নিরাপত্তা পেলে সামনে আসবেন গাড়িচালক আজম

পালিয়ে
বেড়ানো জীবনের অবসান ঘটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চান গাড়িচালক আজম
খান। তিনি সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সাবেক সহকারী একান্ত সচিব
(এপিএস) ওমর ফারুক তালুকদারের গাড়িচালক ছিলেন। আজম চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ
উপজেলার নওগাঁও গ্রামের বাসিন্দা।
আজ রোববার দুপুরে ‘প্রথম আলো’র মতলব দক্ষিণ (চাঁদপুর) প্রতিনিধিকে মুঠোফোনে এসব কথা বলেন আজমের বোন সৌদি প্রবাসী সালমা বেগম।
সালমা বেগমের দাবি, তাঁর ভাই আজম গতকাল শনিবার দুপুরে তাঁকে ফোন করেছিলেন। আলাপচারিতায় আজম তাঁকে বলেছেন, রেলের অবৈধ টাকা ধরিয়ে দিয়ে তিনি সঠিক কাজটিই করেছেন। দেশের সবাইকে সত্যটা জানিয়েছেন। তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, অথচ দোষী ব্যক্তিরা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছেন।
সালমা বেগমের দাবি, আজম তাঁকে বলেছেন, আত্মগোপনে থাকতে থাকতে এখন তিনি (আজম) ক্লান্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। টিভিতে তাঁর সাক্ষাত্কার প্রচারিত হওয়ার পর তিনি জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত বলে বোনকে জানিয়েছেন। যেকোনো সময় তাঁকে গুম বা হত্যা করা হতে পারে—এমন আশঙ্কার কথাও বোনকে জানিয়েছেন তিনি। সরকার আজমের জীবনের নিরাপত্তা দিলে প্রয়োজনে যেকোনো তদন্ত বা মামলার মুখোমুখি হতে রাজি আছেন তিনি।
সালমা বেগম বলেন, আজম লুকিয়ে থাকায় একমাত্র মেয়েকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী স্বপ্না বেগম খুবই অর্থকষ্টে আছেন। অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গেছে আজমের মেয়ে রিয়ার লেখাপড়া। মতলব থানা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) না নেওয়ায় আজমের পরিবার হতাশ ও উদ্বিগ্ন বলেও সালমা জানান।
রেলের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনার পর থেকে পলাতক আছেন চালক আজম খান। সম্প্রতি তিনি অজ্ঞাত স্থান থেকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভিকে সাক্ষাত্কার দেন। তাঁর দেওয়া বক্তব্যের ব্যাপারে নিজের অবস্থান জানিয়ে সংবাদ ব্রিফিং করেন সাবেক রেলমন্ত্রী ও বর্তমানে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
আজ রোববার দুপুরে ‘প্রথম আলো’র মতলব দক্ষিণ (চাঁদপুর) প্রতিনিধিকে মুঠোফোনে এসব কথা বলেন আজমের বোন সৌদি প্রবাসী সালমা বেগম।
সালমা বেগমের দাবি, তাঁর ভাই আজম গতকাল শনিবার দুপুরে তাঁকে ফোন করেছিলেন। আলাপচারিতায় আজম তাঁকে বলেছেন, রেলের অবৈধ টাকা ধরিয়ে দিয়ে তিনি সঠিক কাজটিই করেছেন। দেশের সবাইকে সত্যটা জানিয়েছেন। তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, অথচ দোষী ব্যক্তিরা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছেন।
সালমা বেগমের দাবি, আজম তাঁকে বলেছেন, আত্মগোপনে থাকতে থাকতে এখন তিনি (আজম) ক্লান্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। টিভিতে তাঁর সাক্ষাত্কার প্রচারিত হওয়ার পর তিনি জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত বলে বোনকে জানিয়েছেন। যেকোনো সময় তাঁকে গুম বা হত্যা করা হতে পারে—এমন আশঙ্কার কথাও বোনকে জানিয়েছেন তিনি। সরকার আজমের জীবনের নিরাপত্তা দিলে প্রয়োজনে যেকোনো তদন্ত বা মামলার মুখোমুখি হতে রাজি আছেন তিনি।
সালমা বেগম বলেন, আজম লুকিয়ে থাকায় একমাত্র মেয়েকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী স্বপ্না বেগম খুবই অর্থকষ্টে আছেন। অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গেছে আজমের মেয়ে রিয়ার লেখাপড়া। মতলব থানা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) না নেওয়ায় আজমের পরিবার হতাশ ও উদ্বিগ্ন বলেও সালমা জানান।
রেলের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনার পর থেকে পলাতক আছেন চালক আজম খান। সম্প্রতি তিনি অজ্ঞাত স্থান থেকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভিকে সাক্ষাত্কার দেন। তাঁর দেওয়া বক্তব্যের ব্যাপারে নিজের অবস্থান জানিয়ে সংবাদ ব্রিফিং করেন সাবেক রেলমন্ত্রী ও বর্তমানে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
১/১১ খেলোয়াড়রাই আবার খেলছে : শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এক এগারোর সরকারের মতো
অনির্বাচিতদের ক্ষমতায় আনার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আবারও ওয়ান ইলেভেন
সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, কিছু মানুষ আছে, যাদের ক্ষমতায় যাওয়ার
