Tuesday, October 16, 2012


ঢাকাসহ দেশব্যাপী ১৮ দলীয় জোটের বিশাল গণমিছিল : ব্যর্থতার ভারেই সরকারের পতন ঘটবে - মওদুদ

রাজধানীতে গতকাল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের বিশাল গণমিছিল থেকে ঘোষণা করা হয়, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। মিছিল-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এমপি বলেন, ব্যর্থতার ভারেই সরকারের পতন হবে। এ সরকারের দুর্নীতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। এখন আন্তর্জাতিকভাবেই শেখ হাসিনার সরকারকে বিশ্বচোর হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যান, ঘাবড়াবেন না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি ও সরকারের নির্যাতনের প্রতিবাদে ১৮ দলীয় জোটের উদ্যোগে দেশব্যাপী মহানগর ও জেলা সদরে গণমিছিলের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীতে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিকাল সোয়া ৪টায় গণমিছিল শুরু হয়। পরে মগবাজার মোড়ে গিয়ে তা শেষ হয়। গণমিছিল শেষে ছাত্রশিবির মৌচাক মোড়ে সমাবেশ করে। এতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর নেতারা বক্তৃতা করেন।
পূর্বে ফকিরেরপুল বাজার থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত নয়াপল্টনের দীর্ঘ সড়ক কানায় কানায় পূর্ণ ছিল মিছিলে। এর ৫ মিনিটের মাথায় নয়াপল্টনের আনন্দভবন কমিউনিটি সেন্টারের বিপরীত দিকে সড়কের পাশে ট্রান্সফরমারে বিকট শব্দ হলে নেতাকর্মীরা দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। এতে মিছিলের নেতাকর্মীদের মাঝে ভয়-আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। অনেক নেতাকর্মী ভয়ে অলিগলিতে ঢুকে যায়। অনেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে। দৌড়াদৌড়ির সময়ে অনেক নেতাকর্মী আহত হয়। নেতাকর্মীরা অনেকে আইল্যান্ডের ব্যানার-ফেস্টুনের বাঁশ-লাঠি নিয়ে এগুতে থাকে। পেছনের অংশটিতে জামায়াতে ইসলামীসহ জোটের শরিক দলের কর্মীরা ছিলেন। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে পরিস্থিতি শান্ত হয়। অলিগলিতে থাকা নেতাকর্মীরা আবার মিছিলে অংশ নেয়। এ সময়ে রাস্তার দুই পাশে পুলিশ ও র্যাব স্থিরভাবে দাঁড়িয়েছিল।
গণমিছিলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এমপি, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, সহ-সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা, আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, কেন্দ্রীয় নেতা আমানউল্লাহ আমান, রবকতউল্লাহ বুলু, অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী, ফজলুল হক মিলন, আবদুস সালাম, আবদুল লতিফ জনি, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুর রহমান শাহীন, যুবদলের অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের হাবিব-উন নবী খান সোহেল, মীর সরফত আলী সপু, শফিউল বারী বাবু, মহিলা দলের শিরিন সুলতানা, ছাত্রদলের আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশিদ হাবিব, নিলোফার চৌধুরী মনি এমপি ও হেলেন জেরিন খানসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
গণমিছিলে ১৮ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক মজিবুর রহমান, মিয়া গোলাম পরওয়ার, অধ্যাপক তাসনীম আলম, হামিদুর রহমান আযাদ এমপি, মাওলানা আবদুল হালিম, নুরুল ইসলাম বুলবুল, ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, সেলিম উদ্দিন ও মঞ্জুরুল ইসলাম ভুঁইয়া, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির শামীম আল মামুন, খেলাফত মজলিসের মাওলানা শফিক উদ্দিন, শেখ গোলাম আজগর ও নোমান মাজহারী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির খন্দকার গোলাম মুর্তজা, ন্যাপের জেবেল রহমান ঘানি, ইসলামিক পার্টির আবদুল মবিন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপ ভাসানীর শেখ আনোয়ারুল হক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সাইফুদ্দিন মনি, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন প্রমুখ। এছাড়াও গণমিছিলে ছাত্রশিবিরের সভাপতি দেলাওয়ার হোসাইন ও সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল জব্বার উপস্থিত ছিলেন।
