Thursday, September 6, 2012

’ওরা দল ও চাঁদপুরকে কলঙ্কিত করলো, রক্তাক্ত করলো মতলব’


’ওরা দল ও চাঁদপুরকে কলঙ্কিত করলো, রক্তাক্ত করলো মতলব’
আসামী যেই হোক ছাড় দেয়া হবে না ঃ ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার

আতঙ্ক আর ভয় মতলববাসীকে তাড়া করছে| ক্ষমতাসীন দলের এমপির পিএস-এরই যেখানে জীবনের নিরাপত্তা নেই সেখানে সাধারণ জনগণ কতটুকু নিরাপত্তাবোধ করবে এটা ভেবেই মানুষ এখন আতঙ্কিত ও চিনত&ধসঢ়;দিত| মানুষ আরো বেশি আতঙ্কিত এ জন্য যে, এমপির পরিবারের লোকজন এবং নিজ দলের লোকজনের দ্বারা এমপির পিএস যুবলীগ নেতা খবির হোসেন খুন হওয়ায়| শুধু তাই নয়, খুনিদের বাঁচাতে যা যা করা দরকার এমপির পরামর্শে মতলব উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা তা-ই করছে| এ ক্ষেত্রে মতলবের পুলিশ প্রশাসনকেও ব্যবহার করা হয়েছে ও হচ্ছে| গত ক’দিন মতলবে যারা শানত&ধসঢ়;দিপ্রিয় রাজনীতি করেন এবং যারা রাজনীতি করেন না সে সব সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে তাদের মধ্যে এমনই আতঙ্ক, শঙ্কা দেখা গেলো এবং তাদের মনত&ধসঢ়;দব্য জানা গেলো| ক্ষমতাসীন দলের যারা নিঃস্বার্থ ও নিবেদিতপ্রাণ তাদের আক্ষেপমূলক মনত&ধসঢ়;দব্য ঃ সরকারের শেষ সময়ে এসে নিজ দলের এমপি এবং তার পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠজনরা এভাবে দলকে এবং চাঁদপুরকে কলঙ্কিত করলো, মতলবকে রক্তাক্ত করলো তা ভাবতেও আমাদের গা শিউরে উঠে|

মধ্যবিত্ত পরিবারের সনত&ধসঢ়;দান খবির হোসেন প্রধান| গ্রামের বাড়ি মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদী উত্তর ইউনিয়নের দক্ষিণ নওগাঁও গ্রামে| বাবা সামছুল হক প্রধান বর্তমানে বয়োবৃদ্ধ| আগে কৃষি কাজ করতেন| মা আফিয়া বেগম গৃহিণী| ৩ ভাই ৫ বোনের মধ্যে খবির ৭ম| ভাইদের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ| বড় ভাই ছোটখাটো ব্যবসা করেন, মেঝো ভাইও ছোটখাটো চাকুরি করে| খবির ছাত্র জীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন| মতলব ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন| কর্মজীবনে এমপির পিএস হওয়ার আগ পর্যনত&ধসঢ়;দ ঠিকাদারি করতেন| পিএস হওয়াটাই তার জীবনে কাল হলো| খবির বিয়ে করেছেন একই উপজেলার কলাদী গ্রামে| স্ত্রী ঢাকার মহাখালীস্থ আইসিডিডিআরবিতে চাকুরি করেন| ফাহমিদা আক্তার ঊর্মি নামে এগার বছরের তাদের একটি কন্যা সনত&ধসঢ়;দান রয়েছে| সে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী| স্ত্রী ফাতেমা বেগম বর্তমানে সনত&ধসঢ়;দান সম্ভবা|