খায়েশ থাকলেও নির্বাচন করার সাহস নেই। জনগণের সামনে দাঁড়াতে পারেন না।
জনগণের ওপর তাদের ভরসা নেই, ভরসা অসাংবিধানিক পথে। অসাংবিধানিক ধারায়
ক্ষমতায় যেতে চান। তাদের খায়েশের কারণেই দেশ বারবার বিপদে পড়ে। তারা এখন
আবার খেলা শুরু করেছেন।
গতকাল গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির বৈঠকে প্রারম্ভিক বক্তব্যে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতার খায়েশধারীদের কারণে বারবার দেশে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা বারবার অসাংবিধানিক ব্যবস্থাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্নম্ন আইনজীবী বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে এ প্লাস সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন। কীভাবে ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে আরও রাখা যায়, সে ফতোয়া দিয়েছিলেন। তারাই এখন স্বোচ্চার হয়েছেন। তাদের খায়েশ মেটাতে গিয়ে দেশটাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অবশ্য ফতোয়াবাজরা তো অসাংবিধানিক সরকার চাবেনই। কারণ তারা সাংবিধানিক সরকারের সময়ে মূল্য পান না। অসাংবিধানিক সরকার এলে তাদের মূল্য বাড়ে। সে কারণে তারা অসাংবিধানিক সরকার চান।
সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ষড়যন্ত্র চললেও তা নস্যাত্ করে সংবিধান অনুযায়ীই দেশ চলবে। কারণ এক-এগারোর কথা জনগণ ভুলে যায়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি নির্বাচনের সবই সুষ্ঠু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। মানুষ পছন্দমতো তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। শুধু আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। এরই মধ্যে তা প্রমাণিত হয়েছে।
সুশীল সমাজের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এক শ্রেণীর মানুষ সরকারের কাছ থেকে সুবিধা ভোগ করতে না পেরে মধ্যরাতের টকশো থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভাবে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমরা মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া গ্রামের মানুষ পাচ্ছেন। পাচ্ছেন না শুধু কিছু লোক। তারা (টেলিভিশনের টকশো) মধ্যরাতে জেগে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। এই রাত জেগে জেগে নাই নাই, এটা হলো না, ওটা হলো না। কিন্তু কোন অবস্থায় ছিল বাংলাদেশ? বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা থেকে কোথায় নিয়ে এসেছি। সেটা তো চোখে দেখেন না তারা। এই যে ঈদ গেল প্রত্যেকটি মানুষকে ১০ কেজি খাবার সাহায্য দিয়েছি। তারা কি একটুও চিন্তা করেন? অবশ্য তারা দেখবেন কীভাবে? চোখে তো তারা ঠুলি পরা।
আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা ঠেকাতে বিভিন্নমুখী ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রতিবছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে তাদের প্রতিবেদন দিলেও ২০০১ সালে হঠাত্ বলা নেই কওয়া নেই তারা দুর্নীতির রিপোর্ট প্রকাশ করল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়ার ঠিক আগে তড়িঘড়ি করে এই রিপোর্ট দেয়া হলো, যা ছিল সম্পূর্ণ বানোয়াট। এতেই বোঝা গেছে যে তাদের উদ্দেশ্য আছে। আর না হলে এভাবে নির্বাচনের আগে রিপোর্ট দেবে কেন।
তিনি বলেন, ওই সময় তেল-গ্যাস বিক্রি করতে রাজি হইনি বলেই আওয়ামী লীগ তখন ক্ষমতায় বসতে পারেনি। আমাদের দেশের সম্পদ বেচবে এক দেশ আর কিনবে আরেক দেশ। আমি রাজি হইনি। যার কারণে আমরা ভোট পেয়েও ক্ষমতায় যেতে পারলাম না।
প্রতিটি সাংগঠনিক জেলা থেকে একজন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এবং দলীয় প্রধান মনোনীত ২১ জনকে নিয়ে জাতীয় কমিটি গঠিত হয়। দলীয় প্রধানের মনোনীত কোটায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ ও আবদুল জলিলকে সম্প্রতি জাতীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলনের পর গতকালই জাতীয় কমিটির প্রথম বৈঠক হলো। তবে এখন থেকে এ কমিটির বৈঠক নিয়মিত হবে বলে জানান দলটির সভানেত্রী।
আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির বর্ধিত মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুমোদন দিয়েছে দলের জাতীয় কমিটি। এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে কমিটির মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়। গত ২৩ জুলাই আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির তিন বছর মেয়াদ শেষ হয়।