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিকাল সোয়া ৪টার গণমিছিল শুরু হয়ে মগবাজার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে সর্বশেষ গণমিছিলটি হয়েছিল ৩০ জানুয়ারি। ওই মিছিলে নেতৃত্ব দেন দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।
দুপুর আড়াইটা থেকে মহানগরের ১০০টি ওয়ার্ডে থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে সমবেত হয়। বিকাল সাড়ে তিনটার মধ্যে ফকিরেরপুল মোড় থেকে শুরু করে বিজয়নগরের নাইটেঙ্গল ছাড়িয়ে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত পুরো এলাকা নেতাকর্মীদের উপস্থিতি জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
কর্মীদের হাতে নানা রঙের উত্সব পতাকা, ব্যানার-ফেস্টুন ছিল। গণমিছিলে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতিকৃতিও স্থান পায়। জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা মঞ্চের বাঁদিকে অবস্থান নেয়। তারা দলীয় ক্যাপ পরে ব্যাপক শোডাউন করে। এছাড়াও ১৮ দলীয় জোটের শরিক খেলাফত মজলিস, এলডিপি, বাংলাদেশ ন্যাপ ও লেবার পার্টিসহ অন্য দলগুলোও গণমিছিলে শরিক হয়।
গণমিছিল উপলক্ষে ফকিরেরপুল, নয়াপল্টন, বিজয়নগর, কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ ও মগবাজার মোড়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি ছিল।
গণমিছিল শুরুর আগে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। মহানগর আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা এতে সভাপতিত্ব করেন। ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সরকার সংসদকে অকার্যকর করে রেখেছে। তারা ৪ বছর ধরে একদলীয়ভাবে সংসদ চালিয়ে যাচ্ছে। কেবল তাই নয়, কর্মকমিশন, নির্বাচন কমিশনসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অকার্যকর হয়ে আছে। চার বছরে সরকারের ব্যর্থতার হিসাব এতো বেশি যে বলে শেষ করা যাবে না। এই ব্যর্থতার ভারে তাদের পতন ঘটবে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেই এদের বিদায় করব।
দুর্নীতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার দুর্নীতিতে ডুবে গেছে। পদ্মা সেতুর দুর্নীতিতে বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়েছে। লজ্জায় মুখ দেখানো যায় না। আমি সম্প্রতি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন তোমাদের দেশে কেন এতো বড় দুর্নীতি হয়। আমি এর জবাব দিতে পারিনি।
পদ্মা সেতুর দুর্নীতি পর্যবেক্ষণে বিশ্বব্যাংকের তদন্ত দলের ঢাকায় আগমনকে লজ্জাজনক অভিহিত করে সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন সরকারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। তারা আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আমার বিশ্বাস বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতি পর্যবেক্ষণ টিম এ বিষয়টি বুঝতে পারবে। তখন তারা হতাশ হবেন।
গণমাধ্যমের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুনেছি প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান বেসরকারি কোনো টেলিভিশন ও সংবাদপত্রকে কাভার করতে দিচ্ছে না। তাদের ব্যর্থতার খবর সব গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে বলে সরকার অসহনশীল হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালেও আওয়ামী লীগ সংবাদপত্র দমন একদলীয় শাসন কায়েম করেছিলো। এবারও তারা গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ জনগণ বরদাশত করবে না।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি উল্লেখ করে মওদুদ বলেন, শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। জনগণও ওই নির্বাচনে অংশ নেবে না।
রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও পটিয়ায় বৌদ্ধবিহারে হামলার ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করে মওদুদ বলেন, বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র বানিয়ে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের জন্য সরকার পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

No comments:

Post a Comment