাকগভার্ন-ডোল ইন্টারন্যাশনাল ফুড ফর অ্যাডুকেশন অ্যান্ড চাইল্ড নিউট্রিশন প্রোগ্রামের (ম্যাকগভার্ন-ডোল প্রোগ্রাম) মাধ্যমে সাড়ে ১০ হাজার মেট্রিক টন গম হস্তান্তর করা হয়।সিনেটর জর্জ ম্যাকগভার্ন এবং সিনেটর রবার্ট ডোলের সম্মানে ম্যাকগভার্ন-ডোল প্রোগ্রাম নামকরণ করা হয়। আমেরিকার এই দু’নেতা বিশ্বব্যাপী বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের খাবার ও শিশুদের পুষ্টির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকারকে উত্সাহিত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।
এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র শিশুদের শিক্ষা, উন্নয়ন এবং খাদ্য নিরাপত্তায় সহায়তা করা হয়। ইউএসডিএ শিক্ষার বিশ্বজনিনতায় বিশ্বাসী স্বল্প আয়ের এবং খাদ্য ঘাটতির দেশগুলোতে বিদ্যালয়ে শিশুদের খাবার এবং মাতৃত্ব ও শিশু পুষ্টি প্রকল্পের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কৃষি পণ্যের অনুদানের পাশাপাশি আর্থিক-প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে থাকে।
ম্যাকগভার্ন-ডোল কর্মসূচি গত দুই অর্থবছরে (২০১১-১২) বিশ্বব্যাপী ৪০ কোটি ডলারের বেশি বরাদ্দ দিয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে তিন অর্থবছরে (২০১১-১৩) ৩ কোটি ডলারের অঙ্গীকার করা হয়েছে, যা একক কোনো একটি দেশে সর্বাধিক বরাদ্দের অঙ্গীকার। গত এক দশকে এ দেশের শিশুদের পুষ্টির উন্নতিতে ও শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে অভিভাবকদের উত্সাহিত করতে ইউএসডিএ ম্যাকগভার্ন-ডোল বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বে কাজ করছে।

No comments:

Post a Comment