এখন থেকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি ছয় মাস অন্তর জাতীয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে জানান। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, বৈঠকে জাতীয় কমিটির তৃণমূল পর্যায়ের সদস্যরা তৃণমূল সংগঠনের সমন্বয়হীনতা ও সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা তুলে ধরেন। তারা স্থানীয় সংসদ সদস্যদের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, এমপিরা স্থানীয় নেতাকর্মীদের গুরুত্ব না দিয়ে নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করছেন। এমপির ‘লোকজন’ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির মাধ্যমে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছেন বলেও কেউ কেউ অভিযোগ করেন। তারা বলেন, এমপি ও স্থানীয় সংগঠনের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, তা এখনই না মেটানো হলে আগামী নির্বাচনে মূল্য দিতে হবে। বেশ কয়েকজন সদস্য তাদের নিজ নিজ এলাকার বর্তমান সংসদ সদস্যকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হলে নিশ্চিত পরাজয় বলেও মন্তব্য করেন।
বৈঠকে বেশ কয়েকজন সদস্য গণমাধ্যমের সমালোচনা করে বলেন, টিভি দেখলে আর পত্রিকা পড়লে শুধু সরকারের বিরুদ্ধেই খবর দেখি। বর্তমান সরকারের কাছ থেকে পাওয়া টিভি চ্যানেলগুলোও সরকারের সমালোচনা করছে। সরকারের কোনো ভালো কাজের খবর আমরা গণমাধ্যমে দেখি না।
বৈঠকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের এক সদস্য রামু প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন। তিনি এ ঘটনাকে সুপরিকল্পিত উল্লেখ করে বলেন, একটি মহল আওয়ামী লীগকে জড়ানোর চেষ্টা করছে। তিনি বৌদ্ধদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কক্সবাজারের রামু ও হিমছড়িতে দুটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের প্রস্তাব করেন। অন্যান্য সাংগঠনিক জেলা থেকে আসা সদস্যরা তাদের নিজ নিজ জেলার রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবি করেছেন।
সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমের ওপর জোর দেয়া হয়। যেসব জেলা ও উপজেলায় এখনো সম্মেলন হয়নি সেখানে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্মেলন সম্পন্ন করার তাগিদ দেয়া হয়।
প্রায় পাঁচ বছর পর গতকাল আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গঠনতন্ত্রের ১৭(ঝ) অনুযায়ী প্রতি ছয় মাস অন্তর জাতীয় কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
গতকাল গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির বৈঠকে প্রারম্ভিক বক্তব্যে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতার খায়েশধারীদের কারণে বারবার দেশে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা বারবার অসাংবিধানিক ব্যবস্থাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্নম্ন আইনজীবী বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে এ প্লাস সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন। কীভাবে ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে আরও রাখা যায়, সে ফতোয়া দিয়েছিলেন। তারাই এখন স্বোচ্চার হয়েছেন। তাদের খায়েশ মেটাতে গিয়ে দেশটাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অবশ্য ফতোয়াবাজরা তো অসাংবিধানিক সরকার চাবেনই। কারণ তারা সাংবিধানিক সরকারের সময়ে মূল্য পান না। অসাংবিধানিক সরকার এলে তাদের মূল্য বাড়ে। সে কারণে তারা অসাংবিধানিক সরকার চান।
সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ষড়যন্ত্র চললেও তা নস্যাত্ করে সংবিধান অনুযায়ীই দেশ চলবে। কারণ এক-এগারোর কথা জনগণ ভুলে যায়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি নির্বাচনের সবই সুষ্ঠু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। মানুষ পছন্দমতো তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। শুধু আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। এরই মধ্যে তা প্রমাণিত হয়েছে।
সুশীল সমাজের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এক শ্রেণীর মানুষ সরকারের কাছ থেকে সুবিধা ভোগ করতে না পেরে মধ্যরাতের টকশো থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভাবে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমরা মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া গ্রামের মানুষ পাচ্ছেন। পাচ্ছেন না শুধু কিছু লোক। তারা (টেলিভিশনের টকশো) মধ্যরাতে জেগে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। এই রাত জেগে জেগে নাই নাই, এটা হলো না, ওটা হলো না। কিন্তু কোন অবস্থায় ছিল বাংলাদেশ? বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা থেকে কোথায় নিয়ে এসেছি। সেটা তো চোখে দেখেন না তারা। এই যে ঈদ গেল প্রত্যেকটি মানুষকে ১০ কেজি খাবার সাহায্য দিয়েছি। তারা কি একটুও চিন্তা করেন? অবশ্য তারা দেখবেন কীভাবে? চোখে তো তারা ঠুলি পরা।
আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা ঠেকাতে বিভিন্নমুখী ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রতিবছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে তাদের প্রতিবেদন দিলেও ২০০১ সালে হঠাত্ বলা নেই কওয়া নেই তারা দুর্নীতির রিপোর্ট প্রকাশ করল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়ার ঠিক আগে তড়িঘড়ি করে এই রিপোর্ট দেয়া হলো, যা ছিল সম্পূর্ণ বানোয়াট। এতেই বোঝা গেছে যে তাদের উদ্দেশ্য আছে। আর না হলে এভাবে নির্বাচনের আগে রিপোর্ট দেবে কেন।
তিনি বলেন, ওই সময় তেল-গ্যাস বিক্রি করতে রাজি হইনি বলেই আওয়ামী লীগ তখন ক্ষমতায় বসতে পারেনি। আমাদের দেশের সম্পদ বেচবে এক দেশ আর কিনবে আরেক দেশ। আমি রাজি হইনি। যার কারণে আমরা ভোট পেয়েও ক্ষমতায় যেতে পারলাম না।
প্রতিটি সাংগঠনিক জেলা থেকে একজন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এবং দলীয় প্রধান মনোনীত ২১ জনকে নিয়ে জাতীয় কমিটি গঠিত হয়। দলীয় প্রধানের মনোনীত কোটায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ ও আবদুল জলিলকে সম্প্রতি জাতীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলনের পর গতকালই জাতীয় কমিটির প্রথম বৈঠক হলো। তবে এখন থেকে এ কমিটির বৈঠক নিয়মিত হবে বলে জানান দলটির সভানেত্রী।
আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির বর্ধিত মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুমোদন দিয়েছে দলের জাতীয় কমিটি। এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে কমিটির মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়। গত ২৩ জুলাই আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির তিন বছর মেয়াদ শেষ হয়।
এখন থেকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি ছয় মাস অন্তর জাতীয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে জানান। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, বৈঠকে জাতীয় কমিটির তৃণমূল পর্যায়ের সদস্যরা তৃণমূল সংগঠনের সমন্বয়হীনতা ও সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা তুলে ধরেন। তারা স্থানীয় সংসদ সদস্যদের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, এমপিরা স্থানীয় নেতাকর্মীদের গুরুত্ব না দিয়ে নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করছেন। এমপির ‘লোকজন’ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির মাধ্যমে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছেন বলেও কেউ কেউ অভিযোগ করেন। তারা বলেন, এমপি ও স্থানীয় সংগঠনের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, তা এখনই না মেটানো হলে আগামী নির্বাচনে মূল্য দিতে হবে। বেশ কয়েকজন সদস্য তাদের নিজ নিজ এলাকার বর্তমান সংসদ সদস্যকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হলে নিশ্চিত পরাজয় বলেও মন্তব্য করেন।
বৈঠকে বেশ কয়েকজন সদস্য গণমাধ্যমের সমালোচনা করে বলেন, টিভি দেখলে আর পত্রিকা পড়লে শুধু সরকারের বিরুদ্ধেই খবর দেখি। বর্তমান সরকারের কাছ থেকে পাওয়া টিভি চ্যানেলগুলোও সরকারের সমালোচনা করছে। সরকারের কোনো ভালো কাজের খবর আমরা গণমাধ্যমে দেখি না।
বৈঠকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের এক সদস্য রামু প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন। তিনি এ ঘটনাকে সুপরিকল্পিত উল্লেখ করে বলেন, একটি মহল আওয়ামী লীগকে জড়ানোর চেষ্টা করছে। তিনি বৌদ্ধদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কক্সবাজারের রামু ও হিমছড়িতে দুটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের প্রস্তাব করেন। অন্যান্য সাংগঠনিক জেলা থেকে আসা সদস্যরা তাদের নিজ নিজ জেলার রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবি করেছেন।
সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমের ওপর জোর দেয়া হয়। যেসব জেলা ও উপজেলায় এখনো সম্মেলন হয়নি সেখানে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্মেলন সম্পন্ন করার তাগিদ দেয়া হয়।
প্রায় পাঁচ বছর পর গতকাল আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গঠনতন্ত্রের ১৭(ঝ) অনুযায়ী প্রতি ছয় মাস অন্তর জাতীয় কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
No comments:
Post a Comment