Sunday, September 9, 2012

লটারি করে প্রধান উপদেষ্টা, প্রস্তাব আকবর আলির

লটারি করে প্রধান উপদেষ্টা, প্রস্তাব আকবর আলির
Sat, Sep 8th, 2012 4:11 pm BdST
 
 নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পক্ষে মত প্রকাশ করে সুনির্দিষ্ট একটি তালিকা থেকে লটারির মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত করার প্রস্তাব দিয়েছেন আকবর আলি খান।

নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের বিপরীত অবস্থানের মধ্যে শনিবার এক গোলটেবিল আলোচনায় এই প্রস্তাব তুলে ধরেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা।

জামায়াতে ইসলামী সমর্থক হিসেবে পরিচিত সাবেক সচিব শাহ আবদুল হান্নানের সঞ্চালনায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ওই আলোচনায় এই প্রস্তাব দিয়ে আকবর আলি আশা প্রকাশ করেন, তার এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে নির্বাচনের সময়ের সরকার নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কট দূর হতে পারে।

আকবর আলি বলেন, “নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হলে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিশেষ করে দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা হতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে এমন ফর্মুলা তৈরি করতে হবে, যাতে কোনোভাবে কে প্রধান উপদেষ্টা হবেন, তা প্রকাশ না পায়।

“ব্যবস্থা এমন হতে হবে- প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন, তা ওই সরকার গঠনের শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত হবে। এক্ষেত্রে বিগত ১০ অথবা ৫ বছরের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের বিচারপতিদের একটি তালিকা করে সেখান থেকে ১৫ জনকে ঠিক করতে হবে। ওই তালিকা থেকে লটারির মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করা যেতে পারে।”

সাবেক সচিব আকবর আলি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টা ছিলেন, ওই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। ২০০৭ সালে ওই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার কথা ছিল বিচারপতি কে এম হাসানের।

তখনকার আইন অনুযায়ী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম সুযোগ ছিল সদ্য বিদায়ী প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের। তবে তার আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সংবিধান সংশোধন করে বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোয় তা নিয়ে বিতর্ক ওঠে।

পছন্দের ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা করতে এই সংশোধন হয়েছে দাবি তুলে আওয়ামী লীগের ব্যাপক আন্দোলনের মুখে কে এম হাসান পদ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান।

পরে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন, যার পরিষদে আকবর আলিও ছিলেন। তবে ওই সরকার ব্যর্থ হয়। আকবর আলিসহ চারজন উপদেষ্টার পদত্যাগের পর রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে দেশে জরুরি অবস্থা আসে।

এরপর ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলোপ করে। এর ফলে বর্তমানে নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে।

তবে আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না- এই দাবি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপিসহ বিরোধী দল।

বর্তমান আইন অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে তার একটি পথ বাতলে দেন আকবর আলি। এক্ষেত্রে সরকারি ও বিরোধী দল থেকে সমান সংখ্যক সদস্য নিয়ে অর্ন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন করে নির্বাচন করার প্রস্তাব দেন তিনি।

আকবর আলি বলেন, “এক্ষেত্রে সরকারি দলের ৫ সদস্যের মনোনয়ন বিরোধী দল করতে পারে এবং বিরোধী দলের ৫ সদস্যের মনোনয়ন সরকারি দল দিতে পারে। অর্ন্তর্বতীকালীন সরকারের ওই ১০ সদস্য আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’’

আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কটের সমাধান খোঁজার জন্য রাজনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “তারপরও বলতে চাই, নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হলে আলোচনা ও সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।”

গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধে বিদ্যমান সঙ্কট নিরসনে নির্দলীয় সরকার গঠনে ছয়টি বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান।

প্রথম প্রস্তাব হল- মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগে বর্তমান মহাজোট সরকার পদত্যাগ করবে এবং একটি নির্দলীয় সরকার শুধু তিন মাসের জন্য দায়িত্ব নেবে।

দ্বিতীয়ত, শুধু নির্বাচন পরিচালনার জন্য গঠিত একটি ‘এলডার্স কাউন্সিল’ নির্দলীয় সরকারের দায়িত্ব নেবে।

তৃতীয়ত, একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির (অথবা একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তির) নেতৃত্বে সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সরকার দায়িত্ব নেবে।

চতুর্থত, স্পিকারের নেতৃত্বে দুই বড় দলের মধ্য থেকে পাঁচজন করে নিয়ে একটি সরকার হবে যার সদস্যরা কেউই আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

পঞ্চমত, যৌথ নেতৃত্বে (একজন বিএনপি ও একজন আওয়ামী লীগের মনোনীত) একটি নির্দলীয় সরকার, যাদের কেউই আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

এবং সর্বশেষ, রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে একটি সরকার নির্বাচন পরিচালনা করবে।

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসনসহ সরকারের চারটি মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে আনার প্রস্তাবে দ্বিমত পোষণ করে সাবেক সচিব আকবর আলি বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ চারটি মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে আনা হলে তা নিয়ে সাংবিধানিক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। আমি মনে করি, সরকারের সহযোগিতা ছাড়া নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।’

“ইসির আলাদা কোনো জনবল না থাকায় সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে সরকারের জনবল, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিয়েই করতে হয়।’’

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড পিস স্টাডিজ (সিএসপিএস) এর উদ্যোগে এই গোলটেবিল বৈঠক হয়। এতে বক্তব্য রাখেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুকোমল বড়–য়া, নিউ নেশন পত্রিকার সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, সাবেক সচিব এ এম জহুরুল ইসলাম, এডভোকেট তাজুল ইসলাম প্রমুখ। 

No comments:

Post a Comment