Tuesday, September 11, 2012

আওয়ামী লীগকে পাশ কাটিয়ে মাঠে নামছে মহাজোটের শরিকরা


আওয়ামী লীগকে পাশ কাটিয়ে মাঠে নামছে মহাজোটের শরিকরা
 এবার বিরোধী দলের পাশাপাশি চলমান বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে মাঠে নামছে ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক দলগুলো। এ লক্ষে আওয়ামী লীগকে মাইনাস রেখে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করে আলাদা একটি বলয় গড়ে তোলার উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। সোমবার রাজধানীর বেইলি রোডের একটি অফিসে রাত সোয়া সাতটা থেকে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত রুদ্ধদ্বার এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা এ সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

পূর্ব নির্ধারিত এ বৈঠকে মহাজোটের শরিক দল ওর্য়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুর রহমান সেলিম, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য নুরুল হাসান, কামরুল আহসান, সাম্যবাদী দলের পলিটব্যুরো সদস্য আবু হামেদ সাহাবুদ্দিন, লুৎফর রহমান, গণআজাদী লীগের হাজী আব্দুস সামাদ, আব্দুল জব্বার, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের অসিত রায় অংশ নেন।

এছাড়াও মহাজোটের বাইরে গণঐক্যের আহ্বায়ক পঙ্কজ ভট্টাচার্য, জনসংহতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক শক্তিধর ত্রিপুরা এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত নেতারা মন্ত্রীদের বিতর্কিত বিভিন্ন বক্তব্যের তীব্র সমালোচনার পাশাপাশি চলমান সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের চোখে আঙুল দিয়ে ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেয়ার জন্য ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেন।

তারা এটাও বলেছেন, বর্তমান সরকার সবদিক দিয়ে সংকট জিইয়ে রেখে বেসামাল হয়ে পড়ছে। একের পর এক ইস্যু তৈরি হওয়া এবং সঠিকভাবে নিরসনের পদক্ষেপ না নেয়ায় তীব্র সমালোচনা করা হয়। তাছাড়া সমমনা রাজনৈতিক দল নিয়ে একটি আলাদা বলয় গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ বলয়ে আওয়ামী লীগকে রাখা হচ্ছে না। ইতিমধ্যে বাসদ ও সিপিবিকে এ বলয়ে যুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আগামী বুধবার জাসদ কার্যালয়ে তাহের মিলনায়তনে আরেকটি বৈঠক করে পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন।

 বৈঠকের কথা স্বীকার করে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, “আমরা জনজীবনের চলমান ইস্যুকে সামনে নিয়ে এসে সংকট উত্তরণে চেষ্টা করবো।”

গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুর রহমান সেলিম বলেন, “দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ, হলমার্ক অর্থ লোপাট এইসব সংকট নিরসনের জন্য সরকারকে সচেতন করাই আমাদের লক্ষ্য। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও মিছিল করে কর্মসূচি শুরু করবো।”

বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকের মহাজোটের শরিক দলের নেতারা সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের অসংলগ্ন বক্তব্য থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। এই জোটের সভায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য ও সাফাই সাক্ষীসহ সম্প্রতি যেসব ঘটনাবলী ঘটে চলেছে তাতে এই সরকারের সময়কালের মধ্যে বিচার সম্পন্ন হবে কিনা সে ব্যাপারে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

বক্তারা বলেন, দেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ডেসটিনির হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট, দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের পদ্মা সেতু ঋণচুক্তি বাতিল এ সম্পর্কে সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী-কর্মকর্তাদের অসংলগ্ন বক্তব্যে সমস্যার কোনো সমাধান তো হয়নি, বরং আরো জটিল হয়েছে। সম্প্রতি সোনালী ব্যাংকের হলমার্কের ঋণ কেলেঙ্কারি সবচেয়ে বড় দুর্নীতি। চার হাজার কোটি লুটপাটের ঘটনা সম্পর্কে অর্থমন্ত্রীর বেফাঁস মন্তব্য এ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত নায়কদের সহায়তা করেছে, এখনো পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ বহাল আছে।

তারা বলেন, এতবড় অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতরা দম্ভ ভরে বলছে, তারা নাকি সব নিয়মনীতি মেনেই নাকি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। এই সব দুর্নীতিবাজদের দুর্নীতি দমন কমিশনে ডেকে এক তামাশা করা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এখনো কোনো আদালতে কোনো মামলা রুজু করা হয়নি। দু’একটা ক্ষেত্রে যেটুকু হয়েছে তাও লোক দেখানো।

বক্তারা বলেন, ৬ষ্ঠ বারের মতো বিদ্যুতের মূল্য বাড়ছে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না হলেও ১ সেপ্টেম্বর থেকে তা কার্যকরী হয়েছে। এতে জনগণ দু’ভাবে প্রতারিত হচ্ছে। রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট জ্বালানি তেলের ভর্তুকির টাকার সিংহভাগে এই খাতে খরচ হচ্ছে, অপরদিকে বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়ে এনার্জি রেগুলেটারি কমিশন জনগণকে প্রতারিত করছে।

১১ দলের সভায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি বন্ধ করা এবং জনস্বার্থবিরোধী রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ করে বিদ্যুতের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়।

তারা বলেন, বিদ্যুতের মূল্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রব্যমূল্য অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাবে। বাড়বে বাড়িভাড়া। বাড়িভাড়ার ক্ষেত্রে আজও কোনো নীতিমালা আছে বলে নেতারা মনে করে না। নীতিমালা যাও আছে তাকে বাস্তবায়িত করার কোনো ব্যবস্থা আছে বলে জনগণ জানে না।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির জন্য বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দেশের সার্বিক এই অবস্থায় সব অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণের সমস্যা সংকট নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।

No comments:

Post a Comment