খবির মতলব দক্ষিণ উপজেলা যুবলীগের সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন| খবির নিহত হওয়ার নেপথ্য কারণ আদ্যোপানত&ধসঢ়;দ বিশেস্নষণ করে এটাই প্রতীয়মান হলো যে, এমপি রফিকুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরাই খবির হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত| মতলবের জনগণ জানান, খবির পিএস হওয়ার পর এমপি পরিবারের সদস্যরা লুটপাটে তেমন একটি সুবিধা করতে পারতো না| এমপি পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠরা কোনো অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নিতে চাইলে পিএস খবির তাদের বাধা দিত এবং এমপিকে বুঝাতো| আর এটাই তার জন্য কাল হলো| সর্বশেষ মতলব থানার সামনে জেলা পরিষদের ২২ শতক পরিমাণ জলাশয় ভরাট করে দোকান বরাদ্দ দেয়া নিয়ে এমপির আপন ছোট ভাই তৌফিক, চাচাতো ভাই বজলু দেওয়ান ও ভাতিজা দুলাল দেওয়ানের সাথে পিএস খবির হোসেনের বিরোধ দেখা দেয়| এরই জের হিসেবে পথের কাটা খবিরকে সরিয়ে দিলো তৌফিক গং| শুধু তাই নয়, খবির মারা যাবার পরও তার পরিবারের উপর যে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে এবং সর্বশেষ খবিরের স্ত্রীর ব্যাংক এ্যাকাউন্ট থেকে এমপির ঘনিষ্ঠ ক’জন উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ২০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা তুলে নেয়ার ঘটনা বিবেকবান সবাইকে সত&ধসঢ়;দম্ভিত করেছে| খবিরের স্ত্রীর কাছ থেকে অনেকটা জোরপূর্বক চেকে স্বাক্ষর নেয়া হয়| এই টাকা তোলার পেছনে এমপির স্ত্রীরও হাত ছিলো বলে অভিযোগ রয়েছে| খবিরের স্ত্রীর কাছ থেকে চেকে স্বাক্ষর নেয়ার সময় এমপি রফিকুল ইসলামের ভাই মাহতাব হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এএইচএম গিয়াস উদ্দিন, সেক্রেটারী বিএইচ কবির আহমেদসহ আরো ক’জন নেতা উপস্থিত ছিলেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে| এ ব্যাপারে খবিরের স্ত্রী ফাতেমা বেগমের বক্তব্য হচ্ছে, এমপি সাহেবের কথায় আমি ২০ লাখ ৪৪ হাজার টাকার চেকে স্বাক্ষর দিয়েছি| যারা স্বাক্ষর নিয়েছেন তারা আওয়ামী লীগের নেতা এবং এমপি সাহেবের ঘনিষ্ঠজন এতটুকুই জানি| তাদেরকে আমি মুখচেনা চিনি তবে নাম জানি না|

এদিকে মতলব দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ খান মোহাম্মদ এরফানের বিরম্নদ্ধে মতলববাসীর নানা অভিযোগ রয়েছে| খবিরের খুনিদের রক্ষায় তিনি নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন| খান মোহাম্মদ এরফান এমপির ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হওয়ায় এমপির পরিবারের সদস্যরা মতলবে থানা পুলিশের বিশেষ সহায়তা পাচ্ছে| মতলবের এই ওসির কারণে খবিরের প্রকৃত খুনিরা পার পেয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে মতলববাসী|

এ ব্যাপারে গতকাল বৃহস্পতিবার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফরের সাথে যোগাযোগ করা হয়| তিনি চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, আসামী যে-ই হোক ছাড় দেয়া হবে না| আমাদের তদনত&ধসঢ়;দে খবিরের প্রকৃত খুনি কারা তা বেরিয়ে আসবে বলে আমি আশাবাদী| এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খবির যে দল করতো সে দলের কারো নামও যদি তদনত&ধসঢ়;দে প্রমাণিত হয় তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে| খবির হত্যা মামলার বিষয়ে ওসির প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ মামলাটি আমরা অতীব গুরম্নত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর মামলা হিসেবে নিয়েছি| পুরো বিষয়টি আমি নিজে এবং সদর সার্কেলের এএসপি সৈকত শাহীন তদারকি করছি| মামলার আইওকে এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে| এখানে কেউ ইচ্ছা করলেও কিছু করতে পারবে না|

No comments:

Post a Comment